চম্পারণ মাটন আর বাংলা ব্লাডহাউন্ড
দেখার মতো রোদ্দুর উঠেছিল
শনিবার। ঘরের ভেতর থেকে, টিভির সামনে থেকে, ল্যাপটপের নিচ থেকে লোককে কান ধরে
বাইরে বার করে আনার মতো রোদ্দুর। সোমবারের সকাল ন'টায় অত
জ্যাম দেখিনি কখনও শনিবার দুপুর আড়াইটেয় যেমন দেখলাম। ফ্লাইওভারের ওপর সার দিয়ে
দাঁড়িয়ে রয়েছে বাস মার্সিডিস ঠেলাগাড়ি। নড়ছে না, নড়বে যে এমন
আশাও করা যাচ্ছে না। আমাদের অটো ভাইসাব দেখলাম রাস্তাঘাট ভালোই জানেন। আমরা গুগল
ম্যাপ দেখে তাঁকে বুদ্ধি দিতে যাব এমন সময় তিনি বললেন, পাতা
হ্যায় পাতা হ্যায়, ও খেলগাঁওকা রাস্তা লেকে সিরি ফোর্টকে
বগলসে নিকলকে গার্গী কলেজকে সামনেসে গুজরকে বাঁয়ে মুড়না হ্যায় তো”
একেবারে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি।
ভাইসাবের কথামতো বাঁয়ে মুড়তেই এসে গেল শাহপুর জাট ভিলেজ।
শাহপুর জাট ভিলেজ হচ্ছে বানানো ভিলেজ। সরু সরু গলি,গলির ওপর হামলে পড়া দোতলা তিনতলা চারতলা বাড়ি। মাথার ওপর ইলেকট্রিক তারের কুণ্ডলীর ফাঁক দিয়ে তাকালে এই দেখবেন বারান্দায় শুকোচ্ছে ফুলছাপ ওয়াড় পরা লেপতোশক আবার তার পাশেই দেখবেন সেই প্লাস্টারচটা বারান্দার পাশের বারান্দার বেগুনি দেওয়ালে সাঁটা বব মার্লির বিমূর্ত পোস্টার।
বেশিক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে
চলার উপায় নেই অবশ্য, পায়ের তলায় এবড়োখেবড়ো ইঁটের রাস্তায় হোঁচট খেতে হবে। পথের পাশে সরু
উন্মুক্ত নর্দমায় এসে মুখ থুবড়ে পড়া জলের পাইপ থেকে চট করে চোখ সরিয়ে নিয়েই দেখবেন ROFL নামের হাসিখুশি রংচঙে দোকান, তার পাশে 'কফি গ্যারেজ' নামের এক ভয়ানক বিষণ্ণ চেহারার ক্যাফে, আবার তার পাশেই, খুপরি ঘরের পর্দাটানা
দরজার পাশে সারি দিয়ে গুছিয়ে রাখা তিনজোড়া হাওয়াই চটি। দেখলেই মালিকদের সম্পর্কে
একটা স্পষ্ট ছবি ফুটে ওঠে মনের ভেতর। যে দু'জোড়া চটির আয়তন
ভদ্রসভ্য, আকৃতি মলিন, বোঝা যায় তাদের
মালিকদের খেটেখুটে খেতে হয়। পাশে রাখা একটা ছোট খেলনা মতো লাল চটি। দেখলেই বোঝা
যায় এর মালিকের কোনও কাজ নেই, খালি গলির ভেতর খেলে বেড়ানো
ছাড়া। চটির লাল রঙের জেল্লা দেখে বোঝা যাচ্ছে খেলার উৎসাহে বেশির ভাগ সময়েই চটি
পায়ে গলানোর কথা মনে থাকে না।
এই শাহপুর জাট ভিলেজেই হচ্ছে
দ্য পটবেলি রুফটপ রেস্টোর্যান্ট। এস্ট্যাবলিশমেন্ট টাইপঃ ক্যাজুয়াল ডাইনিং, কুইজিনঃ
বিহারি। প্রাচ্য পাশ্চাত্যের খাবার খেতে এমন হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াই, অথচ আমাদের পাশের যে রাজ্যটা আছে তার খাবার কখনও খাই না। না বাইরে, না ঘরে। ব্রেকফাস্টে মুয়েসলি আমরা কেমন টপ করে আয়ত্ত্ব করে নিলাম
অথচ ছাতুর শরবৎ কেন আমাদের মেনুতে মাথা গলাতে পারল না সেটা একটা রহস্য। খোদ দিল্লি
শহরের বুকে সেই বিহারি রান্নাবান্নার একটা দোকান খুলেছে এবং বেশ সাড়া ফেলেছে শুনে
আমাদের অনেকদিন ধরেই ইচ্ছে হচ্ছিল সে দোকানে যাওয়ার।
গলির গলি তস্য গলি পেরিয়ে
অবশেষে একটা চৌমাথা মতো জায়গায় যখন পৌঁছলাম আমরা তখন হাতের জি পি এসের মহিলা বলে
চলেছেন, "ইউ
হ্যাভ অ্যারাইভড, ইউ হ্যাভ অ্যারাইভড" কিন্তু
কোথায় পটবেলি। বুঝলাম এখানে ভিলেজের নিয়ম চলে, জি পি এস দিয়ে
খানিকটা হবে, শেষরক্ষা করবে চণ্ডীমণ্ডপের জমায়েত.নয়তো চানাচুর আর লজেন্সের
বয়ামের পেছনে মুখ লুকিয়ে বসে থাকা দোকানি। তাও না পাওয়া গেলে এস টি ডি আই এস ডি
বুথ। দুঃখের বিষয় শাহপুর জাটের মতো আধুনিক গ্রামে সে জিনিসও আজকাল পাওয়া দুষ্কর
হয়ে উঠেছে, কিন্তু যেটা এখনও বহাল তবিয়তে
বর্তমান সেটা হচ্ছে পানগুটকার দোকান। পানওয়ালা ভাইসাব দেখিয়ে দিলেন, জি পি এস ঠিকই
বলেছিল, আমরা সত্যিই এসে গেছি, শুধু
আসিইনি, পটবেলি রুফটপের যাওয়ার সিঁড়ির ঠিক মুখটায় দাঁড়িয়ে
আছি। আশেপাশে কোথাও কিছু নামধাম লেখা নেই, এত নামকরা দোকান? আমাদের দ্বিধা দেখে ভাইসাব আকাশের দিকে আঙুল তুলে দেখালেন। আঙুল
বরাবর ঘাড় উঁচিয়ে দেখি তিনতলা উঁচুতে দেওয়াল থেকে একটা জং ধরা বোর্ডে আবছা রং দিয়ে
লেখা আছে বটে 'পটবেলি'।
ভাইসাবকে ধন্যবাদ দিয়ে আমরা
সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে শুরু করলাম। এত সরু যে পাশাপাশি দুজনে হাঁটা যায়
না, এত খাড়া যে চারতলা উঠতে গিয়ে হাঁফ ধরে যায়, এত অসমান যে সিঁড়ির দিকে না তাকিয়ে পা ফেললে ঠোক্কর খাওয়া অবধারিত। উঠতে উঠতে দোতলায় ওয়াশরুম, তিনতলায়
রান্নাঘর, চারতলায় পৌঁছে খাওয়ার জায়গা। চড়তে চড়তে দেওয়ালের
রং বদলাতে লাগল। দোতলায় আনমনা আকাশি, তিনতলায় সচেতন সবুজ, চারতলায় পৌঁছতে পৌঁছতে একেবারে ইন্টিরিয়র ডেকরেটরের ঝলমলে অথচ
মাপমতো মলিন ইয়েলো অকার। সে অকারের ম্লান আভা ঢেকে সারি সারি ফ্রেম করা ছবি, খবরের কাগজের শংসাসূচক প্রতিবেদনের কাটিং, গ্রামগঞ্জের
রান্নাঘর থেকে তুলে আনা সত্যিকারের রান্নাবাটির ছবি। কাঠ গোঁজা উনুনের সামনে বসে
হাতপাখা নাড়ছে ফুলছাপ আবক্ষ ঘোমটার আড়াল থেকে বেরোনো একটা হাত, পাথুরে
শিলনোড়ার ওপর ঘন সবুজ মিশ্রণের ওপর নোড়া চেপে ধরে আছে ম্যানিকিওরের মুখ না-দেখা দুখানা সবল হাতের পাঞ্জা। গোটা ছবিটা আলো করে
রেখেছে দুহাতের কবজি জোড়া বেলোয়ারি চুড়ির ঝাঁক।
চারতলায় খাওয়ার জায়গায় পা রেখে
প্রথমেই চোখে পড়ে জানালা। দেওয়াল জোড়া জানালা। সে জানালা দিয়ে যতদূর দেখা যাচ্ছে
ততদূর দেখা যাচ্ছে ভারতবর্ষের সাত নম্বর সবুজতম শহরের মহীরূহদের মাথা। নিচের ধোঁয়া, ধুলো, হর্নের আওয়াজ সেই পুরু সবুজ চাদরের তলায় আটকা পড়ে গেছে। আমাদের কানে এসে
পৌঁছচ্ছে না।
শাহপুর জাট ভিলেজের “শ্যাবি হিপস্টার”
লুকের সঙ্গে মিশ খাওয়ার জন্য একেবারে অর্ডার দিয়ে বানানো দোকান পটবেলি
রুফটপ ক্যাফে। রঙের পোঁচ দেওয়া কাঠের চেয়ার, ফোল্ডিং টেবিল। চেয়ারের পিঠে লালহলুদ নীলসবুজ শাটিন কাপড়ের কুঁচি দেওয়া ঢাকনা। টেবিলে
টেবিলে রং করা খালি বোতল শো পিস হিসেবে দিব্যি মানিয়ে গেছে।
খাবার এসে গেল। একথালা
লিট্টিচোখা, একথালা চম্পারণ
মাটন। লিট্টিচোখার প্লেটে লিট্টি আর চোখা ছাড়াও আছে বেগুনভর্তা আর এক বাটি ভর্তি
ছোলার ডাল। চম্পারণ মাটন এসেছে গোলগোল মোটা
মোটা ডালের দানার পুর ভরা গোল পুরু বাদামি পরোটা আর টমেটো পেঁয়াজ লেবুর রস দিয়ে
মাখা টমেটোপেঁয়াজের কাচুম্বর আর ঠাণ্ডা, কুড়কুড়ে বুঁদির রায়তা।
কাঠকয়লার আগুনে সেঁকা আটার
আবরণে কামড় বসাতেই ভেতরের ছাতুর পুর গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়ল জিভের ওপর।
সুস্বাদু, মশলাদার ছাতু।
হ্যাঁ, একটু শুকনো, কিন্তু সে খামতি
পূরণ করার জন্য সঙ্গে আছে নরম বেগুনপোড়া আর আলুচোখা। এ জিনিস একথালা খেয়ে একঘটি জল
গলায় ঢেলে নিলে গায়ে যে শক্তি হবে কোনও অ্যানিম্যাল প্রোটিনের সাধ্য নেই তার সঙ্গে
টক্কর দেওয়ার।
চম্পারণ মাটন। নরম, গরম এবং ঝাল। এ
ঝালে কোনও রাখঢাক নেই, নেই কোনও সূক্ষ্মতার ভড়ং। ফ্রেঞ্চ
রাঁধিয়েরা শুনেছি রান্নার সময় সুঘ্রাণের পরত তৈরি করেন। সূক্ষ্মতার মাত্রা বুঝে
রান্নার সময় রসুনের কোয়া কড়াইয়ে দেওয়া হয়, কিংবা রান্নাঘরের
কোণে রেখে দেওয়া হয়। এ মাংসে সে রকম কোনও মাপজোক
নেই। চম্পারণের গ্রামে যখন জাঁকিয়ে পড়বে জাড়, মাঠের ঘন কুয়াশায় মিলেমিশে যাবে রান্নাঘরের দালানের উনুনের কাঠকয়লার ধোঁয়া, তখন কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে দূরের রান্নাঘরের বারান্দায়
হিটার/ব্লোয়ার ছাড়া, লণ্ঠনের আলোয় বসে রাতের খাওয়া খেতে হলে
এর থেকে কম ঝালে কাজ দেবে না।
পরোটার পাশ থেকে একটুখানি ছিঁড়ে
চম্পারণের মাটনের ঝোলে ডুবিয়ে আমরা মুখে পুরলাম। আর অমনি অর্চিষ্মানের বাগবাজারি
জিভ আর্তনাদ করে উঠল, “ভাইয়া, এক সুইট লস্যি প্লিজ, জলদি!”
আমার বাঙাল জিভ উল্লাসে ফেটে পড়ল, মিলেছে
মিলেছে! এতদিনে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর দেখা মিলেছে! বুক ঠুকে সে হুংকার দিয়ে বলল, "কই কে কোথায় আছিস, আয় দেখি কেমন বাঘের বাচ্চা।” অর্চিষ্মানের প্লেটের পাশে চোখের জলে
ভেজা ন্যাপকিনের পাহাড় জমে উঠল, আমার চোখের কোণে দুফোঁটা জল এসে টলটল করতে লাগল। লস্যির গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে, হুসহাস করতে করতে আমরা খেতে থাকলাম। বাটি একেবারে চেঁছেপুঁছে সাফ করার আগে
থামলাম না।
খাওয়া শেষ করে বিল মিটিয়ে যখন
বাইরে বেরিয়ে এলাম তখন ঘড়িতে বাজে প্রায় সাড়ে চারটে। আমরা এখন বাড়ি যাব না। আমরা
এখন মেট্রো চেপে যাব লোদি রোডে। সেখানে ইন্ডিয়া হ্যাবিটাট সেন্টারে একটা জিনিস হবে। আমাদের নিয়ারেস্ট
মেট্রো স্টেশন হজ খাস, আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে
দূরত্ব দেড় কিলোমিটার।
আমি যে আমি, যে কিনা দুনম্বর থেকে এক নম্বর মার্কেটে যেতে গেলে ভাবি আহা একটা অটো পেলে ভালো হত, সেই আমি ঝাঁপিয়ে পড়ে বললাম, "চল হেঁটেই মেরে
দিই।" আমাদের পেটে এখন ছাতুমাখার শক্তি, পায়ের নিচে কংক্রিট আর মাথার ওপর রোদ্দুরে আমরা ডরাই না। অদৃশ্য গামছায়
কোমর কষে বেঁধে আমরা হাঁটতে আরম্ভ করলাম, পথ দুহাত বাড়িয়ে আমাদের আপন করে নিল, সূর্য মাথার ওপর
গনগন করে জ্বলতে জ্বলতে অভয় দিতে থাকল, "এগিয়ে চল এগিয়ে চল, ভয় নেই, আমি আছি, আমি
আছি।”
*****
সকালবেলা দরজা খুলে বারান্দায়
বেরিয়ে নিচু হয়ে খবরের কাগজটা তুলে নিয়ে, পেছন ফিরে, দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে, দরজা ভেজিয়ে, ও ঘর থেকে হেঁটে হেঁটে পর্দা সরিয়ে এ
ঘরে ঢুকে খাট পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে আমার যা দেখার দেখা হয়ে গেল। তিনটে চুরি, পাঁচটা খুন, চারটে জোচ্চুরি, সাতটা রাহাজানি। "ধুস্স্স্, কিস্সু নেই” বলে টিপ করে ঘুমন্ত অর্চিষ্মানের গায়ে
সেটা ছুঁড়ে মারতেই চোখ খুলে তড়াক করে উঠে বসে খপ করে কাগজখানা লুফে ফসফস করে তিনটে
পাতা উল্টে অর্চিষ্মান বলল, “কেন, এই
তো দেখছি একটা বেশ ভালো জিনিস আছে।”
আমি ততক্ষণে রান্নাঘরের
নায়াগ্রা জলপ্রপাতের মতো আওয়াজ করা কলটা খুলে কেটলিতে চায়ের জল ভরছিলাম, চেঁচিয়ে বললাম, "পড়ে রাখো, আমি গিয়ে শুনছি।
পাঁচ মিনিট পর ডানহাতে চায়ের
থালা, বাঁহাতে ওষুধের
ব্যাগ আর বগলে বিস্কুটের কৌটো ব্যালেন্স করে মুণ্ডু দিয়ে পর্দা সরাতে সরাতে ঘরে
ঢুকে আমি বললাম, “দেখি,কী ভালো জিনিস।”
শুনে মানতে হল, নাঃ জিনিস ভালো
বটে। হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকার উদ্যোগে সতেরোই আঠেরোই জানুয়ারি, শনিরবি দুদিন ধরে লোদি রোডের ইন্ডিয়া হ্যাবিটাট
সেন্টারে চলবে ক্রাইম রাইটারস’ ফেস্টিভ্যাল। ক্রাইম লেখার
অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, শিক্ষাদীক্ষা,
অভাবঅভিযোগ নিয়ে কথা বলবেন দেশীবিদেশী রহস্যলেখকেরা, ওয়ার্কশপ করে ক্রাইম লেখার খুঁটিনাটি ঘোরপ্যাঁচ হাতে ধরে শেখাবেন। সবথেকে
বড় কথা এসব দেখতেশুনতে পয়সা, পাস কিচ্ছু লাগবে না।
অর্চিষ্মান বলল, “যাবে নাকি,
ওয়ার্কশপে?”
“পাগল? ওয়ার্কশপে তো আর মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকলে হবে না, কথাবার্তা
বলতে হবে, তাও আবার ইংরিজিতে। উইকএন্ডে ইংরিজিতে কথা বলা
আমার নীতিবিরুদ্ধ। এমন কিছু যদি খুঁজে বার করতে পার যেখানে অন্যে কথা বলবে আমি বসে
বসে শুনব, তবে ভেবে দেখতে পারি।”
দু’জনে একই সঙ্গে
খুঁজতে শুরু করলাম। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে বেলা সোয়া দশটা নাগাদ। তারপর
একের পর এক অধিবেশন চলবে সারাদিন, সেখানে রহস্যগল্প ফাঁদার
বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলবেন বিশেষজ্ঞরা। এঁদের বেশিরভাগেরই নাম আমরা কেউই জানি না,
তাই কারওর কথা শুনতে যাওয়ারই আগ্রহ বোধ করছিলাম না। চোখ বোলাতে
বোলাতে যখন প্রথম দিনের অনুষ্ঠানসূচি প্রায় শেষ, আমাদের
উৎসাহের পারা আবার নেমে মাটির কাছাকাছি, সঙ্গে একটা আশা,
‘যাক তার মানে গোটা দিনটা বিছানার ওপর টিভির সামনে বসে কাটানো যাবে’,
এমন সময় শেষ অধিবেশনের নামটা চোখে পড়ল।
BYOMKESH BAKSHI AND THE BANGLA
BLOODHOUND
অ্যাঁ! দুজনেরই গলায় চা আটকে
বিষম খাওয়ার জোগাড়। কারা বলছে দেখ শিগগিরি!
Dibakar Banerjee, Dhritiman
Chaterji in conversation with Rajit Kapur
ক’টার সময়?
দু’জনেরই হৃদপিণ্ড বুক থেকে বেরিয়ে গলার কাছে
এসে ধকধক করছে।
6:05 pm - 6:50 pm
সাতটার আগে শেষ! ফেরার অটো
পাওয়া যাবে! এর পরেও যদি না যাই তাহলে নিজেদের কাছে নিজেদেরই আর মুখ দেখানোর
রাস্তা থাকবে না। যাব ঠিক হয়ে গেল, আর তখনই ঠিক হল যে বেরোনো যখন হচ্ছেই তখন একটু আগে বেরিয়ে পটবেলিতে খেয়ে
নেব। বিহারি খানা আর ব্যোমকেশ, দুই পাখি একঢিলে মারা পড়বে।
হ্যাবিটাটে যখন পৌঁছোলাম তখন
আমাদের চায়ের তেষ্টা সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। হ্যাবিটাটের ভেতরে চল্লিশ টাকার ওপর
আরও সতেরো টাকা ট্যাক্স, মোট সাতান্ন টাকা দিয়ে টিব্যাগের চা খাওয়ার জায়গা আছে, কিন্তু লিট্টিচোখার স্মৃতি তখনও মনে বুকে পেটে জ্বাজ্জল্যমান, তার মর্যাদা রক্ষার জন্য আমরা রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে যাওয়াই সাব্যস্ত
করলাম। সেখানে তখন বিরাট ডেকচিতে চায়ের পাতার গুঁড়ো সকাল থেকে ফুটে ফুটে ঘোর
বাদামী বর্ণ ধারণ করেছে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ বলে চালানোর চেষ্টায় দোকানের কর্ত্রী
তাতে পোয়া পোয়া দুধ ঢেলেছেন, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চিনি। সেই
একাধারে চা এবং ডেজার্ট হাতে নিয়ে আমরা যখন অ্যামফিথিয়েটারে গিয়ে বসলাম তখন সূর্য
পশ্চিমে ঝুঁকে পড়েছে।
এই ভয়টা আমার ছিল। রাত সাতটা
পর্যন্ত অনুষ্ঠান যদি খোলা আকাশের তলায় বসে দেখতে হয়, তাও
হ্যাবিটাটের অত গাছপালার ভেতর, তাহলে আমাদের দুজনেরই সদ্য
সারা গলাব্যথাটা আবার পত্রপাঠ ফেরৎ আসবে।
অ্যামফিথিয়েটারের ওপরদিকের একটা
ধাপের কোণের দিকে ফাঁকা জায়গা দেখে বসার পর আমার সে ভয় অমূলক প্রমাণিত হল।
ল্যামপোস্টের মতো উঁচু উঁচু হিটার লাগানো চারদিকে। তার চুড়োয় গ্যাসের আগুন জ্বলছে
গনগন করে, সে আগুনের আঁচে
গোটা জায়গাটার বাতাস বেশ তপ্ত হয়ে রয়েছে।
আমরা যখন পৌঁছলাম তখন ফরাসি
লেখক Caryl Férey-র সঙ্গে আলাপ করছিলেন অমৃতা ত্রিপাঠী। এই ভদ্রলোকের বিশেষত্ব হচ্ছে ইনি
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি
ঘুরে দেখতে ভালোবাসেন এবং সেই সব সমাজের পটভূমিকায় একখানা করে রহস্যগল্প ফেঁদে
বসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পটভূমিকায় লেখা এঁর উপন্যাস Zulu দু’হাজার আট সালে ফরাসি অপরাধ ও গোয়েন্দা সাহিত্যের সর্বোচ্চ সম্মান Grand
Prix de Littérature Policière পেয়েছিল।
Caryl Férey-র পর
মঞ্চে এলেন উর্দু সাহিত্যিক ও জামিয়ামিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খালিদ জাভেদ।
তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন মহম্মদ ফারুকি, যিনি হাবিব
তনভিরের স্মৃতিকথা অনুবাদ করেছেন এবং Besieged:
Voices from Delhi, 1857 নামে
একটি বইও লিখেছেন। এঁরা কথা বলছিলেন ইবন-এ-সাফি কে নিয়ে।
ইবন-এ-সাফি ছিলেন ‘জাসুসি দুনিয়া’
ও ‘ইমরান গোয়েন্দা’ সিরিজের
অসম্ভব সফল লেখক। সাতচল্লিশ সালে পাকিস্তানে চলে যাওয়ার আগে তিনি ভারতবর্ষে বসেই
লেখালিখি করতেন। খালিদ জাভেদ বললেন, একসময় ইবন-এ-সাফির বই
কেনার জন্য নাকি এমন লাইন পড়ত, সবাই প্রকাশকের দোকানকে রেশন
দোকান বলে ভুল হওয়া কিছু অস্বাভাবিক ছিল না। বিড়ি বাঁধা, কাপড়
সেলাই করার ছোট ছোট কারখানায় মাইনে করে লোক রাখা হত যারা কাজ চলাকালীন কর্মচারীদের
ইবন-এ-সাফির গোয়েন্দা গল্প পড়ে শোনাত। মহম্মদ ফারুকি ইবন-এ-সাফির লেখা বই থেকে অংশ
পড়ে শোনাচ্ছিলেন, দারুণ মজাদার সরস লেখা। আর তার সঙ্গে
ফারুকির অনবদ্য উর্দু উচ্চারণ, আহা। শুনে আমার খুব ইচ্ছে
হয়েছে উর্দু শেখার। সে ইচ্ছেয় আরও ইন্ধন পড়ল যখন ইবন-এ-সাফির বইয়ের হিন্দি/ইংরিজি
অনুবাদের খোঁজ করা এক দর্শককে রসিক ফারুকি খুব উৎসাহ দিয়ে বললেন, ‘উর্দু সিখ লিজিয়ে জনাব, দো তিন হফতে তো লাগতা হ্যায়।’
ক্রাইম রাইটার্স’ উৎসবের এই
জিনিসটা আমার খুব ভালো লেগেছে। বিশেষজ্ঞ আর অজ্ঞদের মধ্যে কথাবার্তা, আদানপ্রদানের সুযোগ। প্রশ্ন করার, মতামত রাখার। ভালো
কথা যদি মুখ বুজে শুধু শুনতে হয় তাহলে সে কথা একটু সময়ের পর আর ভালো লাগে না। তার
মাঝে মাঝে যদি একটু বাজে/বোকা কথা গুঁজে দেওয়ার (আমি দেব না অবশ্যই, যাদের মাইক হাতে নিয়ে কথা বলার মতো কলজের জোর আছে তাঁরা দেবেন, আমি শুনব) রাস্তা থাকে তবে সব দিক থেকে ভালো হয়।
মহম্মদ ফারুকি আর খালিদ জাভেদ
মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন। সঞ্চালক ভদ্রমহিলা সবে মাইকের ডাণ্ডাটা নিজের দিকে বেঁকিয়ে
নিয়ে মুখ খুলতে যাবেন এমন সময় আমার কানের এক হাত আর অর্চিষ্মানের কানের ঠিক তিন
ইঞ্চি দূর দিয়ে একখানা ঝোড়ো বাতাস বয়ে গেল।
রজিত কাপুর! দীর্ঘদেহী, টকটকে রং,
লাল রঙের টি শার্ট আর নীল জিনস পরে অ্যামফিথিয়েটারের ঢালু সিঁড়ি একসঙ্গে
দুটো করে টপকে নিচে নেমে গেলেন, পেছনে সতর্ক পায়ে নামলেন
প্রবীণ ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, বাঙালি যে এত ফর্সা হতে পারে
সেটা এঁকে না দেখলে বিশ্বাস হয় না, আর সবশেষে নামলেন দিবাকর
ব্যানার্জি।
যাঁকে নর্থপোলে নিয়ে গিয়ে
সর্বাঙ্গ শীতবস্ত্রে মুড়ে দাঁড় করিয়ে রাখলেও এক সেকেন্ডের মধ্যে বাঙালি বলে চিনে
নেওয়া যাবে।
মাঝারি হাইট, শ্যামলা রং,
নিরীহ চিবুক ঢাকার ছলনায় লালন করা দাড়ি, চশমা,
একহারা শরীর ঢাকা সুতির পাঞ্জাবী। এই বিচ্ছিরি ঠাণ্ডা আর জ্যাকেট না
থাকলে যার হাতা গোটানো থাকত। থাকতই। আমার বয়স যদি সতেরো হত আর বুকের ভেতর এই অভিজ্ঞতার
আঁচে ছাই হয়ে যাওয়া হৃৎপিণ্ডটার বদলে থাকত একটা অক্ষত আচ্ছাদিত হৃদয়, তবে দিবাকর ব্যানার্জির প্রেমে পড়তে আমার তিরিশ সেকেন্ডও লাগত না।
কিন্তু আমার বয়স কি না সতেরোর
বদলে চৌত্রিশ আর আমার বুকের ভেতরের হৃদয়ের জায়গায় কি না আছে একটা কুৎসিত মাংসল
পেশী, সেকেন্ডে সেকেন্ডে
আমার দেহের কোণায় কোণায়, মগজের অন্ধকার কুঠুরিতে ক্লেদরক্ত
চালান করাই সারাদিনে যার একমাত্র কাজ, তাই আমি একটা ছোট্ট
দীর্ঘশ্বাস বুকের ভেতর লুকিয়ে ফেললাম আর অর্চিষ্মানের দিকে ঝুঁকে পড়ে বললাম,
“দেখলেই বুদ্ধিমান মনে হয় না?”
কথা শুনলে তো আরওই মনে হয়।
আড়ালআবডালহীন, ওপরচালাকিমুক্ত,
প্রাণখোলা কথা। নিজের মাথার ভেতর নিজেই নিজের আস্ত ফ্যানক্লাব খুলে
না বসা কথা।
আড্ডা জমে উঠল। বাইশ বছর আগে
দূরদর্শনের ব্যোমকেশ বক্সী, অচিরেই মুক্তি পেতে চলা রুপোলি পর্দার বর্ষীয়ান ব্যোমকেশ বক্সী, আর হিন্দি, সর্বভারতীয় ব্যোমকেশ বক্সীর পরিচালকের
মধ্যে। সবাই নিজেদের মজার অভিজ্ঞতার কথা বললেন। রজিত বললেন, তাঁর
কেরিয়ারে ব্যোমকেশ বক্সীর অবদানের কথা, বাসু চ্যাটার্জীর
সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা, ভারতবর্ষের প্রত্যন্ত গ্রাম
থেকে ছোট ছেলের হাতের লেখায় পোস্টকার্ড পাওয়ার কথা। সত্যান্বেষীকে সে আকুল
আমন্ত্রণ জানাচ্ছে তার গ্রামে আসার, যে ভূতগুলো রাতে তার
চৌকির তলায় ঘাপটি মেরে বসে আছে, তাদের শায়েস্তা করে দিয়ে
যাওয়ার। ধৃতিমান বললেন বর্ষীয়ান ব্যোমকেশের ভূমিকায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতার কথা। দিবাকর
বললেন, এগারো বছর বয়সে বাবার নিষেধের কথা, “আর একটু বড় হও, তারপর শরদিন্দু পড়বে।” এবং পত্রপাঠ দৌড়ে গিয়ে সবার অলক্ষ্যে শরদিন্দু পড়া শুরু করার কথা।
ব্যোমকেশ থেকে চিড়িয়াখানা এল, সত্যজিৎ এলেন,
উত্তমকুমার এলেন, মেসবাড়ি এল, মেসবাড়ির মাথায় চক্কর কাটা জাপানি বোমারু বিমান এল, কলকাতা
এল। আর এল বাংলা। তার ঠিক দু’দিন আগেই অফিসে খুব হাসাহাসি
হচ্ছিল, আমরা বাঙালিরা কেমন ঠোঁট গোল করে করে “ও” বলি সেই নিয়ে। মকরসংক্রান্তিকে মকোরসংক্রান্তি
বলি, পোঙ্গলকে পোঙ্গোল। আমরাও হাসছিলাম, কিন্তু তারা আরও বেশি হাসছিল যারা বাঙালিঅধ্যুষিত অফিসে রাগ পুষে ঘোরাঘুরি
করে, ফাঁক পেলেই বিষ উগরে দেয়। আমার ইচ্ছে করছিল তাদের ডেকে
বলি, “ওই দেখ, ওই যে বসে আছেন ধৃতিমান
চ্যাটার্জি, চেহারা দেখে আর ইংরিজি উচ্চারণ শুনে যদি ‘বাঙালি’ বলে ঠোঁট বেঁকাতে পার তবে নাম বদলে ফেলি,
তিনিও তাঁর নিখুঁত ইংরিজি ভাষ্যের মাঝে মাঝে যখন বাংলা শব্দ বলছেন
তখন এই গেঁয়ো বঙ্গসন্তানদের মতো করেই বলছেন।”
শোত্যোজিৎ। বোমকেশ। কোলকাতা।
শরোদিন্দু।
শরদিন্দু এলেন। বাংলা সাহিত্যে
তাঁর উপেক্ষিত নায়কসত্তার কথা এল, ঝিন্দের বন্দী এল, ঐতিহাসিক উপন্যাসেরা এল। বলতে
বলতে দিবাকর ‘সাধু’ বেংগলি বলেই হোঁচট
খেলেন। এই রে। মুখ থেকে মাইক সরিয়ে নিয়েছেন দিবাকর, ঝুঁকে
পড়ে ধৃতিমানকে জিজ্ঞাসা করছেন, “সাধু বাংলা-র ইংরিজি কী হবে?”
ধৃতিমান আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছেন, হাত
ঘোরাচ্ছেন বাতাসে, ওই তো . . . ওই তো . . . আর্কেইক? উঁহু, রিফাইনড? শেষমেশ ‘রিফাইনড’-এ রফা হল। দিবাকর আবার মাইকে বলতে শুরু
করলেন, শরদিন্দুর আর্কেইক, রিফাইনড
বেংগলি ভাষার কথা। ধৃতিমান পাশে বসে দ্বিধান্বিত মাথা নাড়তে থাকলেন। হল, কিন্তু আবার হলও না।
বাংলা এল। যে বাংলার ইংরিজি
ফারসি হিন্দি হয় না। বাংলাদেশের বাইরে যে বাংলা হয় না। বাঙালি হয়ে বাঙালির ঘরে না
জন্মালে যে বাংলা হয় না। এই বাক্যটার মধ্যে কোনও জাত্যাভিমান নেই, কোনও
জাতিবিদ্বেষ নেই। মারাঠি, কন্নড়, ইংলিশ,
জার্মান, স্প্যানিশ যেমন আমার কোনওদিন হবে না
সেটা যেমন সত্যি, এটাও তেমনই একটা সোজাসাপটা সত্যি কথা।
ইন্ডিয়ান হ্যাবিটাট সেন্টারের
আকাশবাতাস সেই আধঘন্টাখানেকের জন্য সেই বাংলায় ভরে উঠল। দর্শকের হাতে হাতে ঘুরতে
লাগল মাইক। কৈশোরযৌবনের সন্ধিক্ষণে যে সব হাতে হাতে ঘুরেছেন ব্যোমকেশ, শরদিন্দু,
ফেলুদা, সত্যজিৎ। এক একটা গলায় শোনা গেল,
“আই নো শরদিন্দু। আই নো ব্যোমকেশ। আই নো অল থার্টি থ্রি স্টোরিস অভ
হিম।” ভাষাটা ইংরিজি, কিন্তু গর্বটা
নিখাদ বাংলা। আদ্যোপান্ত বাঙালি।
আমারও ভেতরটা সেই গর্বে ভরে
উঠছিল। এই যে চরিত্রগুলো নিয়ে কথা হচ্ছে, যে ভাষাটায় কথা হচ্ছে, যে ভাষাটায় এঁরা সবাই কথা
বলেছেন, গল্প লিখেছেন, সিনেমা
দেখিয়েছেন, ঘুমিয়েছেন, ঘুম থেকে উঠেছেন,
স্বপ্ন দেখেছেন, ঘুম থেকে উঠেছেন, ভাত মেখে খেয়েছেন, ভেবেছেন, ভাবছেন,
ভাববেন, সেই ভাষাটা, সেই
পরিচয়টা আমার, আমার পাশে বসা আমার পৃথিবীর প্রিয়তম মানুষটার।
সেই ভাষাটা রক্ত, ধমনী, শিরায় শিরায়
বইছে। সে ভাষায় লেখা গল্পে মুখ গুঁজে কেটেছে আমাদের গরমের ছুটির দুপুর, সে ভাষায় প্রেমপত্র ভেঁজে বয়ে গেছে আমাদের মহার্ঘ যৌবন, সে ভাষায় নস্টালজিয়ার জাবর কেটে কাটবে আমাদের প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য।
জানি গর্বটা অকারণ। পৃথিবীর সকলেরই তো
নিজের নিজের ভাষা আছে? পরিচয় আছে? এ এমন একটা জিনিস যেটা থাকতেই হয়,
না থাকলে চলে না। আমার আছে, আমার অবাঙালি
প্রতিবেশীর আছে, আমার বিদেশী রুমমেটের ছিল, বুর্জ খলিফার সবথেকে দামি ঘরটায় বসে বিজসেন ডিল করা মানুষগুলোর আছে,
রেনফরেস্টের গভীরে মাথায় টোকা পরে, মুখে রং
মেখে, এক হাতে বর্শা এক হাতে ঢাল নিয়ে গুঁড়ি মেরে খাবারের
সন্ধানে ঘুরতে থাকা লোকগুলোরও আছে। সে বর্শা যে হিংস্র শ্বাপদের বুকে বিঁধবে তারও
আছে। সকলের আছে। সকলের থাকে। নিজের ভাষা, নিজের পরিচয়।
আর গর্বটা সেখানেই। জন্মসূত্রে
পাওয়া ভোঁতা নাক আর খুঁতো আত্মবিশ্বাসের মতোই, এই পরিচয়টাও আমার উত্তরাধিকার, যেটা থেকে আমাকে বঞ্চিত করে সাধ্য কারও নেই। একে আমি মারি কাটি ধমক দিই
লাই দিয়ে মাথায় তুলি, কারও কিছু বলার নেই। এর ওপর আমার মালিকানাই চরম, শরিকানাবিহীন।
আড্ডা যখন থামল তখন ঘড়ির কাঁটা
সোয়া সাতটা ছাড়িয়েছে। অন্ধকার হয়ে গেছে অনেকক্ষণ, ঠাণ্ডা হাওয়া চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে
প্রকাণ্ড হিটারগুলোকে, সে ঘেরাও ভেদ করে গ্যাসের আগুনের আঁচ
আর ততটাও গায়ে এসে লাগছে না। আমার নিজস্ব, একান্ত নিজস্ব
ভাষাকে, নিজের পরিচয়টাকে মঞ্চের ওপর, অত
আলোর নিচে, বসে থাকতে দেখে গর্বে আমার বুকের ভেতরটা ততক্ষণে
উষ্ণতা ম ম করছে। কোনও ঠাণ্ডার সাধ্য নেই তাকে কাবু করে।
Haattali Kuntala! Highest five! "Moder gorib , moder asha, a mori Bangla bhasha"!
ReplyDeletegorob*
ReplyDeleteহাহা, হাই ফাইভ, রুণা।
Deletebah ..apurbo ! - tinni
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, তিন্নি।
DeleteIshhhh, miss hoye halo. Kono maney hoy? Oboshyi doodher swaad gholey jodi metatei hoy, er theke better ghol bodh hoy pawa jabe na. Durdanto hoyeche lekhata. :)
ReplyDeleteTumi Jaipur Lit Fest jachcho ki? Eita bhalo lagle oitao bhalo lagbe guaranteed.
জয়পুর যাওয়ার বোধহয় সময় হবে না, বিম্ববতী, দেখা যাক।
Deleteim a snooty Bengali and im proud of it. Khub bhalo. ekhaneo erom akta workshop hole besh hoy. Bihari cuisine je ato lobhoniyo hoy jana chilo na. jodio litti chokha amar khub favourite dish. thekua o.
ReplyDeleteঠেকুয়া আমারও ভালো লাগে, কুহেলি। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে পটবেলিতে কোনও মিষ্টি পদ ছিল না, আমি ভেবেছিলাম ঠেকুয়া থাকবে বুঝি।
Deletebihari khabar keo je sundor kore bola jay kono dharonai chilona..!!! sondher experience ta to darun hoyeche...
ReplyDeleteসেদিন সারাদিনটাই খুব ভালো কেটেছিল, ঊর্মি।
Deletebettiah area'r ranna khub jhaal. chotobelay mone pore pishi'r barir uthon e shukote dito ekrokom lal lonka'r achar....setar jhaal aar jhanj emon je utton e boshle amar hanchi arambho hoye jeto :)
ReplyDeleteaar shei champaran mangsho tumi saaf kore diley bhabtei kemon gaye kanta dichhey :(
হাহা, আরে ওটা হচ্ছে আঁতের ব্যাপার, বুঝলে শম্পা। জীবনের বেশিরভাগ পরীক্ষাতেই তো ডাহা ফেল, ঝাল খেতে পারার পরীক্ষায় ডিস্টিংশন নিয়ে পাশ করব, সেই জেদে ওই লালসবুজ গোটা গোটা লংকাগুল চিবিয়ে খেয়েছি।
Deleteতোমার পিসির বাড়ির ছবিটা মনের ভেতর বেশ ফুটে উঠছে। ভারি সুন্দর ছবি।
K., tomar post gulo amar chotobelar uttar bharot (jodi champaran oto ta uttar noy, tao) er khabar gulo money koriye dilo. porota aar dhone aloo; champaran mangsho aar bhariya mirchi; mutter ghoogni, kadhi, dhuska.....nostalgia!!!
ReplyDeletejano, soya biryani boley ekrokom biriyani pawa jay patna te for vegetarians....eki rokom moshlam but nutri nuggets boley ekta jinis chilo seta instead of chicken :)
আরে, সয়াবিন আমার দারুণ পছন্দের জিনিস শম্পা, আমার নিশ্চয় ওই বিরিয়ানিটা খেতে ভালো লাগবে, পাটনায় গেলে খাব মনে করে। ধূসকা (নাকি ঢুসকা?) ব্যাপারটা নেট খুঁজে জানতে হল, নামখানা যেমন সুন্দর, খেতেও তেমনই ভালো হবে মনে হচ্ছে।
DeleteDarun !!! Darun !!!
ReplyDeletePurodintai ki sundor katiechho Kuntala.. mone hochhe ei prothom ami khabarer thekeo beshi monojog die onno bishoi porlam (eki lekhate) . khabar dabar er chhobi ar barnona to daruni .. kintu tarpor je addar kotha likhle ar jebhabe likhle.. ei lekhata aro du ekbar porte asbo "Abantor" e.
যাক, আপনার ভালো লেগেছে শুনে আমারও খুব ভালো লাগল, ইচ্ছাডানা। সেদিনটা সত্যি খুব সুন্দর কেটেছিল আমাদের। আবহাওয়া ভালো ছিল, রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাঁকা ছিল, সব একেবারে মনের মতো।
Deleteখুব ভালো লাগল পড়ে।
ReplyDeleteধন্যবাদ, দেবাশিস।
Deleteহেঁহেঁ! আমরাও গেছিলেম বটেক। গোয়েন্দা গল্পের খোঁজে
ReplyDeleteতাই তো দেখছি, সৌরাংশু। আপনাদের ভালো লেগেছে আশা করি।
Deleteহৃদয়ের জায়গায় মাংসপিন্ড? তোমার? যার কলম সবার হৃদয় স্পর্শ করে? ধুর, মানা গেল না !
ReplyDeleteহাহা, কাকলি, তোমরা পক্ষপাতদুষ্ট।
DeleteHo. Soityo koichen. Bangal koun er zobab nai.
ReplyDeleteহাই ফাইভ, অর্ণব।
DeleteKi j likhi bujhe pachchi na... Kotoguli valobasa thake ja sobsomoy e achchhadito.. Goniter upopado gulir moton... Keu chhnute pare Ni kokhono
ReplyDeleteধন্যবাদ, হীরক। লেখাটা তোমাকে ছুঁয়েছে জেনে ভালো লাগল।
Deleteliterary Adda r khao-daoa miliye darun jomjomat din katiechho.. khub bhalo. - Bratati.
ReplyDeleteসত্যি, দারুণ দিন ছিল আগের শনিবারটা, ব্রততী। গোটা জীবনটা যে কেন ও রকম হয় না।
Deleteএই লেখাটা চমৎকার লাগলো। প্রথমে খাওয়াদাওয়া (ছবিগুলো বাদ দিলেও চলত!!), আর তারপরে এই ত্রয়ীর গল্প, পড়ে মনটা একদম খুশ হয়ে গেল। :) উচ্চ পঞ্চ।
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, অরিজিত।
Deletedarun..baap re amader uchchron niye hasahasi bapar ta ami konodin e serious nei ni..apni to didi dekhchi khub e emotional..bah bah....bhalo..besh besh..oh btw..tahole non veg niye obangali ra ja nekami mare..apnio Deben tader dose...bolben are dada bihari restoray mangso rekheche go..mane tomrao khao..bini poysay pele..naki hehe.....
ReplyDelete