অবান্তরের দীর্ঘতম পোস্টঃ বিষয় ফোটোগ্রাফি
আমাদের স্কুলে বছরে
একবার করে ছোট ছোট দিদিমণিরা, যারা এখনও পুরো দিদিমণি হননি হওয়ার চেষ্টাচরিত্র
করছেন, তাঁরা পড়াতে আসতেন। প্র্যাকটিস টিচিং করতে। নতুন
দিদিভাইদের আমরা খুব ভালোবাসতাম। ক্লাসে আমরা গোলমাল করলে তাঁরা খুব ভয় পেয়ে গিয়ে
বলতেন, এই চেঁচিও না চেঁচিও না প্লিজ, আমার নম্বর কাটা যাবে। আর কতরকম যন্ত্রপাতি
থাকত তাঁদের বাপরে। আমাদের সুব্রতাদি’ভাই তো ঘামতে ঘামতে ক্লাসে ঢুকে খালি হাত বোঁ
করে ঘুরিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে কমলালেবুর মতো পৃথিবী আর তার গায়ে ওপর নিচ আর আড়াআড়ি দাগ
কেটে ৫ মিনিটে অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ বুঝিয়ে দিতেন---এই নতুন দিদিভাইরা গ্লোব,
মানচিত্র, পাঁচরকম রঙের চক, পয়েন্টার, হ্যানা ত্যানা আরও কতকিছু যে ঘাড়ে করে
ক্লাসে আসতেন ভাবা যায়না। একজন বেঁটে মতো নতুন দিদিভাই একবার ইতিহাস ক্লাসে চোল সাম্রাজ্যের
দেওয়ালজোড়া ছবি এঁকে এনেছিলেন, সাম্রাজ্যের উত্তর সীমানা চিহ্নিত করতে গিয়ে শেষে আর
হাত পাননা। আমরা দয়াপরবশ হয়ে বললাম, আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি চোল সাম্রাজ্য কোথা
থেকে কোথা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, আপনাকে অত লাফালাফি করতে হবেনা। শুনে সেই দিদিভাই
খুব করুণ মুখ করে বলেছিলেন, লাফাতে নাকি তাঁকে হবেই নাহলে নম্বর কাটা যাবে।
বেচারা।
যাই হোক, এনার
ইতিহাস ক্লাসেই কিনা মনে নেই, কিন্তু কোনো এক ইতিহাস ক্লাসে নতুন এক দিদিভাই পড়াতে
এসেছিলেন। নতুন দিদিভাইদের পড়ানোর আরেকটা বৈশিষ্ট্য ছিল যে তাঁরা বইয়ের যেখান
সেখান থেকে যা খুশি চ্যাপ্টার বেছে পড়াতে শুরু করে দিতেন। মানে ধরুন বইয়ে পরের
চ্যাপ্টার হয়ত আছে প্রস্তরযুগ, কিন্তু যেহেতু তাম্রযুগে চার্ট এঁকে আনার সুযোগ
বেশি আর বেশি চার্ট মানেই দিদিভাইয়ের কপালে বেশি নম্বর, সেহেতু তিনি প্রস্তরযুগ
পেরিয়ে সোজা তাম্রযুগ শুরু করতেন। কাজেই আমাদের আগে থেকে ক্লাসে পড়াটড়া তৈরি করে
যাওয়ার বালাইও ছিল না। পরমানন্দ।
দিদিভাই তো নিয়ম মেনে পড়াতে শুরু করলেন। আদর্শ শিক্ষণপদ্ধতি বইতে নির্ঘাত লেখা ছিল যে কথোপকথনের মাধ্যমে বিষয়ে অবতরণ করতে হবে। নাহলেই নম্বর কাটা যাবে। দিদিভাই খুব গুছিয়ে শুরু করলেন, তোমরা নিশ্চয় জানো যে ইতিহাসকে আমরা বিভিন্ন যুগে ভাগ করি? একঘর মেয়ে মাথা হেলিয়ে ডেস্কে প্রায় শুয়ে পড়ে বলল, হ্যাঁআআআআ জানি। দিদিভাই বললেন, বাঃ বাঃ (শিক্ষার্থীদের উৎসাহদানেও নম্বর আছে)। আচ্ছা বলতো কটা যুগ? এর উত্তরে কেউ তিন বলল, কেউ বলল চার, একটা ভয়ানক গোলমালের উপক্রম হল। দিদিভাই তাড়াতাড়ি প্রসঙ্গ বদলে বললেন, আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি। বল দেখি এটা কোন যুগ চলছে?
আবার সোজা প্রশ্ন।
আবার জনতা নিঃসংশয়। আবার ৪০ টা লাল ফিতে বাঁধা মাথা প্রবল আন্দোলিত হয়ে সমস্বরে চেঁচিয়ে
বলল, কলিযুউউউউউগ।
দিদিভাইয়ের মুখটা
আমার মনে নেই, কিন্তু হুবহু কল্পনা করে নিতে পারছি।
যাই হোক, এটা আমার
আজকের অবান্তরের বিষয় নয়। এতক্ষণ বিষয়ের অবতারণা হচ্ছিল। ঘড়ি দেখে লাভ নেই। কালকে
আমার মতে মত না মেলানোর শাস্তি হিসেবে আজ আপনাদের একটা ১৩০০ শব্দের পোস্ট পড়তে
হবে। ট্যাঁ ফো না করে কাজে লেগে যান।
আজ যদি আমাকে কেউ
জিজ্ঞাসা করে মানবসভ্যতার ইতিহাসে এটা কোন যুগ চলছে, আমি সেদিনের থেকেও বেশি নিঃসংশয়
হয়ে বলব, ফোটোগ্রাফির যুগ। যেদিকে তাকান কেউ না কেউ, কারো না কারোর,
কিছু না কিছুর ফোটো তুলছে। লোকের গলায় ক্যামেরা, পকেটে ক্যামেরা, ফোনে ক্যামেরা।
দেশের অর্ধেক জনতা বর্তমান প্রেসিডেন্টের নাম জানেনা কিন্তু মেগাপিক্সেল কাকে বলে
জিজ্ঞাসা করুন, জলের মতো পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেবে কেন মেগাপিক্সেল দেখে ক্যামেরা
কিনতে যাওয়া মানে আসলে নিজের পায়ে কুড়ুল মারা। ইউরোপের রাজধানীর নাম জিজ্ঞাসা করুন,
অম্লানবদনে বলবে জানেনা। জানতে চায়ও না নাকি। তারথেকে বরং ক্যানন বনাম নাইকন ডিবেটটার সুরাহা হওয়া আরও অনেক বেশি জরুরী।
ছবি তুলিয়েরা আমার
ওপর রাগ করবেন না প্লিজ। আমি আপনাদের ছবি তোলা নিয়ে একটুও কটাক্ষ করছি না, কেবল
পর্যবেক্ষণ করছি যে ছবি তোলাটা হবি হিসেবে হঠাৎই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সেটা
যে করেছে, এটা আপনাদেরও স্বীকার করতে হবে। একই সঙ্গে বদলেছে ছবি তোলার বিষয়। ছোটবেলায়
যখন গরমের ছুটিতে সিমলা কুলু মানালি বেড়াতে যেতাম তখন আমার বাবা তাঁর হটশট
ক্যামেরায় লক্ষ লক্ষ পাহাড় পর্বত আর পাইন গাছের ছবি তুলতেন। মা বলতেন আহা পাহাড়ের
সামনে মেয়েটার ছবিও তোল একটা। বাবা আমার ছবি তুলে দিতেন কিন্তু মাকে বলতেন, আরে
প্রকৃতিকেই তো বন্দী করে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। এমন সূর্য কি তোমার রিষড়ায় উঠবে
কোনোদিন, কিংবা ডালহাউসির মিনিবাস স্ট্যান্ডে?
এখন দু’বছর বাদে যদি
একবার ভুলেও অ্যালবামে হাত পড়ে, তবে সূর্যোদয় চিহ্নিত করার একমাত্র উপায় ফোটোর
সামনে ক্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকা আমি, আমার দৈর্ঘ্য আর আমার জামার ছাঁট। ওহ সোনা
এখানে প্রায় ম্যালের রেলিং-এর মাথায় মাথায়, এটা নির্ঘাত দার্জিলিং। ওহ মনে আছে ওই
বছর পুজোয় বড়দি সোনাকে এই কুচ্ছিত স্কার্টটা দিয়েছিল, এটা নির্ঘাত সিমলা।
বলে না দিলে আরাকু ভ্যালি না আরকানসাস বোঝে কার সাধ্যি
আজকাল লোকে আমার
বাবার মতো ভুল করেনা। মানুষের ছবি তোলে। আমি সারাদিন ব্লগে ব্লগে ঘুরি, ছবিতে
ছবিতে ঠাসা সেসব ব্লগ। নিজেদের ছবি, সন্তানের ছবি, পোষা প্রাণীর ছবি। ক্যামেরায়
বন্দী রোজকার দিনের ছোট ছোট ফোটোজেনিক টুকরো। জীবনের মতো ছবি তোলার দর্শনটাও বদলে
গেছে আসলে। মানুষ এখন নিজেদের দৈনন্দিন বেঁচে থাকাটাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে
শিখেছে। কাঞ্চনজঙ্ঘার একশোটা বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে নেওয়া শটের চেয়ে কানেক্টিকাটের
ম্যাকডি-তে বন্ধুদের সাথে তোলা একটা গ্রুপ ছবির মর্ম যে অনেক বেশি সেটা বুঝতে
শিখেছে। সন্তানের প্রথম পদক্ষেপ, নিজের হাতে বেক করা প্রথম কুমড়োর পাই, প্রথমবার
ম্যারাথন দৌড়তে গিয়ে প্রতিবেশী ডাহা ফেল---সমস্ত আনন্দমুহূর্তের সাক্ষ্য জড়ো করে
রাখছে। পরে যাতে ফুরসত পেলে আরাম করে হাত পা ছড়িয়ে বসে দেখা যায়।
আর এত ছবি তুলে
দেওয়ার জন্য লোক চাই। আজকাল লোকে বাকি সবকিছুর মতো সঞ্চিত স্মৃতির গুণগত মান নিয়েও অসম্ভব
খুঁতখুঁতে। প্রতিটি স্মৃতির কম্পোজিশন, ফিনিশিং, এডিটিং, ফোটোশপিং---একেবারে পেশাদারি
হওয়া চাই। তাই আলোকচিত্রীদের চাহিদাও আকাশ ছুঁয়েছে। সেটা ভালোই হয়েছে অবশ্য। জোগান
আর চাহিদা এদুটো একসাথে না চললে যে কী অনাসৃষ্টি ঘটে সে তো আপনারা জানেননা, ইকনমিস্টরা
হাড়ে হাড়ে জানেন।
যে কোনো
শিল্প/বিদ্যা যখন পেশা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে তখন তাতে বিভিন্ন রকম
স্পেশালাইজেশনের আবির্ভাব হয়। ডাক্তারিতে এই ব্যাপারটা অলরেডি ঘটে গেছে। এখন লোকে
ওপরের আর নিচের পাটির দাঁত তুলতে আলাদা আলাদা ডাক্তারের কাছে যায় শুনেছি।
ফোটোগ্রাফিও ডাক্তারিকে ধরে ফেলল বলে। এতদিন নেচার ফোটোগ্রাফি, ওয়েডিং ফোটোগ্রাফি,
অ্যাডভেঞ্চার ফোটোগ্রাফি শুনেছিলাম---গতকাল ডেলিভারি ফোটোগ্রাফির কথা জানলাম।
সব ফোটোগ্রাফারই
ডেলিভারি দেন মানে? আরে ধুর, এ ডেলিভারি সে ডেলিভারি নয়। এ হচ্ছে মায়েরা যে স্বর্গ
থেকে নিজের শরীরের মধ্যে বয়ে নিয়ে এসে মর্ত্যে বাচ্চা ডেলিভারি দেন, সেই ডেলিভারি।
এই ফোটোগ্রাফাররা হাসপাতালে, নার্সিংহোমে, অপারেশন থিয়েটারে, ডেলিভারি রুমে, গলায়
বাজখাঁই DSLR ঝুলিয়ে অবলীলায় ঢুকে পড়ছেন। বাচ্চা বেরোনোর
মুহূর্তে লাফিয়ে উঠে ঠেলেঠুলে ডাক্তার, নার্স, আসন্ন শিশুর পিতাকে সরিয়ে দিয়ে
পারফেক্ট অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরা বাগিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন, যাতে জন্মপ্রক্রিয়ার প্রতিটি
অলৌকিক মুহূর্ত তাদের সমস্ত সংগ্রাম, যন্ত্রণা, রক্ত, আর্তনাদ সমেত বন্দী করে রাখা যায়।
বার্থ ডেলিভারির
ফোটো তোলায় স্পেশালিস্ট ফোটোগ্রাফারের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, আর তার থেকেও
লম্বা লম্বা লাফ দিয়ে বাড়ছে তাঁদের চাহিদা। নাওয়াখাওয়ার সময় কমছে দ্রুত। এ তো আর
মুখেভাতের ছবি তোলা নয় যে বাচ্চা কেঁদে কাজল ধেবড়ে ফেললে ফের কাজল টেনে নতুন করে
ছবি তোলা যাবে। মা লেবারে গেছেন খবর পাওয়া মাত্র ক্যামেরা নিয়ে রেডি থাকতে হবে।
যখনতখন ডাক আসতে পারে।
কোনো কোনো বেরসিক
অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন ব্যাপারটার আদৌ দরকার আছে কিনা। মানে ছবি তুলে না রাখলেও তো
এ মুহূর্ত সারাজীবনে ভোলা মুশকিল, এমনিতে যতটুকু মনে থাকে সেটুকু থাকলে ক্ষতি কী? তাতে
বার্থ ফোটোগ্রাফির বরাত দেওয়া বাবামায়েরা (এবং ফোটোগ্রাফাররা) বলেছেন অবশ্যই ক্ষতি
আছে। একটি শিশুকে পৃথিবীতে আনার মির্যাকল ঘটাচ্ছেন তাঁরা। সেই মুহূর্তে তাঁদের
মুখটা ঠিক কতটা উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল, উজ্জ্বলতার সাথে মিশে ছিল কতটুকু যন্ত্রণা আর
কতটুকু আশা, আর যখন প্রথম শুনলেন যে মেয়ে হয়েছে না ছেলে!!---এসমস্ত মুহূর্তকে ছবির
মতো স্পষ্ট মনে রাখার পূর্ণ অধিকার আছে তাঁদের। একটুও ঝাপসা হয়ে গেলে চলবে না।
একদিক থেকে ভেবে
দেখলে ঠিকই। কতশত মুহূর্ত অসতর্ক চলে যায় দিনের ভেতর, মনে রাখা হয়না। যখন পথে চলতে
চলতে চিৎ হয়ে থাকা টুপির ভেতর টিপ করে পয়সা ছুঁড়ে দিই, তখন হয়ত আমার মুখটা দয়া আর
করুণায় মাখামাখি হয়ে একটা স্বর্গীয় রূপ ধারণ করে, কে জানে। যখন সাবটাইটেল ছাড়া আভা-গার্দ
কোরিয়ান সিনেমা দেখি কিংবা জেমস জয়েসের পাতা উল্টোই তখন আমার চেহারায় যে একটা
সন্দীপ্ত বুদ্ধির ছায়া পড়ে সেটারও তো কোনো প্রমাণ রাখা হয়না। জঘন্য।
অবিলম্বে একটা
ক্যামেরা জোগাড় না করলে চলছে না।
যাই হোক, যতদিন না সেটা
করা হচ্ছে ততদিন আপনার জীবনের স্পেশাল মুহূর্তের ছবি আমাকে দেখতে বাধ্য করবেন না
প্লিজ। আমার ভয়ানক হিংসে হবে। কী বললেন, এত পয়সা খরচ করে তুলেছেন, না দেখলে ঠ্যাং
খোঁড়া করে দেবেন? ওহ। তাহলে প্রসবকালীন ছবিগুলো থাক, আপনাদের পুরীর বিচে তোলা
হানিমুনের ৭০০ ছবির অ্যালবামটাই আনুন বরং। সে তবুও মন্দের ভালো।
itihaas parikshay ghorar daak er opor prosno peye ekjon likhlen "bharatborsher itihaas e ghorar daak er jug ashe sher shah sur e rajya-kale. tini bharat er anyatamo badshah chilen. shei samay ghorar daak er procholon hoy. er agey ghora daaakito na"
ReplyDeletetomar ei post er photography'r jug pore, shei prachin amol er ghorar daak er goppo ta mone pore gelo.
হাহা শম্পা, এইটা আমিও আগে শুনেছি।
Deleteইউরোপের রাজধানীর নাম :D :D
ReplyDeleteভূগোলের জ্ঞানের অবস্থাটা এক্স্যাক্টলি এই জায়গায় পৌঁছেছে বিশ্বাস কর।
Deleteমাইরি?
Deleteএই লেখাটা জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছিস্। :D
ReplyDelete*বাও*
Deleteবাব।
Deleteহাহা।
Deletehahahhha, darun :). sesh er stanza ta amar best laglo :)
ReplyDeletetobe amar besh chobi tolate darun lage. specially jodi bhalo chobi othe, tahole to r kothai nei. sujog pelei ami daant keliye dariye pori pose mere e gach, oi jhorna, sei rastar dhare :D
আমার ছবি তোলাতে দুর্দান্ত লাগে। কিন্তু কেউ তুলেই দিতে চায়না। জঘন্য। আর যদি বা তোলে, সে ছবি তার কাছ থেকে আদায় করা আরেক মহাভারত।
Deleteইদানিং এই লোকের ছবি তোলার "হবি" টা আমার নিজের কাছেই বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে | লোকে ফোন বের করে খুচ খাচ ফটো তুলে মনে করে যে তাতেই বুঝি ফটোগ্রাফি টা তার হবি হয়ে গেল ! ছবি তোলার শখ টা আমার উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া | তবে কোথাও বেড়াতে গিয়ে আমার বাবার তোলা বেশিরভাগ ফটো কিন্তু হত সেই জায়গার পাহাড়-পর্বত নদী-ফুল-গাছপালা-সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত এইসবের | অনেক ছবিতেই আমরা থাকতাম, কিন্তু পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ডটাই প্রাধান্য পেত | প্রথম দিকে আমিও সেরকমই ফটো তুলতাম | তারপর একবার ফটোগ্রাফার হিসেবে সামার জবের খোঁজে গেছি, তারা বলে মানুষের ফটো নেই কেন তোমার পোর্টফোলিও তে ? অগত্যা পেটের দায়ে স্টাইল পাল্টে এখন আমি কলেজে জনপ্রিয় পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফার | এই নিউ ইঅর্ক অঞ্চলে একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার যে কি পরিমান রোজগার করে সেটা প্রথম যেদিন জানতে পেরেছিলাম চোখ কপালে উঠে গেছিল | তবে আমার মুশকিল হলো আমি তো এ দেশে ছাত্র, আমার ভিসায় ফটো তুলে রোজগার করবার উপায় নেই | তাতে অবশ্য দুনিয়ার লোকের ফরমায়েশ অনুযায়ী বিনি পয়সায় রোদ-বৃষ্টি-বরফ মাথায় নিয়ে ফটো শুট করে দিতে বাধা নেই (ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কথা আলাদা, আধা-পরিচিতরা যখন বলে তখন রাগ ধরে) | কত লোকের অনুরোধ রাখতে যে কত আজব আজব ফটো তুলে দিতে হয়েছে সে আর কি বলব | এমনকি একজনকার তার বান্ধবী কে আংটি বের করে হাঁটুগেড়ে বসে প্রপোজ করার মুহুর্তটা পর্যন্ত আমায় ক্যামেরাবন্দী করে দিতে হয়েছিল | আপনার লেখা পড়ে ভয় করছে - যে রেটে বন্ধু-বান্ধবদের বিয়ে হচ্ছে চারিদিকে, শিগগিরই হয়ত "কাপল শুট" ফুরিয়ে গিয়ে "ডেলিভারি শুট" করতে ডাক পড়বে আমার | তাও বিনা পয়সায় |
ReplyDeleteহ্যাঁ, ফোটো তুলে লোকে লাল হয়ে যাচ্ছে আজকাল। সেই দেখেই বাকিদেরও ইচ্ছে হচ্ছে আরকি হাত পাকাতে। সে আপনি যতই রাগ করুন না কেন সুগত, আমাকে যদি এ জন্মে কেউ হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপ উপহার দেয়, আমি তাকে ওই অবস্থায় বসিয়ে রেখে দৌড়ে আপনাকে খুঁজতে বেরব। আর ছবি তোলা হয়ে গেলে বাংলাদেশি দোকানে ইলিশ মাছ আর বেরিয়ে এসে আইসক্রিম খাওয়াব। টাকা দেব না কিছুতেই।
Deleteআহা ইলিশ আর আইস ক্রিম একসাথে? টাকা কে চায় মশাই?
Deletejanina k ki vabe kintu nijer valo valo photo tule bondu der post korte amar bes lage.....ora ki darun darun comment dei....tobe janina mon theke dei naki amak khusi kore....
ReplyDeleteআরে মন থেকেই দেয় নিশ্চয়। খুশি করতে বয়েই গেছে লোকের।
DeleteAmar chhobi tolay haate khori hoy ekta purono 1960s er Kodak cameray. Baba shikhiyechilo aperture/speed thik kore chhobi tola. Class 8 theke setay ami tulchi. Ekta gota film er ekta shot o noshto hoto na ami tulle, 38ta shot paoya jeto, 36 er beshi.
ReplyDeleteEkhon to jaa taa hoye geche ei phone e camera shbar por. Sedin shunlam 41 mega pixel er camera ashche naki. Pagol na parshe machh?
Berate gele chhobi tuli bhalo kore, camera-y, tobe barite amader 3te phone ar amar PlayBook sob camera mile ache khali nana pose e Mota, May, Kedo (amader 3 beral) ar La (amader machh) er chhobi :D
Tobe ja bujhchi, photography will be a lost art too. Sobai ghataghati korle ar kono jinish thake?
তুমি তো খুব ছোটবেলা থেকে ছবি তোল রিয়া? আমি আবার চিরকালই ক্যামেরার সামনে থাকাতেই বেশি উৎসাহী। আমার মায়েরও একটা কোডাক ক্যামেরা আছে, আসাম থেকে চলে আসার সময় অফিসের লোকেরা চাঁদা তূলে উপহার দিয়েছিলেন। মা-ও ছবিটবি তোলেনা, সে ক্যামেরা পড়েই আছে।
Deleteতোমার মাছের নামটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। বার বার ডাকলে বেশ লা লা লা লা করে গানের মতো শোনাবে।
Or naam actually La Teji (karon or onek tej), or arekta naam holo Barnakumari(or neel rong, tai).
DeleteMay'r arekta naam Swarnakumari.
Mota - Hemendranath
Kedo - Balendranath :)
Mja palum
ReplyDeleteবেঁটে মত নতুন দিদিভাই শুনে ঘাবড়ে গেছিলাম.. এই রে.. আমার মা নয়তো..? ইতিহাস শুনে রক্ষে.. :) আমার বেশ লাগে ফোটো তুলতে .. তবে চারিদিকে দেখি .. talented লোকেদের ছোট না করেই বলছি .... যার যত খরচা করার মানে লম্বা লেন্স কেনার ক্ষমতা সেই তত বড় ফোটো গ্রাফার। .. দারুন হয়েছে লেখাটা.. ডেলিভারি ফোটো গ্রাফার হওয়া কি ভয়ংকর। .
ReplyDeleteফোটোগ্র্যাফির এই দিকটা কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই, আমার মতো বাজে ফোটোগ্র্যাফারদের জন্য ক্যামেরাটারই যত কারিকুরি। লেখাটা তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম ঊর্মি।
Delete