লখনৌ/ পর্ব ২
টুণ্ডে কাবাবির দোকান থেকে
বেরিয়েই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। এই আধঘণ্টাখানেকের তফাতেই গলির ভেতর থেকে আলো প্রায়
উধাও হয়েছে, বাতাসের তাপমাত্রা কমেছে অন্তত দু’ডিগ্রি। ভাগ্যিস বুদ্ধি করে
জ্যাকেটটা নিয়ে বেরিয়েছিলাম, গায়ে চড়িয়ে নেওয়া গেল। জ্যাকেট পরে গলি থেকে বেরিয়ে বড়রাস্তায়
এলাম। এখানে ঠাণ্ডাটা একটু কম তবে আছে যথেষ্টই। গাড়িঘোড়া বাঁচিয়ে, রাস্তার পাশে একটা রোদ এসে পড়া জায়গা
দেখে আমরা দাঁড়ালাম। এবার কিঞ্চিৎ মাথা খাটানোর ব্যাপার আছে।
আমার আর অর্চিষ্মানের একটা
বেড়ানো হয় বেড়ানোর জায়গায় গিয়ে, কিন্তু আর একটা বেড়ানো হয় সে জায়গাটায় গিয়ে
পৌঁছনোর অনেক আগেই। যখন শনিরবিবার ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজারও আগে আমরা কম্পিউটার
খুলে সেই জায়গাটার ছবি দেখি, সেই জায়গাটায় আগে যারা ঘুরে এসেছে তাদের টীকাটিপ্পনি
পড়ি। গুগল ম্যাপ খুলে পয়েন্ট এ থেকে পয়েন্ট বি যেতে কত সময় লাগতে পারে সেই নিয়ে
গবেষণা চালাই, এবং একশোবার করে কবে কখন কোথায় কী করব সেই নিয়ে জল্পনাকল্পনা করি।
এই ভাবে জায়গাটায় পৌঁছনোর আগেই অনেকবার সেই জায়গাটা ঘোরা হয়ে যায়। যেমন ধরুন আগের
শনিবার লেপের ভেতর গুটিশুটি মেরে বসে যখন আমরা মনে মনে লখনৌ গিয়েছিলাম তখন
সকালবেলায় ভুলভুলাইয়া ঘুরে, দুপুরে টুণ্ডে কি কাবাব খেয়ে, বিকেলে চাট এবং চিকনের
দোকান সেরে, রাতে দস্তরখোয়ানে বিরিয়ানি সাঁটিয়ে, পরদিন সকালে রেসিডেন্সি ছুঁয়ে
নৌশিজানে মজলিসি কাবাব খেয়ে ফিরেছিলাম। ওহ্ আর সেদিন আমরা উঠেছিলাম লখনৌয়ের অভিজাত
চার তারা হোটেল ক্লার্কস অওয়ধে। তারপর যখন দাঁতটাত মাজা হল, জানালার বাইরে আলো
ফুটল, টাটা গোল্ডের কানমলা খেয়ে ঘুম পালালো, তখন বুঝলাম ক্লার্কস অওয়ধটা বাড়াবাড়ি
হয়ে যাবে। তার থেকে আমাদের ইউ পি টি ডি সি জিন্দাবাদ, যে টাকাটা বাঁচবে সেটা পরের
বছরের ভুটানভ্রমণ খাতে বিনিয়োগ করা যাবে’খন।
তারও পর বেলা বাড়লে একজোড়া
মোজার মিসিং একপিস মোজা খুঁজতে আলমারি খুলতেই যখন হুড়মুড়িয়ে অর্ধেক জামাকাপড় গায়ের
ওপর পড়ে গেল, তখন বাতিল হল চিকন। ঠিক সেই মুহূর্তে বাবার ফোন এসে গেল, বাবা সব
শুনে আমাদের সিদ্ধান্ত সর্বান্তকরণে সমর্থন করলেন। বললেন, “সেই তোর ছোটবেলায় লখনৌ
যাওয়া হয়েছিল মনে আছে, তুই ক্লাস নাইনে পড়তিস?” আমি বললাম, “নাইন না, সেভেন।” বাবা বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, সেভেন
সেভেন। সেই যে তোর সেভেনে পড়ার সময় গিয়েছিলাম তখন একটা চিকনের পাঞ্জাবি কিনে
এনেছিলাম, এখনও যেমন কে তেমন পড়ে আছে, একদিনও গায়ে ঠেকাইনি। বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটি
মানে স্রেফ পয়সা নষ্ট।”
ট্রেনে বসে বসে লখনৌভ্রমণের
প্রথম দিনের যে প্ল্যানটা ছকা হয়েছিল সেটায় ছিল সকালবেলা ভুলভুলাইয়া ও ইমামবাড়া
ভ্রমণ, কাবাবভোজন, হোটেলে ফিরে বিশ্রামগ্রহণ, অপরাহ্নে বেরিয়ে এদিকওদিক হন্টন,
ক্ষুধা যথোচিত পরিমাণে জাগ্রত হলে চাটসেবন এবং হোটেল প্রত্যাবর্তন।
কিন্তু সেই মুহূর্তে,
পাকস্থলীতে মেঘের মতো গালাউটি কাবাব আর পরাঠার আরাম নিয়ে, চারদিকের রংঝলমলে
হল্লাহাটির ভেতর, মাথার চুলে বিদায়ী রোদ্দুর মেখে দাঁড়িয়ে আমরা বুঝতে পারলাম এখন
বিশ্রাম নিতে হোটেলে ফিরে গেলে আর রক্ষা নেই। এখন একবার লেপের তলায় ঢুকলে কাল
সকালের আগে আর বেরোনো যাবে না।
আমি সত্বর প্ল্যান বি ভাবতে
শুরু করলাম।
এমন
সময় অর্চিষ্মান আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গি করে বলল, “সে রকম হলে চাট বাদ দেওয়াও
যেতে পারে কিন্তু। জোরাজুরি তো কিছু নেই, শরীরে যতটুকু সইবে ততটুকুই না হয় আনন্দ
করব আমরা।”
আমি হাঁ করে অর্চিষ্মানের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
শরীরে যদি না সয় তবে কি
আগ্রায় গিয়ে তাজমহল দেখব না? পুরীতে গিয়ে পাণ্ডার লাঠির বাড়ি খেয়ে, “হেই বাবা
জগন্নাথ, তোমার দারুকলেবর নিয়ে আমার ঘাড়ের ওপর পোড়ো না বাবা” জপতে জপতে গর্ভগৃহ
প্রদক্ষিণ সেরে, ভূশণ্ডি কাকের একশোবার শোনা গল্পটা একশো একতম বার শুনে বাড়ি চলে
আসব? বলব, “পাণ্ডার বকবকানি শুনে মাথা ধরে গিয়েছিল কি না, তাই সমুদ্রস্নানটা বাদ
দিলাম, একেই মাথা ধরেছে, এর ওপর যদি আবার রং কালো হয়ে যায়, শরীরে সইবে না।”
এই আমি সত্যি কথা স্বীকার
করছি, কাবাব না বিরিয়ানি না পান না, আমি লখনৌ গিয়েছি ভুলভুলাইয়ায় গিয়ে গায়ে কাঁটা
দেওয়াব বলে, অটো চড়ে হজরৎগঞ্জের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে ‘এইখানেই কোনও একটা কিউরিও
শপে ঢুকেছিল ফেলুদা’ ভাবব বলে, আর প্রাণ ভরে চাট খাব বলে। ফুচকা-ঝালমুড়ি-আলুকাবলির
দেশের মানুষ আমি, বাইশ বছর বয়সে টিক্কি-চাট-চুসকির জগতে এসে সেই যে মাথা ঘুরে
পড়েছিলাম, আজও সে ঘোর কাটেনি। সরোজিনী নগরের চাঁদিফাটা রোদ্দুরে ঘুরে ঘুরে
পঁয়ত্রিশ পঁয়ত্রিশ, সত্তর টাকায় টপ আর সোয়েটার কিনে (বাড়ি এসে দেখেছিলাম টপটার
একটা হাতা ফুলস্লিভ অন্য দিকের হাতা শর্টস্লিভ, আর সোয়েটারটার পিঠে একটা ছ্যাঁদা)
ঘামতে ঘামতে হাঁপাতে হাঁপাতে দোকানে ঢুকে দোসা অর্ডার করতে গিয়েও বন্ধুর দেখাদেখি
পাপড়ি চাট অর্ডার করেছিলাম। যথাসময়ে সে চাট এসেওছিল। দেখে সত্যি বলছি ভক্তি হয়নি।
সাদা দইয়ের ওপর লাল সবুজের জ্যাকসন পোলোক প্যাটার্ন, আর নিচে এগুলো কী? শক্ত শক্ত
চ্যাপ্টা মতো? এগুলোকেই পাপড়ি বলে বুঝি?
তারপর পাপড়ির ছোঁয়া বাঁচিয়ে
চামচে করে পাশ থেকে একটুখানি দই তুলে জিভের ডগায় ছুঁইয়েছিলাম। সর্বনাশ, এটা কী? এই
নাকি টকদই? দুপুরে খেয়ে উঠে নুন ছড়িয়ে যেটা খেলেই নাকি সব খাবার হজম হয়ে যায়? টকদইকে
সারাজীবন স্বাস্থ্যকর খাবার মনে করে অচ্ছেদ্দা করে এসেছি, কে জানত একথালা শক্ত ময়দার
চ্যাপটা বাতাসার মতো জিনিসের ওপর ছড়িয়ে দিলে এ জিনিস এমন অমৃতের স্বাদ ধারণ করতে
পারে?
আর এটা কী? না না সবুজটা
না, এই লাল রঙের চাটনিটা? এটা কোথায় পাওয়া যায়? আমাকে সেখানে নিয়ে চল শিগগিরি। আমি
বোতল বোতল এই চাটনিটা কিনে এনে ঘরে রেখে দেব। বালিশ ভেবে মাথার তলায় নিয়ে ঘুমোব,
বই ভুল করে ব্যাগে পুরে ডিপার্টমেন্টে চলে যাব। সকালে উঠে ওষুধের মতো করে একঢোঁক
খাব, খেয়ে উঠে মুখশুদ্ধি হিসেবে একবার, রাতের চায়ে দুফোঁটা মিশিয়ে খেয়ে ঘুমোতে
যাব, যাতে সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখতে পারি।
সেই চাট কি না বাদ?
অবশ্য এত কথা অর্চিষ্মানকে
বলতে হল না, ও আমার মুখ দেখেই যা বোঝার বুঝে নিয়ে চটপট গুগল ম্যাপ খুলে জৈন চাট
ভাণ্ডারের দূরত্ব মাপতে লেগে গেল। কাবাবের দোকান স্থির করার সময় আমরা যে নিয়ম
মেনেছিলাম, চাটের দোকান বাছার সময় ঠিক তার উল্টো পদ্ধতি নেওয়া হয়েছিল। কাবাবের
বেলা চোখকান বুজে সবথেকে বিখ্যাত জায়গাটা বাছা হয়েছিল, চাটের বেলা বেছেছিলাম একটি
‘হিডেন জেম’কে। ‘বেস্ট চাট ইন লখনৌ’ গুগল সার্চ দিলে প্রথমেই নাম আসবে রয়্যাল
কাফে, পণ্ডিত চাট কর্নার, ‘কিং অফ চাট’ ইত্যাদি দোকানের। একটু নিচের দিকে থাকবে
জৈন চাট ভাণ্ডারের নাম। লালবাগের নভেলটি সিনেমাহলের কাছে জৈন চাট ভাণ্ডার। গুগল ম্যাপ দেখাল
চৌকে আমরা যেখানটায় দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে পাক্কা পাঁচ কিলোমিটার। পত্রপাঠ একটা
চলন্ত রিকশাকে হাত দেখিয়ে উঠে পড়লাম।
একটা শহরকে চেনার সবথেকে
ভালো উপায় যদি হয় শহরটা হেঁটে দেখা, তবে দ্বিতীয় ভালো উপায় হবে থাকবে রিকশাসফর।
গতিতে প্রায় হাঁটারই সমান, আশপাশ আগেপিছে দেখার সুযোগ পর্যাপ্ত, লাভের মধ্যে নো
পায়ে ব্যথা।
আমরা লখনৌ দেখতে দেখতে
চললাম। লখনৌয়ে দেখার মতো ব্যাপার হচ্ছে নতুন আর পুরোনোর সহাবস্থান। দিল্লিও বেজায়
পুরোনো শহর, কিন্তু পুরোনোকে ছেড়ে দিল্লি গায়েগতরে বেড়েছে বহুদূর। সে সব নতুন
জায়গায় পুরোনো ইতিহাসের ছোঁয়া প্রায় নেই বললেই চলে। ক্কচিৎ কদাচিৎ রাস্তার কোণে
সরকারি পাঁচিল ঘেরা ছোট ধ্বংসস্তুপ, ব্যস। লখনৌয়ে ব্যাপারটা সে রকম নয়। এখানে
টয়োটার বেলুন ঝোলানো শোরুমের পাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সরু ইঁটের গম্বুজ, তার
ফাটা মাথায় পতপত করে উড়ছে বটপাতার কচি পাতার পতাকা। গম্বুজ পরিত্যক্ত নয় মোটেই। ওই দেখুন ফাঁকা
জানালার আব্রু রক্ষা করছে অব্যবহৃত লুঙ্গির নীলসাদা শিক।
রিকশা চেপে আমরা চৌক
পেরোলাম, কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রকাণ্ড সাদা বাড়ি পেরোলাম, জুবিলি
কলেজ পেরোলাম। ডানদিকে জীর্ণ গুলাব সিনেমার মাথায় আঁটা রংচঙে পোস্টারে লেখা ‘দিয়া
অওর তুফান’, পোস্টার থেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন মধ্যযৌবনের মিঠুন। বাঁ দিকে পড়ল
সারাহ্ ওয়েডিং হল। এখন
বোধহয় বিয়ের সিজন নয় লখনৌয়ে। সারাহ ওয়েডিং হলের বেশ হতশ্রী দশা। হলে ঢোকার দরজার
মাথায় বোর্ডে ওপর নিচের খালি লাইনের মাঝের লাইনে কালো ব্লক দিয়ে সাজানো তিনটে
অক্ষর W,
E, D আর S এঁকেবেঁকে দাঁড়িয়ে আছে, ওপরে
নিচের লাইনদুটো খালি। বিয়ের সিজনে এই হলই নিশ্চয় সেজে উঠবে আলো, ফুল আর সেন্টের গন্ধে, নহবতে কান্না জুড়বে মারুবেহাগ কিংবা ধপধপে সাদা উর্দির ওপর সোনালি রঙের কোমরবন্ধ
এঁটে ব্যান্ডপার্টি প্রবল বিক্রমে ঝম্পরঝম্পর করে বাজাবে ‘দেখা হ্যায় পহেলি বার/
সাজন কে আঁখো মে পেয়ার।’ প্রতি সন্ধ্যেয় ওয়েডস-এর ওপর আর নিচের খালি লাইনদুটোয়
কালো অক্ষরেরা নিজেদের মধ্যে জায়গা বদলে বদলে লিখে চলবে একের পর এক নাম – আসফ,
শামিমা, গরিমা, পরভেজ, প্রকাশ, জ্যানেট।
রাস্তায়
বেশ খানিকক্ষণ ধরে ভিড় পাতলা হচ্ছিল, এইবার রিকশাটা একটা বাঁক নিতেই দেখলাম আমরা
একটা ভীষণ ফাঁকা রাস্তায় ঢুকে পড়েছি, চারদিকে সবুজের পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে আর
বাঁদিকে সবুজের দেওয়ালের ফাঁকফোঁকর দিয়ে দেখা যাচ্ছে রেললাইন!
রেললাইন!
রেললাইনের পাশে রাস্তা! আর সে রাস্তার ওপর দিয়ে রিকশায় চেপে দুলে দুলে চলেছি আমি,
আর আমার পাশে বসে চলেছে আমার ভীষণ পছন্দসই একটা লোক! এই ঘটনাটা লখনৌয়ে ঘটুক,
লাটাগুড়িতে ঘটুক কিংবা লাটভিয়ায়, আমার মনটা সর্বদা দৌড়ে সেই জায়গাটায় গিয়ে উপস্থিত
হয় যার নামের শুরুতে আছে রি, শেষে আছে ড়া আর মধ্যিখানে মূর্ধন্য ষ। জায়গাটার নাম
যদি বলতে পারেন, তবে হাততালি।
সব ভালো জিনিসের মতোই লখনৌ সিটি স্টেশনের পাশের নির্জন রাস্তাটা ফস করে ফুরিয়ে গেল আর রিকশাটা
আর একটা বাঁক নিতেই আমরা একটা ভয়ানক ভিড়ভাট্টাওয়ালা একটা রাস্তায় এসে পড়ল। দেখি আগেপিছে ডায়েবাঁয়ে যতদূর চোখ যায় কাতারে কাতারে গাড়ি বাস
অটো ইঞ্জিন বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ভালো না হওয়া একটা ব্যাখ্যা হতে পারে, কিন্তু লখনৌয়ে জ্যাম হওয়ার আরও নানারকম যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা আছে। সেই বিকেলেই, সেই বড় জ্যামটা ছাড়িয়ে কিছুদূর এগিয়েই আমরা আর একটা জ্যামে পড়েছিলাম। সেই জ্যামটার কারণ আর কিছুই নয়, রাস্তার মাঝখানে দাঁড় করানো একটা গগনচুম্বী সিংদরজা। ওই রাস্তায় – রাস্তাও নয়, চওড়া গলি – হঠাৎ সিংদরজা কেন সেটা একটা রহস্য। আশেপাশে প্রাসাদ বা প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ গোছেরও কিছু দেখা যাচ্ছে না। খালি রাস্তায় জট পাকানো ছাড়া এই দরজার আর কোনও কার্যকারিতা আছে বলে মনে হয় না।
জ্যাম
বাধার কারণ অতি সরল। দরজা বানানো হয়েছিল এক্কাগাড়ির মাপে, এখন তার দু’দিক দিয়ে
হাজির হয়েছে একখানা ইনোভা, একখানা পাজেরো। দুই এস ইউ ভি-র পেছনে এদিকে মাইলখানেক
ওদিকে মাইলখানেক ধরে জমা হয়েছে অটো, রিকশা, সাইকেল এবং রাস্তার আসল মালিক
ঘোড়াগাড়ির দল। এ জায়গায় যে এ ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে সেটা আঁচ করে কর্তৃপক্ষ
একজন উর্দি মোতায়েন করেছেন। কিন্তু তাতে জ্যামের কী উপকার হচ্ছে সেটা আমি আঁচ করতে
পারলাম না, কারণ জ্যাম যেখানে লেগেছে, তার থেকে অন্তত তিরিশ হাত দূরে দাঁড়িয়ে
উর্দিপরা ভদ্রলোক পাকানো বাঁশের লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে খুব আক্ষেপের সঙ্গে
মাথা নেড়ে অপেক্ষারত গাড়িঘোড়াকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, “কেয়া করে জনাব। কিসি মে দো
মিনিট কা সবর ভি নেহি হ্যায়।”
যাই
হোক, আগেকার সেই বড় জ্যামের কথায় ফিরে আসি। জ্যামে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সূর্য ঢলে গেল, ঠাণ্ডা আমাদের জ্যাকেট সোয়েটার ভেদ করে
হাড়ের ভেতর ঢুকতে শুরু করল। অবশ্য একেবারে যে
দাঁড়িয়ে ছিলাম তা নয়, কিন্তু রিকশা একএকবারে এক ইঞ্চির বেশি এগোচ্ছিল না। এই রকম
হতে হতে একটা জায়গায় পৌঁছে একটা দোকানের বোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখলাম লেখা আছে ‘বুল
টায়ার কোম্পানি’ আর ঠিকানার জায়গায় লেখা আছে কাইজারবাগ। আমি অর্চিষ্মানকে কনুইয়ের
গুঁতো দিয়ে বোর্ডের দিকে দেখিয়ে বললাম, “জর্মান আর উর্দুতে কেমন মিলিয়েছে দেখছিস?”
বুল
টায়ারের দোকানের ঠিক উল্টোদিকে কাইজারবাগ কোতোয়ালির ছড়ানো চত্বর। জ্যাম আরও কতক্ষণ
চলল জানি না, শেষটা রিকশাভাইসাব একটা মোড়ের মাথায় পৌঁছে সিট থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ে
জানালেন, “লালবাগ আ গয়া, বাবুজী।”
লালবাগ
তো আ গয়া, কিন্তু নভেলটি সিনেমা কোথায়? রিকশা আমাদের নামিয়ে চলে গেল, আমরা লোকজনকে
জিজ্ঞাসা করে করে এগোতে শুরু করলাম। সামনের মোড় থেকে বাঁদিকে যেতে হবে। গেলাম।
এবার পাঁচশো মিটার নাকবরাবর হাঁটা। হাঁটলাম। পাঁচশোর জায়গায় হাজার মিটার। কোথায়
নভেলটি, কোথায় জৈন চাট ভাণ্ডার?
হাঁটতে
হাঁটতে একটা স্টারফিশের মতো দেখতে মোড়ে এসে থেমে গেলাম। আর হাঁটা যাচ্ছে না,
রীতিমত ঠাণ্ডা লাগছে। দু’জন ভদ্রলোকের কথোপকথনে
বিঘ্ন ঘটিয়ে পথের হদিশ জিজ্ঞাসা করলাম। কোনও কথা না বলে হাত বাড়িয়ে রাস্তার ওপারের
ছাদওয়ালা ফুটপাথের দিকে দেখালেন একজন।
দৌড়ে রাস্তা পেরিয়ে এসে
ফুটপাথে উঠে কিছু দেখতে পেলাম না। অন্তত কোথাও জৈন চাট ভাণ্ডার বলে কোনও
বোর্ড-টোর্ড কিছু নেই। তারপর চোখে পড়ল একটা দোকানের সামনে ফুচকার বাক্সের মতো
কাঁচের একটা চৌকো বাক্সের মতো বাক্স ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন লোক।
লখনৌ শহরের এই আর একটা
ব্যাপার উল্লেখ করার মতো। নাম দেওয়ার অনীহা। টুণ্ডের দোকানেও ছিল না, জৈন চাট
ভাণ্ডারেও নামটামের বালাই নেই। যা আছে সেটা নাম নয়, বরং সেটাকে ট্যাগলাইন বলা যেতে
পারে। ‘এখানে উৎকৃষ্ট চাট পাওয়া যায়’ গোছের ঘোষণা, বড়জোর জোম্যাটোর পুঁচকে লোগো।
উঁচু বাড়ির মাথা ছয়লাপ টিউটোরিয়াল সেন্টারের বিজ্ঞাপনে। সেন্টারের নাম কোথাও লেখা
নেই, বা থাকলেও অপাঠ্য অক্ষরে। পড়া যাচ্ছে শুধু যোগাযোগ করার জন্য দু’খানা মোবাইল
নম্বর, আর তার ওপর প্রায় একফুট সমান অক্ষরে লেখা ‘ফেল ছাত্র পাস করে’। লখনৌয়ের
লোকেরা নাম নিয়ে বিচলিত নয়, তারা শুধু জানতে চায় কাজটা কেমন।
জৈন চাট ভাণ্ডারের (বা আমরা
যেটাকে জৈন চাট ভাণ্ডার বলে সন্দেহ করছি) সামনের ভিড় দেখলে তার কাজ সম্পর্কে ভরসা
না জাগার কোনও কারণ নেই। পানি কা বাতাশার কাউন্টার বাইরে,বাকি কর্মকাণ্ড পুরোটা ঘটছে ছোট্ট একফালি
দোকানের ভেতর। আমরা যখন গেলাম তখন একটা বড় অর্ডার প্যাক করার কাজ চলছিল। বোঝাই
প্যাকেটে দোকানের অর্ধেক ভর্তি। বাকিটুকুতে দাঁড়িয়ে লোকজন খাচ্ছে দহি বড়া, আলু
টিক্কি, মটর, দহি চাটনি কে বাতাশে, পাপড়ি চাট।
আমরা বাইরে থেকেই শুরু
করলাম। পানি কে বাতাশে। যে সে পানি নয়, খোদ জলজিরা। পদ্ধতি সেই একই। দু’জনে
দু’প্লেট করে খেয়ে দোকানের ভেতর যাওয়া হল। অর্চিষ্মান নিল এক প্লেট দহি চাটনি কে
বাতাশে, আমি নিলাম একপ্লেট মটর। শুনেছি এটা নাকি লখনৌয়ের বিখ্যাত চাট।
চাট খাওয়া শেষ হল। আমরা
বেরিয়ে এসে রিকশার খোঁজ করতে লাগলাম। চট করে পাওয়াও গেল। এইবার বাড়ি, মানে হোটেল।
মনে পড়তেই দু’জনেরই নাক থেকে ফোঁস করে আরামের একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল। অর্চিষ্মান আমার দিকে
তাকাল, আমি অর্চিষ্মানের দিকে তাকালাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমারও?” জবাব না দিয়ে
অর্চিষ্মান জিজ্ঞাসা করল, “তোমারও?”
জন্মজন্মান্তরের সম্পর্ক কি
না, তাই আর কিছু বলা বা শোনার দরকার হল না, এইটুকুতেই দুজনে যা বোঝার বুঝে নিলাম।
আমাদের দুজনেরই মনে হয়েছে লখনৌয়ের চাটের থেকে দিল্লির চাট ঢের বেশি ভালো খেতে। কেন
যে মনে হয়েছে সেটা ঠিক ঠিক করে বুঝিয়ে বলা শক্ত, কিন্তু তাও আমি যতটা পারি চেষ্টা
করছি।
এক, জলজিরা কে বাতাশে। সত্যি
বলতে কি এটাতে লখনৌয়ের দোষ নেই, পশ্চিমবঙ্গে শৈশব কৈশোর প্রাকযৌবন কাটানো দুটো
লোককে ফুচকা খাইয়ে ইমপ্রেস করা পৃথিবীর যে কোনও শহরের পক্ষেই শক্ত (অসম্ভব)।
বাংলাদেশের আকাশবাতাস জলহাওয়া খোলানর্দমা ফুচকাওয়ালার হাতের তার এইসব বড় বড়
ব্যাপারের কথা যদি ছেড়েও দিই, শুধু শুষ্কং কাষ্ঠং টেকনিকের দিকটাই যদি দেখি তবুও
লখনৌয়ের (এবং পৃথিবীর সব শহরের) বাতাশে আমাদের ফুচকার কাছে দাঁড়াতে পারবে না।
ফুচকার আসল মজাটা হচ্ছে ওই আলুমাখাটায়। উঁহু, উপকরণে নয় (ওটার আসল উপকরণের তালিকা
আপনাদের সকলের বাবামা-ই কোনও না কোনও সময়, বিশেষ করে আপনারা যখন মাঝরাস্তায় বসে
পড়ে “ফুচকা খাবওওওও” কান্না জুড়েছিলেন, ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন আমি নিশ্চিত। আমি আর
বলছি না) মাখার কায়দায়। সে মাখা এমন হবে যে মশলাপাতি তেঁতুলজলের সমস্তটা আলুসেদ্ধর
রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাবে, কিন্তু আলুকে একেবারে ধরাশায়ী করে ফেলবে না। মনে রাখতে
হবে মশলারা সব চরিত্রাভিনেতা, তাদের উপস্থিতির একমাত্র কারণ হল আলুসেদ্ধকে
সাজিয়েগুছিয়ে, তাঁর খুঁতটুত ঢেকে, রুজপমেটম মাখিয়ে স্টেজের ঠিক মাঝখানটা তাকে ছেড়ে
দেওয়া। যাতে যখন খদ্দের মুখে পুরবেন, পাতলা কুড়কুড়ে মোড়ক ফেটে ঝালটকনোনতা ঠাণ্ডা
জল যখন ছিটকে যাবে মুখের কোণায় কোণায়, তখন স্বমহিমায় আলুসেদ্ধ রঙ্গমঞ্চে
আবির্ভূত হবে। খদ্দের চিবোবেন, মোলায়েম কিন্তু ব্যক্তিত্বসম্পূর্ণ আলুসেদ্ধর
টুকরো তাঁর দাঁতের নিচে আত্মসমর্পণ করবে, কিন্তু আসলে জিতে নেবে খাইয়ের
হৃদয়। আজীবনের মতো।
ফোকলা নবাবদের খাওয়ার
সুবিধের জন্যই বোধহয়, লখনৌয়ের বাতাশার আলুর পুর একেবারে মিহি, রসনেন্দ্রিয়ে
বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ সৃষ্টি না করে সে মিলিয়ে যায়। খাওয়ার পর তার স্মৃতির
বাষ্পটুকুও লেগে থাকে না কোথাও। না জিভে, না মনে।
বাতাশায় তেঁতুলজলের বদলে
জলজিরার ব্যাপারটাও আমার মোটে পোষায়নি। জলজিরা? সে তো পেটখারাপ হলে খায়। আগে নোংরা
তেঁতুলজল খাইয়ে পেট খারাপ করা, তবে না জলজিরা খাইয়ে সারাবি?
দুই, আমাদের দুজনেরই মনে
হয়েছে লখনৌয়ের চাট যেন বড় দাম্ভিক। তার যেন বিকেলের খাওয়া হয়ে থাকতে আঁতে লাগে,
তাই সে দুপুরের মিল হয়ে ওঠার জন্য কোমর বেঁধেছে। ওই যে মটর বলে বস্তুটা আমি খেলাম,
ছোট্ট একটুখানি শালপাতার বাটিতে করে এলে কী হবে, তার স্বাদ গন্ধ বর্ণের ঝাঁজ দেখার
মতো। ওপরে ছড়িয়ে দেওয়া লালসবুজ চাটনি আর দইয়ের মুখোশটা ফুরিয়ে যেতেই সে নখদাঁত বের
করে আত্মপ্রকাশ করে। এ তো চাট নয়, এ তো একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ পদ। এ দিয়ে তো দিব্যি
ভাত মেখে খাওয়া যায়।
লখনৌয়ের চাট খেয়ে হতাশ
হওয়ার তিন নম্বর ব্যাখ্যাটা হতে পারে, খাওয়ার সময় আমাদের পেট অবিশ্বাস্য রকম ভরা
ছিল। অত ভরা পেটে কোনও খাবারই ভালো লাগা সম্ভব নয়, এমনকি অমৃতও না। এই যুক্তিটা অবশ্য
আমার ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ নয় কারণ অমৃতের কথা জানি না, সেই সময় হেদুয়ার ধারে,
আমাদের কলেজের সামনে যে ভদ্রলোক ফুচকা নিয়ে দাঁড়াতেন তাঁর ফুচকা এনে দিলে আমি অন্তত
আটটা, না থেমে খেয়ে নিতে পারতাম।
চার নম্বর ব্যাখ্যাটার
সঙ্গে চাট বা চাটের স্বাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আমাদের দুজনকেই প্রথম স্বাধীনতার
স্বাদ দিয়েছিল দিল্লি। এই শহরেই বাঁধা গরু প্রথম ছাড়া পেয়েছিল, প্রথম সারারাত জেগে
সূর্য উঠতে দেখেছিল, প্রথম হোস্টেলে থেকেছিল, হোস্টেল থেকে ছুটিতে প্রথম বাড়ি ফিরেছিল। দিল্লির সঙ্গে যে কোনও বিষয়ে
যে কোনও শহরের কম্পিটিশন হলেই আমাদের দুজনের বিচারে তারা গোহারা হারবে।
রিকশা হোটেলে নিয়ে এল। তালা
খুলে ঘরে ঢুকে টানটান করে পাতা ধপধপে বিছানাটা দেখে প্রথম টের পেলাম আমাদের
ক্লান্তির মাত্রা। সকাল থেকে ননস্টপ হাঁটা, ননস্টপ খাওয়ার ক্লান্তি। এখনও ধরাচুড়ো
ছাড়তে হবে, দাঁত মাজতে হবে, চুল আঁচড়াতে হবে, ঠোঁটে বোরোলিন মাখতে হবে, তবে গিয়ে
ওই স্বর্গের মতো বিছানাটায় পিঠ ঠেকানোর অধিকার মিলবে। মাগো। কান্না পেয়ে গেল। মনের
জোর বাড়াতে টিভি চালালাম। সি আই ডি হচ্ছে। গুড। বাংলা সি আই ডি হলে ভেরি গুড হত,
সেটা যখন হচ্ছে না তখন এটাতেই কাজ চালাতে হবে। সতেরো বছর পূর্তি উদযাপন চলছে সি আই
ডি-র। স-অ-তে-এ-রো-ও? কতটা বুড়ো হয়েছি মনে করে নিজেই শিউরে উঠলাম। আমার বুড়ো হওয়ার
সম্মানে ‘থিম’ এপিসোড হচ্ছে সি আই ডি-তে। আজকের থিম ফরেনসিক সায়েন্স। একদল ফরেনসিক
বিজ্ঞানী আর একদল ফরেনসিক বিজ্ঞানীকে নাইট্রোজেন গ্যাস শুঁকিয়ে অজ্ঞান করে তুলে নিয়ে
গেছে, এ সি পি প্রদ্যুমন আর তাঁর স্যাঙাৎদের ওপর ভার পড়েছে রহস্যের সমাধান করার।
ব্যাপারস্যাপার দেখে মন
খানিকটা চাঙ্গা হল। শরীরও। দু’কাপ চা বলে দাও না গো। আর ক্যামেরাটা একটু এদিকে
দাও, দেখি ছবিগুলো কেমন উঠল।
(চলবে)
:) :) bhalo laglo..sotti sesher chabita dekhe besh aram lagche - tinni
ReplyDeleteছবিতে দেখেই আরাম লাগছে তিন্নি, তবেই বোঝ সত্যি সত্যি আমাদের কত আরাম লাগছিল।
Deleteএই লেখার সেকেন্ড প্যারাগ্রাফ টা আমিও খুব করি। .. :) পশ্চিমবঙ্গের ফুচকার সাথে সত্যি কোনদিন কেউ কম্পিটিশনে আসবে না ... আমি প্রথম বাইরে খাই দিল্লী তে ওই সরোজিনী মার্কেট এ ... আলুর তরকারী দেওয়া ফুচকা ... কি বাজে ...
ReplyDeleteপ্রথম ফটোটা বেশ সুন্দর লাগলো ....দারুণ চলছে লেখাটা .. পরের পর্বের জন্য আর বেশিদিন ওয়েট করিওনা প্লিজ ....
আমিও তো তাই বলি রে, ঊর্মি। বেড়াতে গেলে যত না মজা তার থেকে বেশি মজা বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করায়। দ্বিতীয় পার্টটা দিতে একটু দেরি হয়ে গেল, তিন আর শেষ নম্বরটা যত তাড়াতাড়ি পারি লেখার চেষ্টা করছি।
Delete"শরীরে যদি না সয় তবে কি আগ্রায় গিয়ে তাজমহল দেখব না? পুরীতে গিয়ে পাণ্ডার লাঠির বাড়ি খেয়ে, “হেই বাবা জগন্নাথ, তোমার দারুকলেবর নিয়ে আমার ঘাড়ের ওপর পোড়ো না বাবা” জপতে জপতে গর্ভগৃহ প্রদক্ষিণ সেরে, ভূশণ্ডি কাকের একশোবার শোনা গল্পটা একশো একতম বার শুনে বাড়ি চলে আসব? বলব, “পাণ্ডার বকবকানি শুনে মাথা ধরে গিয়েছিল কি না, তাই সমুদ্রস্নানটা বাদ দিলাম, একেই মাথা ধরেছে, এর ওপর যদি আবার রং কালো হয়ে যায়, শরীরে সইবে না।”
ReplyDeleteAsadharaaaaan! Ehh ar opekkha kora jachhe na. 3tiyo porbota taratari likhe felun. :)
থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, সায়ন। লিখছি, তবে আমার তো যত না লেখা তার থেকে বেশি লেখার ফাঁকে বিশ্রাম। বিশ্রামটা যথাসাধ্য কম করার চেষ্টা করছি, তবে খুবই শক্ত কাজ।
Deleteবাঙালির কাছে খাওয়া নিয়ে ফান্ডা দিতে এলে ফলস্বরূপ কানমলা খাবার সমুহ সম্ভাবনা। তবু আমি কোথায় যেন পড়েছিলাম যে দিল্লি আর লখনৌয়ের চাটের মুল ফারাকটা হল ভল্লা। দিল্লির চাটে ভল্লা থাকে, লখনৌয়ের চাটে ভল্লা থাকে না। আমি নিজে ভল্লা মোটেই পছন্দ করি না। কালই আমরা সাকেতে বাদশাহী আংটি দেখে এলুম।
ReplyDeleteআমি অত ফারাকটারাক জানি না, খালি জানি ভাল্লা মোটেই ভালো না। ভালো চাটের দোকান হলে তবু সয়, খারাপ চাটের দোকান হলে ঠিক মনে হয় যেন ঘরমোছা বালতিতে চুবোনো ন্যাতা তুলে চিপে জল ঝেড়ে আমার পাতে দিয়ে দিল। জঘন্য।
Deleteআমরাও দেখলাম বাদশাহী আংটি, দেবাশিস। নেহেরু প্লেসের সত্যমে। কেমন লাগল অবশ্য এখনই বলছি না, লখনৌয়ের ঝামেলা শেষ করার পর একটা পোস্টে খেলিয়ে বলব।
iye mane esob lovoniyo khabar dekhei to lucknow chole jete iche korche. Nola ta beshi kina...:P
ReplyDeleteচলে যাও রাখী, লখনৌ। ভালো লাগবে।
DeleteAmader berano r dhoroner shonge onek onek miley giyeche ... ebaar Amritsar er etto research hoyechilo je shesher dike amar jawar ekdom icche e korchilo na ... mone hocchilo shob e jene gelam, dekhao hoye gelo ... ar ki hobe giye.
ReplyDeleteSarojini market theke amar o chenra jama kena hoyechilo ekbaar. :)
Bhulbhulayiya kemon laglo? Amader biyer por berano Lucknow diye e shuru ... tobey tunday kabab khawa hoyeni ... ar ekbaar jete hobe.
Chaat phuchka amader bangla'r e shob chaite bhalo, ek kothaye.
চাটের কথা বলতে পারব না, শর্মিলা, পশ্চিমবঙ্গে থাকাকালীন চাট খাইনি আমি কখনও, কিন্তু ফুচকাটা আমাদের সত্যি বাকিদের থেকে ভালো। বেড়াতে যাওয়ার রিসার্চটা সত্যি একটা সীমার পর ক্লান্তিকর হতে পারে।
Deleteবেড়াতে যাবার প্ল্যান-পর্বটা একেবারে সত্যি। এইতো শুরু হল যাবার জন্য পা বাড়ানো। মনসা গচ্ছতি কথাটা কি এমনি এমনি তৈরি হয়েছে? আর তুমি আরো আরো জায়গায় বেড়াতে যাও, পৃথিবী ঘোরো, কারণ তোমার সঙ্গে আমিও তো মনসা পৃথিবী ঘুরতে পারি।
ReplyDeleteফুচ্কার পর্বটা তো একেবারে অনৈসর্গিক।
থ্যাংক ইউ, মালবিকা। আপনার আশীর্বাদটা বড্ড দরকারি।
Deletephuchka niye ja bolecho ta ekebare 1000% thik. Mumbai eshe to ami phuchka kahawai chere diyechilam...kosmin kale shuni ni je keu mineral water r garam aluni, atake ghugni diye phuchka khay...era abar egulo baro baro harafe tangiye rakhe....amar bhalo-ardho to shab jaygay chekhe chekhe berato....ami abar ajebaje jinish kheye mukher swad nashter ghor birodhi. ja kina ek-kale amar 1st degree oesophagus ulcer-er jonno mukhyo bhumika palan korechilo take ami tar gun-er mandanda theke namai ki kore? ta ekdin dekhi Sunil phuchka khete khete pray Eureka bole chenchiye othe, amar mukhe jor kore ekta pure dey ebong parle phuchka bhaiya-r hate chumu khay- 'katodin pare ele' types byapar'...phuchka mukhe dhokar par to amar-o pray eki dasha- mone hay jeno swarger bagane ghure beracchi. shei abar phuchka khaowar shuru...amader bhalobasha-r tane ekebare Barrackpur-er phuchka/maidan-er phuchka/collegesquare-er phuchka ekhan amader hather muthoy. amar to office-er pasher building-ei bashe...tak jhal diye ja makhe na.... ufff ekebare college-r din mone koriye dey....amio ajkal prai giye kheye ashi...weekdays e ekhane amake eka eka phuchka khete jete hay...Sunil-er office anek dur, o jakhan pounchay takhan phuchkawala-ra tader pat chukiye tata bye bye...ekla khete je kharap lage ta nay...tabe ki jano pherar pathe na khub mon kharap hoye jay...r o beshi kore miss kori Kolkata-ke...hishon mone pore jay ekdangol meyer shei school bela theke haha hihi korte korte khawar katha....
ReplyDeleteযাক, দেবশ্রী, তোমরা যে একটা ফুচকার মতো ফুচকাওয়ালা খুঁজে পেয়েছ সে জন্য অভিনন্দন। যা বলেছ, ওই ভুলভাল জিনিস দিয়ে ফুচকা বানানোর কথা যখন আবার গর্ব করে ব্যানারে লিখে টাঙায় তখন হাসব না কাঁদব বুঝে পাই না।
Deleteফুচকা আর চায়ের স্বাদ, পছন্দের লোক সঙ্গে থাকলে অন্তত তিরিশগুণ বাড়ে নিঃসন্দেহে, কিন্তু দুটোই আমি একা একা খাওয়া প্র্যাকটিস করে নিয়েছি। না খাওয়ার থেকে একা খাওয়া ভালো। তাই না?
dwitiyo porber jonno mukhiye chilam. ahh ki shanti. chaat er bornona porte porte bejaye khide peye gelo. jodio chaat gulo dekhe amar totota bhalo laglo na. dilli r chaat ami khaini tai no idea, kintu kolkata r chaat besh rongbahari hoy, dekhei besh khete icche kore.
ReplyDeleteby the way, prothom porbo porar por lobhe lalayito hoye giye Oudh 1590 te giye galawati kebab ar raan biryani satiye esechi gelo shonibar.
বাঃ বাঃ, এইটা কাজের কাজ করেছ, কুহেলি। ওটা বুঝি একটা দোকান? নামটা বেশ ইন্টারেস্টিং তো।
DeleteChat ke guli marun, biryani er bornona sonar jonne chokhe agroho ar mukhe jol niye bose achi... ar vaggis apni bangla te lekhen, saheb ra porle etokhhone gordon ramsey porer season e masterchef e fuchka prepare korto!!
ReplyDeleteহাহাহা, তাহলে ইংরিজিতে না লিখে ভালোই হয়েছে, অর্ণব। ওই সব জায়গার রান্নাবান্নাকে আমি খুব সন্দেহের চোখে দেখি। হয়তো 'গুরমে' আর 'আভা গার্দ' বানাতে গিয়ে ফুচকায় ক্যাভিয়ার পুরে দেবে। বিরিয়ানি আসছে। কবে আসছে কথা দিতে পারছি না।
Deleteeite better. chaat er chobi dekhle amar ektuo koshto hoy na.. ager lekha ta, bisheshoto chobigulo dekhe amon bhenge porechilam ar comment korar shokti chilo na.
ReplyDeleteহাহা, স্বাগতা, তোমার কমেন্ট পড়ে খুব খুশি হলাম, থ্যাংক ইউ।
DeleteChomotkar cholchhe... aro hok!
ReplyDeleteধন্যবাদ, তপোব্রত।
Deletetomra ki ekhono lucknow te achho. tahole kintu nimish khete bhulo na. chowk e pawa jay abar charbagh (near station) er kacheo anek gulo dokan e pawa jay. aar hazratganj er amriti (jetake imarti boley) proshiddo.....pure ghee te deep fried ta kheyo.....just daroon!!!
ReplyDeleteআমাদের থাকতে আপত্তি ছিল না, শম্পা, কিন্তু এখনও লখনৌয়ে থাকলে লখনৌতেই থেকে যেত হত, কারণ দিল্লির চাকরিদুটো চলে যেত কি না। দাঁড়াও, লিখে নিই। অমৃতি তো জানি, ছোটবেলায় খুব কুটিল লোকের মন বর্ণনা করার সময় বলতাম, জিলিপি নয়, ওর মনে অমৃতির প্যাঁচ। কিন্তু ওই নিরিমিষি না কী বললে, ওটা জানি না। নেক্সট বার গিয়েই সোজা নিমিষির কড়াইয়ে/হাঁড়িতে ঝাঁপ মারব। ডাংকে শোন।
DeleteArre K, uttar Bharat er ekta naam kora mishti holo nimish. Etar Dilli version holo dawlat ki chaat, Benares version malai makkhan aar Agra version badshahi malai. Jinishta je ki daroon khete seta aami boley bojhate parbo na.
Deleteদৌলত কি চাট তো জানি! যদিও খাইনি কখনও। খাব খাব ভেবেছি অনেকবার। এই ঠিক করে ফেললাম, দিল্লির দৌলত কি চাট খাব, লখনৌয়ের নিমিষি খাব, কাশীর মালাই মাখ্খন খাব, আগ্রার বাদশাহি মালাই খাব। খাবই খাব। তারপর তোমাকে বলব কেমন লাগল।
Deleteদৌলত কি চাট আমি খেয়েছি বার দুই দিল্লি ফুড ফেস্টিভ্যালে। খেতে যে অসম্ভব ভালো তা নয়। কিন্তু অদ্ভুতুড়ে বলে মজা লাগে। জেন মেঘ খাচ্ছি বলে মনে হয়...
Deletearre na na daulat ki chaat food festival e khawa ta anek ta taj bengal e fuchka khawa'r moto hoye jachhe je......ota khete hobe old dilli....either chandni na holey bulari chowk.
Deleteকি পেটুক লোকজন সব আজকাল! দুটো পর্ব লখনৌ ফুরিয়ে গেল, এখনও রেসিডেন্সি নেই, শুধু কাবাব আর চাট চলছে! আম্মো গত শীতেই ঘুরে এসেছি, পড়ার সাথে সাথে জাবর কাটা হয়ে যাচ্ছে ভালো। চলুক, চলুক ...
ReplyDeleteহাহা, অবান্তরে স্বাগত, নিরুপম।
DeleteEkdom thik bolecho Kuntala. Phuchka only from Kolkata, take keu beat korte pare na -- ta se panipuriei hok, ba golgappa or paani batasha. Tobe ami Gurgaon te ekjon almost perfect phuchka wala peyechhi! Amar barir kachhei. However, ami Delhir chaatero khub ekta bhokto noi, except aloo tikki.
ReplyDeleteফুচকাওয়ালা প্রাপ্তিতে অভিনন্দন, রুণা। আমার দিল্লির চাট খুব প্রিয়। হয়তো অন্যায্য রকমের প্রিয়, ছোটবেলায় খেয়েছিলাম তো, নস্ট্যালজিয়াটিয়া মিলিয়ে আমার মাথার মধ্যেই তার স্বাদগন্ধ বেড়ে গেছে বোধহয়।
Deleteসত্যিই আমি খুব ঘাবড়ে গেছিলাম লখণৌতে আপনারা বাতাসা খেতে ছুটেছেন শুনে... দিল্লির চাট তো সন্দেহহীনভাবে এক নম্বর। লখনৌতে গেলে চাট খাওয়া যায় সেটা ঘাসফুসদের সান্ত্বনা দেবার জন্য তৈরী বার্তা। বাকি সব বেবাক ফাঁকা। আর ফুচকাটা তেঁতুল গোলা জলেই ভাল লাগে। এ ব্যাপারে একমত।
ReplyDeleteবাতাশা দেখে আমিও প্রথমে খুব হেসেছিলাম, সৌরাংশু, তারপর ভেবে দেখলাম, ব্যাপারটা ফুলকো বাতাশার মতোই দেখতে বটে।
DeleteAha eto khabar dabar... ki lobhonio... chat er chhobiduto o darun hoechhe... dekhei khete ichhe korchhe... next time Delhi te chat khetei hobe dekhchhi.
ReplyDeleteনিশ্চয়, ইচ্ছাডানা। সরোজিনী মার্কেটে গিয়ে পাপড়ি চাট খেয়ে আসবেন, দেখবেন, পস্তাবেন না।
Deletekothay ache ""nana munir nana moth""....kintu phucka r bypare dekhi sobai ekmoth
ReplyDeleteএই ব্যাপারটায় আসলে গ্রেট মেন থিংক অ্যালাইক।
DeleteAha e ki porilam ... mon bhoriya gelo ....
ReplyDeleteওরে বাবা, একেবারে সাধুভাষায় প্রশংসা? থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, শুভব্রত।
Deletedidibhai ekta boi,mane hardcover asol boi er kotha bolchi...ekta boi hotei pare,tomar hate lekha khole,jiboner eisob tukro masti gulo diye ekta boi e hat dao na...
ReplyDeleteo tumi to abar anonymas ke gali galaj korbe..ki korbo balo.karmokheterer computer er pachal sob..onek kichu khole na
আরে বালাই ষাট, গালিগালাজ করব কেন? বিশেষ করে আপনি যখন আমাকে এত ভালো ভালো কথা বললেন। বই বার করা তো আমার হাতে নেই, কপালে আছে কি না তাও জানি না। তবে আপনার উৎসাহ পেয়ে খুব ভালো লাগল। থ্যাংক ইউ।
Deleteঅল্পেতে খুশি হবে
ReplyDeleteদামোদর শেঠ কি।
মুড়কির মোয়া চাই,
চাই ভাজা ভেটকি।
আহা খাওয়া দাওয়া নিয়ে দারুণ লেখাটা
থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ ।
Delete