ছাদের ছবি
আলোকচিত্রী: Jamie Beck
তাছাড়াও দিনের বিভিন্ন সময়, বিচিত্র পরিস্থিতিতে, আমাদের ছাদটার কথা যখনতখন মনে পড়ে আমার।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মনে পড়ে ছাদের দক্ষিণ দিকের পাঁচিলের ওপর ডিঙি মেরে লগা দিয়ে কল্কে গাছের উঁচু ডালের ফুলগুলো টেনে টেনে কাছে আনার চেষ্টা করছি। মানে মা চেষ্টা করছেন, আমি মাকে পেছন থেকে উৎসাহ দিচ্ছি। কল্কেগাছটা পাজির পাঝাড়া। এমন মগডালে ফুল ফোটাবে যাতে কিছুতেই আমাদের হাত না যায়। কিন্তু আমার মাকে তো চেনে না। শেষে মা এক রামঝটকা দিয়ে পাতাটাতাসুদ্ধু হুড়মুড়িয়ে সব নামিয়ে আনলেন। আনার পর দেখা গেল যে তিনটে ফুলের জন্য এত মারামারি তারা অশোককাকুদের রান্নাঘরের অ্যাসবেসটসের চালে পড়েছে, আমাদের পাঁচিলের এদিকে শুধু একগাদা ছেঁড়া পাতা। কোন মানে আছে?
সন্ধ্যেবেলা মাঝে মাঝে হঠাৎ জোরে হাওয়া দিলে তো খুব মনে পড়ে জানেন। মা অফিস থেকে ফিরেছেন, লোডশেডিং, এমারজেন্সি লাইট আর মাদুর নিয়ে ছাদে যাওয়া হয়েছে, অঙ্ক প্র্যাকটিস হবে নাকি। একটু পরেই খাতাপেনসিল গুটিয়ে রেখে, “মা একটা গান গাও না গো।” মা মিষ্টি গলায় “সখি ভাবনা কাহারে বলে” গাইছেন, সাথে আমিও সরুগলায় ধুয়ো ধরেছি। গান শেষ হতেই আশেপাশের বাড়ির অন্ধকার ছাদ থেকে চটাপট হাততালি, “আরেকটা হোক, আরেকটা হোক।” মা অপ্রস্তুতের একশেষ।
কখনো কখনো শুক্রবারের আড্ডা সেরে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে গেলে, ঘুটঘুটে অন্ধকার বাড়িগুলোর তেকোনা মাথার ফাঁক দিয়ে চাঁদ দেখতে পেলেও মনে পড়ে যায়। কাঁটায় কাঁটায় আমার সমবয়সী নারকেল গাছটার মাথায় ওঠা চাঁদটার কথা। আপনাদের কীরকম চাঁদ পছন্দ? গোটা নাকি হাফ নাকি ফালি? আমার সবথেকে ভালো লাগে সরু চাঁদ, শিবঠাকুরের মাথায় যেমন থাকে। ওরকম চাঁদ ওঠা রাত্তিরে আমি কানে কর্ডলেস চেপে ছাদে ঘুরে ঘুরে এন্তার প্রেম করতাম। তাও শান্তিতে করার কি জো আছে? মশার জ্বালায়? ওদিক থেকে ভালোবাসার গুনগুন কথা কিচ্ছু শুনতে পেতাম না, এদিক থেকে মশার বনবন চিৎকারে। এখন ভাবি, মা দুর্গার জীব, কে জানে হয়তো সাবধান করছিল আমাকে, যাতে চোদ্দ মাস পরের ট্র্যাজেডিটা এড়ানো যায়। যেটাও ঘটেছিলো ওই ছাদেই, ফোনের এপারে, মে মাসের খটখটে দুপুরে।
এছাড়াও ঝড় উঠলে মনে পড়ে, বৃষ্টি পড়লে মনে পড়ে, দুঃখ হলে মনে পড়ে, কান্না পেলে মনে পড়ে। মনে হয় ওই ছাদটার ওপর মাদুর পেতে, মায়ের পাশে, তারাভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে চিত হয়ে শুয়ে থাকতে পেলে আর কিচ্ছু চাইবো না জীবনে। কোনোদিন। প্রমিস।
তবে সবথেকে বেশি মনে পড়ে কখন বলুন তো? যখন নিজের মনে টের পাই, শেষপর্যন্ত যেখানেই নোঙর ফেলি না কেন, সেখানে একেবারে নিজস্ব একটা ছাদ থাকার সম্ভাবনা, ওই শিবের মাথার চাঁদটার চাইতেও ক্ষীণ।
uff! daroon likhechho kuntala...simply fatafati.
ReplyDeleteeta thik je ekhon aar orokom nijaswa chhad pawar chance khub kom.......lekha ta pore amar dadu'r bari'r chhad er katha mone porlo....prakando ebong sabai miley adda, gaan bajna, naach, bhnuri bhoj shob kichu korbar jannei perfect.
kintu haay, aajker dine oi prakando diye ki hobe...tar jaygay utlo chhoto chhoto ghorer flat, jar janala theke gota chand o shuru dekhay :(((
ধন্যবাদ ধন্যবাদ শম্পা।
Deleteতোমার দাদুর বাড়ি কোথায়? আমাদের ছাদেও পাড়ার সবাই মিলে ফিস্ট করা হয়েছিল একবার। মেনু কী ছিল ভুলে গেছি। অনেকদিন আগের কথা তো। খালি মনে আছে, মা জেঠিদের শাড়ি, সারি সারি টাঙিয়ে রোদ্দুর আড়াল করে খেতে বসা হয়েছিল।
সেটাই তো। লোকে আজকাল ছাদ চায়না, বলে কী হবে? বলে ফ্ল্যাট নাকি বাড়ির থেকে বেটার। মেন্টেন্যান্সের ঝামেলা নেই, পাড়ার লোকের অযথা নাক গলাগলি নেই। লোকচক্ষুর আড়ালে বাঁচতে গিয়ে, সেলসম্যান সেজে আসা ডাকাতের হাতে খুনও যদি হতে হয়, সেও নাকি ভালো। অদ্ভুত।
aajkal kolkatay aneker bari'r chhade purodostur program hoy. gatobochar ek bandhabi'r barir chhade besh bhalo katlo....gaan, naacher program (ritimoto commercial artist) ebong pet pujo shob i holo.
Deletemenu chilo macher chop, kochuri, aloor dom aar chana'r payesh. (aami emon hyangla'r moto khachhilam je oder sandeho hotey laglo je shei anek bochar agey aami bhul kore USA'r bodole sudan er plane e chepe porini tow!!)
porey nescafe (in puchke kagojer cup) khete khete
ekjon local gayika'r gaan shunlam. daroon ketechilo shei bikel ta.
বাঃ বেশ ভালো ব্যাপার তো। এবার বাড়ি গেলে এরকম একটা বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে। আহা, সুদানের কী হয়েছে। কলকাতার লোকেরাও আজকাল কাঁড়িকাঁড়ি টাকা খরচা করে ওহ ক্যালকাটায় গিয়ে হালুমহুলুম করে বেগুনপোড়া খায়, সে বেলা বুঝি কিছু না?
Deleteaha, chhaader kotha te nostalgic hoye gelam! khub bhalo laglo pore :)
ReplyDeleteথ্যাঙ্ক ইউ আত্রেয়ী।
Deleteআমার প্রিয় চাঁদ অবশ্য পূর্নিমার চাঁদ, আর তাও সন্ধ্যের আকাশে, যখন পূব দিকে অতিকায় ডিমের কুসুমের মতন চাঁদটাকে দেখা যায়|
ReplyDeleteছাদ জায়গা তা বরাবরই আমার খুব প্রিয় জায়গা| এলাহাবাদে থাকতে শীতকালে ছুটির দিনে সকাল বেলা সেই যে ছাদে যেতাম, নামতাম বিকেলে রোদ পড়ার পর| মাঝে কোনো মতে একটু সময় খেতে নামতাম শুধু| গরমকালেও ভোর ভোর ছাদে গিয়ে হাঁটতাম| আমাদের ছাদটা বিরাট লম্বা ছিল আসলে, তাই হেঁটে সুখ ছিল|
হায়েদ্রাবাদে থাকতাম একটা সাত তলা না দশ তলা ফ্ল্যাটবাড়িতে| সুযোগ পেলেই তার ছাদে উঠে যেতাম, আর হেঁটে বেড়াতাম| অবশ্য অনেক উঁচু-নিচু পিলার পাইপ এসব ছিল ওই ছাদে, কিন্তু তাও, এত উঁচু বলে ভারী ভাল লাগত|
আমাদের হুগলির বাড়িতে আবার তিনটে ছাদ| একটা হলো একতলার ওপর খানিকটা ছাদ, দোতলার লাগোয়া| সেটাই সবথেকে বড় ছাদ| আরেকটা হলো দোতলার ওপর ছোট্ট ছাদ যেখান থেকে দক্ষিনের দিক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সামনে তাকালে মনে হয় (আমার বোনের ভাষায়) টাইটানিকের 'বো' তে দাঁড়িয়ে আছি - শুধু হাত দুটো দুদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে আর পুকুরটা কে অতলান্তিক মহাসাগর বলে ভেবে নিতে হবে| আর তিন নম্বর ছাদ হলো তারও ওপরের ঢালু ছাদটা - এ দেশের ঢালু ছাদের মতন, কিন্তু কনক্রিটের ঢালাই করা| এটার ওপর ঘোরা যায়না ঠিকই, কিন্তু চিত হয়ে শুয়ে আকাশ দেখা যায় খুব ভাল, আর এই একটা কারণেই আমার গরমকালে লোড শেডিং হলেও ভাল লাগে| কলকাতা থেকে তো আর তারা দেখা যায়না, হুগলি থেকে তাও যেটুকু দেখা যায়| ও বলতে ভুলে গেছি, তিনটে ছাদ থেকেই ট্রেন দেখা যায়| ট্রেন দেখতেও আমার দারুন লাগে, বিশেষ করে রাত্রে|
ডিমের কুসুম আমার ভয়ানক প্রিয়। তাই ডিমের কুসুমের মতো দেখতে জিনিসপত্রও আমার ভালো লাগে। যেমন সন্ধ্যেসকালের সূর্যদেব। পূর্ণিমার চাঁদ দেখলে আমার ডিমের বদলে কীরকম থালা থালা বোধ হয়।
Deleteআপনাদের হুগলীর বাড়ির ছাদটা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। বাড়ি গেলে একবার ঘুরে দেখে আসবো না হয়। কাছেই তো। রাতের রেলগাড়ির মধ্যে কিন্তু একটা ব্যাপার আছে, বলুন সুগত?
ami o tomader sathe ekmot... rater rail garir modheye ekta adbhut bepar achhe... chorte to bhalo lage e r dur theke dekhte o darun lage.....
ReplyDeletechader pase narkel gachh er patar fnak diye soru chand dekha r chordibhai er sathe afuronto golpo korar kotha mone pore gelo tomar lekha pore......
amar abosso rater poriskar akashe onek tara jwal jwal korle o darun lagto....
আরে গোবেচারা, সাধে কি কবিগুরু লিখেছেন, "এ প্রাণ রাতের রেলগাড়ি..."
Deleteআর আমি তোমার সাথে একমত। রাতের আকাশ মাত্রেই ভালো, সে চাঁদতারা কিছু থাক ছাই না থাক।
Amader Kolkatar bari teo 3 te chhad. Ekta 3 tolay ar 2to 4tolay. Oi 4tolar chhad duto khub odbhut, ek phali connection banate parlei ekta complete chhad hoto kintu amader barir aro kichu odbhut construction er moto otao hoyeche. Ar oi 3rd chhad ta te jayoar kono dorja chhilo na, ekta janala'r moto khop diye dhukte hoto. (Keno ami jani na!) Tobe oi gulor jonyei 86 yrs er barir ekta alada charm thake. Unlike ekhonkar perfect flat bari.
ReplyDeleteChhad er golpo bolte gele onek kichu bolte hoy. Amio Rabindranath er moto chhad e onek adventure korechi. Tricycle ar pedal kora gari chaliyechi didi'r chalk diye aka rasta, stop sign, zebra crossing dekhe. Jole kada gule "experiment" korechi. Amar "lab" chhilo ekta bhanga bench e. Gachher porichorja korechi balti balti jol dhele. Kali pujor agey baji rod e shukote diyechi khaborer kagoj pete, abar sondhye belay sei baji puriyechi okhanei. 14 prodip er din 2to prodip chhad e deya hoto, ondhokar kon khuje. Cricket to khela hotoi, deyal e bodhoy wicket er mark gulo ekhono ache. Haat-pa chhoreche oi chhad e pore giye. Boi porechi madur pete boshe, painting o korechi kokhono. Raat e ekbar Kakabhai er sange UFO dekhbo bole dhorna diye boshe chilam, akashchorchar shuru to oikhanei...Leonid meteor shower dekha bari suddhu sobai mile raat 2tor somoy...se sob onek golpo. Mot katha chhad na thakle ar chhad na bhalobashle manusher imagination power toiri hoya ektu difficult bolei amar mone hoy :)
রিয়া, তোমার ছাদের গল্প সত্যি সত্যি শোনার মতো। সোহিনী ছাদে রাস্তা, সিগন্যাল, জেব্রা ক্রসিং এঁকেছিলো আর তুমি সেই দেখে দেখে তিন চাকা সাইকেল চালাতে? আমি শুধু এইটার জন্য তোমাদের সারাজীবন হিংসে করবো আজ থেকে। আর কাকার সাথে UFO দেখার জন্য বসে থাকা? এর থেকে ভালো ছোটবেলা হয়?
Deleteওই খোপখাপ, ভুলভাল, অ্যাঁকাব্যাকা ছাদ আমারও বড্ড প্রিয় রিয়া। চৌখুপি মাপমতো ছাদের চেয়ে অনেক ভালো।
Amar 2 kaka (Kakun ar Kakabhai) holo amar sob khyapami'r supporter. Jokhon kono hujug tuli ami bari te, orai sei hujug sarthok korar plan banay. Se Eden Gardens e cricket khela dekhte jabo bole phone kore office theke deke ana, porikkha chola kalin hotat mechano niye bridge banabar shokh ba Christmas e tree ar streamers diye bari sajano, JEE'r admission er somoy college shortlist kora, boi melay gele sob somoy ekta boi gift kora, Kalipujor somoy baji'r list diye deya office theke ferar pothe kinte hobe bole, shey jayi hok...
DeleteEi karonei ami joint family'r otyonto boro supporter :D
ish!ei lekhata pore amader barir chader katha mone pare gelo...
ReplyDeleteবাড়ির ছাদ ব্যাপারটা জাস্ট অন্যরকম।
Delete