শীঘ্রই আসিতেছে!


আমাদের ছোটবেলায় আনন্দবাজারে একটা বিভাগ বেরত। কবে বেরত, তার কী নাম ছিল কিচ্ছু মনে নেই, খালি মনে আছে বিভাগটায় নানারকম বিকল্প পেশার সুলুকসন্ধান দেওয়া হত। মানে ছেলে জয়েন্ট না পেলে বাঙালি বাবামায়েদের সামনে আর কী কী রাস্তা খোলা আছে, সেই ব্যাপারে খোঁজখবর আরকি। তাতে একদিন বেরিয়েছিল, কী করে সীমিত পুঁজিতে লাভজনক মাশরুম চাষ শুরু করা যায়, এমনকি চাইলে নিজের বাড়ির ছাদেই। সেটা পড়ে ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে আমি যেই না ঘোষণা করেছি যে বড় হয়ে মাশরুম চাষি হব, বাড়িতে বেড়াতে আসা একজন বয়স্ক আত্মীয় আমাকে ধমকে দিয়ে বলেছিলেন, ওসব “ধড়িবাজি” না করে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে।

বুঝুন ব্যাপার। সাসটেইনেবল, স্মল স্কেল লোকাল ফার্মিং, বলে কিনা ধড়িবাজি।

অবশ্য বয়স্ক আত্মীয়কে দোষ দিয়ে লাভ নেই। এককালে শুনেছি ছেলেদের কাছে বড় হয়ে জজ ম্যাজিস্ট্রেট বা “দুষ্টু উকিল” ছাড়া আর কিছু হওয়ার রাস্তা খোলা থাকত না। তখনও মেয়েদের স্বর্ণযুগ চলছে, তাদের অত কিছু হওয়াহওয়ির দায় নেই। একটা বয়স পর্যন্ত পুতুল খেল, তারপর বাচ্চা বানাও। পিসফুল। আমাদের সময়ে এল জয়েন্ট। কিন্তু ততদিনে মেয়েদেরও কপাল পুড়েছে। বাবামায়েরা তাদেরও ধরে ধরে জয়েন্টে বসাচ্ছেন। তবে অসুখটা কিনা গভীর, সারতে সময় লাগে। আমি হায়ার সেকেন্ডারিতে ইকো-জিও-ম্যাথ নিচ্ছি শুনে আমার মাসি, যিনি দুই পুত্রের গর্বিতা জননী, আমার মাকে বলেছিলেন, “মেয়ে বলে বেঁচে গেলি মণি, ছেলে হলে সায়েন্স না নিলে চলত না।”

কী ভাগ্যি মেয়ে হয়ে জন্মেছি।

তারও পর এল ম্যানেজমেন্ট। ম্যানেজ করার জিনিসেরও অভাব নেই, ম্যানেজারেরও না। কেউ বিজনেস ম্যানেজ করে, কেউ হোটেল ম্যানেজ করে, কেউ গরমের ছুটি আর পূজোর ছুটিতে লোকজনের বেড়াতে যাওয়া ম্যানেজ করে, পয়সা দিলে শুনেছি লোকে আজকাল আপনার বাড়ির বিয়ে, জন্মদিন, মুখেভাত পর্যন্ত ম্যানেজ করে দিয়ে যায়।

এখন চারদিকে কতরকম ভালো ভালো রংচঙে পেশার কথা শুনতে পাই। শুনি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি। মনে মনে ভাবি ইস যদি আগে জানতাম। জানলে আমি গলফ বল ডাইভার ছাড়া আর কিচ্ছু হতাম না। সবুজ ভেলভেট মোড়া মাঠে, রোদে-ছায়ায় ঘুরে বেড়াতাম, ঠাণ্ডা পুকুরের জল দুই হাতে সরিয়ে সরিয়ে এক বুক দম নিয়ে হুপ করে ডুব দিয়ে টুপ করে হারিয়ে যাওয়া গলফ বল তুলে আনতাম, গুপ্তধনের মত। কিংবা টি টেস্টার! সারাদিন বসে বসে সুন্দর সুন্দর কাপপ্লেটে করে দেশি বিদেশি চা খাও, আর পয়সা পাও।

এসব ভাবনা যখন মাথায় আসে তখন জোর করে সরিয়ে দিই।  গানের লাইনটা ঈষৎ অদলবদল করে নিয়ে, “যেটা হল না হল না সেটা না হওয়াই থাক” গুনগুন করি মাথার ভেতর। এজন্মে আর অন্য কিছু হওয়ার বয়স নেই, এমনকি অন্য কিছু হওয়ার যোগ্যতা জোগাড়ের বয়সও পেরিয়ে গেছে। পরজন্ম বলে যদি কিছু থাকে তো দেখা যাবে।

কিন্তু ওই যে বলে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়? খুঁজতে খুঁজতে এমন একটা পেশা অবশেষে বার করেই ছেড়েছি যেটার জন্য বয়সের বাধাটা কোন বাধাই না। ইন ফ্যাক্ট, বয়স একটু বেশি হলেই রোজগারের চান্স বেশি। তাছাড়া এ পেশায় ডিগ্রি ডিপ্লোমা ইত্যাদি চালকলা বাঁধা বিদ্যের কোন মূল্য নেই। যেটার আছে, সেটা কোন স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে শেখান হয়না।

আপনাদের কারো ‘লাইফ কোচ’ লাগলে বলবেন।

ভাবছেন সেটা কী রকমের কোচিং আবার? ভৌতবিজ্ঞানের নাকি ভূগোলের? আহা বললাম না, এই কোচিং-এর সাথে গতে বাঁধা শিক্ষাদীক্ষার কোন সম্পর্ক নেই?  যেগুলো গতে বাঁধা শিক্ষা শেখায় না, পারে না বলেই, আমার “এক্সক্লুসিভ লাইফ কোচিং” আপনাকে ঠিক সেই সেই ব্যাপারগুলোই গুলে খাওয়ায়। রোজকার জীবনের পথে চলতে গিয়ে যেসব সমস্যা আপনাকে প্রতিহত করে, আপনার মানসিক শান্তি ছিঁড়েখুঁড়ে দেয়, পরিস্থিতির সামনে নিরস্ত্র আত্মসমর্পণে বাধ্য করে, আমার “এক্সক্লুসিভ লাইফ কোচিং” আপনাকে সেসব সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য তৈরি করে।

সোজা কথায় এ শিক্ষা জীবনের শিক্ষা। হ্যাঁ হ্যাঁ আপনার বাবা মা যেসব শিক্ষা আপনাকে সেই জন্ম থেকে ঘ্যানরঘ্যানর করে কানের কাছে দিয়ে চলেছেন, আপনি শুনছেন না শুনছেন তার তোয়াক্কা না করেই, সেটাই, কিন্তু বলাই বাহুল্য অনেক সায়েন্টিফিক পদ্ধতিতে বিতরণ করা। আমার এক্সক্লুসিভ লাইফ কোচিং ক্লাসের সিলেবাসে সবকিছুর টোটকা পাবেন, বসের সামনে মেরুদণ্ড সোজা রেখে কথা বলা থেকে শুরু করে প্রেমে প্রত্যাখ্যান হ্যান্ডেল করার টিপস পর্যন্ত। ইন ফ্যাক্ট আমার এক্সক্লুসিভ লাইফ কোচিং কোর্স কমপ্লিট করলে আর প্রত্যাখ্যাত হবেনই না কোনদিন, উল্টে যাকে চান তাকে প্রত্যাখ্যান করে বেড়াতে পারবেন, গ্যারান্টি।

ভেবে ভেবে ভাল বার করেছি না আইডিয়াটা? তবে আর দেরি কেন? আপনারা দলে দলে এসে আমার কোচিং ক্লাসে নাম লেখান, ভাল থাকুন, আমার আঙুল ধরে জীবনের বৈতরণী হেলায় পার করুন। যারা খারাপ আছেন তাঁরা তো আসবেনই, যারা ভাবছেন ভালো আছেন, তাঁরাও আসুন। দেখবেন আমি এক মিনিটের মধ্যে আপনার ভুল ভেঙে দেব।

তখন আপনারা ভেবে কূল পাবেন না যে আমাকে ছাড়া এতদিন আপনাদের চলছিল কী করে।

ও হ্যাঁ, এককালীন ডিপোজিট, মাসিক ফিজ, ডিসকাউন্ট, কালেভদ্রে ফ্রি গুডি ব্যাগ ইত্যাদি জরুরি বিষয়ে জানতে হলে আমাকে ই-মেল করুন। আমি অপেক্ষায় থাকব।

Opening soon
ছবি গুগল ইমেজেস থেকে 


Comments

  1. Oh eta darun diyecho!! Tomar assistant lagle amay janio :D Oboshyo best legeche oi "meye bole beche geli, chhele holey science portei hoto" part ta. Sotyi, science na porle jeno manush bole dhorai jaye na, ei mone kore kichu baba-ma. Jante ichhe hoy tara nijera sobai science porechilo ki? Ar prithibi te sob student science porle ki bhoyabaho byapar tai na hobe!!:P
    Ami majhe majhe bhabi software engineer na holey ami ki kortam... jani na, onek kichu mone kori korle bhalo hoto...tobe eta bhebo na je notun kichu korbar/shekhbar nei ar... life to samne porei ache, shikhle/korlei holo...ami to ei weekend e chital machh ranna sikhlam ar tar ager week e double crotchet te granny square banano..."shekhar kono sesh nei..." (tarpor ta ar bollam na, thak) :P

    ReplyDelete
    Replies
    1. এক্স্যাক্টলি সায়রী। কেউ আর্টস না পড়লে আর সায়েন্স পড়ার মহিমাটা থাকত কোথায়? ভালো মনে করিয়েছ, আমিও এই উইকএন্ডে কম কথা বলা শেখার ট্রাই নেব। উইশ মি লাক।

      Delete
  2. ei re, kom katha bolay ami "good luck" bolte parchi na. Ota amar proti muhurte practice kora dorkar :D

    ReplyDelete
  3. ওঃ আপনার মতন একজনকে যে কি ভীষণ দরকার বলে বোঝাতে পারবনা| আমার ই-মেল ও শীঘ্রই আসিতেছে আপনার মেলবাক্সে|

    ReplyDelete
    Replies
    1. ইয়েসসস... প্রথম ক্লায়েন্ট! আপনাকে হাফ ডিসকাউন্টে জ্ঞান দেব সুগত। ওয়েলকাম ওয়েলকাম।

      Delete
  4. yo yo. i am in! \m/
    tobe tumi kom kotha bolar practice koro na go! hingshey bollam eta :P. amar chesta byartho hoyechhe ete. amon image baniyechhi je akhon 1 ghanta kotha kom bolle sobai bhabe ami rege gechi :-(

    ReplyDelete
    Replies
    1. নানা তুমি কথা বলা কম করবে কেন আত্রেয়ী, বালাই ষাট। তোমাদেরই তো কথা বলার বয়স এখন।

      Delete
  5. durbhagyobosoto...amar somoykaal e meyeder science neoa chole esechilo :|
    ebong tot poroborti projader durdosha bornon oi budhbar episode e ache ..

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা রু। ভালো বলেছ।

      Delete

Post a Comment