পুজোর ছুটি
ইউ ক্যান টেক আ পার্সন আউট অফ মফস্বল, বাট ইউ ক্যান নেভার টেক মফস্বল আউট অফ আ পার্সন। চতুর্থীর রাতে যখন অর্চিষ্মান একটু হেঁটে আসার প্রস্তাব দিল আমি ভাবলাম এই অন্ধকারে কেই বা আর দেখছে, চেয়ারের কাঁধে রাখা ধুধ্ধুড়ি টি শার্ট আর ল্যাতপেতে জিনস গলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
ভাবলাম রাস্তায়
শ্মশানের নিস্তব্ধতা বিরাজ করবে। চতুর্থীর রাতে আমার পৈতৃক বাড়ির সামনের রাস্তায়
যেমন করে। সাইকেল টুংটুঙিয়ে কোচিং ক্লাস থেকে ফিরবে ছেলেমেয়ের দল, তাদের মধ্যে কেউ
কেউ আমাদের আমগাছের ঘন ছায়ার তলায় থামবে খানিকক্ষণ। গুনগুন গুনগুন। যখন ঊঠে বসার
শক্তি ছিল ঠাকুমা খাটে বসে মাথা নাড়বেন। সব উচ্ছন্নে গেল। ত্রিপলের প্যান্ডেলে
টিমটিমে টিউবলাইটের নিচে ঘুরে বেড়াবে উদাসী গরু, ঝগড়ুটে কুকুর। ঘরের ভেতর মা
শিশুকে ষষ্ঠী পড়ার আগে যতখানি পারা যায় পড়িয়ে নেবেন। ভুজুং দেবেন, পুজোর আগে
পড়াশুনো করলে মা সরস্বতীর কাছ থেকে বকেয়ার বেশি আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
বাড়ি থেকে বেরিয়েই
ভুল ভেঙে গেল। মনে পড়ে গেল এ তো আমার ছোটবেলার ঘুমন্ত মফস্বল নয়, এ আমার বুড়োবেলার
জলজ্যান্ত শহর। চারদিকে হইহই করে অলরেডি পুজো শুরু হয়ে গেছে। প্যান্ডেলে
প্যান্ডেলে নহবৎ, গত একমাস ধরে চলে আসা রবীন্দ্র-নজরুল-অতুলপ্রসাদী সংগীত
প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে, স্থানীয় ব্যান্ডের গান। মাদুর্গার সামনে কোথাও
কোথাও কাপড়ের আড়াল, কোথাও কোথাও তিনি চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছেন। ডি ব্লকের ঠাকুর
দারুণ হয়েছে। মেলা গ্রাউন্ডের ঠাকুর আভা গার্দ। মা দুর্গা ভগবান বলেই কোমর অতখানি
বেঁকিয়ে দাঁড়াতে পেরেছেন, নশ্বর মানুষ হলে পারতেন না।
দু’নম্বর মার্কেটের মোড়ের
মাথায় গ্যাঁট হয়ে বসে থাকা দিল্লি পুলিশের এস ইউ ভি-র জায়গাটা পেরোলেই রাস্তার ধার
বরাবর বাঁশের কর্ডন, দেখলেই টপকানোর জন্য মন উশখুশ করে। আমরা মেলা গ্রাউন্ড, কালীবাড়ি,
কে ব্লক দেখে মার্কেট ওয়ানে আমাদের ফেভারিট ফুচকা খাওয়ার প্ল্যান করছিলাম, ভিড়ের
নমুনা দেখে সে প্ল্যান বানচাল করতে হল। ফুচকাওয়ালা ভদ্রলোককে অন্তত একশো লোক ছেঁকে
ধরেছে। অষ্টমীনবমীতে কী হবে ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
আমরা ফুচকার স্বাদ
ঘুগনি দিয়ে মেটালাম। মাটন ঘুগনি। বছরের বাকি সময় কুড়ি টাকা, এখন পঁচিশ। এখন
দশটাকার ঝালমুড়ি পনেরো, পাঁচটাকার বেগুনি সাত। আর বিরিয়ানি। যে যেখানে পেরেছে
একখানা হাঁড়ি নিয়ে বসে পড়েছে। লোকাল গুণ্ডা থেকে সবজিওয়ালা – সকলেই এই সিজনে
বিরিয়ানি অন্ত্রেঁপ্রেনার। সকলের বিরিয়ানিই কলকাতার অথেনটিক বিরিয়ানি।
এ বছর সে অথেনটিক
বিরিয়ানি খাওয়া হবে না আমার। আমি বাড়ি চললাম। আমার কপালে এ বছর বিরিয়ানি নেই,
স্রেফ মায়ের হাতের ডাল ভাত আলুভাজা। কিন্তু আপনারা যাঁরা সি. আর. পার্কে পুজো
দেখতে আসবেন, তাঁরা প্রাণ ভরে বিরিয়ানি খাবেন। ধৈর্য থাকলে দেড়শো লোকের পেছনে লাইন
দিয়ে ফুচকাও ট্রাই করে দেখতে পারেন। সাতদিন বাদে আমি যখন ফিরব তখন আমাকে সেই ফুচকা
খাওয়ার গল্প বলে জেলাস করবেন। আমি কিচ্ছু মনে করব না।
আপনাদের সবার পুজো
খুব খুব ভালো কাটুক, সবাই ভীষণ আনন্দে থাকুন এই কামনা নিয়ে অবান্তরে সাতদিনের
পুজোর ছুটি শুরু হল। টা টা বাই বাই, আবার যেন দেখা পাই।
janen didi,amar bohudiner ekta ichche chilo kolkatar baire theke pujo kemon hoy,seta onubhob korbo..hoyto kom ananda hobe,kintu obhigyota ta felar noy..ebare to sei ghotona e ghotte choleche..chennai te tabole kom moja korbo na? shashthi saptami raat obdi office e bose britisher sathe judhdho( ei re..swadhinota sangram noy,nehat e code er bhul niye bag bitonda),astami chennai er bengali club er pujoy natok,nabami te bangalore giye coorg er pahare chora...ei ar ki..ekanto bari na firte pere jotota ushul kore neowa jay..apni o archishman da bhalo thakben
ReplyDeleteঋতম, তোমার পুজো খুব ভালো কেটেছে আশা করি। কেমন হল তোমাদের নাটক? তুমি আমার আর অর্চিষ্মানের তরফ থেকে বিজয়ার অনেক অনেক শুভেচ্ছা নিও।
Deletenatok besh bhalo holo didi..shreya guhathakurtar gaaner por chilo bole bhebechilam lokjon sobai chole jabe,kintu bangla natok dekhar jonye sobai raat 11 ta obdi bose chilo.. apnake ar archisman da ke bijayar shubhechcha..pujor sob bhalo,sudhu ei tarpor ar office ese kaj korte mote ichche kore na
Deleteসি আর পার্কের পুজো - চেক
ReplyDeleteট্রাফিক পুলিশকে ভুজুং দিয়ে রেসট্রিকটেড এরিয়াতে গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়া - চেক
ফুচকা - চেক
বিরিয়ানি - চেক
সবে তো ষষ্ঠী গেল, বাকিটা ক্রমশ প্রকাশ্য
দেবাশিস, শুভ বিজয়ার অনেক প্রীতি, ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা জানবেন। আপনার বাকি পুজো কেমন গেল জানতে খুব কৌতূহল হচ্ছে।
DeleteC R Parker pujo dyakha ebong biriyani khawa sompurno hoechhe. Ebar Kolkatar thakur dyakhar pala. T
ReplyDeleteobe Mela Ground er komor bekano thakur je albaat ulto dike takiye achhe, eta lokkho korechhile? Osur roilo daandike, ar Dugga besh mon diye baa dikey nijer sinhotir dikey takiye achhen. Avant garde ar kakey bole!
Tui ki ebar Delhi te chhili Bimbabati?
Deleteবিম্ববতী, শুভ বিজয়ার অনেক কোলাকুলি নিও। মেলা গ্রাউন্ডের ঠাকুরখানি কী চমৎকার বল দেখি? আমি ওঁর কোমর থেকে দৃষ্টি সরাতে পারিনি তো, তাই ঠাকুর কোন দিকে তাকিয়ে ছিলেন সেটা খেয়াল করিনি।
Deleteআপনাকেও পুজোর অনেক অনেক শুভেচ্ছা। এবারে আপনাদের বিজয়া হয়ে যাওয়ার পরে আমি ঠাকুরের মুখ দেখতে পাব। :-(
ReplyDeleteআপনার কি ঠাকুরের মুখ দেখা হল, সুগত? সে হোক আর না-ই হোক, এই আমি আপনাকে শুভ বিজয়ার ভালোবাসা আর হ্যান্ডশেক জানিয়ে রাখলাম। খুব খুব ভালো কাটুক সামনের বছর।
Deleteশুভ বিজয়া !!!!
ReplyDeleteআপনাকেও শুভ বিজয়ার অনেক প্রীতি আর শুভেচ্ছা আত্মদীপ, আর মিঠাইয়ের জন্য অনেক অনেক আদর আর আশীর্বাদ।
DeleteShubho Bijaya... Tomar pujor kta din nischoi khub anonde ar mojate ketechhe. Pujor kdin amrao Delhi chhnue ektu ghure elam...
ReplyDeleteইচ্ছাডানা, শুভ বিজয়া, শুভ বিজয়া! কোথায় গিয়েছিলেন? বেড়ানোর গল্প আর ছবি পাব তো? আমি বাড়ি পৌঁছচ্ছি কাল, তারপর আপনার গল্প পড়তে চাই।
DeleteKuntala, tumi ki chhutir seshe phire esechho? Subho Bijoya!
ReplyDeleteরুণা, আমি ফিরছি আগামীকাল, অর্থাৎ কি না মঙ্গলবার। আপনাকেও আমার তরফ থেকে শুভ বিজয়ার অসংখ্য শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা জানালাম।
DeleteSubho bijoya.
ReplyDeleteআপনাকে শুভ বিজয়ার অনেক প্রীতি শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা, ঘনাদা।
Deleteইয়ে মানে আমি এপাড়ায় নতুন মুখ, পরপর বেশ কখানা লেখা পড়ে আর কমেন্ট করার লভ সাম্লাতে পারলাম না । হা হা হা মা দুর্গা বলেই নাকি অমনি করে দাঁড়াতে পেরেছে :D ...বেশ কয়েকটার সব কমেন্ট এই একজায়গায় করে দিছি বলে দুঃখিত ...বাপস বাংলায় টাইপ করারঅভ্যেস না থাকলে বেশ শাক্ত কাজ । অই রুমমেট এর গপ্প খানা সরেস। তবে রুম্ মেট না থাকার এক্তা বেজায় সুবিধে আছে বাংলা ল্যাদ খেয়ে চলে যায় ...এই ত আজ ৫ দিন ধরে আমি ভাত না বানিয়ে স্রেফ চা বিস্কুট পাউরুটি ডিম দিয়ে ছালিয়ে দিছহি। আর ওই জ বেড়ানোর জায়গা বললেন না আমার অমন অনে এ এ এক জায়গা আছে যেখানে আমি আবার যছাইলেও।।আমি ঘুরতে ঠিক ভালবাসি বলা ভুল ঘরে বেশিদিন থাকলে শরীর মনসব্বাই বিদ্রোহ ঘশনা করে।আমার একটা বেড়ানোর গল্প আপনাদের শোনানর ইছহে রইল, শুনতে না চাইলেও।
ReplyDeleteঅবান্তরের পাড়ায় আপনাকে সুস্বাগত জানাই। আসতে আজ্ঞা হোক, বসতে আজ্ঞা হোক। আপনি যে ভাতের বদলে চা বিস্কুট পাউরুটি খেয়ে চালিয়ে দিচ্ছেন এটাই প্রমাণ করে, আমাদের মিলবে। আপনার বেড়াতে যাওয়ার গল্পটা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে রইলাম। বেশি দেরি করবেন না কিন্তু।
Deleteশুভ বিজয়া। আশা করি পুজো খুব ভালো কেটেছে তোমার.. ছুটি শেষ তো..? পরের লেখাটার জন্য খুব অপেক্ষা করছি.. :)
ReplyDeleteশুভ বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই তোমাকেও, ঊর্মি। ছুটি অবশেষে শেষ। লেখা আসছে শীঘ্রই।
Delete