Moments of Happiness
Joanna Goddard-এর ঝকঝকে ব্লগ, A Cup of Jo থেকে ঘুরতে ঘুরতে আমি এই লেখাটায় গিয়ে উপস্থিত হলাম। হয়ে জানলাম মুনস্টার একজন আধুনিক সুইডিশ গোয়েন্দার সহকারী পুলিশম্যান। যেহেতু মুনস্টার নিজেও আধুনিক পুলিশ, তাই সে চোরডাকাত খুনিদের পিছু ধাওয়া করার ফাঁকে ফাঁকে সুখ দুঃখ প্রেম ভালোবাসা মনখারাপ নিয়ে মাথা ঘামায়। মোটা দাগের পাবলিকরা যখন রবিবার সকালে টিভি খুলে বসে হাঁ করে মহাভারত দেখে আর লুচি খায়, তখন সে বসে বসে ভাবে, সুখ কাকে বলে? ব্লিস বলে আদৌ কিছু হয় কি? ভাবতে ভাবতে মুনস্টার পাশের ঘর থেকে তার বাচ্চা ছেলেমেয়ের হাসির আওয়াজ শোনে, খোলা দরজার ফাঁক দিয়ে বউকে দেখে, নিশ্চিন্তে বসে কফিতে চুমুক দিতে দিতে মন দিয়ে খবরের পাতা উল্টোচ্ছে। অমনি মুনস্টারের কাছে সুখের মানে পরিষ্কার হয়ে যায়।
Münster “suddenly felt pain creeping up upon him: a chilling fear, but also a realization, that this moment must pass. This second of absolute and perfect happiness—one of the ten to twelve that comprised a whole life, and was possibly even the meaning of it.”
আমিও যেহেতু নিজেকে আধুনিক
বলে চালাতে ভালবাসি তাই আমাকেও ঘন ঘন সুখ দুঃখ মোক্ষলাভ নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়। কাজকর্ম
চুলোয় দিয়ে যখন তখন মনের নাড়ি টিপে ধরে বসে থাকি, ঘণ্টায় ঘণ্টায় মেজাজের ভালো থাকা
খারাপ থাকা মনিটর করি, জ্বর মাপার মতো।
মুনস্টারের কথা আর এই লেখাটা পড়ে
আমিও মোমেন্টস অফ হ্যাপিনেস নিয়ে উৎসাহিত হয়ে পড়লাম। ৩১ বছর কেটে গেল, দশ বারোটা না
হোক, একটা দুটো সুখের মুহূর্ত নির্ঘাত আমার ভাগেও জমেছে? হাতের কাজ সরিয়ে রেখে
গুনতে শুরু করলাম, গুনতে গুনতে এদিক ওদিক থেকে একটা দুটো করে সুখ বেরোতে লাগল। এই
বেলা অবান্তরে লিখে রাখি। এবার থেকে যখন ঘুম ভেঙে কান্না পাবে, মনে হবে কেন শুধু
আমার জীবনটাই এরকম বিশ্রী, পচা, জঘন্য, আনফেয়ার, তখন যাতে ফিরে এসে দেখতে পারি।
বান্টি বলছে সবার জীবনের প্রথম
১০ বছরের নাকি সব মোমেন্টসই হ্যাপি, কিন্তু আমি তা মানি না। না মানার একটা প্রধান
কারণ হচ্ছে আমি জীবনে যে ক’টা চড়চাপাটি খেয়েছি সেগুলো সব ১০ বছরের ওপারে থাকতেই
খেয়েছি। সেই মোমেন্টসগুলো আর যাই হোক হ্যাপি নয় কিছুতেই। তবে একটা মুহূর্তের
কথা মনে পড়ছে । সাল মনে নেই, তারিখ পয়লা বৈশাখ। সেবছর নববর্ষ পড়েছিল শনি বা রবিবার
কারণ মা বাড়িতে ছিলেন। সারা সকাল সংসারের জোয়াল ঠেলে, খেয়ে উঠে একটুও দম না নিয়ে, ঊষা
সেলাই মেশিন নিয়ে বসে আমার জন্য নতুন জামা সেলাই করছিলেন মা । গলগল করে ঘামছিলেন,
কারণ লোডশেডিং চলছিল। আমি মেশিনের সাথে প্রায় নাক ঠেকিয়ে বসে অপেক্ষা করছিলাম, কখন
জামা বানানো শেষ হবে, আমি পরে বুচিদিদিকে দেখাতে যাব। জামা বানানো শেষ হল, সবকটা
বোতাম লাগানোর সময় নেই, মা চুড়ি থেকে খুলে একটা সেফটিপিন জামায় লাগিয়ে দিলেন। আমি একদৌড়ে
বেরিয়ে গেলাম, মাকে একটা থ্যাঙ্ক ইউ পর্যন্ত না বলে। কাল ফোনে সেই বরাদ্দ থ্যাঙ্ক
ইউ টা মাকে বলতে মা খুব একচোট হেসে বললেন, ওটা নাকি তাঁরও একটা মোমেন্ট অফ ব্লিস।
পরের সুখের মুহূর্তটা বেশ
ক’বছর বাদে। মাধ্যমিক শেষ হয়েছে সবে। রেজাল্ট বেরোতে তখনও দুমাস বাকি। ছুটি
লুটেপুটে নিচ্ছি। দিদিভাইদের আঁচল ধরে ঝুলোঝুলি করে মুকুটমণিপুরে বেড়াতে যাওয়া
হয়েছে। আম্রপালি হোটেল থেকে রাতের খাওয়া সেরে হেঁটে হেঁটে ইয়ুথ হোস্টেলে ফিরছি সবাই।
মুকুটমণিপুরের খাঁ খাঁ রাস্তা চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে। ভাস্বতী দিদিভাই আকাশের
দিকে তাকিয়ে বলছেন, “এত স্পষ্ট কালপুরুষ দেখেছ কখনো কুন্তলা?” আমি কালপুরুষের
বেল্ট থেকে চোখ না সরিয়েই মাথা নেড়ে না বলছি। আমার কাঁধ বেড় দিয়ে রয়েছে স্বাতীর
হাত। পদ্মিনীটা চিরকালই কবি টাইপ ছিল, রাস্তার ধার থেকে একটা নোংরা পলাশের ডাল
কুড়িয়ে দোলাতে দোলাতে গুনগুন করে গান ধরেছিল। আর কিচ্ছু মনে নেই, খালি মনে আছে আমি
প্রাণপণে বলছিলাম, এই মুহূর্তটা যেন কোনদিন না ভুলি...কোনদিন না...কোনোদিন না...
আমার দোষ নেই, যত দোষ আমার
ষোল বছর বয়সের।
কাট টু ক্যাম্পাস। মাঝরাত
পেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ। KV Ground-এর সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তীর্থদা গাইছে। কী গাইছিল সেটাও এখনো
মনে আছে---Where Have You Been, My
Blue Eyed Son---সায়ন পাশে বসে সিগারেট
খেতে খেতে গলগল করে মুখ থেকে ধোঁয়া ছাড়ছে, আর সেই ধোঁয়া প্রথম শীতের রাতের কুয়াশার
সাথে মিশে গিয়ে কীরকম যে একটা ব্যাপার হচ্ছে, আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারব না। সত্যি
বলতে কী ওরকম রাত আরও লক্ষ লক্ষ এসেছিল JNUতে। কিন্তু সেই সব রাতের থেকে ওই রাতটা আলাদা ছিল কারণ আমার
প্রথম প্রেমটা ভেঙেছিল সেই রাতের ঠিক এক মাস আগে। ৩০ দিন মুখ প্যাঁচার মত করে
ঘোরাঘুরি করার পর সেই রাতেই আমি “ধুত্তোরি” বলে আবার ঝাড়াপাড়া দিয়ে উঠেছিলাম। গান
শুনতে শুনতেই হঠাৎ বুঝে গেছিলাম, মানুষের জন্য কেঁদে লাভ নেই। কাঁদতেই যদি হয় তবে CGPA-র জন্য কাঁদা ভাল। আমার
এই রিয়্যালাইজেশনের কথা শুনে তীর্থদা বব ডিলানের মতো মুখ করে বলেছিল, “এই তো
আমাদের কুন্তলা বড় হয়ে গেছে।” তারপর আমরা তিনজন রাত তিনটের সময় গঙ্গা ধাবায় গিয়ে
বান অমলেট খেয়ে আমার বড় হওয়া উদযাপন করেছিলাম।
আহ, যৌবন!
আপনারা বোরড হয়ে যাচ্ছেন কি
খুব? হবেন না প্লিজ, মেরে এনেছি প্রায়। আমার জীবনে আর কটাই বা সুখের মুহূর্ত থাকবে
বলুন। কিন্তু এই মুহূর্তটার কথা না বললে আমার এখনকার বন্ধুদের প্রতি অবিচার করা
হবে। যারা প্রতি শনিবার পাণ্ডা এক্সপ্রেসের তেলে চোবানো অরেঞ্জ চিকেন দিয়ে ডিনার
সারার পর আইসক্রিম খেতে খেতে আমাকে আমার হোস্টেলের দরজা পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে যেত।
আমি ঝুলোঝুলি করতাম, “আরেকটু পরে যেও প্লিজ” বলে, তখন সামনের বেঞ্চিটায় বসে আর একঘণ্টা
গল্প করত আমার সাথে। একটু-উ একটু-উ করে আইসক্রিম মুখে পুরতাম সবাই, যাতে একসাথে
থাকাটা আরও অনেকটা লম্বা করা যায়। আমরা গল্প করতাম, আমাদের আশেপাশে বসন্তরাত্রির
হাওয়া ফুরফুর করে বইত। কতো গল্প। আজ থেকে দশ বছর পর কে কোথায় থাকব, যেখানেই থাকি
না কেন ছুটিতে ছুটিতে তো দেখা হবেই তাই না? পরেরদিনের সিনেমা দেখতে যাওয়ার প্ল্যান
হতো, সামনের সপ্তাহে ফাটাফাটি পড়াশোনা করার সংকল্প হতো, তারপর নচ্ছার
আইসক্রিমটা ফস করে ফুরিয়ে যেত, আর আমরা টা টা করে যে যার ঘরে চলে যেতাম। আমি
মনেপ্রাণে জানতাম, ওই বন্ধুত্বের গন্ধমাখা শনিবারের রাতগুলো যদি বড় হতে হতে আমার
গোটা জীবনটাই ছেয়ে ফেলে একদিন, আমার থেকে সুখী আর কেউ হবে না।
*****
ব্যস। এইকটা। হয়তো এইকটা
বলেই এত স্পষ্ট, এত সুন্দর। এই দেখুন কবেকার কথা, কিন্তু তাও আপনাদের বলতে গিয়ে
মনটা কী ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে, ভাবা যায়? আমার মতো একটা হিজিবিজি লোকের জীবনেও এত
সুখের মুহূর্তরা এসেছে? যেচে? শুধু আসেইনি, আবার আমার সাথে থেকেও গেছে। আমি যেখানে
যেখানে যাচ্ছি, এরা আমার মাথার ভেতর শুয়ে শুয়ে যাচ্ছে, আসছে, উঠছে বসছে, ট্যাঁ ফো
করছে না। আমার একলা থাকার সময়গুলোয় সেজেগুজে এসে আমার মন ভোলাচ্ছে। গলা জড়িয়ে ভালবেসে বলছে, যে যাচ্ছে যেতে দাও, আমরা তো যাচ্ছিনা কোথাও।
আপনার সুখের মুহূর্তের গল্প বলুন আমায় প্লিজ।
"মানুষের জন্য কেঁদে লাভ নেই। কাঁদতেই যদি হয় তবে CGPA-র জন্য কাঁদা ভাল।"
ReplyDelete- Eta mone rakhbo. :)
আরে আমার কথা, আমারই মনে থাকে না। জঘন্য।
DeleteAha.. mon ta ekdom furfure hoye gelo tomar jiboner eto sundor sukh er somoi gulo r kotha pore...... ebar ekta e jinis sekhar.... oi jesob din sokal e ghum theke uthe e ekta dom bondh kora feeling asbe.. mone hobe eto problem khali amar e jibone keno bhogoban... sei din ei post tar kotha mone kore ektu bhorsa paoa....
ReplyDeleteএকদম গোবেচারা। খারাপ থাকার কোন মানেই হয়না।
Deleteaami bapu robibar sakale mahabharat dekhte dekhte luchi khete pelei khushi. oi bhabna tabna gulo munster er janne thak!
ReplyDeletetobe luchi ta moyda'r hoya chai...not atta'r puri. sange aloo'r tarkari (with kancha lonka aar kalo jeere phoron). aha moment of happiness and bliss!
হাই ফাইভ শম্পা। ময়দার লুচিতে আমার আপত্তি নেই, তবে একেবারে গরম গরম পাতে দিতে হবে, কারণ ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আর মুখে তোলা যাবে না।
Deleteবাই দ্য ওয়ে, তোমার বাঙাল কমেন্টের প্রশংসায় তো সবাই পঞ্চমুখ...
hok katha! gorom to hobei...setar majhkhane alto kore tipley fete jabe, aar jake boley gorom hawa :)) berobe!!!
Deletetobe jokes aside, desher railway station je atta-r puri aar aloor dom pawa jay setao durdanto!
patna station e ekta dokan chilo, chalaten ek odisha'r thakur....jei na dur pallar train in holo, omni gorom dalda'y porlo atta'r puri! aar shaal patar thongay dhone-aloo'r jol er opor diye poribeshon korten!
Stumbled upon here. Nice.
ReplyDeleteHappiness is a little fish when you catch it.
But when you let it go, you realize it was a Shark.
ধন্যবাদ ধন্যবাদ। খুব ভাল লাগল। আর ওই হ্যাপিনেস আর হাঙরের ব্যাপারটা যা বলেছেন। একেবারে হক কথা।
DeleteKamon achho Kuntala????onekdin bade tomar lekha gulo pore khub bhalo lagchhe.....bhalo lagchhe dekhe bangla font e likhte shuru korechho.....
ReplyDeleteLekhata as usual darun..tobe akhon amar kachhe protyektadin bhalo kore katalei sheta shukher smriti bank e dhuke pore....karon ashe pashe ja news dekhi dekhi, tate akta kore din shundar bhabe katlei mone hoe koto shukh pelam.....
কমলিকা!! কত্তদিন পরে কথা হচ্ছে! আমি দিব্যি আছি, তুমি কেমন আছ, তোমার বাড়ির সবাই কেমন আছেন? খুব ভালো লাগল তুমি এলে এতদিন পর।
Deleteএকদম ঠিক বলেছ, রোজকার ভালো থাকাটাই সবথেকে বড় সুখ। একটা দুটো মুহূর্ত গুনে কী হবে?
কদিন আগে একটা মজার ছবি দেখলাম - এইটা| আমি হলাম ওই কুকুরের মতন| যতটা পারি হ্যাপী থাকার চেষ্টা করি| তবে এ প্রসঙ্গে একটা অদ্ভুত কথা বলি, আমার জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ মোমেন্ট অফ হ্যাপিনেস অবশ্যই যেদিন আমি প্রথম চাকরি পেলাম সেদিন টা| তার পর কয়েকদিন আমি কোনো কাজে মন দিতে পারিনি এতটাই খুশি ছিলাম| অবিকল সেই এক অনুভুদী ফিরে আসে তার ৩ বছর পর - কবে বলুন তো? যেদিন আমি চাকরি তে ইস্তফা দিলাম| অবশ্য তার সঙ্গে হয়ত মার্কিন ভিসা পাওয়ার আনন্দটাও যোগ হয়েছিল, কিন্তু তাও ব্যাপারটা অদ্ভুত|
ReplyDeleteআর আমার অন্যান্য স্মরনীয় মোমেন্টস অফ হ্যাপিনেসও বেশ গোলমেলে - একটা হলো আই সি এস সি 'র রেসাল্ট বেরোনোর দিনটা, আরেকটা হলো আমার যখন চিকেন পক্স হয়েছিল সে সময়টা | সবে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে, ২১ দিন স্রেফ এক গাদা গল্পের বই নিয়ে মশারির মধ্যে শুয়ে থাকা| মজার না, বলুন?
কুকুর বেড়ালের তুলনামূলক আলোচনাটা দুর্দান্ত সুগত। ICSC কী মাধ্যমিক? আমারও ওই দিনটা খুব ভালো কেটেছিল। তার পরের সব রেজাল্টের দিনগুলো যা জঘন্য কেটেছিল, সেইজন্য ওই দিনটা বেশি করে মনে আছে।
Deleteপক্স অবশ্য আমার হয়নি, কাজেই কষ্টটার কথা বলতে পারব না, তবে বই নিয়ে মশারির মধ্যে শুয়ে থাকা পার্টটা নিঃসন্দেহে হিংসে করার মতো।
Dekhechhen kando! Pakami mere Banglay type korte giye ICSE na likhe ICSC likhechhi... chhi chhi! Ota Madhyamik-i bote.
Deletetomar oi mukutmonipur er moto ekta bhishon bhalo happy smriti amar achhe gadiara y. college theke rural development er practical tour e gechilum. rupnarayan er par diye ami ar poulami eromi ekta jyotsna makha rat e hatchilum with kotto goppo.. upri paona ki boloto? halka jhoro hawa.. gachh gulo jeno paglami korchhilo.. ar chander alo je oto intense hoy, first time feel korechhilum....
ReplyDeleteegulo majhe majhe bhable mone hoy bechara bhogoban ke amra ki jalaton kori, ekta gondogol ghotechhe ki ghoteni bhodrolok ke jalano suru, othocho kotto kichhu diechhen uni, tar kono ullekh nei.. tomar bhashay "joghonyo"
সোহিনী, প্র্যাকটিক্যাল ট্যুরটা একেবারে জলে যায়নি তবে? চাঁদের আলোয় ভিজে ভিজে হাঁটাহাঁটি আর প্রাণের বন্ধুর সাথে গপ্প, আর কী চাই?
Delete