পুরোনো অবান্তরঃ মাবাবার রবিবার
অবান্তরের শুরুর দিকের একটা বিরাট অংশ
লেখা হয়েছিল বাংলা ভাষায়, ইংরিজি হরফে। সেগুলোকে এক এক করে বাংলা হরফ করার প্ল্যান করেছি আমি।
করতে গিয়ে লেখাগুলোর চেহারাও বিস্তর বদলাচ্ছে। এ সপ্তাহের পোস্টটি অবান্তরে প্রথম
বেরিয়েছিল দু’হাজার দশ সালের একুশে জুন। নাম ছিল শৈশব ভ্রমণ, আয়তন ছিল মাত্র
পাঁচশো ষাট শব্দ। ঝাড়তেমুছতে গিয়ে সে লেখা হয়ে গেল চোদ্দশো একাত্তর শব্দের।
আশা করি তার এই বর্ধিত বপু আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাবে না।
*****
বছরখানেক আগে এক রবিবার সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আমার মাবাবা
ঠিক করলেন তাঁরা কিছু একটা ‘ইন্টারেস্টিং’ কাজ করবেন। জলখাবারে রবিবাসরীয় পড়া,
পরোটা আলুভাজা খাওয়া, মাংস রান্না করে, খেয়ে, দুপুরবেলা খবরের কাগজ মুখে করে
গড়াগড়ি খাওয়ার থেকে বেশি ইন্টারেস্টিং কিছু।
আমার মাবাবার সঙ্গে
বেশিরভাগ বিষয়েই আমার চমকপ্রদ অমিল। নেহাত চেহারার মিল না থাকলে কেউ বিশ্বাস করত
না আমি এঁদেরই যুগ্ম উদ্যোগ। সবথেকে বড় অমিলটা হল এঁরা দুজন যা করবেন বলে ঠিক করেন
সেটা করেই ছাড়েন, না করা পর্যন্ত দম ফেলেন না। আমার আবার একবারে কিছু না হলে দেড়বার
সেটা নিয়ে পড়ে থাকার বদভ্যেস নেই। যাই হোক, বাবামা ঠিক করলেন ইন্টারেস্টিং কাজ
করবেন এবং ঠিক করা মাত্র ইন্টারেস্টিং কাজ খোঁজা শুরু হল।
ইচ্ছে থাকলেই উপায়
হয়। চা খেতে খেতে দুজনের মাথায় একই সঙ্গে ব্রেনওয়েভ খেলে গেল।
বাবা লাফিয়ে উঠলেন,
‘খিদিরপুর গেলে কেমন হয়?’
মা ঝাঁপিয়ে পড়লেন,
‘শিবপুর গেলে কেমন হয়?’
আমার মাবাবার
ইন্টারেস্টিং কাজের দৌড় দেখে আপনি মুখ ব্যাঁকানোর আগেই বলি, খিদিরপুর শিবপুর আমার
আপনার কাছে হেলাচ্ছেদ্দার হতে পারে, আমার মাবাবার কাছে ওই দুটোর থেকে ভালো জায়গা
পৃথিবীতে আর তৃতীয়টি নেই।
মায়ের ছোটবেলা
কেটেছে শিবপুরের এক ভাড়াবাড়ি থেকে আরেক ভাড়াবাড়িতে ঘুরে ঘুরে আর বাবা বড় হয়েছেন
খিদিরপুরের সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়েজের সরকারি কোয়ার্টারসে। সত্তর সালের গোড়ার দিকে,
আরও অনেক বাবামার মতো আমার দাদুদিদিমাও যখন এক রাতে সিদ্ধান্ত নিলেন, বাস ওঠানো
ছাড়া ছেলেমেয়েদের সুরক্ষিত রাখার আর কোনও উপায় নেই, সেদিন থেকে শিবপুরের সঙ্গে
মায়েদের সমস্ত সম্পর্ক ঘুচল। আর রেলওয়ে কোয়ার্টারস, কারই বা শেকড় কবে বসেছে
সেখানে। কাজেই প্রায় পঞ্চাশ বছর বাদে, ফেলে আসা শৈশবকৈশোরের সঙ্গে দেখা করে আসার
আইডিয়াটা একেবারে ফেলে দেওয়ারও নয়।
টসে মা জিতলেন তাই
সকালবেলা যাওয়া হল শিবপুর। মোড়ের মাথার চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে মা যখন ‘জীবনদা’র
পাঠশালা’র খোঁজ করলেন, দোকানদার আর দোকানের বেঞ্চিতে বসে থাকা খদ্দেরদের চোখ কপালে
উঠল। সাইকেল থেকে এক পা মাটিতে ছুঁইয়ে কিছু ছোকরা দাঁড়িয়ে ছিল, তারা কেবল কাঁধ
ঝাঁকিয়ে বলল, ‘পাঠশালা এখানে কোথায় পাবেন মাসিমা?’
মা পাঠশালায় পড়তে
যেতেন শুনে প্রথমটা আমি একেবারে আকাশ থেকে পড়েছিলাম।
তোমাকে দেখে এত আদ্যিকালের
লোক বলে তো মনে হয় না মা?
নই তো মনে হবে কী
করে। দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলেছিলেন মা।
তোমরা সবাই পাঠশালায়
যেতে নাকি?
কেউ যেত না, খালি
আমি যেতাম।
রহস্যটা খুলে
বলেছিলেন মা। আমার দাদুদিদিমার ন’টি সন্তান ছিল। প্রথম চারপাঁচটির খেয়াল তারা
রাখতে পেরেছিলেন, শেষ চারপাঁচটির পারেননি। কোনও সুস্থ মানুষের পক্ষেই পারা সম্ভব
না। আমার মা ছিলেন নয়ের মধ্যে আট নম্বর। গোড়ার দিকে নাকি কেউ খেয়ালই করেনি যে ইস্কুলে
যাওয়ার বয়স হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও মা ইস্কুলে যাচ্ছেন না। দাদাদিদিরা যখন ভাত খেয়ে
চুল আঁচড়ে স্কুলকলেজে চলে যাচ্ছে, মা বাগানে গাছের ছায়ায় ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হঠাৎ
দিদিমা একদিন খুন্তি নাড়তে নাড়তে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাগানের দিকে তাকিয়ে
মেয়েকে সেখানে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মণিমা, তুমি ইস্কুলে যাও নাই?’
ইস্কুল? মণিমা হাঁ করে বাগান থেকে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। দিদিমা আঁতকে উঠে রান্না
যেমন কে তেমন ফেলে রেখে আলনা থেকে ভালো শাড়ি টেনে নামালেন, হাত ঘুরিয়ে একখানা
খোঁপা বাঁধলেন, তারপর মণির হাত ধরে সোজা এসে হাজির হলেন জীবনদার পাঠশালায়।
পাঠশালায় মায়ের শিক্ষাদীক্ষা শুরু হল। এইবার দিদিমা তক্কেতক্কে ছিলেন। পরের বছর স্কুলের সেশন শুরু হওয়ার সময় আসতেই মেয়েকে পাঠশালা থেকে ছাড়িয়ে
সোজা নিয়ে গেলেন প্রসন্নকুমারী বালিকা বিদ্যালয়ে।
জীবনদা'র পাঠশালা
নিয়ে মায়ের বেশি স্মৃতি নেই। যেটা আছে সেটা দুঃখের।
মায়ের ইস্কুলে ভর্তি
হওয়া সংক্রান্ত দুর্ঘটনাটার পর বাড়িতে একটা আতঙ্কের ঢেউ বয়ে গেল। বড়মাসি মেজমাসি
ততদিনে পরের বাড়ি বিদেয় হয়েছেন, বড়মামা চাকরিতে ঢুকে পড়েছেন। বাবামায়ের ওপর আর
ভরসা করা যাবে না বুঝে ভাইবোনদের ভবিষ্যতের ভার সেজমাসি তুলে নিলেন নিজের হাতে।
খুব কম মানুষই জীবনে
নিজের ‘ভোকেশন’ খুঁজে পায়, আমার সেজমাসি সেই বিরল প্রজাতির একজন। দিদিমণি ছাড়া আর
কিছু মাসি হতেই পারতেন না। ছোটবেলা থেকেই মাসির মধ্যে শাসকভাব প্রবল ছিল। সেজমাসি
কড়া হাতে ভাইবোনের পড়াশোনা সামলাতে লাগলেন। রাতারাতি বাড়ির পরিবেশ মারাত্মক গম্ভীর
হয়ে উঠল। হাফইয়ার্লি, অ্যানুয়াল, মান্থলি টেস্ট সব পরীক্ষায় কে কোন বিষয়ে কত নম্বর
পাচ্ছে (এবং যা পাওয়া উচিত তার থেকে কত কম পাচ্ছে) সে সব মাসির নখাগ্রে বিরাজ করতে
লাগল।
শুধু আমার মায়ের বেলায় মাসি একটু ফাঁপরে পড়ে গেলেন।
বাকিদের স্কুলে খাতা-সিস্টেম। অংক ঠিক হচ্ছে কি
না, বানান ভুল হচ্ছে কি না, বাক্যরচনা ভালো হচ্ছে কি না – সে সব প্রমাণ লোপাটের
কোনও উপায় নেই। জীবনদার পাঠশালায় খাতাপেনসিলের পাট নেই। স্লেট পেনসিল। সে স্লেটে
কী হচ্ছে না হচ্ছে ভগবানেরও জানার উপায় নেই। একবার ন্যাতা বুলোলেই হিস্ট্রি ডিলিট।
সেজমাসি হার মেনেও
মানলেন না। নিয়ম জারি করলেন, আগের গুলো যায় যাক, অন্তত লাস্ট পিরিয়ডে যা যা লেখা হবে সেটা না
মুছে বাড়ি নিয়ে আসতে হবে।
সেদিন লাস্ট পিরিয়ডে
বিয়োগের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন জীবনদা। তেরো থেকে ছয় বাদ দিতে হবে। এত সোজা অংক দেখে
মা উৎফুল্ল হয়ে পড়লেন। দ্রুত কর গুনে উত্তরের জায়গায় আট বসিয়ে সবার আগে স্লেট নিয়ে
হাজির হলে জীবনদার সামনে।
যেমন মেয়ে তার তেমনি
মা-ই তো হবে?
জীবনদা মায়ের
খড়িপেনসিল কেড়ে নিয়ে আটের ওপর একটা গোল্লা পাকিয়ে দিলেন। তাতেও তাঁর প্রতিহিংসা
মিটল না। গোল্লার ওপর আবার একখানা পেল্লায় ঢ্যাঁড়াও কেটে দিলেন।
বোনকে বাড়ি নিয়ে
যেতে এসে পাঠশালার বাইরে দাঁড়িয়ে গোটা ঘটনাটা দেখলেন ছোটমামা। ছোটমামা বয়েজ স্কুলে
ক্লাস থ্রিতে পড়তেন এবং পাঠশালায় পড়া বোনের প্রতি সর্বক্ষণ অপরিসীম তাচ্ছিল্য বোধ
করতেন।
ভাইবোন হেঁটে হেঁটে
বাড়ি ফিরে এল। সারা রাস্তা কেউই কারও সঙ্গে কথা বলল না। ছোটমামার মনে কী ভাব
হচ্ছিল জানি না, বাড়ি যত ঘনিয়ে আসতে লাগল আমার মায়ের বুকের মধ্যে সেজমাসির
রক্তবর্ণ দৃষ্টি তত প্রখর হয়ে জ্বলতে লাগল।
ভয়ে দিশেহারা হয়ে
পড়লে মাথা গুলিয়ে গিয়ে লোকে নানারকম ভুল ডিসিশন নিয়ে ফেলে, আমার মা-ও ফেললেন। ডানহাতে
স্লেট ধরা ছিল। (‘স্কুলব্যাগ ছিল না?’ জিজ্ঞেস করায় মা এমন জোরে হেসেছিলেন যে হাসতে
হাসতে মায়ের চোখে জল এসে গিয়েছিল। আমার মুখটা কান্নাকান্না হয়ে যাচ্ছে দেখে মা
তাড়াতাড়ি বলেছিলেন যে ব্যাগ না-থাকার সঙ্গে গরিব হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। শিবপুরের
আচ্ছা আচ্ছা বড়লোকের ছেলেমেয়েরাও তখন বইখাতা হাতে নিয়ে হাওয়াই চটি পরে দৌড়ে দৌড়ে
স্কুলে যেত, মায়েরা তো রিফিউজি। মিনিমাম সেভেন এইটে না উঠলে তখন ব্যাগ নিয়ে স্কুলে
যাওয়ার চল ছিল না। গেলেই বরং একটা হাসির ব্যাপার হত।)
স্লেটের অংক কষা
দিকটা ফ্রকের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন মা। যাতে হাঁটার সময় ফ্রকে ঘষা লেগে ভুল অংকের
চিহ্ন লোপাট হয়ে যায়।
বাড়ি এসে চটি খোলার
ধৈর্যটুকুও দেখাতে পারলেন না আমার ছোটমামা।
দিদি, মণি না অংকে
গোল্লা পাইসে।
মাথায় বাজ পড়লেও
বোধহয় সেজমাসি এত স্তম্ভিত হতেন না।
কই দেখি?
আশেপাশে যারা খেলাধুলো,
মারামারি ইত্যাদিতে ব্যস্ত ছিল, তারা সব ফেলে ছুটে এল। অন্যের হেনস্থা দেখার থেকে বেশি মজা আর কোনও খেলায় নেই। সেজমাসি
চোখ পাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন, ছোটমামা অসম্ভব তৎপরতার সঙ্গে বোনের হাত থেকে স্লেট
কেড়ে নিয়ে মাসির হাতে ধরিয়ে দিলেন, সবাই স্লেটের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
অংকের চিহ্ন নেই,
চকখড়ি ঘষটানো স্লেটে একটা গোল্লার ছায়া দেখা যাচ্ছে।
মুইস্যা আনসে!
আমার ছোট্ট মায়ের
কপালে তারপর যা জুটল সে গল্প রসিয়ে রসিয়ে বলার কলজে আমার নেই। ওই ট্রমা নিয়ে নিজে
বড় হয়ে মা যে আবার আমাকে বড় করেছেন সেটাই আশ্চর্যের। একে অংকে গোল্লা, তার ওপর এমন
অসততা! সবাই একবাক্যে ঘাড় নেড়ে বলল, চাকরিবাকরি পাওয়ার আশা তো ছেড়েই দাও, পেলেও
নির্ঘাত তহবিল তছরুপ করে জেলে যাবে।
সাইকেল হেলিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকা ছোকরারা কাঁধ ঝাঁকাল, কিন্তু দোকানে বসা কোনও কোনও প্রৌঢ়ের ভুরু
কুঁচকে গেল।
‘জীবনদা’র পাঠশালা! ওরে
বাপরে! সে কী আজকের কথা? সে কী আর থাকে দিদি?’
তাঁদের কাছ থেকে
রাস্তা জেনে নিয়ে মাবাবা এক বহুতলের সামনে এসে দাঁড়ালেন। এরই তলায় চাপা পড়েছে
মায়ের প্রথম স্কুল। জীবনদা’র পাঠশালা।
বিকেলবেলা খিদিরপুর
গিয়েও অসম্ভব মজা হল। বাবাদের কোয়ার্টার দেখা হল, শান্তিকাকুদের কোয়ার্টার দেখা হল,
যে বটগাছের তলায় মাদ্রাজিদের কালীপুজো হত সে বটগাছ দেখা হল, যে পুকুরে বাবার সঙ্গে
কে কতক্ষণ জলের তলায় ডুবে থাকতে পারে কমপিটিশন দিতে গিয়ে সেজকাকু আরেকটু হলেই মরে
যাচ্ছিলেন সে পুকুর দেখা হল, যে ইনস্টিটিউট বিল্ডিং-এ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এসেছেন
শুনে ঠাকুমা উনুনে বসানো ভাত ফেলে রেখে দৌড়েছিলেন, সেই বিল্ডিংও দেখা হল।
দেখাটেখা সাঙ্গ করে
বাবামা ফিরে আসছেন এমন সময় পেছন থেকে কে যেন চেঁচিয়ে ডাকল,
‘চন্দন?’
বহুদিন বাদে নিজের
ডাকনামটা শুনে বাবা চমকে ফিরে তাকালেন। খানিক দূর থেকে এক ভদ্রলোক হেঁটে আসছেন।
ছোট্টখাট্ট ভদ্রলোক, মাথা বাবার বুকের কাছে আসতে না আসতেই ফুরিয়ে গেছে। মুখে
অনিশ্চিত হাসি।
‘চন্দন না?’
‘হ্যাঁ, কিন্তু . .
.’
ততক্ষণে ভদ্রলোকের
মুখ জুড়ে হাসি ছড়িয়ে পড়েছে।
‘সর্বনাশ,
গুন্ডাপ্পা!’
গল্পটা এই পর্যন্ত
বলে আলমারি থেকে লুচিভাজা অ্যালবামটা বার করে এনেছিলেন বাবা। পাতায় পাতায় সাঁটা
হলদে মেরে যাওয়া সাদাকালো ছবি। চেয়ারে বসা আমার অবিশ্বাস্য রকম কমবয়সী ঠাকুমাকে
ঘিরে দাঁড়ানো হাফপ্যান্ট-পরা জেঠু, বাবা, কাকু। ঠাকুমার কোলে পুঁটলির মতো পিসি।
ছোটকাকু তখনও সিনেই নেই। অ্যালবামের খসখসে মোটা কালো পাতাগুলোকে সাবধানে উলটে উলটে
এক জায়গায় এসে থামলেন বাবা। দুটো ছেলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুজনেই টিংটিঙে
রোগা, দুজনের পরনেই স্কুলের ইউনিফর্ম। সাদা শার্ট, নীল
হাফপ্যান্ট। নীল অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না। ধূসর হয়ে গেছে। একজনের মাথা আরেকজনের বুকে
কাছে এসে থেমে গেছে।
‘এই হচ্ছে গুন্ডাপ্পা।
কত ইডলি খেয়েছি ওর মায়ের হাতে।’
দুজনে দুজনকে জড়িয়ে
ধরলেন। মাঝখান থেকে পঞ্চাশটা বছর হুস করে মিলিয়ে গেল। গুন্ডাপ্পা মায়ের সঙ্গে আলাপ
করলেন। দু’হাত বুকের কাছে জড়ো করে অনেক বাঙালির থেকে স্পষ্ট বাংলায় বললেন,
‘নমস্কার বৌদি। খুব ভালো লাগল আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে।’
রাস্তায় দাঁড়িয়েই
অনেক গল্প হল। আরও কত কত লোক, কোথায় কোথায় চলে গেছে। গল্প ফুরোলে গুণ্ডাপ্পার পিঠ আরেকবার
জড়িয়ে ধরে বাবা বললেন, ‘ভাগ্যিস ডাকলি। তুই আমাকে চিনলি কী করে বলতো?’
গুন্ডাপ্পা মুচকি
হাসলেন।
‘হাইট দেখে।’
বাবামা যা চেয়েছিলেন
তাই হল। দারুণ ইন্টারেস্টিং কাটল তাঁদের রবিবার। আমি খালি উদাস হয়ে বসে বসে ভাবতে
লাগলাম, মায়ের হাসি আর বাবার হাইট, কোনওটাই আমার ভাগ্যে জুটল না কেন কে জানে।
Choto belai amar o pora sonai eto mon chilo je amar baba ma rone vongo diye amar borno porichoi er jonne pathsalai pathiyechilen!!!!
ReplyDeleteহাহা। পাঠশালা তার মানে এই সেদিনও ছিল, বা এখনও আছে।
Deleteমণির ছবি আঁকার গল্পটা আমার খুব পছন্দের । আজকেরটাও খুব ভাল । Delicacy তে কাল খেলাম ।
ReplyDeleteমিঠু
আরে, কেমন লাগল ডেলিকেসি, মিঠু? কী কী খেলে? টেংগা খেলে নাকি?
Deleteএইরকম প্ল্যান আমার খুব পছন্দের.. কাকু কাকিমাকেও পছন্দ হয়ে গেল.. :)
ReplyDeleteহাহা, থ্যাংক ইউ, ঊর্মি।
Deletekhub bhalo ei lekhata :) tinni
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, তিন্নি।
Deletedarun berie asa to. :-) , Pathsalar onko kosa sanghatik tobe.
ReplyDeleteপড়াশোনা ব্যাপারটাই সাংঘাতিক, ইচ্ছাডানা। সাংঘাতিক রকমের বাজে।
Deleteখুব ভালো লাগল। আসল লেখাটার তো ভোল পাল্টে দিয়েছেন একেবারে! আমি আমার জীবনের প্রথম ইস্কুলে গেছি কয়েকবার। ক্লাসরুম, টেবিল, চেয়ার সব দেখেই মনে হয় এইটুকু জায়গায় আমরা বসতামই বা কি করে, আর তখন এগুলোকে এত বড়ই বা লাগত কেন? একটা মজার কথা কি জানেন, ওই খিদিরপুরের রেলের কোয়ার্টারে আমি কয়েকমাস আগেই গিয়েছিলাম, আমার এক বন্ধুর বিয়ে ছিল। এইটা আর এইটা ঐখানেই তোলা ছবি।
ReplyDeleteআরে আমার তো ক্লাস সেভেনএইটের ক্লাসরুম দেখলেও ওই রকম মনে হয়। তখন বাড়িঘরদোর সিলিংগুলোকে কেমন গ্র্যান্ড লাগত, এখন দেখলে মনের মধ্যে কেমন একটা চুপসোনো বেলুন ভাব হয়।
Deleteছবিগুলো খুব ভালো হয়েছে। খিদিরপুরে গেলে গঙ্গা দেখাটা আমার অন্যতম টাইমপাসের মধ্যে পড়ত।
aamio chotobelay ek bochor pathshaala y porechhi...tobe hindi pathshaala. sekhaneo khata pottor er balai chilo na....shob kichu slate e lekho. tate a, aa likhte likhte sabai ek sange gola phatiye chitkaar kortam a se anar, aa se aam :)
ReplyDeleteতোমার বাবু হয়ে বসে সিরিয়াস মুখে অ সে আনার, আ সে আম পড়ার দৃশ্যটা মনে করে ব্যাজার হয়ে থাকা মনটা ভালো হয়ে গেল, শম্পা। থ্যাংক ইউ।
DeleteEi dhoroner lekha gulo apni boro bhalo lekhen. Apnar rishra-r bari jawar bornona-ta o amar boro bhalo lagechilo. Kirokom buker modhye su-batash boye jai, porle.
ReplyDeleteধন্যবাদ, ধন্যবাদ, ঘনাদা।
Deleteখুব সুন্দর লাগলো কুন্তলা। :)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, অরিজিত।
Deleteকি আর বলবো ...অসাধারণ
ReplyDeleteআমার বেড়ে ওঠা অমন ই এক রেল কলোনি তে। সরকারি খাতের হিসেবে সেই অদ্ভুত জায়গাটার ও যেন বিবর্তন ঘটে গেছে।
অনেকদূরের বন্ধুরা তাও প্রতি মহাষ্টমী সেখানে কাটাই। অরণ্য, চা-বাগান, নদী আর শরতের হিম ... আর আমাদের শৈশব, কৈশোর ও থমকে যাওয়া সময়- প্রতিবছর শুদ্ধ করে আমাকে ।
আপনার ছোটবেলা তো দারুণ জায়গায় কেটেছে মনে হচ্ছে হীরক। জায়গাটার নাম জানতে পারি? এ বছরও কি গিয়েছিলেন সেখানে? আশা করি আপনার পুজো খুব ভালো কেটেছে। আমার বিজয়ার শুভেচ্ছা জানবেন।
Deleteআসলে দিদি ব্যাপারটা কি জানেন ত, সৌন্দর্য অনেকটা বিভ্রম। তাই আমি যাকে হামিন অস্ত বলে উদারহস্তে একশয় একশ দিয়ে দিতে পারি, আপনি তাকে দূর হ লক্ষ্মীছাড়া বিড়ালীনি বলে হেস্তনেস্ত করতে পারেন।
Deleteতবে এটুকু বলতে পারি যে জায়গাটা কোনও বর্ণাঢ্য রুপসী নয় যাকে সুমো ভাড়া করে দেখতে যাওয়া যায়, তবে অদ্ভুত স্বাভাবিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে যার সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়া যায় সাইকেল এর সিট এ বসে গান গাইতে গাইতে । এখানে সৌন্দর্য থাকে আত্মীকরনে। আর, নির্জনতা... সেই অপার্থিব দুষ্প্রাপ্য নির্জনতা ...
এছাড়া ব্যাক্তিগত সুখদুঃখ, হাসিকান্না ভরা অতীতের কঙ্কালচয় স্মৃতির পক্ষপাতদুষ্ট সমর্থন ইত্যাদি ইত্যাদি ত রয়েছেই। তবুও যদি কদিনের জন্য সত্যি একলা হতে চান, তাহলে চলে আসতে পারেন।
এবারো জড় হয়েছিলাম কাটা ঘুড়ি র সুতোয় টান দিতে ... ছবিছাবা কিছু রয়েছে আমার ফেসবুক এ (https://www.facebook.com/hashtag/ar_konokhane?source=feed_text&story_id=860678727278607)
জায়গাটার নাম আলিপুরদুয়ার জংশন।
ওহ হো ... এত কথার ভিড়ে আসল কথাটাই বলতে ভুলে গেছি।
Deleteআপনার জন্য ও রইল বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
বাঃ, আপনি উত্তরের লোক, গুড গুড। ওই দিকটা আমার বড় প্রিয়। বেশি দেখা হয়নি, কিন্তু দেখার প্রবল ইচ্ছে আছে মনে। নিশ্চয় যাব একবার। আর আপনি যেমন বললেন, একখানা সাইকেল ভাড়া করে এদিকসেদিক যাব আর গুনগুন করে গান গাইব। ঘুরে এসে আপনাকে জানাব কেমন লাগল।
Delete