বোরিং বুধবার
বুধবার আমার সারা সপ্তাহের সবথেকে বিশ্রী-লাগা দিন। বিশ্রী অ্যান্ড বোরিং। তার প্রধান কারণ হল
দিনটার অবস্থান। এই মাঝামাঝি ব্যাপারটাই আমার জঘন্য লাগে। সে দিনই হোক, কিংবা অন্য
কিছু। যেমন ধরুন টকঝাল চানাচুর, কিংবা কাঁচামিঠে আম। আমি সোমবার সকালের নির্মমতা
বুঝি, শুক্রবার বিকেলের বাঁধনছাড়া আনন্দও। কিন্তু বুধবার আমার মাথায় ঢোকে না। আর
বেছে বেছে বুধবারেই আমার সাথে যত খারাপ জিনিসপত্র ঘটে। মায়ের সাথে মনকষাকষি, বসের
সাথে বাকবিতণ্ডা। জঘন্য। এতদিন বাদে মনে নেই যদিও, কিন্তু আমি নিশ্চিত আমার পার্ট
ওয়ানের রেজাল্টটাও বুধবার বেরিয়েছিল। নির্ঘাত।
বুঝতেই পারছেন,
বুধবারে আমার অবান্তরে ফেঁদে বসার মত বাজে গল্পেরও টানাটানি। গত চব্বিশ ঘণ্টায় বলার
মতো কিছুই ঘটেনি। কিন্তু গত সপ্তাহে একটা ঘটনা ঘটেছিল, যেটা আপনাদের বলা হয়নি। গল্পটার
একটা শিক্ষামূলক দিকও আছে, যেটা আপনাদের কাজে লাগবে।
আপনারা কি অফিসে গিয়েই
বন্যার মতো কাজ শুরু করে দেন? সে করলে করতেই পারেন, কিন্তু আমি করিনা। পারিনা বলা
ভালো। দিনের কাজ শুরু করার আগে আমার ওয়ার্ম আপ করতে লাগে। ইন ফ্যাক্ট আমার
সারাদিনের একটা বড় অংশ বেরিয়ে যায় এই ওয়ার্ম আপ করতে গিয়ে। সকালে উঠে ধীরেসুস্থে চা
খেতে খেতে সারাদিনের জন্য ওয়ার্ম আপ, পড়তে বসার আগে ঘণ্টাখানেক YouTube দেখে ওয়ার্ম আপ, অবান্তরের জন্য পোস্ট লেখা শুরু করার আগে হাজার খানেক চেনা
অচেনা ব্লগে ঘোরাঘুরি করে ওয়ার্ম আপ।
সেরকম অফিসে গিয়েও
একটা ওয়ার্ম আপের পালা থাকে, যখন আমি ফাঁকা অফিসে এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করি, জলটল
খাই, রেস্টরুমটা একবার এমনি এমনিই ঘুরে দেখে আসি। সেদিনও ওয়ার্ম আপ চলছিল যথারীতি,
কফিরুমে দাঁড়িয়ে যত্ন করে স্টারার দিয়ে কফি গুলছিলাম, এমন সময় পেছন থেকে একজন এসে আমার
কাঁধে টোকা মেরে বললেন, “শুনলাম তুমি নাকি হাত দেখতে পারো?”
আমি কীরকম ঘাবড়ে
গেছিলাম সেটা আর ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই নিশ্চয়। একে তো ওয়ার্ম আপে
অপ্রত্যাশিত বিঘ্ন, তার ওপর ভদ্রমহিলাকে আমি ভালো করে চিনিই না। মানে চিনি, কিন্তু
ওই আরকি। অফিসে যেসব সহকর্মীর সাথে লিফটে একা পড়ে গেলে কাষ্ঠ হেসে “হাউ আর ইউ” বলা
ছাড়া আর কিছু করার থাকেনা, আর লিফটযাত্রাটা অনন্তের মতো দীর্ঘ মনে হয়, ইনি তাদের
মধ্যে একজন। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম উনি আমাকে অন্য কারো সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন। মুখের
হাঁ বুজিয়ে সেই কথাটাই ওনাকে বুঝিয়ে বলতে যাবো, তৎক্ষণাৎ মনে পড়ে গেল।
মনে পড়ে গেল যে চাকরিতে
জয়েন করার একেবারে প্রথম সপ্তাহে, “মিংগল” করার প্যাথেটিক প্রয়াসে আমি
ক্যাফেটেরিয়ায় বসে গোটা দুই প্রাণোচ্ছল যুবতীর হাত দেখে দিয়েছিলাম বটে। হাত দেখা
মানে ওই আরকি--কটা প্রেম, কটা বাচ্চা, কটা এক্সট্রা ম্যারিটাল। তারা তখন খুব
খিলখিলিয়ে হাসছিল, আমিও হাসছিলাম এবং পুরো ব্যাপারটাকে হাসাহাসি বলেই ধরে
নিচ্ছিলাম, কিন্তু বোঝাই গেল তারা সেটা ভাবছিলনা। বিশেষ করে তাদের মধ্যে যাকে আমি
এক্সট্রা ম্যারিটাল সংক্রান্ত সুখবরটা শুনিয়েছিলাম, তার জীবনে ইদানিং একটি
পরপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে, এবং সে আর একমুহূর্ত দেরি না করে অফিসময় আমার নামে
রাষ্ট্র করেছে, “শি ইজ সাইকিক, ম্যান।”
ভদ্রমহিলা ততক্ষণে আমার
সামনে দুহাত বাড়িয়ে ধরেছেন, তাঁর চোখমুখ অলরেডি করুণ হয়ে এসেছে। আমি বারকয়েক তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা
করলাম যে আমি ইয়ার্কি করছিলাম, আমি সত্যি এসব কিছু পারি না। কিন্তু কে কার কথা
শোনে। শেষটায় আমাকে ওনার ম্যানিকিওর করা হাত দেখে বানিয়ে বানিয়ে একগাদা মিছে কথা
বলতেই হল, আর উনি একশোবার করে আমাকে ধন্যবাদ টন্যবাদ দিয়ে, অভিভূত মুখ করে নিজের
ঘরের দিকে রওনা দিলেন।
আমিও আমার ঠাণ্ডা
হয়ে যাওয়া কফির কাপ তুলে নিয়ে নিজের ঘরে ফেরত এলাম। আপাতত ক’দিন আর কফিরুম-মুখো
হচ্ছিনা।
ব্যস এই হচ্ছে
ব্যাপার। তাই বলছি, আর যাই করুন, হাত দেখা নিয়ে হাসাহাসি করবেন না। করলে নিজেই
পস্তাবেন। তখন বলবেন না আগে সাবধান করা হয়নি।
Fees chashni? Ekire - tui alternate professioner kotha bolchhish, ar eiro'm ekta sure-shot source peye chhere dili? :-O
ReplyDeleteসেই, চাওয়া উচিত ছিল। ভাবছি একটা টিয়াপাখি জোগাড় করে রাস্তার ধারে বসে পড়ি। তাও খানিকটা বৈচিত্র্য আসবে জীবনে।
DeleteBoichitro? Mwahahahahahahahahahahahahahahahahahahahahahahaha!
ReplyDeleteamar haater scanned chhobi shiggiri pathachhi...bhobishyot janata khub joruri hoye poreche :P
ReplyDeleteহুম, ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল, গ্রহনক্ষত্ররা সবাই লাইন দিয়ে স্বাগতার সাফল্যের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখতে পাচ্ছি।
DeleteKuntala di ..
ReplyDeletetumi pls blogspot kormokorta der mail likhe ekta "like" button amdani koro tomar post er neeche :| atleast ami multiple user diye login kore khan doshek like to korte parbo...Osojjho Budhbar ebong se sonkranto kono lekha sombondhe echhara amar r kichui bolar nei :|
আরে রু, কেমন আছ? বুধবার বিচ্ছিরি কিনা বল? তোমার লেখাটা ভালো লেগেছে শুনে খুব খুশি হয়েছি।
Deleteআপনি যতই এসব গপ্প শুনিয়ে আমাদের ভোলানোর চেষ্টা করুন না কেন, আমরা ঠিকই বুঝেছি হাত দেখায় আপনার প্রতিভা ঠিক কতটা| আপনাকে পেলে আর ছাড়ছিনা, দুটো হাত দেখিয়ে নেবই, চাই কি কুষ্ঠিবিচারও করিয়ে নিতে পারি| প্রস্তুত থাকবেন|
ReplyDeleteআমাকে বাধ্য করলে আমি হাত দেখা, কুষ্ঠিবিচার, শান্তিস্বস্ত্যয়ন, অশ্বমেধ যজ্ঞ...সব করে দেব, যদি আপনি পরে "কই কিছু মিলল না তো" বলে দলবল নিয়ে এসে আমার অফিস ভাঙচুর না করেন, ফটিকচাঁদ সিনেমার মতো।
DeleteKuntala di..
Deletebhalo nei..koti koti budhbar e chheye jachhe amar bochhor ta :|
রু, তুমি ধরে ধরে বুধবারগুলোকে রবিবার করে নাও। অ্যাট লিস্ট চেষ্টা করো।
Deletebah. tomar to prochur gun ache go! amay ekbar ekjon ke haat dekhe bolechilo "21 bochhor boyoshe prem koriya bibaho hobe". tokhon sune ektu dukho peyechilam, ehe eto kochi boyoshe bibaho! ar akhon dekho, 24 bochor periye gelo. bibaho to bohu dur, o hori, ekhono ekta prem o namano gelo na! :P
ReplyDeleteআরে প্রেম যদ্দিন না হয় ততদিনই ভালো আত্রেয়ী। হবে হবে একটা আশা থাকবে মনে। হয়ে গেলে তো হয়েই গেল।
Deletebudhbaare ghum ta aboshyoi beshi pay, ar "aj college a/ office a na gele ki mahabharot asudhdhuo hoy" ei chinta ta probol bhabe bagiye dhore
ReplyDeleteধরে কিনা বলুন সঙ্ঘমিত্রা?
Delete