বাদশাহী আংটি
“কিছু দেখিয়েছে?”
দ্রাবিড়, মোঙ্গোল, নর্ডিক
বৈশিষ্ট্য মিলিয়েমিশিয়ে বানানো একটা গোল মুখ। ভোঁতা নাক, অদৃশ্য চিবুক। রবীন্দ্রনাথ,
জীবনানন্দ, সুকুমার রায় পড়া জ্বলজ্বলে, কিন্তু অদূরদর্শী দৃষ্টি, মোটা চশমায়
আচ্ছাদিত। দৌড়ে আসার পরিশ্রমে আর বাদশাহী আংটি দেখার প্রত্যাশায় বুক ধড়ফড় করছে, উত্তেজিত
নিঃশ্বাস পড়ছে এবড়োখেবড়ো।
আমরাও যে তখন এমন কিছু
শান্ত ছিলাম তেমন নয়। ছ’টার সময় অফিস থেকে বেরিয়ে ন’কিলোমিটার দূরের সিনেমাহলে
ছ’টা পঞ্চাশের শো দেখার চেষ্টা করলে থাকার কথাও নয়। কিন্তু উপায় ছিল না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা গেল বাদশাহী আংটি শহরে এসেছে। অবশেষে। এন সি আর-এর
সীমানা পেরিয়ে নিউ দিল্লিতে পা রেখেছে, নয়ডার হল থেকে বেরিয়ে নেহরু প্লেসের হলে
ঢুকেছে। সিনেমাটার মুখ চেয়ে চেয়ে আমাদের ধৈর্যের তখন লখনৌয়ি বিরিয়ানির মাংসের মতো সুসিদ্ধ
দশা, শনিরবি পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখলে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কাজেই
শুক্রবার সন্ধ্যের টিকিট কাটতে হল। নিজেদের সান্ত্বনা দিলাম, ভালোই হবে। এক ঢিলে
ফেলুদা আর ফ্রাইডে নাইট।
ছ’টা সাতচল্লিশে মেট্রো
থেকে নেমে, পাশের পানের দোকানে অর্চিষ্মানের ব্যাগ জমা রেখে, এস এম এস-এর প্রমাণ
দেখিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে, মেটাল ডিটেক্টর এবং সিকিউরিটির থাবড়ানি পেরিয়ে,
দুটো করে সিঁড়ি একসঙ্গে টপকে, পপকর্ন আর কোল্ডড্রিংকস হাতে নিয়ে, অন্ধকারে সিট
বেছে বসে সবে খপাৎ করে একমুঠো পপকর্ন মুখে পুরেছি, পর্দায় সেন্সর বোর্ডের
অনুমতিপত্র পেরিয়ে সবে নাম দেখাতে শুরু করেছে, এমন সময় কানে বাতাস।
“কিছু দেখিয়েছে?”
আমার মুখভর্তি পপকর্ন, খোলার
উপায় নেই। মাথা নাড়লাম। চোখ ফের পর্দার দিকে। পাশে কোট খোলার খসখস, হাঁসফাঁস,
সিটের হাতলের গর্তে ঢোকাতে গিয়ে ভর্তি গ্লাস চলকে গায়ে ঠাণ্ডা পেপসি চলকে পড়ার
প্রতিক্রিয়ায় “এ হে হে, আস্তে আস্তে, হুড়োতাড়া কোর না, হুড়োতাড়া কোর না” ইত্যাদি
শব্দ। চোখের সামনে পর্দায় সম্পাদনা সুব্রত রায়। এমন সময় বাঁ চোখের
কোণ দিয়ে আমি দেখতে পেলাম একটা গোল বলের মতো ছায়া আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার
কানের তিন ইঞ্চি দূরে এসে ছায়াটা থেমে গেল।
“ইয়ে, মানে অনেকসময় নাম
দেখানোর আগে একটা ইন্ট্রোডাকশন মতো দেখায়, সে রকম কিছু কি . . .”
পরের মুঠোর পপকর্নটা তখনও মুখে
পোরা হয়নি, তাই উত্তর দিতে অসুবিধে হল না।
“দেখায়নি। মা কালীর ছবি
দিয়ে শুরু হয়েছে, তারপর এই নাম চলছে।“
ভদ্রলোকের মুখ থেকে আতংকের
ভাবটা সরে গিয়ে একটা পরম নিশ্চিন্তির ভাব ফুটে উঠল। বুকভরা একখানা লম্বা শ্বাস
ছেড়ে সিটে এলিয়ে পড়ে বসে ওপাশের সঙ্গীকে তিনি বললেন, “যাক, কিছু মিস হয়নি।”
সিনেমাটা পুরোটাও দেখানো
হয়ে যাওয়ার পর ভদ্রলোক হলে ঢুকতেন তাহলেও অবশ্য তিনি কিছু মিস করতেন না। আমরা কেউই
করতাম না। সেদিন সেই নেহরু প্লেসের সত্যম মাল্টিপ্লেক্সের বি নম্বর হলের ছ’টা
পঞ্চাশের শোয়ে শুধু নয়, পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের যে কোনও হলের, যে কোনও শোয়ে
যারা যারা বাদশাহী আংটি সিনেমাটা দেখতে ঢুকেছে, তারা কেউ করত না। কারণ তারা সকলেই
জানত পিয়ারীলালের “স্পাই . . . স্পাই . . .”-এর মানে কী, বনবিহারীবাবুর তালাবন্ধ
ঘরটায় কী আছে, ধীরুকাকুর বাড়িতে সেদিন সন্ধ্যেয় যে একজন সাধু এসেছিল – উঁহু, ধীরুকাকুর বন্ধু অম্বিকাবাবু নন, এ
মিথ্যে সাধু, লখনৌ স্টেশনের ওয়েটিংরুম থেকে যে ভ্যানিশ হয়ে গেল - সে কে, কী তার
পরিচয়। সকলেই জানত ট্রেনের আপার বার্থের কম্বল থেকে বেরিয়ে থাকা বুড়ো আঙুলটা কার। পরাণ
বন্দ্যোপাধ্যায় যতই ভালোমানুষের অভিনয় করুন না কেন, সকলেই জানত ওঁর পেটে পেটে কী
আছে।
তবু সেই মুখস্থ হয়ে যাওয়া
গল্পটা নিয়ে বানানো সিনেমার আধখানা দৃশ্যও মিস হয়ে যাওয়ার আতংকে আমরা সকলেই তটস্থ
হয়ে ছিলাম।
এই প্রসঙ্গে একটা পুরোনো
কথা মনে পড়ে গেল। তখন আমার আর অর্চিষ্মানের আলাপ হয়েছে। আলাপ এত নতুনও নয় যে জল
কোনদিকে গড়াবে আঁচ করা যাচ্ছে না, আবার এত পুরোনোও হয়ে যায়নি যে ‘যাক বাবা, গেম
সেট ম্যাচ’ বলে হাত ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে। সেই ভয়ানক রোমহর্ষক এবং খাটুনির সময় আমাদের
দেশ এক হলেও শহর ছিল আলাদা আলাদা। সে সময় নিয়ম করে আমরা দিনে চারপাঁচ ঘণ্টা
চ্যাটবাক্সে টাইপ করতাম। আর আমাদের পাশে
রাখা থাকত অদৃশ্য খাতায় লেখা অদৃশ্য তালিকা। আমরা টাইপ করতাম আর অদৃশ্য পেনসিল
দিয়ে সে তালিকার এক একটি বাক্সে টিক দিতাম। প্রগতিশীল? টিক। Y2K দেখেছে, পড়া ধরলে সংলাপ মুখস্থ বলতে পারবে? টিক। বই (বিশেষ
করে বাংলা বই) পড়েছে? টিক। কতখানি পড়েছে? এমন কম পড়েছে কি যে আলোচনা করতে বসে ‘আহা
আমরা কি ভালো কি বুদ্ধিমান কি সংস্কৃতিসম্পন্ন’ তৃপ্তির আগুন পোহানো যাবে না, আবার
এমন বেশিও পড়েছে কি যে সারাজীবন আমাকে ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগে মরতে হবে?
উত্তর যথাক্রমে না এবং না। টিক টিক টিকাটি টিক।
নিজের মনকে যখন বিশ্বাস
করতে পারছি না যে এমন একটা মানুষ পৃথিবীতে সত্যিই থাকতে পারে, থাকলেও আমার সঙ্গে
তার সত্যি সত্যিই দেখা হতে পারে, দেখা হওয়ার পর বন্ধুত্বও হতে পারে, এবং ক্রমে
বন্ধুত্বের থেকেও বেশি কিছু হওয়ার সম্ভাবনাও থাকতে পারে, নিজের গায়ে চিমটি কেটে
কেটে যখন গায়ের চামড়া লাল হয়ে গেছে, এমন সময় একদিন কী একটা কথায় ফেলুদার কথা উঠল
আর উঠতেই অর্চিষ্মান, যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব করে চ্যাটবাক্সে টাইপ করল,
‘বাই দ্য ওয়ে, ফেলুদার কোন
গল্পটা তোমার সবথেকে প্রিয়?’
নিরীহ, ঘোরপ্যাঁচহীন প্রশ্ন। কিন্তু আমার মগজের
সবক’টা স্নায়ু নিমেষে টানটান হয়ে গেল। ওই ছাপোষা প্রশ্নের আড়ালের ব্রহ্মাস্ত্রটা
আমার চোখ এড়ায়নি। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম চ্যাটবক্সের ওধারে বসে অর্চিষ্মানের
শান্ত চোখদুটো প্রখর হয়ে উঠেছে, শিরদাঁড়া সোজা, অদৃশ্য চেকলিস্টের ওপর উদ্যত হয়ে
উঠেছে অদৃশ্য পেনসিল। একটা ভুল হলে অমোঘ খাঁড়ার মতো নেমে এসে টিকের বদলে ঢ্যাঁড়া বসিয়ে
দেবে। আর একশোটা টিকের মিলিত প্রভাব এক ঝটকায় মাটিতে নামিয়ে আনার ক্ষমতা আছে সে
ঢ্যাঁড়ার। আমার এতদিনের পরিশ্রম, এতঘণ্টার টাইপিং . . .
বুক ভরে দম নিয়ে আমি টাইপ
করেছিলাম, “বাদশাহী আংটি। তোমার?”
চ্যাটবক্সে হাসিমুখ ফুটে
উঠল।
“যাক। আমারও। ওটাই বেস্ট,
তাই না?”
আমি স্পষ্ট টের পেলাম ওপ্রান্তে
অর্চিষ্মানের শিরদাঁড়া আবার নমনীয় হয়ে এসেছে। দৃষ্টি আবার আগের মতো নরম। শান্ত। অদৃশ্য চেকলিস্ট হাতে তুলে খুচিমুচি করে তুলে নির্ভুল টিপে ছুঁড়ে ফেলছে ঘরের কোণে
রাখা জঞ্জালের ঝুড়িতে। আমিও আমার অদৃশ্য টিকের হিসেবের কাগজ তুলে ছিঁড়ে কুচিকুচি
করে সেই যে বাতাসে ভাসিয়ে দিলাম, আর কখনও সেটার কথা ঘুণাক্ষরেও মনের কোণে স্থান
দিইনি।
সেই বাদশাহী আংটি নিয়ে সিনেমা
করার সুবিধে অসুবিধে দুই-ই আছে। এক নম্বর সুবিধে, গল্পে জটায়ুর অনুপস্থিতি। এটা যে আমার পক্ষে কত বড়
সান্ত্বনা সেটা আমি আপনাদের সত্যিই বুঝিয়ে বলা শক্ত। এ প্রসঙ্গে সেদিন ক্রাইম
রাইটার্স ফেস্টিভ্যালে শোনা দিবাকর ব্যানার্জির একটা কথা মনে পড়ে গেল। আলোচনা
হচ্ছিল গল্পের বইয়ের চরিত্রদের চলচ্চিত্রের চরিত্র হয়ে ওঠার স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে।
ধৃতিমান বলছিলেন, ব্যোমকেশের চরিত্রে এই স্থিতিস্থাপকতা প্রচুর। বিভিন্ন পরিচালক
বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন চেহারার ব্যোমকেশকে দেখানোর স্বাধীনতা পরিচালকেরা নিতে
পারেন। যেটা ফেলুদাকে নিয়ে করা শক্ত। অ্যাকচুয়ালি, দিবাকর যে কথাটা বলেছিলেন সেটা
হচ্ছে “[This character is] set in stone”. সত্যি বলতে কি এই কথাটা আমার ফেলুদার থেকেও অনেক বেশি সত্যি মনে হয়
জটায়ুর ক্ষেত্রে। ফেলুদার ভুঁড়ি, তোপসের পাকামো, সব আমি সইতে পারি, শুধু পারি
না লালমোহন গাঙ্গুলির জায়গায় সন্তোষ দত্ত ছাড়া আর কাউকে মেনে নিতে।
দু’নম্বর সুবিধে লখনৌ। টাঙ্গা,
এক্কা, রুমি দরওয়াজা, ক্লক টাওয়ার, গনগনে আগুনের ওপর শিকে বেঁধা মাংস, উল্টোনো
কড়াইয়ের ওপর ফোসকা পড়া পরোটা, রেসিডেন্সির গায়ে কামানের ক্ষত, ঠেলাগাড়ির ওপর
লালনীল চুড়ির সারি, নীল আকাশে রংবেরঙের ঘুড়িতে কাটাকুটি আকাশের দেশে ক্যামেরা নিয়ে
গিয়ে পড়ার সুবিধে। সত্যজিৎ রায়ের যে কোনও গল্প নিয়ে ছবি করতে গেলেই অবশ্য এ
সুবিধে পাওয়া যায়। লখনৌ না হলে জয়সলমীরের
মরুভূমি, ডুয়ার্সের জঙ্গল, পুরীর সমুদ্রতট, বারাণসীর গঙ্গা, ডুয়ার্সের জঙ্গল, দার্জিলিঙের কাঞ্চনজঙ্ঘা – মন ভরানোর সঙ্গে সঙ্গে চোখের
আরাম গ্যারান্টিড।
বাদশাহী
আংটি নিয়ে সিনেমা বানানোর তৃতীয় সুবিধেটা হল যে গল্পটা সকলেরই জানা। শেষ মুহূর্তে
দুষ্কৃতীর মুখোশ টেনে খুলে ফেলার আগের দু’ঘণ্টা সকলকে সিটের কিনারে টানটান হয়ে
বসিয়ে রাখা নেই। প্রতি মোচড়ে চমকে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব নেই। আমরা সকলেই গল্পটার
আগামুড়ো জানি।
বাদশাহী
আংটি নিয়ে সিনেমা করার প্রধান অসুবিধেও এটাই। গল্পটা আমরা সকলেই অন্তত একশোবার করে
পড়েছি। একটিও বাড়তি কথা না বলে লেখক গল্পের মানুষগুলোকে, শহরগুলোকে বাড়িঘর,
পথঘাটগুলোকে এমন ফুটিয়ে তুলেছেন যে সেগুলোকে নিয়ে নিজেদের মাথার মধ্যে এক একটা
নিজস্ব সিনেমা বানিয়ে তুলতে আমাদের একটুও অসুবিধে হয়নি। লখনৌয়ে কোনওদিন পা না
রেখেই আমরা শহরের রাস্তায় টাঙ্গা চেপে বাদশা মঞ্জিল, চাঁদিওয়ালি বরাদরি, লাখুফটক
দেখতে দেখতে চলেছি, ঝাঁকুনির চোটে একটু আগে খাওয়া টুণ্ডে কাবাবির গালাওটি কাবাব
হজম হয়ে গেছে। রাতে আচমকা ঘুম ভেঙে গিয়ে জানালা
দিয়ে তারাভরা আকাশের জায়গায় দেখছি একটা মানুষের কালো ছায়া, দেখে ভরদুপুরে রোদে
ভেসে যাওয়া কোণার ঘরে বইয়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়া সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।
হরিদ্বারমুখী ট্রেনের জানালায় বসে দেখছি পূর্ণিমার চাঁদ আমাদের গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে
ছুটে চলেছে, তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ কখন বুজে এসেছে, আধোঘুমে কানে এসেছে বাইরের
জঙ্গল থেকে ভেসে আসছে হায়নার বিশ্রী হাসি।
কল্পনায়
শোনা সে হাসির সঙ্গে সত্যি হায়নার হাসিই পাল্লা দিতে পারে কি না সন্দেহ, সিনেমার হাসির
কথা তো ছেড়েই দিলাম।
ইন্টারভ্যালে
আলো জ্বলতে আমি অর্চিষ্মানকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আমার ভালো লাগছে সিনেমাটা, তোমার?”
অর্চিষ্মান বলল, “আমারও ভালোই লাগছে, তবে কিছু কিছু জায়গা . . . যেমন ওই যে ওই জায়গাটা . . .”
“ওই
যেখানে ধীরুকাকার বাড়ির গেটের সামনে থেকে শ্রীবাস্তবের গাড়ি রওনা দিতেই অন্য
গাড়িটা গিয়ার চেঞ্জ করে পেছন পেছন ফলো করল তো?”
“হুম।
ওই জায়গাটা আমি অন্যরকম ভেবেছিলাম।”
আমিও
ভেবেছিলাম। একদম অন্যরকম। অর্চিষ্মান কেমন ভেবেছিল সেটা আর জানতে চাইলাম না। জানতাম
দুজনের ভাবনা মিলবে না। কী দরকার অমিলগুলো খুঁড়ে খুঁড়ে বার করার।
কিংবা
ক্লাইম্যাক্সটার কথা ধরা যাক। গাছের গুঁড়ি আর ঝিঁঝিঁর ডাকের ভেতর দাঁড়ানো পাঁড়েজীর
নিঃসঙ্গ কাষ্ঠকুটির। তার ভেতরে একটা কাঠের ভাঙা বেঞ্চের ওপর আমি দাঁড়িয়ে আছি,
আমাকে ধরে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ফেলুদা। একটা খুব আবছা শব্দ হচ্ছে কোথাও, কিরর্র্
কিট কিট, কির্র্র্ কিট কিট।
চোখের সামনে দেখছি একটা সরু মাথা থেকে বিদ্যুতের মতো মাঝে মাঝে বেরিয়ে আসছে একটা চেরা
জিভ। আর আমার চোখের দিকে সোজা তাকিয়ে আছে ঠাণ্ডা অস্বচ্ছ কাঁচের ঠাণ্ডা গুলির মতো
দুটো চোখ। চোখ তো নয়, চুম্বক। আমি সে চুম্বক থেকে আমার চোখ সরাতে পারছি না। চুম্বকটা আমার চোখে চোখ রেখে
আমার ভেতর থেকে সমস্ত প্রাণশক্তিটুকু শুষে নিচ্ছে। আমি আর দাঁড়াতে পারছি না, আমার
পা কাঁপছে। আমি পড়ে যাচ্ছি। পড়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে হঠাৎ একটা কান ফাটানো শব্দ,
চোখ ঝলসানো আলোর দমক, ব্যস, আর কিছু মনে নেই।
এই
দৃশ্যটা আমি প্রথম দেখেছিলাম বছর দশেক বয়সে। চোখের সামনে নয়, মাথার ভেতর। তার পরের
চব্বিশ বছরে অন্তত কুড়ি বার ওই পাতাগুলো পড়েছি আর কুড়িবার দৃশ্যটা মাথার ভেতর
দেখেছি। প্রতিবারে দৃশ্যগুলো সাপের চোখদুটো আরও ঠাণ্ডা, আরও বিভীষিকাময় হয়েছে,
জিভের চেরা দাগটা আরও স্পষ্ট, বন্দুকের গুলির শব্দটা আরও কানফাটানো, আমার ভয়টা আরও
জীবন্ত।
সে
ভয়, সে শিহরণের সঙ্গে সত্যিকারের সিনেমার ক্লাইম্যাক্সের শিহরণ মেলানো কোনও
রক্তমাংসের পরিচালকের পক্ষেই সম্ভব নয়, সন্দীপ রায়ও পারেননি। সে জন্য তাঁকে আমি
দায়ী করছি না।
কিন্তু
কিছু কিছু দৃশ্য আবার মিলেছেও। যেমন শেষ দৃশ্যটা। যেখানে অজ্ঞান হয়ে থাকা তোপসের
চোখেমুখে জল ছিটিয়ে তাঁর জ্ঞান ফেরাচ্ছেন ডক্টর শ্রীবাস্তব, আর তোপসে জিজ্ঞাসা করছে,
“ফেলুদা কোথায়?” আর অমনি তোপসের চোখে এসে পড়েছে হীরে ঠিকরোনো সূর্যের আলো, আর
তোপসে চমকে উঠে দেখছে একটু দূরে দাঁড়ানো ফেলুদা আঙুলে পরা আংটিটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
তোপসের চোখে আলো ফেলছে।
আর
আমরা দেখছি আবীরকে। আবীর, আমার কাছে এই মুহূর্তের বাংলা সিনেমার একমাত্র নায়ক যাকে
দেখলে খুব জোরে হাসি কিংবা খুব জোরে কান্না কোনওটাই পায় না। আবীররূপী ফেলুদাকে
আমার পছন্দ হয়েছে। আবীর সুপুরুষ, আবীরের চেহারায় বুদ্ধির ছাপ আছে, আর আছে ‘হিরো’সুলভ
সেই ‘ব্যাপার’টা
যেটা ফেলুদার মধ্যে আছে
এবং বাঙালি আর কোনও গোয়েন্দার মধ্যে নেই।
আবীর
কি ফেলুদা হওয়ার দৌড়ে সৌমিত্রকে হারাতে পারবেন? না। উনিশশো ছিয়ানব্বই সাতানব্বই
সালে দূরদর্শনে যে ফেলুদা তিরিশ সিরিজ হত, আবীর সে সময়ের সব্যসাচীও হতে পারবেন না
হয়তো। এই বয়সে এসে নিজের হাইট বাড়ানো আবীরের পক্ষে সম্ভব নয়, সম্ভব নয় গলার আওয়াজ
বদলানোও। কিন্তু এই মুহূর্তে যদি কাউকে ফেলুদা হতেই হয়, তবে সে আবীর ছাড়া আর কেউ
নয় বলেই আমার বিশ্বাস। শুধু বিকল্প নেই বলেই আবীর ভালো, এই ভাবে বলাটা আবীরের
প্রতি অবিচার হচ্ছে। আমার আবীরকে এমনিতেই ভালো লেগেছে, আমি চাই তাঁকে ফেলুদা
সাজিয়ে সন্দীপ রায় আরও অনেক সিনেমা বানান।
এইটা
বলতেই আশপাশ থেকে আর্তনাদ ভেসে এল। আগামী ছবি? সন্দীপ রায়? আবার?
সন্দীপ
রায়কে আমরা পছন্দ করি না। রবীন্দ্রনাথের ঘরে যখন রথীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন তাঁকেও
আমরা পছন্দ করিনি। না করার যথেষ্ট কারণ আছে। যে কোনও প্রতিভাই একটা সময়ের পর পণ্য
হয়ে যায়। সেটার একটা বাজার তৈরি হয়। তখন
আর সেটা প্রতিভাবানের সম্পদ থাকে না, আমাদের সবার হয়ে যায়। জাতীয় প্রতিভা। বা
প্রাদেশিক। যত বড় প্রতিভা তাতে সকলের তত বেশি অধিকার। সন্দীপ রায়, রথীন্দ্রনাথরা
আমাদের সে অধিকারে হাত দিয়েছেন। প্রায় গোটা একটা শতাব্দী ধরে বংশপরম্পরাবাহিত প্রতিভার
নিরবচ্ছিন্ন জোগান ভোগ করতে করতে সেটাতে আমাদের জন্মগত অধিকার ধরে নেওয়ার যে
স্বপ্নসুখ, হঠাৎ সে স্বপ্ন ঝাঁকুনি দিয়ে ভেঙে দিয়েছেন। এতেও যদি রাগ না হয় তবে
আমরা মানুষ নই, সরীসৃপ। তবে আমাদের শিরদাঁড়ার জায়গায় জেলি আর রক্তের জায়গায় বরফ। রাগের
চোটে আমরা সন্দীপ রায়ের নাকের আঁচিল দেখে হাসছি, তাঁর ডাকনাম নিয়ে ঠাট্টা করছি। ‘বাপঠাকুরদা
বেঁচে থাকলে নির্ঘাত ত্যাজ্যপুত্র করত’ ভেবে নিজেদের খানিকটা ঠাণ্ডা করতে চাইছি,
কিন্তু সে চেষ্টায় বিশেষ কাজ দিচ্ছে না।
যাঁদের
মাথা গোড়া থেকেই ঠাণ্ডা, তাঁরা অবশ্য বলছেন, “আহা রাগটা তো শুধু লোকটার ওপর নয়,
রাগটা হচ্ছে ওই প্রতিভার ফসল কুক্ষিগত করে রাখার ইচ্ছেতে। নিজে যখন পারিস না, তখন
আমাদের হাতে ছেড়ে দে, দেখিয়ে দিচ্ছি প্রতিভার প্রতি সুবিচার কাকে বলে।”
এই
প্রস্তাবটাতে আমি যে খুব চেঁচিয়ে গলা মেলাতে পারছি তেমন নয়। চাইছি, কিন্তু পারছি
না। সন্দীপ রায় না বানালে আর কারা কারা ফেলুদা বানাতে পারেন সে সম্ভাবনাটা মাথায়
এসে যাচ্ছে আর আমার হাতপা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমার চোখের সামনে দেখতে দেখতে ফেলুদার
চেহারা, পোশাকআশাক বদলে যাচ্ছে। ফেলুদা অসম্ভব টেক-স্যাভি হয়ে উঠছেন, স্ট্রিটস্মার্টনেস
ফেটে বেরোচ্ছে ফেলুদার চলনবলন হাবভাব থেকে। হয়তো তোপসের কাছ থেকে আধুনিক স্ল্যাং (যেমন
ধরা যাক ‘হুব্বা’) পিকআপ করছেন, করে এত খুশি হয়ে যাচ্ছেন যে ফাঁক পেলেই সে শব্দ
ব্যবহার করার লোভ সামলাতে পারছেন না।
আমি
জানি না। হয়তো ওটাই ভালো হবে। হয়তো ওটাই হওয়া উচিত। যুগোপযোগী। কিন্তু আমার কেন
যেন সন্দেহ হচ্ছে সেই ভালো জিনিসটা আমার তত ভালো লাগবে না। আমার মন কাঁদবে এই
সেকেলে ফেলুদার জন্যই। যিনি চালাক নন, বুদ্ধিমান; যাঁর ঝাঁজ নেই, কিন্তু ধার আছে পর্যাপ্ত।
কিন্তু
এসব কথার কোনও মানে হয় না। কারণ ফেলুদা যেমনই হোন না কেন, তাঁকে আমি দেখতে তো আসবই।
বদলাবে তো শুধু বাইরের চেহারাটা, ক্লাস ফাইভের কুন্তলার বুকের ভেতর প্রথম প্রেমে
পড়ার অনুভূতিটা তো একইরকম থাকবে। যেখানেই থাকি, পৃথিবীর যে কোণায়, ফেলুদাকে দেখতে
হাতের সব কাজ শেষ করে, ছুটতে ছুটতে হাঁপাতে হাঁপাতে শেষমুহূর্তে এসে অন্ধকার হলে
তো আমি ঢুকবই, আর ধড়াস ধড়াস করা বুক নিয়ে পাশের লোককে ঠ্যালা দিয়ে মাতৃভাষায় সান্ত্বনা
চাইব, “কিছু মিস হয়ে গেল না তো আমার?”
Badshahi angti amar nam dekhano theke sesh scene obdi daat ber kora obosthate chilo. kano, seta v hard to explain. akei Aabir tar opor abar Feluda, duto mile mishe amar voyanok anondo hocchilo. ekhane onekei amar dhore thengate asbe jani, but Sabyasachi ke amar ektuo bhalo lagto na. Finally onar replacement hoyeche eta vebei khub khushi chilam. ei movie ta ager gulor moto disastrous o hoyni. tobe Feluda r replacement holeo, Jotayu Santosh Dutta e chilen, achen o thakben jotodin ei dhoradhame bangali jaati hese khele berabe.
ReplyDeleteamake*
ReplyDeleteআমার তো এই সিনেমাটা বেশ ভালোই লেগেছে, কুহেলি। তোমার সঙ্গে মত মিললো দেখে খুশি হলাম।
Deleteএকমত হলাম। আঁতেলামো করে সন্দীপ রায়কে গালাগাল দেওয়া, বা চাঁদের পাহাড়কে গালাগাল দেওয়া খুব সহজ। আপনি ঠিক বলেছেন যে এরা বাজে হতে পারেন, কিন্তু বিকল্পগুলো আরওই বাজে হবে। সৌমিত্র আশিতে পা দিলেন, তাঁর দ্বারা এখন আর ফেলুদা হবে না। আবির চ্যাটার্জি ভালই করেছেন।
ReplyDeleteআর চিন্তা করবেন না, জটায়ুর ভুমিকাতেও কেউ না কেউ ভালই করবেন।
ওই করে রবি ঠাকুরের বারোটা বাজিয়েছি আমরা। যে কোন রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠানে শুনবেন, সবাই মিলে যত ঢিমেতালের মূর্ধন্য ষ বিশিষ্ট গানগুলো গেয়ে চলেছেন। লাভের মধ্যে নতুন প্রজন্ম ধরে নিয়েছে যে রবীন্দ্রসঙ্গীত বোরিং, এবং যথেষ্ট কুল নয়। প্রথম রিমিক্স হবার পর লোকে যা বলেছে, বাপরে। এখন নেহাত জলের তোড়ে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, তাই রক্ষা।
Deleteআমার গালাগাল দেওয়াতে আপত্তি নেই দেবাশিস (আমি নিজেই টিভিতে চাঁদের পাহাড় দেখে সেটা যথেষ্ট পরিমাণে দিয়েছি), কিন্তু সন্দীপ রায়কে দেওয়া গালাগালির ধরণটা আলাদা। আক্রমণটা যত না সিনেমাসংক্রান্ত, তার থেকে বেশি ব্যক্তিগত স্তরে। আমার সেটা কেমন কেমন লাগে। একজন দু'জন করলে কানে লাগত না হয়তো, কিন্তু সকলেই যখন সেই লাইনে বলতে শুরু করে তখন উপেক্ষা করাটা শক্ত হয়ে যায়।
Deleteরবীন্দ্রসংগীত . . . একসময় ওই ঢিমেতাল আর ষ-এর ভয়ে কাছে ঘেঁষতাম না, এখন কুলনেস দেখে দৌড়ে পালাই।
যাক, এতদিনে অনলাইনে একজনকার সঙ্গে আমার মতামত পুরোপুরি মিলেছে। তাই সাহস করে কটা কথা বলছি। মানে সিনেমাটা যখন আমাদের ভালো লেগেছে তখন ভালো খারাপ মিলিয়ে আরো দুচারটে কথা বলাই যায়।
ReplyDeleteপ্রথমত বেশিরভাগ লোকের যেটা আপত্তি সেটা হলো "এ কেমন ফেলুদা? এ কেমন তোপসে?" তারা বুঝতেই পারছেনা যে এটা নিছক আগের ফেলুদার ভূমিকায় সব্যসাচীর বদলে আবীর নয়, যেমনটা সব্যসাচী ছিলেন সৌমিত্রর বদলে। এটা কিন্তু ফেলুদার "reboot", তাই ফেলুদা তোপসে আরো ইম্ম্যাচিওর। জানেন, লোকে ফেলুদার হ্যাংলামো দেখানোর জন্য নিন্দে করেছে সন্দীপ রায়ের? গল্পের ফেলুদা মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে তোপসের প্লেটের লাড্ডু তুলে নেয়নি? আর ওই শেষ দৃশ্যটা, যেটা হুবহু আপনার-আমার কল্পনার সঙ্গে মিলে গেছে সেটার বিষয়ে কিছু লোকজনকে কি বলতে শুনলাম জানেন? তোপসের অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটাই নাকি বোকা বোকা, আর ফেলুদার ওর চোখে আলো ফেলাটা ততোধিক childish.
সিনেমাটাকে আমি নিখুঁত বলবনা। "খুব হুঁশিয়ার" যে উর্দুতে লেখা হুমকি এমন অদ্ভুত ডায়ালগটা কেন বাদ পড়ল জানিনা, জানিনা কেন বাদ পড়ল গ্রিক হরফে লেখা ফেলুদার ডায়রি, যেটা পড়ে আমি গ্রিক হরফ শিখেছিলাম। সাপকে গুলি মারাটা তো এখন পলিটিকালি ইনকারেক্ট, তাই সেটা নাহয় বোঝা গেল। আর জানেন, এই সিনেমার ক্লাইম্যাক্সটা মার খেয়েছে স্বয়ং লেখকের হাতে। ভেবে দেখুন, সোনার কেল্লার ক্লাইম্যাক্স এক্কেবারে কেল্লার মধ্যের গলিতে গলিতে। জয় বাবা ফেলুনাথের ক্লাইম্যাক্স কাশির ঘাটে। সেখানে বাদশাহী আংটির ক্লাইম্যাক্স হাজার হোক ইন্ডোর। বইয়ে ভাষার গুনে যেটা গা ছমছমে হয়ে ওঠে সেটা পর্দায় অতটা ভয়ঙ্কর নাও লাগতে পারে। সত্যজিত রায় এই সিনেমাটা বানালে ক্লাইম্যাক্সটা কেমন হত জানিনা, কিন্তু যেটা হয়েছে সেটা সব পরিস্থিতি দেখে খুব খারাপ হয়েছে বলবনা।
তাছাড়া আপনি যেটা বললেন, সন্দীপ রায় ফেলুদা না করলে এখনকার বাকিদের হাতে পড়ে ফেলুদার কি দশা হত সেটা ভাবলে সন্দীপ রায়ের ফেলুদা কে ভালো না বেসে উপায় নেই।
হাই ফাইভ। আমিও বাদশাহি আংটি পড়ে গ্রিক লিখতে এবং পড়তে শিখেছিলাম। মামাতো ভাইকে একটা আস্ত চিঠি লিখেছিলাম গ্রিক হরফে, ভাষাটা অবশ্যই ইংরিজি।
Deleteসুগত, আপনার মন্তব্যের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদটা পড়ে আমি অ্যাকচুয়ালি খুশি হয়ে গেলাম। তার মানে ফেলুদার সিনেমার এমন দর্শক আছে যারা গল্পগুলো না পড়েই সিনেমাটা দেখতে গেছে। আমার কেন যেন ধারণা ছিল যে ফেলুদার সিনেমা নিয়ে লাফালাফি করে মরে আমার মতো কিছু ডাইনোসর।
Deleteসিনেমাটা নিখুঁত তো নয়ই। আমারই অনেক কিছু চোখে লেগেছে, দাঁড়ান একে একে বলি।
এক, যথেষ্ট থ্রিল নেই। বাদশাহী আংটি পড়ে যে গা ছমছম ব্যাপারটা হত সেটা হয়নি।
দুই, ফেলুদার চোখে গগল্স্, সয়নি।
তিন, আংটির বাক্সের ওপর ফেলুদার ঝুঁকে পড়াটাও আমার মনঃপূত হয়নি। ফেলুদা হবে উদাস, গম্ভীর। তার চোখ থাকবে আংটির দিকে, যদিও সে দূরে বসে একটা শুকনো ইউক্যালিপটাসের পাতা কানের মধ্যে ঢুকিয়ে পাকাবে।
তিন, ক্লাস টুয়েলভে পড়া তোপসের হাবভাবটা একটু শিশুসুলভ হয়ে গেছে। ছেলেটির যে রকম রোগাপাতলা চেহারা ছিল তাতে স্বচ্ছন্দে ক্লাস নাইন-টেন বলে চালিয়ে দেওয়া যেত।
এ রকম আরও নানারকম।
সুগত, দেবাশিস, গ্রিক অক্ষর শেখা নিয়ে দুজনকেই জোড়া হাতে হাই ফাইভ।
Last duto point amio akmot Kuntala di. Hamle pora Feluda ke manaye na. Topse ke amar ektu aroshto o legeche. Ajkalkar eleven twelve e pora chele meye ra kintu onek beshi paka hoy.
DeleteSandeep Ray ke niye ki bitorko hoy ami thik jani na. Tobe Feluda onno karo haatey na porlei mongol. Srijit Tony Kamaleswar er pakami ta just vablei rokto gorom hoye jacche. Kichu kichu jinis restricted n untouched by mass thakata bodhoy joruri khub.
এই রে, না না, সেটা আমি চাই না, কুহেলি, কারণ তাহলে অনেক জিনিস আমারও ছোঁয়ার অধিকারের বাইরে চলে যাবে। আমি জানি না এঁরা কেমন বানাবেন, তবে সন্দীপ রায়ও এমন কিছু ছিছিক্কার করার মতো বানাচ্ছেন না। অন্তত আমার তো মনে হচ্ছে না।
Deleteapnar keno mone hochche apni ekai dino...amrao sobai achi to.ar amio ekmot..cinema banana khub e kothin kaj..art,science commerce..sob..bap re..sandip ray zindabad..bekar baro boddhagiri kore ninda kora ta thik noy..
Deleteআমি অবশ্য লোকজনের নিন্দে করি আড়ালেআবডালে, কিন্তু মনে মনে জানি যে সেটা করার যোগ্যতা আমার নেই।
DeleteCinema ta dekhini, sutorang monttobo korbona , kintu majh khane apni je prem er bornona teu ga chomchome thriller er onubhuti ene diyechilen tar jonno uchho pach..
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, অর্ণব।
DeleteK. tomar sange ekdom ekmot. cinema ta besh bhalo legechey...abir ke khub maniyechey...tachara anya koro director er haate "cool" feluda r katha bhabtei kanna pay.....tai amar janne antato sandip babu'r porichalona y bhalo!
ReplyDeletenext dibakar babaji'r byomkesh er pratikhay roilam. TV series ta besh popular chilo tai mone hoy cinema tao bhaloi cholbe. Pan Indian detective hisebe byomkesh besh manashoi hoben ki bolo :)
Ei trailer ta dekhe to ekdom-i ta mone holona.
Deleteআমিও ওই সিনেমাটা দেখব বলে লাফাচ্ছি, শম্পা। তাছাড়া অঞ্জন দত্তের ব্যোমকেশও আসছে, আসছে ধৃতিমানের প্রবীণ ব্যোমকেশ। গোয়েন্দাপ্রেমীদের বৃহস্পতি যাকে বলে তুঙ্গে।
Deleteসুগত, আমি তো সিনেমার বদলে ট্রেলরটাই ইউটিউবে চালিয়ে চালিয়ে দেখছি সপ্তাহে তিনবার করে। একটু কেমন কেমন লাগছে, মানছি, কিন্তু দেখা যাক।
trailer ta chokhe poreni agey. e tow khub ekta "good news" lagchena :(
Deleteআরে ঘাবড়িও না, শম্পা। সেই যে কী বলে না, মলাট দেখে বই আর ট্রেলর দেখে সিনেমা . . . সেই সব মনে করে সাহসে বুক বেঁধে থাকো।
DeleteIsh, ish ki miss, ki miss! Acchha "Badshahi Angti" ki ekhono cholche? Sandip Ray-er opor rag kora jai na. Sob protibhaban babar chhelerai ki soman protibhaban hote pare? Ei je uni ekhono Feludar movie banachhen tar jonney toh onake dhanyabad ditei hobe! Accha "hubba" mane ki?
ReplyDeleteদিল্লির আশেপাশে তো দেখতে পাচ্ছি না, রুণা। তবে টিভিতে দেখাবে নিশ্চয় খুব শিগগিরই, তখন দেখে নিতে পারবে।
Delete'হুব্বা' মানে হচ্ছে 'হতভম্ব'। বাক্যরচনা করে বলতে হলে, "বাদশাহী আংটি সিনেমার সমালোচনায় সন্দীপ রায়ের নাকের আঁচিলের/ডাকনামের সমালোচনা পড়ে আমি হুব্বা হয়ে গেলাম" ইত্যাদি. . .
Thank you, thank you!
ReplyDeleteমাই প্লেজার, রুণা।
DeleteAmi cinema ta dekhini. Tobe Sandip babur cinema grammatically alada. Seta ekdom nijoswo, kintu Amar byaktigoto akkhep ekhanei j nishijapon er por onar Satyajit Ray r golpo chhara onno moulik golper cholochchitrayon korte dekhini. Hoyto nojor eriye gechhe. Dujon manusher cinematic sense alada... Tai ekdike golper chitrokolpo... Opor dike adunik making style.. Dui mile ek tanaporen toiri kore- ar amra dushi Sandip babu k, Kano tini copycat non?
ReplyDeleteArekta kotha, Amar Kano janina Satyajit Ray er chhotogolpo guli ar sobkichhur theke cinematic mone hoy... Ontoto tinte to botei..
Hirak babu, apni Sandip Ray er "Jekhane Bhooter Bhoy" ar "Chaar" ei cinema duto dekhte paren. Dutoi multiple chhotogalpo niye kora, ar dutotei onyo lekhoker galpo-o achhe. Mojar kotha ki janen, amar onyo lekhoker galpo theke banano cinema gulo beshi bhalo legechhe du khetrei.
Deleteএটাতে আমাকে সুগতর সঙ্গে সহমত হতে হচ্ছে, আমারও অন্য লেখকের গল্প নিয়ে বানানো সিনেমাগুলো বেশি ভালো লেগেছে।
DeleteHyan Hyna ... thik thik ... Jekhane vuter voy dekhechhi ... Char ta hate aseni.. shesherta dekhe besh moja legechhilo ... o rom vut jodi amaro ekta jutto ...
Deleteবাদশাহী আংটি দেখছি ব্যাঙ্গালোরে চলছেনা। তাই কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে দেখবার জন্য। শজারুর কাঁটাও দেখবার অপেক্ষায় আছি।
ReplyDeleteসৌমিত্রর জায়গায় সব্যসাচী, বা সব্যসাচীর জায়গায় আবীর, এটা ততোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ওঁরা প্রত্যেকেই ভাল অভিনেতা, নিজের মত করে চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাছাড়া এটা মনে রাখতে হবে যে সত্যজিৎ রায় ফেলুদার চরিত্রটাকে প্রায় সৃষ্টিই করেছিলেন সৌমিত্রকে মাথায় রেখে। কাজেই অন্য কাউকে একটু বেমানান লাগলে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। জেমস বন্ডের ভূমিকায় কে ভাল, পিয়ার্স ব্রসনান না রজার মূর, সে তর্ক করে তার্কিক ছাড়া আর কেউ আনন্দ পায়না। আমরা বাকিরা সিনেমাটা ভাল হল কিনা সেই আলোচনাই করি। সন্দীপ রায়ের নাকের আঁচিল বা বংশপরিচয় সম্বন্ধে কোন মন্তব্য না করেও এটা বলা যায় যে এখন অবধি ওঁর তৈরি যে কটা সিনেমা দেখেছি, কোনটাকেই শেষ অবধি ভাল বলতে পারিনি। বোকা বোকা ডায়ালগ, কষ্টকল্পিত প্লট এলিমেন্টস, আর সর্বোপরি ক্লাইম্যাক্সটাকে জমিয়ে তোলবার অক্ষমতা। সব মিলিয়ে প্রত্যেকবারই হতাশ হয়েছি। যেখানে শার্লক হোমস বার বার বেঁচে উঠে বিশ্বসুদ্ধ লোকের মন ভরাচ্ছেন, ব্যোমকেশও মোটামুটি সিনেমার পর্দায় আবার বেঁচে উঠছেন (রাজিত কাপুরের সৌজন্যে সারা ভারতের মানুষই ব্যোমকেশের নাম জানেন), সেখানে ফেলুদার এই করুণ পরিণতিটা খুব একটা ভাল লাগেনা।
এই লেখাটা পড়ার পর দিবাকর ব্যানার্জীর ব্যোমকেশের ট্রেলারটা দেখলাম। দেখে বলতেই হয় যে একেবারে হুব্বা হয়ে গেছি। চাইনিজ গুন্ডা, অর্ধবিবস্ত্রা স্বস্তিকা, সব মিলিয়ে ব্যাপারটা বেশ পুঁদিচ্চেরি বলেই মনে হচ্ছে। অনেকটা Guy Ritchie স্টাইল মনে হয়। অপেক্ষায় রইলাম।
তথাগত, কিছুদিন আগে দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে দিবাকর ব্যানার্জি, ধৃতিমান ও রজিত কাপুরের ব্যোমকেশ সংক্রান্ত আলোচনা শুনছিলাম। রজিত কাপুরের ব্যোমকেশ যখন হিট করেছিল তখন লোকের কাছে দূরদর্শন ছাড়া কোনও বিকল্প ছিল না, আর ব্যোমকেশ দেখানো হত সেই দূরদর্শনে, প্রাইম টাইম রাত ন'টায়। দিবাকর ব্যানার্জি বললেন, এখন ওই সিরিয়ালটা চললে সারা ভারতের লোক ব্যোমকেশের নাম জানত কি না সন্দেহ আছে, এবং আমি এ ব্যাপার ওঁর সঙ্গে একমত।
Deleteফেলুদার করুণ পরিণতি সম্পর্কে যদি আমার মত হচ্ছে, সন্দীপ রায়ের ফেলুদা নিঃসন্দেহে করুণ, কিন্তু কিশোর সাহিত্যের টিভিতে ওর থেকে করুণতর রূপান্তর আমি দেখেছি। এই প্রসঙ্গে আবার যখের ধন-এর সেই "মানিকবাবু ভাই"-এর কথা মনে পড়ছে। ইদানীং কালের কিশোর সাহিত্য নিয়ে অনেক বিগ বাজেট সিনেমাও আমার সন্দীপ রায়ের ফেলুদার থেকে করুণতর লাগে, সত্যি বলছি। তবে এর থেকে খারাপ জিনিস আছে বলে এটা ভালো, এই যুক্তিটা বেশ খারাপ মানছি। তাই বলি কারও সঙ্গে তুলনাতে না গিয়েও বাদশাহী আংটি আমার বেশ ভালো লেগেছে।
ফেলুদা ছাড়া, চার আর যেখানে ভূতের ভয় সিনেমাদুটোই আমার ভালো লেগেছে।