কিপটে? উঁহু, হিসেবি।
মানুষ চেনার অনেক
রকম রাস্তা আছে শুনেছি। এককালে মনীষীরা বলতেন একজন লোক সামাজিক উচ্চতায় তার থেকে
নিচুতে থাকা লোকের সাথে কেমন ব্যবহার করে সেটা তার সম্পর্কে অনেক কিছু বলে। অর্থাৎ
স্থানীয় গুণ্ডাকে স্যার বলে ডেকে রিকশাওয়ালাকে তুইতোকারি করে কিনা। আবার কেউ কেউ
বলেন মুখে কে কী বলে সেটা কথা নয়, কাজে কী করে সেটাই কথা। আজকালকার ফুডিরা অবশ্য
বলছেন কথা কাজ কোনোটা দিয়েই মানুষকে চেনা যায় না, কে কী খাচ্ছে সেটাই তার সবথেকে
বড় পরিচয়। লোকটা রবিবার সকালে গিয়ে ডবল দাম দিয়ে কেজ-ফ্রি অর্গ্যানিক চিকেন কিনে
আনছে নাকি সাইকেলের হ্যান্ডেলে হেঁট মুণ্ডু ঊর্ধ্ব পা করে গাদাগাদি ঝুলন্ত মুরগির
দুঃখে তার কিচ্ছু এসে যাচ্ছে না, সেটাই প্রমাণ করে ব্যাটার ভেতর মনুষ্যত্ব বলে
কিছু আছে না নেই।
এতরকম শুনে ঘেঁটে
গিয়ে আমি ভাবলাম এতসব উড়োখবরে কান না দিয়ে হাতের কাছে গুগল আছে যখন
তাকেই জিজ্ঞাসা করে আসা যাক। আপনারা একটু বসুন তো।
বোঝ।
যাই হোক, পরের মুখে
ঝাল না খেয়ে মানুষ চেনার নিজস্ব একটা নিয়ম বার করাই ভালো। সেরকম একটা নিয়ম আমার যে
একেবারে নেই তা নয় অবশ্য।
নারায়ণ সান্যালের
ভক্তরা মনে করতে পারবেন হয়ত, সত্যকাম উপন্যাসের একদম শুরুর দৃশ্যে অনেকদিন পরে
দেখেও লেখক পরমেশদাকে (নামটা ঠিক বলছি তো?) কী করে মুহূর্তে চিনে নিতে পেরেছিলেন। খুচরো
ফেরত নেওয়ার প্রতি ভদ্রলোকের অসীম উদাসীনতা দেখে। আমিও মনে করি টাকাপয়সার প্রতি
একটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি তার সম্পর্কে অনেক কথা জানিয়ে দেয়। সামাজিক অবস্থান, পারিবারিক
ইতিহাস, পেশা, স্বভাব---সবকিছু।
আড্ডায় বসে একসাথে খাওয়াদাওয়া করার পর বা অন্য কোন মিলিত খরচাপাতি হওয়ার পর কে কত দ্রুততায় (বা ঢিমেলয়ে) মানিব্যাগ বার করে এ দিয়ে আমি হরদম লোক বিচার করে থাকি। বিচার করে সিদ্ধান্ত নিই তার সাথে আমি কত দ্রুততায় বন্ধুত্ব করব নাকি আদৌ করবই না।
প্রেমের ব্যাপারেও তাই। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যারা অচিরেই প্রেম করবে, তোমাদের প্রতি আমার একটাই উপদেশ। টাকাপয়সার দিকটা আগেভাগে বুঝে নিও বাবা। ইউনিভার্সিটিতে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল পুরুষমানুষ। আমরা বিকেলবেলায় একসাথে চা খেতাম, ডিনার সেরে রিং রোডে হাঁটতে যেতাম, জাপানি সিনেমা যদি দেখতেই হয় তাহলে কুরোসাওয়া দেখা উচিত না ওজু সেই নিয়ে ঝগড়া করে মুখ দেখাদেখি বন্ধ করতাম। সবাই বলত বাজে কথা বলিস না তো, তোরা নির্ঘাত প্রেম করিস।
আমি বলতাম, খেপলে? এ ছেলে মাসের শুরুতে বাবার পাঠানো অর্ধেক টাকা দিয়ে রিবকের জুতো কিনে আনে, তারপর সারা মাস ধরে মারি বিস্কুট খেয়ে পেট ভরায়, এর সাথে কি প্রেম করতে আছে? আমাকে কি অতটাই পাগল ঠাউরেছ? মাস্টার্স পড়তে পড়তেই তার সাথে আমার আরেক ভালো বান্ধবীর প্রেম হয়ে গেল। তারা একেবারে রাজযোটক, সে মেয়েও টাকা আর মাটি এক করে দেখে।
টাকাকড়ির কমপ্যাটিবিলিটি, সব কমপ্যাটিবিলিটির সেরা কমপ্যাটিবিলিটি। কত প্রেম হয়েছিল কত প্রেম ভেঙে গেল, আমার সেই দুই বন্ধুর প্রেম এখনো হইহই রইরই করে চলছে।
আড্ডায় বসে একসাথে খাওয়াদাওয়া করার পর বা অন্য কোন মিলিত খরচাপাতি হওয়ার পর কে কত দ্রুততায় (বা ঢিমেলয়ে) মানিব্যাগ বার করে এ দিয়ে আমি হরদম লোক বিচার করে থাকি। বিচার করে সিদ্ধান্ত নিই তার সাথে আমি কত দ্রুততায় বন্ধুত্ব করব নাকি আদৌ করবই না।
প্রেমের ব্যাপারেও তাই। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যারা অচিরেই প্রেম করবে, তোমাদের প্রতি আমার একটাই উপদেশ। টাকাপয়সার দিকটা আগেভাগে বুঝে নিও বাবা। ইউনিভার্সিটিতে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল পুরুষমানুষ। আমরা বিকেলবেলায় একসাথে চা খেতাম, ডিনার সেরে রিং রোডে হাঁটতে যেতাম, জাপানি সিনেমা যদি দেখতেই হয় তাহলে কুরোসাওয়া দেখা উচিত না ওজু সেই নিয়ে ঝগড়া করে মুখ দেখাদেখি বন্ধ করতাম। সবাই বলত বাজে কথা বলিস না তো, তোরা নির্ঘাত প্রেম করিস।
আমি বলতাম, খেপলে? এ ছেলে মাসের শুরুতে বাবার পাঠানো অর্ধেক টাকা দিয়ে রিবকের জুতো কিনে আনে, তারপর সারা মাস ধরে মারি বিস্কুট খেয়ে পেট ভরায়, এর সাথে কি প্রেম করতে আছে? আমাকে কি অতটাই পাগল ঠাউরেছ? মাস্টার্স পড়তে পড়তেই তার সাথে আমার আরেক ভালো বান্ধবীর প্রেম হয়ে গেল। তারা একেবারে রাজযোটক, সে মেয়েও টাকা আর মাটি এক করে দেখে।
টাকাকড়ির কমপ্যাটিবিলিটি, সব কমপ্যাটিবিলিটির সেরা কমপ্যাটিবিলিটি। কত প্রেম হয়েছিল কত প্রেম ভেঙে গেল, আমার সেই দুই বন্ধুর প্রেম এখনো হইহই রইরই করে চলছে।
আমার কাছে টাকা আর যাই হোক না কেন মাটি নয়। চাকুরীজীবী মধ্যবিত্ত
বাঙালি বাবামায়ের সন্তান আমি, হওয়ার কথাও ছিল না। তাই বলে আমাকে কিপটে ভাববেন না
যেন। যেখানে যতটুকু লাগে ততটুকু খরচ করতে আমি সর্বদাই রাজি, খুশি মনেই রাজি। মিনিটস বাঁচানোর জন্য
রাতেবিরেতে লোককে মিসড কল দিয়ে ফোন কেটে দেওয়ার গাজ্বালানি বদভ্যেসও নেই আমার, কিন্তু তাই বলে ক্রেডিট কার্ডে
হাজার হাজার দেনা করে ফেলাও আমার ধাতে নেই। ধাঁই করে একখানা ডিজাইনার হাতব্যাগ
কিনে বসলাম কিংবা একটুখানি গরম লাগল অমনি দৌড়ে আলাস্কা বেড়াতে চলে গেলাম অত অ্যাডভেঞ্চারাস
আমি নই।
মা বলেন আমি নাকি “কিপটে
কাশ্যপ”। আমি নিজে অবশ্য সে কথা মানিনা। কিপটে নই, তবে একটু হিসেবি আছি বৈকি। সহজে
তো মরছি না, রিটায়ারমেন্টের পর যাতে অনাহারে না থাকতে হয় সে ব্যবস্থাও তো এইবেলা
করে রাখতে হবে বলুন? তার ওপর কোনোদিন যদি ছেলেপুলে হয় তাদের কলেজ ফান্ডের যে কী ব্যবস্থা
হবে সে তো ভগবানই জানেন।
তবে টাকা জমানোর উৎসাহ
আমার সবথেকে বেশি থাকে মাসের এই সময়টায়। সদ্য সদ্য অ্যাকাউন্টে মাইনে জমা পড়েছে,
বর্ধিত বাড়িভাড়ার চেক সবে সই করা হয়েছে, এখন খালি দিনরাত মাথার ভেতর প্যাঁচ খেলছি
কোথায় কোথায় খরচ কমিয়ে ক্ষতির ধাক্কাটা একটু সামলানো যায়। যা একখানা অ্যাম্বিশাস
বাজেট ছকেছি, দেখে মা হেসে বাঁচছেন না। সামনের তিনমাস হলে গিয়ে সিনেমা দেখা বন্ধ, ফ্রিজে কেসরপিস্তা আর উগান্ডান ভ্যানিলা দুরকম ফ্লেভারের আইসক্রিমের বদলে শুধু কেসরপিস্তা। কয়েকখানা
ম্যাগাজিনের সাবস্ক্রিপশনও কাটিয়ে দেব কিনা ভাবছি।
আমি এসব ভেবে ভেবে
মাথার চুল পাকাচ্ছি আর এদিকে মা ক্রমাগত ইয়ার্কি মেরে চলেছেন। বলছেন, একবেলা খাওয়া
বাদ দিলে কেমন হয় সোনা? অনেক পয়সা বাঁচবে কিন্তু।
মায়েরা যে এরকম নিষ্ঠুর
হয় কে জানত। জঘন্য।
আপনাদের মায়েরাও কি এরকম নিষ্ঠুর? নাকি আপনারা সবাই হাত খুলে ডাইনে বাঁয়ে দেদার খরচা করেন তাই মায়েদের নিষ্ঠুর
হওয়ার দরকারই পড়ে না? প্লিজ বলুন আমায়। একটু সান্ত্বনা দিন।
Amader barite ekta standing katha ache amader 3 joner sommondhe (mane ami, Bhut ar dadabhai) je jeta joto boro seta toto kipte. Sei hisheb e dadabhai sob theke beshi kipte daray, kintu kodin agey ma bollo amar naki haat diye jol gole na. Ki apoman! Amio oi tomar moto hishebi. Ektai credit card ache amar university life theke, tai diyei bhalo cholche amar. Taka poisa bishal na holey, tuktuk kore jomche. Jeta khorcha hoche setao dorkari jinishe (example: barir down payment). Ar amar baba'r bhashay loke naki "neshabhang" na korle tader taka baje khorcha hoyna. Tai tumi nishchinte 2 rokom ice cream kheye jete paro :D
ReplyDeleteমায়েরা ওইরকমই বলেন রিয়া, তুমি কিছু মনে কর না। আমারও একটাই কার্ড। পারলে আমি সেটাও ছুঁড়ে ফেলে দি। আমার কিছু কিছু দুনিয়াদার বন্ধুকে দেখেছি, 0% APR-এর লোভে ৯-১০ খানা কার্ড জোগাড় করেছে। প্রতিভা।
Deleteনেশাভাং কথাটা বহুদিন পরে শুনলাম। রীতিমত নস্ট্যালজিক লাগছে বিশ্বাস কর। আমাদের বাড়িতেও লোকে এই ভাষায় কথাবার্তা বলে। বলছ যখন তখন উগান্ডান ভ্যানিলাটা কিনেই আনি। ওটা আমার ভয়ানক প্রিয় ফ্লেভার। ফ্রিজ খুলে মনটা কেমন উদাস লাগছে।
amar ek dadu ke quote kori...."tyaha'r pizon ze eto dour, shei tyaha zahon ashbo tohon zowani nai, aar zowani na thaikle dour diba kemney"
ReplyDeletetai cinema na dekhle aar ice cream na khele, taka kon kaajer! tar cheye borong ekta extra cinema dekhe esho giye.
এক্কেরে হক কথা কইসেন তোমার দাদু শম্পা। আমার মা-ও তাই বলেন। বলেন, খরচ করতেই নাকি জানতে হয়। টাকা জমাতে নাকি সবাই পারে।
Deleteঅলরাইট। গায়ের রক্ত যতদিন গরম আছে ততদিন বেহিসেবি খরচই নাহয় করব আজ থেকে।
আমারও একটু হিসেবী বলে বদনাম আছে| আরো বেশি হিসেবী ছিলাম আগে, মানে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ে, কিন্তু দেখলাম যে বাসে না চেপে হেঁটে হেঁটে আধপেটা খেয়ে যেটুকু পয়সা জমাই সেটা ঠিক কোনো না কোনো ভাবে বাজে খরচ হয়ে যায়| তাই ইদানিং একটু বেশি খরচ করছি - মানে বছরে একটার বদলে হয়ত ৩-৪ টে সিনেমা দেখতে যাই| কেনা আইসক্রিম না খেলেও, গরমকালে কখনো কখনো আধ গ্যালন দুধের কুলফি জমাই বাড়িতে| এমনকি এ বছর নিতান্ত দরকারের বাইরেও পোশাক কিনেছি যেটা আমি আগে একদমই করতামনা| তাছাড়া শম্পার দাদুর যুক্তি তো আছেই - কতদিন আর ফুর্তি করব এভাবে? যতদিন পারছি করে নিই|
ReplyDeleteআসলে আমার একটা বাতিক বা রোগ যাই বলুন... যখনি কোনো টাকা "বাজে" খরচ করবার সুযোগ পাই, তখুনি মনে হয় এ টাকাটা জমালে কতদিনে একটা লেন্স হবে? কিম্বা একটা এক্সটার্নাল হার্ড ডিস্ক? এভাবে মোটিভেট করাটা সহজ হয় নিজেকে|
মাদের কথা আর বলবেন না - আমি ইন্জিনিয়ারিঙের পর চাকরি পেয়ে চেন্নাই চলে যাওয়ার ঠিক আগে মা আমায় ৫০০০ টাকা খরচ করে সেলফোন কিনে দিয়েছিল| বাজে খরচ কিনা বলুন? কোনো মানে হয়?
বাড়িতে! জমান!! কুলফি!!! রেসিপি প্লিইইইইইইইজ।
Deleteআরে আপনার তো জীবনে লেন্সের প্রলোভন আছে, আমার তো তাও নেই। YouTube এ ট্যাক্স দিতে হলে তাও একটা কথা ছিল। মায়েরা ভয়ানক বেহিসেবি। আমার মাও আমার পোবোল পোতিবাদে কান না দিয়ে আমাকে মোবাইল গছিয়েছিলেন। জঘন্য।
হাই-ফাইভ, কুন্তলা! জীবনদর্শনে একদম সহমত!
ReplyDeleteহাই ফাইভ, হাই ফাইভ। গ্রেট মাইন্ডস ইত্যাদি ইত্যাদি...
Deleteami urti boyoshe besh kipte chilam bujhle, ei dhoro undergrad e. tuition poratam kichu, but taka gulo jomiye rakhtam! even malpoa theke suru kore chicken roll er lobh o almost 80% din samle nitam rastay. tobe ekhon dekhchhi, sei will-power nei ar. akhon to roji ichhe kore aha, ektu junk khai. aj chinese, kal thai, porsu burger er kotha mone pore jay. Otherwise, ami khub ekta baje khoroch kori na bujhle :-P.
ReplyDeleteআমার ব্যাপারটা বিলকুল উল্টো আত্রেয়ী। আমি কলেজ ইউনিভার্সিটি(মাস্টার্স)-তে যা বাজে খরচ করতাম ভাবতেও লজ্জা করে। আরে উইল পাওয়ার বার্গারের পেছনে অপচয় করে লাভ নেই, জমিয়ে রাখ পরে কাজে লাগবে।
Deleteriyar comment pore tumi nishchoi amay daroon kipte bhabchho? bhable dosh nei bishesh.. tobe junk food ar cosmetics er opor amar kiptemi ke over rule kore jay amar lobh... barite lipstick er pahar jomchhe jeneo kena thame na.. er kono totka achhe tomader kachhe?
ReplyDeletecollege life e keu eka phuchka-walar kachhe dariye phuchka khete pare bole amar biswas hoto na.. jara eka phuchka khay ar eka cinema hall e giye cinema dekhe tader ami besh koruna r chokhe dekhtam... ekhon nijei hordom eka dariye pori phuchkawalar kachhe..
হ্যাঁ ওসব দলবল জুটিয়ে ফুচকা খেতে গেলে এখন আর খাওয়াই হবে না, তার থেকে একা সই।
Deleteakta somoy khub behisebi khoroch kortam,akhono korte ichche kore kintu akhon......bad dao osob dukkher kotha ar sonate chai na go.
ReplyDeleteএই রে, দুঃখের কথা মনে পড়ে গেল নাকি। স্যাড।
Delete