পাঁচমেশালি পোস্ট



প্রথমেই গত সপ্তাহের সিরিয়াল মোনোগ্যামিস্ট পোস্টে যারা মন্তব্য করেছেন তাঁদের একেবারে মনের ভেতর থেকে অসংখ্য অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই। আপনারা বিষয়টা নিয়ে ভেবেছেন, এক দুই করে নম্বর দিয়ে যুক্তিজাল বিছিয়েছেন...দেখেশুনে আমি আপনাদের আগের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। এত ভালোবেসে ফেলেছি যে ভাবছিলাম সারাজীবন ধরে অতি কষ্টে যে গোটা চারেক সিক্রেট জমিয়েছি সেগুলো কেঁদেকেটে আপনাদের কাছে স্বীকার করে ফেলি। কিন্তু শেষমেশ সামলে নিয়েছি। উঁহু এখনি নয়। আরও কটা সিরিয়াল মোনোগ্যামিস্ট পোস্ট পড়ুক,  আপনারা ঘেমেনেয়ে আরও অনেক টাইপ করুন তারপর ভেবে দেখা যাবে’খন।

ওহ, ওই জেন্ডারের ব্যাপারটা। ক মহিলা, খ পুরুষ। ইন ফ্যাক্ট যখন লিখছিলাম আমি তখন নিশ্চিত ছিলাম যে কেউ এইসব ক, খ-তে কিসুই ভুলবেনা, একলাইন পড়েই ধরে ফেলবে কে ছেলে কে মেয়ে। কিন্তু সেটা যে ঘটেনি এটা একটা আশার কথা। সবাই সবরকম হতে পারে এটা মনে রাখাই ভালো।

*****

দাঁড়ান আপনাদের একটা ছবি দেখাই।


এঁরা কারা বলুন তো? বাঁদিকের জন হলেন রোজমেরি বক্সার আর ডানদিকের হাসিখুশি ভদ্রমহিলার নাম লরা থাইম। এঁরা হলেন গার্ডেনার টিম। একটা ভাঙাচোরা ল্যান্ডরোভার নিয়ে ব্রিটেনের বাগানে বাগানে দুজনে ঘুরে বেড়ান। জীর্ণ গাছে প্রাণসঞ্চার করেন, বন্ধ্যা মাটিতে ফুল ফোটান। ফুল ফোটাতে গেলে কোদাল শাবল নিয়ে মাটি কোপাতেই হয়। আর কোপাতে গেলেই বেরিয়ে পড়ে। কেঁচো? রামোঃ কেঁচো কেন বেরোতে যাবে, ভালো ভালো কঙ্কাল থাকতে? রোজমেরি আর মিসেস থাইম সেই কঙ্কালের ক্লু ধরে সত্যের পিছু ধাওয়া করেন। গল্পের শেষে সত্যও বেরিয়ে পড়ে, রঙবেরঙের ফুলে বাগানও ছেয়ে যায়।

রোজমেরি আর থাইম আমার বর্তমান BFF সারাদিনের শেষে যখন আমার আর কোন জ্যান্ত মানুষের মুখদর্শন পর্যন্ত করতে ইচ্ছে করেনা (মা বাদে) তখন রোজমেরি আর থাইম আমাকে সঙ্গ দেন। এঁদের দুজনকে আমার এত ভালো লাগে কেন বলুন তো? কারণ ওই যে কথা হচ্ছিল স্টিরিওটাইপিং নিয়ে—তা থেকে দুজনেই সম্পূর্ণ মুক্ত বলে। রোজমেরি ছিলেন বিশুদ্ধ অ্যাকাডেমিক। আর অ্যাকাডেমিকদের যে আরেকটা স্টিরিওটাইপ আছে, আলাভোলা উশকোখুশকো প্রফেসর, বেশির ভাগ অ্যাকাডেমিক আসলে একেবারেই সেরকম হননা। বরং একে ওপরের পেছনে লাগতে ওস্তাদ। সেরকমই এক অ্যাকাডেমিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয় রোজমেরির চাকরি যায়। রোজমেরিও একফোঁটা চোখের জল বাজে খরচ না করে, চক্রান্তকারী প্রফেসরের নাকে একটা প্রকাণ্ড ঘুষি বসিয়ে (মেটাফরিক্যাল ঘুষি নয়, আক্ষরিক ঘুষি), চাকরির মুখে লাথি মেরে বেরিয়ে আসেন। কলমের বদলে হাতে শাবল তুলে নেন।

লরা থাইম ছিলেন পুলিশসার্জেন্ট। বিয়ের পর মগজধোলাইয়ের শিকার হয়ে গৃহবধূ হয়ে যান। হ্যান্ডকাফ ছেড়ে হাতাখুন্তি। দুটি ফুটফুটে ছেলেমেয়ে বড় করতে করতে, সংসার সামলাতে সামলাতে সাতাশ বছর কেটে যায়। সাতাশ বছর বাদে একদিন সকালে মিসেস থাইম হঠাৎ আবিষ্কার করেন মিস্টার থাইম ২৩ বছর বয়সি এক উদ্ভিন্নযৌবনার জন্য তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন।

যৌবন আরও একবার জিতে যায়। লরা থাইম, থাইম নামটা ততদিনে তাঁর শিরায়শিরায় খোদিত হয়ে গেছে, একটা সুটকেস হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। ট্যাক্সিতে ওঠার আগে একবার পেছন ফিরে তাকান। নিচু হয়ে সাজানো বাগান থেকে একটা আধলা ইট কুড়িয়ে ছুঁড়ে মারেন। পুলিশি ট্রেনিং তো, ভোলা শক্ত। ইট অব্যর্থ লক্ষ্যে জানালার কাঁচে গিয়ে লাগে। ঝনঝনিয়ে কাঁচ ভেঙে পড়ে। মিসেস থাইমের সাতাশ বছরের সংসার-প্রহসনের মতো।

ব্যস, মুক্তি। রোজমেরি আর থাইমকে এখন আর পায় কে। এখন তাঁরা মন দিয়ে বাগান পরিচর্যা করছেন, টাকা রোজগার করছেন, বদমাশদের বদমাইশির পর্দাফাঁস করছেন। আর আমাকে সঙ্গ দিচ্ছেন। আপনারাও বন্ধুত্ব পাতিয়ে দেখুন না, ভালোই লাগবে।

*****

ফাদার’ডে এই আসবে আসবে, এল এল, এসে চলেও গেল। আমি বাবার সম্পর্কে এক লাইনও লিখে ওঠার আগেই। মায়ের প্রতি আমার অন্তহীন পক্ষপাতিত্বের আরও একটা জ্বলন্ত উদাহরণ রয়ে গেল। তাই প্রায়শ্চিত্তের জন্য বাবার একটা ছবি দেখাচ্ছি আপনাদের।

একদম আমার মতো দেখতে না, জানি। এদিকে মায়ের ছবি দেখালে আপনাদের আর কিছু বলে দেওয়ারই দরকার হত না। কিন্তু বাবা মাকে একটা জায়গায় হারিয়ে দিয়েছেন। বাইরেটা মাকে ছেড়ে দিয়ে আমার ভেতরটা পুরো নিজে দখল করে নিয়েছেন। অর্থাৎ কিনা আমি দিন-কে-দিন অবিকল বাবার মতো হয়ে যাচ্ছি। বাবার মতো ভাবি, বাবার মতো খাই, বাবার মতে মত মেলাই, বাবার মতো কারো সাথে আলাপ হওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে মাথার ভেতর তাঁর একটা স্পেশাল নাম রেখে দিই। আর মনে মনে সর্বদা লোকটাকে সেই নামে ডাকি। মানে ধরুন সুদীপ্ত বলল, আরে মনে নেই সেই যে সেদিন আলাপ হল অমুকদার সাথে? আমি বলি, ওহহহ সেই *ফিল্মবাফ’দা*? স্টার দেওয়া অংশটুকু মনে মনে বলি বলাই বাহুল্য। এমনকি বাবা মাঝে মাঝে বাড়ির মধ্যে চলতে ফিরতে “ব্যোম ভোলে” বলে ওঠেন, ইদানিং আমিও দেখছি সেটা করছি। এটা যে কবে পিকআপ করলাম, কীভাবে করলাম কে জানে। জিনের খেলা বোঝে কার সাধ্য। 

Comments

  1. aha! rosemary aar thyme series ta aamaro bhishon priyo....rosemary kintu felicity kendal mane amader shoshi babu (shashi kapoor) er shaali :))

    ReplyDelete
    Replies
    1. অ্যাঁ এটা জানতাম না তো? এ তো আমাদের সাক্ষাৎ কুটুমই হল গো শম্পা একরকম।

      Delete
    2. arre kutum to botei, bharat borsher meye o bolte paro. o india te boro hoyechey ebong acting career india tei shuru hoy, shakespeare plays kore. or baba geoffrey kendall, india te ekta theatre company chalaten. o boro hoye england fire jay. tobe khub bhalo hindi bolte pare aar bharat natyam aar kathakali nachte pare.

      Delete
    3. ওরে বাবা ভরতনাট্যম! কথাকলি!! আমাকে তো মেমসাহেব রীতিমত কমপ্লেক্স দিয়ে দিলেন, আমি তো ওনার তুলনায় সিকিশতাংশ ভারতীয়ও নই মনে হচ্ছে।

      Delete
  2. আবার সিলেবাসে একটা চ্যাপ্টার বাড়িয়ে দিলেন তো! দেখেই ফেলবো 'খন... :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে এই বয়সে সিলেবাসের ভয় পেলে চলবে? তোমাদের বয়সে আমরা কত কত সিলেবাস কভার করে ফেলতাম...

      Delete
  3. jaahh.. kaw-khaw ta erom ulto berolo !!

    ReplyDelete
  4. আমি কিন্তু ক-খ টা ঠিক ধরেছিলাম| ভাবতেই কেমন একটা ইয়ে হচ্ছে...

    রোজমেরি আর থাইম তো দুটো মশলার নাম - এদেশে যাকে বলে "হার্ব" | এই নামে যে গোয়েন্দাকাহিনীর নায়িকারাও আছেন তা কিকরে জানব! যাক হদিস যখন পেয়েছি এবার দেখার ব্যবস্থা করতে হবে|

    ReplyDelete
    Replies
    1. ইয়েস। মেনি মেনি কনগ্র্যাচুলেশনস। অ্যাকচুয়ালি এরা বলে "আর্ব", আমাদের ব্রিটিশদের টুকে শেখানো হয়েছিল "হার্ব"।

      Delete
    2. Hmmm... ami Ma ke shekhachhilam, je "herb" noy, "erb". Ma sob shune tune (aro onek kichu shuneche ei type er, ei kodine) boleche "toder pallay pore arekbar ingriji ta shinkhte hobe".

      Delete
    3. বাঃ আর্ব শিখে ফেলেছেন কাকিমা? এবার স্কেজিউল শিখিয়ে দাও, তাহলেই অ্যামেরিকান ইংরিজি শেখার ষোলকলা পূর্ণ হয়ে যাবে কাকিমার।

      Delete
  5. ami o kaw-khaw ke thik dhorechhilam..:D

    ami rosemary r laura ke to bhalobasi e... tobe oder program er theme music tao darun lage..

    ReplyDelete
    Replies
    1. গোবেচারা, হ্যাঁ তুমি ঠিক ধরেছিলে। বাঃ বাঃ রোজমেরি আর থাইমের আরও ভক্ত আছে শুনে খুব ভালো লাগছে। গ্রেট মাইন্ডস থিঙ্ক অ্যালাইক কথাটা যে বলে, ভুল বলে না।

      Delete

Post a Comment