মাদার্স ডে



বেসনের ডিব্বার ওপর নিউট্রিলার লালহলুদ আধখালি বাক্সটা গ্যাঁট হয়ে বসে আছে সেই কবে থেকে। অ্যাকচুয়ালি, আমি জানি কবে থেকে। আগের বার যখন অর্চিষ্মান বাড়ি ছেড়েছিল, তবে থেকে। সয়াবিন খেতে আমার বেশ বেশিই ভালো লাগে, আর ও জিনিসের নাম শুনলে অর্চিষ্মান চোখ বিস্ফারিত করে, জিভ বার করে, দুহাত দিয়ে নিজের গলা টেপার ভঙ্গি করে নাটকীয়তার চূড়ান্ত করে। তাই আমি ও বাড়ি না থাকলে সয়াবিন রান্না করে খাই। এবারেও খেয়েছি। 

আগেরবারও রাঁধার আগে মাকে ফোন করেছিলাম, এবারও করলাম। 

"মা সয়াবিন কী করে রাঁধে গো?” 

রেসিপি বলে মায়ের অভ্যেস নেই, তাই কোনখানটা যে বিশদে বলতে হবে, আর কোনখানটা না বললেও চলবে সেটা গোলমাল করে ফেলেন। আলু কাটার নির্দেশাবলী দিতেই মায়ের লেগে গেল পাঁচ মিনিট।  আলু ভালো করে ধুয়ে নেবে, তারপর বড় না, ছোট না, আলুপোস্তর আলুর সাইজে টুকরো টুকরো করে কাটবে, ভীষণ সাবধানে, হাত যেন না কাটে, একা বাড়িতে রক্তারক্তি হলে কিন্তু সর্বনাশ, সোনা। বরং আলুটা বাদ দিবি নাকি? এমনিও ভালোই হবে…”

অনেক কষ্টে আলুর পর্ব থেকে ঠেলে মাকে বার করা গেল। তিনি সয়াবিনে পৌঁছলেন। “ওই তো, সয়াবিনগুলো একটা বাটিতে নিয়ে সেদ্ধ করবি তারপর জল ফেলে দিয়ে সয়াবিনগুলো ভালো করে চিপে… সাবধান সোনা, সয়াবিনের ফোঁপরের মধ্যে গরম জল ঢুকে থাকে কিন্তু, এমনি বোঝা যায় না, চিপতে গেলে মারাত্মক গরম লাগে, তুই বরং খানিকক্ষণ রেখে বা ঠাণ্ডা করে নিস বা ঠাণ্ডা জল ঢালিস… আচ্ছা সয়াবিন ছাড়া অন্য কিছু রাঁধলে হয় না?” 

এর পরেও যারা মেজাজ ঠাণ্ডা, গলা মৃদু রাখতে পারে তারা প্রতিভাবান।

"ওরে বাবা মা, থামবে? সয়াবিন কতক্ষণ সেদ্ধ করতে হবে সেটা বল, জল কী করে চিপব সেটা আমি ভাবব।”

মা কয়েক সেকেন্ড ভেবে বললেন, "তোর তো দাঁত আছে, তুই মিনিট পাঁচেক সেদ্ধ করলেই হবে মনে হয়।”  

*****

হলুদসবুজ পাতিহাঁস আঁকা টেপফ্রক পরে সাবধানে পা ফেলে ফেলে এঘর থেকে ওঘর যাচ্ছি, ঠাকুরদা যত্ন করে বাড়ি বানিয়েছেন, বাড়ির থেকেও যত্ন করে বানিয়েছেন চৌকাঠ। একবার হোঁচট খেলে আর রক্ষা নেই, দাঁতের পাটির সঙ্গে ওখানেই শেষ দেখা। এমন সময় একটা বেশ জোর ধাক্কা আমার ভারসাম্যের দফারফা করে দিল। কোনওমতে সবুজ কাঠের ফ্রেম ধরে টাল সামলে দেখি মা কোমরে হাত দিয়ে ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি ভাবছি, হঠাৎ হল কী, এই তো দিব্যি রান্নাঘরে খুন্তি নাড়তে নাড়তে গান করছিলেন, কোথাও কোনও পাগলামোর চিহ্নমাত্র ছিল না, এমন সময় মা বলে উঠলেন, “কী হচ্ছে কী দাদা, দেখে চলতে পারেন না?”  

ওহ, খেলা। আমার প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব চিরকালই বাড়ন্ত, আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম। এদিকে মায়ের ভুরুর ভাঁজ তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হয়ে উঠছে, কিছু একটা বলা দরকার তাড়াতাড়ি। মায়ের সংলাপটাই টুকে দিই অগত্যা। “আপনি দেখে চলতে পারেন না?” মা পা ঠুকে হুংকার ছেড়ে বললেন, “দেখতে না পান তো চশমা পরে চলুন।” আমি বললাম, “আপনি চশমা পরুন, আপনি চশমা পরুন।” টোকা সংলাপও খুব খারাপ বলা হচ্ছে। তেড়েফুঁড়ে, মুখচোখ ঘুরিয়ে, হাত নেড়ে ঝগড়ুটে পথচারীর ভূমিকায় এত ভালো আর এত বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় করছেন মা যে আমার হাসি পেয়ে যাচ্ছে। অন্য কেউ হলে আমার মতো এমন বাজে খেলোয়াড়ের সঙ্গে আর কোনওদিন খেলত না, কিন্তু মায়ের ডিকশনারিতে হাল ছেড়ে দেওয়া কনসেপ্টটাই নেই। কাল আবার নতুন কোনও একটা খেলা হবে। রিকশাওয়ালা সওয়ারি খেলা, মুটে-মালিক খেলা। বিছানা পাতা বা তোলার সময় বালিশের ওপর বালিশ মাথায় চাপিয়ে “চালের বস্তা কোথায় রাখব, বাবু?’ খেলা। একজন ভীষণ ভালো খেলোয়াড়, অন্যজন চলনসইয়ের থেকেও খারাপ। কিন্তু খেলা থামবে না। 

*****

আমার মা’কে যারা ভালো চেনে তারা সকলেই জানে, কেউ কেউ মুখ ফুটে বলে। মণির মেয়ে ভালো, কিন্তু মণির মতো ভালো না। সে উদ্যম কোথায়? সে পরিশ্রম করার ক্ষমতা? সে মনের জোর? সে প্রাণশক্তি? মায়ের ভালো কিছুই আমি পাইনি। সত্যি বলতে বাবার ভালো কিছুও না। দুজনের বেছে বেছে যা যা সমস্যাজনক, সব আমার মধ্যে এসে জুটেছে। কিন্তু সত্যি বলছি, মায়ের ভালো আর কাজের গুণগুলোর প্রতি আমার কোনও লোভ নেই। বরং যে কোনও পরিস্থিতিতে একটা নতুন খেলা খুঁজে বার করার, ঘোর গুরুতর পরিস্থিতিতে একটিমাত্র হাস্যকর কথা বা দৃশ্য মনে টুকে নিয়ে পরে সুবিধেমতো সেগুলো ভেবে ভেবে একা একাই হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার যে অকাজের প্রতিভাগুলো মায়ের, সেগুলোর জন্য আছে। বুকের মধ্যে ওই অনন্ত ফুর্তির ফোয়ারাটা যদি থাকত। 

*****

কিন্তু মাদার্স ডে এলে মায়ের সম্পর্কে ভালো ভালো কথা ভেবে মুগ্ধ হওয়া আর মা না থাকলে আমার কী সর্বনাশ হত সে কথা ভেবে শিউরে ওঠার থেকেও বেশি গুরুতর চিন্তাটা হচ্ছে যে মাদার্স ডে আদৌ থাকা উচিত কি না। আর থাকলেও আমার মতো তাত্ত্বিক বুদ্ধিজীবীর হলমার্কের এমন পুঁজিবাদী ফাঁদে পা দেওয়াটা শোভা পায় কি না। আমার গোটা অস্তিত্বটার কৃতিত্ব যার, বছরের মাত্র একটা দিনে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বা ভালোবাসা জাহিরের কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ আছে কি না। 

আমার তো নেই-ই। মাদার্স ডে থাকার যুক্তি থাকলেও নেই, না থাকলেও নেই। কারণ মায়ের প্রতি আমি কোনও কর্তব্য করি না। মা বেয়াল্লিশ ডিগ্রি গরমে ট্রেন বাস ঠেঙিয়ে কলকাতা যান অফিসে মেডিক্যাল বিল জমা দিতে, আমি এসি-তে বসে পা নাচাই।  মাঝেসাঝেই লোকজন কামাই করে, ঠাকুমার সঙ্গীসাথীরা আসব বলেও আসে না, আমার তেষট্টি বছরের মা নিচু হয়ে হয়ে সারা বাড়ি ঝাঁট দেন, আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ক্যাডবেরি চকোলেটের মোড়ক গোল্লা পাকিয়ে ঘরের কোণের কাগজের ঝুড়িতে ফেলার তাক প্র্যাকটিস করি। অবধারিত কোমর ব্যথা হয় (আমার নয়), আমি ফোনে “কেন তুমি ঝাঁট দিলে, থাকত বাড়ি অপরিষ্কার" চেঁচিয়ে কর্তব্য সাঙ্গ করি, বাবা স্কুটারে চাপিয়ে মাকে ফিজিওথেরাপি করাতে নিয়ে যান। মা বলেন না, কিন্তু কোনও কোনও ভোরবেলা বা সন্ধ্যেয় ফোন করে বুঝতে পারি মায়ের মন খারাপ হয়েছে। মা ছাদে ঘুরছেন। আকাশ বাতাস, নারকেল গাছ, ছাদের পাঁচিল, পাঁচিলের পাশের ঝুপসি আমগাছের (যার বয়স আমার বয়সের মাসচারেক এদিকওদিক) কাছে কাছে - যদি তারা সঙ্গ দেয়। আমি দু’চার কথার পর ফোন নামিয়ে রাখি। দু’মিনিট পর সব ভুলে যাই। 

কী লাভ হল মায়ের? জানপ্রাণ দিয়ে আমাকে বড় করে? ( বা বাবার? তাঁরই বা কোন কম্মে লাগলাম আমি?) ওঁদের জীবনের সোনার সময়টা চুরি করে আমি পগারপার হলাম। আনন্দ, দুঃখ ভাগ করলাম না, যত্ন নিলাম না। এখন যখন ওঁদের শক্তি কমে আসছে, তখনও নিচ্ছি না, স্বার্থপরের মতো নিজের জীবন গুছোচ্ছি (সেটাও ভালো করে গুছোলে তবু একটা কথা ছিল)। বাবামায়ের একটিও প্রয়োজনের বা অপ্রয়োজনের মর্যাদা না রেখে বার্ষিক দিবসের শুভেচ্ছা জানানো আর যদি কারও পক্ষে নাও হয়, আমার পক্ষে চরম এবং নির্লজ্জ আদিখ্যেতা। 

সবথেকে খারাপ ব্যাপারটা হচ্ছে আমার মতো মোটা মাথাতেও যখন এই সত্যিটা ঢুকছে, ওঁরা কি আর টের পাচ্ছেন না? বুঝছেন না কি দুধকলা দিয়ে কী অকৃতজ্ঞ পুষেছেন ওঁরা? ওঁরা আমার ঘরে জন্মেছেন না ওঁদের ঘরে আমি জন্মেছি? ভয়ে আমার হাতপা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। আতংক সহ্যসীমা পেরোলে আমি ফোন করি। দু’চারটে ভদ্রতাসূচক কুশলপ্রশ্ন সেরে ফোকাসটা ঘোরাই। আমাদের সম্পর্কের যা মূল কথা, সেই আমার দিকে।

“মা, তুমি আমাকে ভালোবাসো?”

“অ্যাঁ?”

"আগের মতো ভালোবাসো? সত্যি বলবে।"

কোনও উত্তর নেই। আমার বুকের মধ্যে আতংকটা জমাট বাঁধতে থাকে।

“কী গো?"

“আরে দাঁড়া, এত শক্ত প্রশ্ন, ভেবে বলতে হবে না?” মা ভাবতে থাকেন। আমার বুকের, পেটের, গলার ভেতর হোস্টেল নাইট ডান্স পার্টির সাউন্ড সিস্টেমের বিট পড়তে থাকে। 

অবশেষে মা মনস্থির করে ওঠেন। 

“হুম্‌ম্‌, বুঝলি সোনা, ভেবে দেখলাম বাসি তো বটেই, আগের থেকে একটু যেন বেশিই ভালোবাসি। কেন বল্‌তো? ভারি অদ্ভুত ব্যাপার কিন্তু।”

*****

আমার মতো অগা খেলোয়াড়ের সঙ্গে কোনওদিন খেলা না থামানোর জন্য, কোনও কারণ ছাড়াই আমাকে এতখানি ভালোবাসার জন্য, আর বেসেই চলার জন্য আমি বছরের প্রতি দিন তোমাকে “হ্যাপি মাদার্স ডে” বলতে রাজি আছি মা। বছরের একটা কেন, প্রতি মাস, প্রতি সপ্তাহ, প্রতি দিনও যদি মাদার্স ডে হয়, আমি সেটা ঝান্ডা উড়িয়ে পালন করতে রেডি আছি। যতদিন সেটা না হচ্ছে, ততদিন এই একটা দিনেই কাজ চালিয়ে নাও। হ্যাপি, হ্যাপিয়ার, হ্যাপিয়েস্ট মাদার্স ডে।



Comments

  1. Replies
    1. থ্যাংক ইউ, তিন্নি।

      Delete
    2. amar ei bayashe ekhono ei prashnotai hoy : ma tumi amake na Jishnuke kake beshi bhalobasho?

      Delete
  2. অন্বেষা সেনগুপ্তMay 8, 2016 at 2:19 AM

    "কী লাভ হল মায়ের? জানপ্রাণ দিয়ে আমাকে বড় করে? ( বা বাবার? তাঁরই বা কোন কম্মে লাগলাম আমি?) ওঁদের জীবনের সোনার সময়টা চুরি করে আমি পগারপার হলাম। আনন্দ, দুঃখ ভাগ করলাম না, যত্ন নিলাম না। এখন যখন ওঁদের শক্তি কমে আসছে, তখনও নিচ্ছি না, স্বার্থপরের মতো নিজের জীবন গুছোচ্ছি (সেটাও ভালো করে গুছোলে তবু একটা কথা ছিল)। বাবামায়ের একটিও প্রয়োজনের বা অপ্রয়োজনের মর্যাদা না রেখে বার্ষিক দিবসের শুভেচ্ছা জানানো আর যদি কারও পক্ষে নাও হয়, আমার পক্ষে চরম এবং নির্লজ্জ আদিখ্যেতা। "

    খাঁটি কথা !!! আমার মনের কথাটা বলার জন্যে ধন্যবাদ :)

    ReplyDelete
  3. likhte giye dekhlam anwesha agei likhe diyechhey amar comment ta

    ReplyDelete
  4. অন্বেষা, চুপকথাঃ বাঃ, আমার মনের কথা আরও অনেকের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে দেখছি। হাই ফাইভ।

    ReplyDelete
  5. emon akator swikarokti korar moto monon je sontaner modhye gore diyechen tara, tar e shudhu e din palon kora shobha pay..ei dudin ageo gola uchiye jhogra korechi..nikot ebong durotoro atmiyoder proti mayer aporisim chintake nehat e tomaar bokamo bole dhomok diyeche..ebong obossoi, mon kharap korata abhyese porinoto korcho bolar somoy golata kapeo ni amar..tobu keno jani na tomar lekhata pore mone holo, sotyi to kotodin jigesh korini..tumi ekhono ager moto bhalobasho amay?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে পারমিতা, মায়েদের সঙ্গে ঝগড়া না হলেই অদ্ভুত। তবে প্রশ্নটা করা আর ঝুলিয়ে রাখিস না।

      Delete
  6. এর পরেও যারা মেজাজ ঠাণ্ডা, গলা মৃদু রাখতে পারে তারা প্রতিভাবান।
    hok kotha,chechiye mechiye dei..pore mon kharap lage..
    হলুদসবুজ পাতিহাঁস আঁকা
    has er chobi deya dress besh lage..tumar ekta has er chobiwala pullover o ache na?
    অবধারিত কোমর ব্যথা হয় (আমার নয়), আমি ফোনে “কেন তুমি ঝাঁট দিলে, থাকত বাড়ি অপরিষ্কার" চেঁচিয়ে কর্তব্য সাঙ্গ করি
    are ami to logic ta bujhi e na..same case..sob ma ra eirokom e hon..
    বাবামায়ের একটিও প্রয়োজনের বা অপ্রয়োজনের মর্যাদা না রেখে বার্ষিক দিবসের শুভেচ্ছা জানানো আর যদি কারও পক্ষে নাও হয়, আমার পক্ষে চরম এবং নির্লজ্জ আদিখ্যেতা।
    hok kotha..

    besh bhalo lekha..mon chuye jawa lekha..

    prosenjit


    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, প্রসেনজিৎ। আমার একটা ছবি আঁকা পুলওভার আছে (ছিল, তিরিশ বছর আগে) বটে, তবে হাঁসের নয়, হাতির।

      Delete
  7. অন্বেষা সেনগুপ্তMay 9, 2016 at 1:59 AM

    আপনার লেখাটা পড়ে আমিও মাকে নিয়ে খানিকটা লিখতে শুরু করেছি, কিছুটা তুলে দেওয়ার লোভ সামলানো গেল না -
    "সন্তানের, বিশেষ করে মেয়ের পক্ষে, মা-কে নিয়ে লেখা, সে তিনি পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের, যে কোনো বয়সের, যে কোনো সামাজিক অবস্থানের মা-ই হোন না কেন, খুব, খু-উ-ব কঠিন| যিনি অতদিন ধরে নিজের শরীর, স্বাস্থ্য, চেহারা, খাদ্যে রুচি বরবাদ করে সন্তানকে ধারণ করে রাখেন, কল্পনা-করতেও-কষ্ট-হয় এমন যন্ত্রণা সহ্য করে তাকে নিরাপদে পৃথিবীর আলোহাওয়ায় পৌঁছে দেন, এক তো তাঁর সম্পর্কে লেখার চেষ্টা করাটাই ধ্যাষ্টামো, তার ওপর মায়েরা এমন করে আমাদের বড় হয়ে ওঠা, পছন্দঅপছন্দ, যুক্তিবিশ্বাস, জীবনযাপনে জড়িয়ে থাকেন যে তাঁদের নিয়ে আলাদা করে ভাবনাচিন্তা করার কথাটা আমরা ভেবে উঠতে পারি না| বাবা খানিকটা দূরের মানুষ, তাই তাঁকে নিয়ে ফুলিয়েফাঁপিয়ে লেখা চলে, কিন্তু মা সকালে বিছানার পাশে রাখা চায়ের কাপের মতই স্বতঃসিদ্ধ, তাই তাঁকে নজরে পড়ে না| বাতাসে নিশ্বাস নিই, কিন্তু তার অভাবে দমবন্ধ হয়ে মারা যেতে পারি সেই চিন্তাটা যেমন মাথায় আসে না, তেমনি মা সর্বদা কাছে-দূরে থেকে যেভাবে জীবনটা গুছিয়ে দেন সেটা আমরা টের পাই না, বা যখন পাই তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে|

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঃ, খুব সুন্দর হয়েছে লেখাটা, অন্বেষা। সত্যি, তাই সুন্দর। পড়ানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
  8. তুমি বড্ডই খারাপ কুন্তলা।মনটা যে দিলে খারাপ করে, তবে চাই এরকম লিখে আরো অনেকবার মনখারাপ করিয়ে দাও.কাকিমা - কাকু খুব ভালো থাকুন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমার শুভেচ্ছা বাবামা'র কাছে নিশ্চয় পৌঁছে দেব, সুমনা। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  9. মা ছাদে ঘুরছেন। আকাশ বাতাস, নারকেল গাছ, ছাদের পাঁচিল, পাঁচিলের পাশের ঝুপসি আমগাছের (যার বয়স আমার বয়সের মাসচারেক এদিকওদিক) কাছে কাছে - যদি তারা সঙ্গ দেয়।......

    sometimes your selection of words make my eyes moist......
    prosenjit

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে, থ্যাংক ইউ, প্রসেনজিৎ।

      Delete
  10. emon sundor lekha, hasay, knaday o !

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, ধন্যবাদ, কাকলি।

      Delete
  11. bere lekha , chomotkar lekha ...PB

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, প্রদীপ্ত।

      Delete
  12. Ebochor 8th Feb ma ke haralam. ....mon kharap korle tomar lekha pori....

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওহ্‌ রণিতা, সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। খুব খুব ভাবছি তোমার কথা। নিজের যত্ন নিও।

      Delete
  13. মা দের দিন গুলো আমাদের ই। আমাদের দিনগুলো মাদের দিয়ে দিতে পারলে ভালই হত। কিন্তু নদী সামনের দিকে বয়। তাই ভাবি এখন আমিও মা। আমার আনন্দ যেন আমার মেয়ের মধ্যে সঞ্চার করে দিতে পারি। ও খুশি মানুষ হয়ে থাক। তোর লেখা পড়ে খুব ভাল লাগল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. নিশ্চয়, সাহানা। আসলে আমার ওই দ্বিতীয় পরিচয়টার সঙ্গে পরিচিতি হয়নি বলেই হয়তো এখনও শুধুমাত্র মা-মুখী হয়ে রয়েছি।

      Delete

Post a Comment