বারণ



আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছেন, “এত তো প্রোগ্রেসিভ, এদিকে ঠাকুমা যে গত তিরিশ বছর ধরে নিরামিষ খাচ্ছেন সে বেলা কিছু বল না যে?”

আমিও ভাবি, কেন কিছু বলিনি। যখন ব্যাপারটা প্রথম ঘটেছিল তখন না হয় ছোট ছিলাম, কিন্তু পরেও তো বলতে পারতাম। বলিনি। কোনও একটা জিনিস চোখে সয়ে গেলে সেটার অস্বাভাবিকতা আর নজরে পড়ে না বলে বোধহয়। শুধু তো নিরামিষ নয়, ঠাকুমা পেঁয়াজরসুন খান না, একের বেশি দুবেলা ভাত খান না, এমন কি মুসুরডালও নাকি বারণ। ছোটবেলা থেকে দেখেছি একটাই রান্নাঘরের মধ্যে কীভাবে অদৃশ্য লক্ষণরেখা আঁকা থেকেছে। থালাবাসন, হাতাখুন্তি, নুনের বাটি পর্যন্ত আলাদা। এখন না হয় অসুস্থ হয়েছেন বলে সব নিয়ম ঢিলে হয়ে গেছে। শরীর এমন অশক্ত হয়েছে যে শায়া ব্লাউজ বারোহাতি শাড়ি পরে থাকা অসম্ভব হয়েছে, ঠাকুমা নাইটি পরতে নিমরাজি হয়েছেন। যদিও মাছ ধরতে সবেগে আপত্তি জানিয়েছেন, কিন্তু একের বদলে দু’বেলা ভাত খেতে হলে ঠাকুমা আর আঁতকে উঠছেন না।  

আমার ঠাকুমার যিনি শাশুড়ি ছিলেন তাঁকে ব্যাপারটা অনেক আগে থেকে শুরু করতে হয়েছিল। ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে বছরকুড়ি বয়সে বিধবা হয়েছিলেন, বেঁচে ছিলেন প্রায় নব্বই বছর পর্যন্ত। আমি জন্মাবার বছরখানেক আগে তিনি মারা যান। শুনেছি আমার মাকে তিনি ভয়ানক পছন্দ করতেন। সে করতেই পারেন, আমার মা পছন্দ করার মতোই মানুষ, কিন্তু দিদিঠাকুমার মাকে এক্সট্রা পছন্দ করার ব্যাপারে আমার একটা থিওরি আছে। আমার ঠাকুমা আর তাঁর শাশুড়ির বিশেষ বনত না। শুরুর দিকে ঝগড়াঝাঁটি হত শুনেছি, কিন্তু শেষটা দুজনেই হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। একছাদের তলায় একে অপরকে না ঘাঁটিয়ে কী করে থাকতে হয় সেটা দুজনেই শিখে নিয়েছিলেন। কাজেই আমার মা যখন বউ হয়ে বাড়িতে এলেন, দিদিঠাকুমা দেখলেন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার এই সুযোগ। তিনি হন্যে হয়ে মাকে দলে টানতে নেমে পড়লেন। তাঁরও রান্নাঘর আলাদা ছিল, সেখানে সকালবিকেল নানারকম নিরামিষ সুখাদ্য রান্না হত আর দিদিঠাকুমা লুকিয়ে লুকিয়ে সেগুলো মাকে খেতে দিতেন। বাবাকাকাপিসিরা হাসত, ঠাকুমা চোখ ঘোরাতেন, আর নতুন বউ মায়ের ভয়ানক অস্বস্তি হত।

যাই হোক, আমার সেই দিদিঠাকুমার একটা খুব গর্বের জায়গা ছিল তাঁর নিয়মনিষ্ঠা। সংযমজীর্ণ দীর্ঘ জীবনে তিনি যে একবারও প্রলোভনের ফাঁদে পা দেননি, স্বাদগন্ধবর্ণসৌন্দর্যের সমস্ত হাতছানি উপেক্ষা করে শুষ্কং কাষ্ঠং দিনযাপন করেছেন এইটা তাঁর নিজের কাছে খুব বড় একটা সান্ত্বনা ছিল।

সে জীবনের ভয়াবহতাটা একটা ঘটনাতে চিরদিনের জন্য ধরা হয়ে আছে। জীবন যতই কঠিন হোক না কেন, আমার থুত্থুড়ে দিদিঠাকুমার মৃত্যুটা জলের মতো সহজ হয়েছিল। দিব্যি রাতে খেয়েদেয়ে শুতে গেলেন, সকালে উঠে সবাই দেখল দিদিঠাকুমার বুকে নিঃশ্বাসের ওঠাপড়া নেই, শরীর শক্ত হয়ে গেছে। শ্রাদ্ধশান্তি চুকে যাওয়ার পর একদিন আমার ঠাকুমা মাকে ডেকে পাশে বসালেন। বললেন, ওঁর বুকে নাকি অনেকদিন ধরে একটা কথা পাথরের মতো ভারি হয়ে আছে, এইবার সেটা বলে তিনি শান্তি পেতে চান।

“কী কথা মা?”

ঠাকুমা মুখ নিচু করে বললেন, “আমি একখান খুব বড় অন্যায় করসিলাম, কাউরে কই নাই।”

জানা গেল বহু বছর আগে, বাবাপিসিরা যখন সবাই হাফপ্যান্ট আর ফ্রক, তখন খিদিরপুরের ইনস্টিটিউট বিল্ডিং-এ একবার যাত্রা না কীসের আসর বসেছিল। ঠাকুমা বিকেলবিকেল সংসারের সমস্ত কাজ সেরে, স্বামীপুত্রশাশুড়ির রান্না রেঁধেবেড়ে যাত্রা দেখতে গেলেন। যাওয়ার আগে পিসিকে বলে গেলেন, রান্নাঘরে সব ঢাকা দেওয়া আছে, ঠাকুমাকে খেতে দিস, খিদে পেলে নিজেরা খাস।

কিছুক্ষণ পর আমার বছরদশেকের পিসি যত্ন করে কাঁসার থালায় ঠাকুমার জন্য রুটি তরকারি বেড়ে সিঁড়ি দিয়ে গুটিগুটি ওপরে চলল। ঠাকুমা ছোট্ট নাতনির এহেন সেবা দেখে খুশি তো হলেনই, রুটি দিয়ে তরকারি মুড়ে মুখে পুরে আনন্দে তাঁর চোখে প্রায় জল এসে গেল। কই বউমা তো রোজ খেতে দেয়, এত ভালো তো লাগে না? ভালোবেসে দেয় না বলেই নির্ঘাত। দিদিঠাকুমা সেদিন একটার বদলে তিনটে রুটি খেয়ে ফেললেন। শুধু খেলেনই না, পরদিন কোয়ার্টারের সব পড়শিকে ডেকে নাতনির গুণের কথা সাতকাহন করে বললেন। বললেন, একটুখানি ভালোবাসার ছোঁয়ায় রোজকার সাদামাটা খাবারেও কি অমৃতের স্বাদ জন্মাতে পারে, সেই কথাটা আরও একবার হাতেনাতে প্রমাণ হয়ে গেল।

আসল কথাটা জানতেন শুধু আমার ঠাকুমা। যাত্রা দেখে ফিরে দুই তরকারির বাটির ঢাকনা তুলেই ঠাকুমার সন্দেহ হয়েছিল। পিসিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঠাকুমাকে খেতে দিসনি? পিসি ঘাড় হেলিয়ে বলল, দিয়েছিলাম তো, ঠাকুমা চেটেপুটে খেল যে। ঠাকুমার বুকের ভেতর গুমগুম ঢেঁকির পাড় পড়তে লাগল। কোন বাটি থেকে দিয়েছিলি? কেন এইটা? বলে পেঁয়াজরসুন কুচোচিংড়ির টুকরো দেওয়া গরগরে মশলাদার বাটিটার দিকে আঙুল দেখিয়ে পিসি ফ্রকের ঘেরে ঢেউ তুলে খেলতে চলে গেল।

আমার দিদিঠাকুমা ভুলেই গিয়েছিলেন চিংড়িমাছ জিনিসটা কত ভালো খেতে। বাড়ির বাকি লোকগুলো রোজ দুবেলা যে জিনিসগুলো খায়, যেগুলো তাঁর ছোঁয়া পর্যন্ত বারণ, সেগুলো যে কত সুস্বাদু হতে পারে সেটা তাঁর মনেই ছিল না। কত বড় বঞ্চনাটা যে তাঁর সঙ্গে হচ্ছে সেটা জানতেন না বলেই হয়তো সেটা দিদিঠাকুমার পক্ষে সওয়া সম্ভব হয়েছিল। সবারই বোধহয় সেরকমই হয়।

আমার ঠাকুমা চোখ মুছে মাকে বললেন, “আমি কোনওদিনও তারে জানতে দিই নাই। সে মনে শান্তি নিয়া গ্যাসে। আজ এই তোমারে কইয়া আমার প্রায়শ্চিত্ত হইল।”

শেষ গল্পটা আমার মায়ের দিদিমার। দিদিমার নাম ছিল খুব সুন্দর, চারুশীলা। চারুশীলার সন্তানভাগ্য ঈর্ষা করার মতো ছিল। ছেলেগুলি সকলেই প্রতিষ্ঠিত, মেয়েগুলির সকলেই সৎপাত্রে পড়েছে। তাদের সকলেরই আবার ফুটফুটে ছেলেমেয়ে আছে। স্বামী ছেলেবউ মেয়েজামাই নাতিনাতনি নিয়ে চারুশীলার ভরা সংসার ছিল।

কিন্তু একটি জিনিস বারণ ছিল তাঁরও। মেয়ের বাড়িতে জলগ্রহণ। শুধু চারুশীলাই নয়, চারুশীলার স্বামীও জামাতাগৃহে জলগ্রহণ করতেন না। পুজোর জামাকাপড় কিংবা জামাইষষ্ঠীর আমকাঁঠাল নিয়ে মেয়ের বাড়িতে দেখা করতে এলে মায়ের দাদু রান্নাঘর থেকে একখানা গ্লাস চেয়ে নিয়ে আমার শিবু(ছোট)মামার হাতে দিয়ে বলতেন, “যাও তো শিবা, রাস্তার কল থিক্যা আমার লিগ্যা এক গেলাস জল আইন্যা দ্যাও তো।” শিবা অমনি গেলাস নিয়ে দাদুর আদেশ পালন করতে ছুটত।

দাদু তো একবেলা এসেই চলে যেতেন, চারুশীলার অত কমে মন ভরত না। মেয়ের কাছে, নাতিনাতনিপরিবৃত হয়ে ক’টা দিন কাটাতে ইচ্ছে করত তাঁর। দিন সাতেক কি পনেরো থাকার পর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে, নাতিনাতনির কপালে চুমু দিয়ে ফেরার সময় তিনি বলতেন, “দেখি, একখান খাতাপেনসিল আন এবার।” নাতিনাতনিরা রেডি হয়েই থাকত, সবাই মিলে দিদিমাকে ঘিরে ভিড় করে বসত। একজনের হাতে খাতাপেনসিল।

চারুশীলা বলতেন, “ল্যাখো, চাল পাঁচ সিকা...” অমনি রান্নাঘর থেকে আমার দিদিমা প্রতিবাদ করে বলতেন, “আঃ কী যে বল মা, অত চাল তুমি খাও নাই...” চারুশীলা বলতেন, “আমারে তুই শিখাবি?” নাতিনাতনিরাও সমস্বরে বলে উঠত, “না না দিদিমা, পাঁচ সিকা হয় নাই।” অনেক দরকষাকষির পর অবশেষে খাতায় একটাকা লেখা হত। এইরকম করে ডালের দাম, শাকের দাম, মাছের দাম, দুধের দাম---কড়ায়গণ্ডায় সব দাম মিটিয়ে চারুশীলা পরিতৃপ্ত চিত্তে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিতেন।

বউভাতের দিন দূর থেকে আমার মাকে খুব হেসে হেসে, ঘাড় নেড়ে কথা বলতে বলতে আইসক্রিম খেতে দেখে ওই চেঁচামেচির মধ্যেও আমার একঝলকের জন্য চারুশীলার কথা মনে পড়েছিল। কী ভাগ্যিস সময় থেমে থাকে না।


Comments

  1. Ki sanghatik golpo sonalen..sotti bhaba jayna..

    ReplyDelete
    Replies
    1. অথচ বেশিদিন পুরোনো ঘটনা নয় কিন্তু সৌমেশ। এই বছর পঞ্চাশ।

      Delete
  2. কুচোচিংড়ির গল্প-টা খুব মনখারাপ করা... সংস্কার আর কুসংস্কার যে আমাদের কোথায় আটকে রাখে ভাবাও যায় না!
    আমি এক ভীষণ বয়স্ক বিধবা বুড়ি দিদিমা-কে চিনতাম... সারা জীবন ওনার পুত্রবধুর সঙ্গে খিটপিট্ লেগেই ছিল, মৃত্যুর কিছুদিন আগে উনি সেই পুত্রবধুর কাছেই লুকিয়ে একটু মাংস খেতে চেয়েছিলেন... after 25 ইয়ার্স! ওনার বৌমা-ও সব্বাইকে লুকিয়ে ওনার শেষ ইচ্ছেটি পূরণ করেছিলেন... আমার জানার কথা নয়, যেমন করে জেনেছি সেটা একটা accident ... তবে সমাজের এই meaningless নিয়মগুলোর জন্য সেদিন প্রচন্ড ঘেন্না হয়েছিল...

    Water সিনেমা-তার কথাটাও মনে পড়ল!

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওয়াটার আমি দেখিনি, কেমন গো?

      Delete
    2. masterpiece nay, tabe bhalo, - mon kharap korano.

      Delete
    3. water dekhona... khub mon kharap hobe, manaswita thik i bolechhe.. ekhon tomar sukhe thakar somoy..6 months atleast no "water"... borong dukhho pete chaile "ashiqui 2" dekhe dukhho pao.. better.. :D

      Delete
    4. আশিকি ২ এর যা সব রিভিউ পড়ছি আর ট্রেলর দেখছি তাতে প্রভুত দুঃখ পাওয়ার ইচ্ছে না থাকলে ওটা দেখতে যাওয়ার চান্স নেই সোহিনী। তবে ওয়াটারও দেখব না, ভালো করেছ বলে।

      Delete
    5. gato haptay youtube-e 'Tobe tai hok'... 'Tinkonya'...'Hawabadol'...'Na Hanyate' porpor dekhe amar bangla cinemar opor thekei biswas utthe gachhe...don't they make good films in bengali anymore? Sadhu sabdhan, egulor aktao dekho na, taile barbar dekhte hobe (je karone tomar Hatath Nirar Jonye barbar dekhte hochchhe)

      Delete
    6. Bha..cinema nia alochona hochhe dekchi..@Kuntala Banerjee :matha chulke bhablam...apnar ekhun Cinderella Man dekha uchit..parle dekhben..

      Delete
    7. মনস্বিতা, সিরিয়াসলি। ইউটিউবে কিছু খারাপ খারাপ আধুনিক বাংলা সিনেমা আছে বটে। সেখানে ভীষণ স্মার্ট আর আধুনিক লোকেদের লাইফ ক্রাইসিস দেখানো হয়। আমি দেখি আর ভাবি, ভাগ্যিস আধুনিক বা স্মার্ট কোনওটাই নই। কী বিপদেই না পড়তাম।

      সৌমেশ, দেখেছি তো। ভীষণ কষ্টের, ভীষণ ভালো।

      Delete
    8. purota koshter kothay...seshta to khub e anonder...family values er best reflection bole amar mone hoy...tai apnake suggest korlam..

      Delete
    9. manaswita r oi 4 te cinemar list e "ami o amar girlfriends" tao add kore nite paro.

      Delete
    10. এরকম নামের সিনেমা বানিয়েছে? পুলিশে দেওয়া উচিত তো।

      Delete
  3. আমার মনে হল আমি একটা ফিল্ম দেখছি। লেখাটা মধ্যে ভিশুয়াল ব্যাপারটা খুব বেশি। খুব চেনা চরিত্র ,খুব চেনা ঘটনা । কষ্টের, সত্যি এবং মন খারাপ করা


    মিঠু

    ReplyDelete
    Replies
    1. চেনা তো হবেই মিঠু। এ তো ঘরে ঘরে ঘটত।

      Delete
  4. দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিনের দরগায় প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধেয় একটা কাওয়ালির অনুষ্ঠান হয়, চাইলে দেখে আসতে পারেন, খারাপ লাগবে না... অথেনটিক কাওয়ালি।
    মাস কয়েক আগে আমরা কয়েকজন কাওয়ালি দেখতে সেখানে গিয়েছিলাম, প্ল্যান ছিল আসার পথে করিমসে পেট পুরে খেয়ে দেয়ে আসব। তখন ধরুন সন্ধে সাতটা, কাওয়ালি তখনও শুরু হয়নি, আমরা বসে গল্পগুজব করছি, এমন সময় এক ভদ্রমহিলা উপযাচক হয়ে আমার বান্ধবী আর শ্যালিকাকে একটা উপদেশ দিয়ে গেলেন। কি সেই উপদেশ?

    ইয়ে প্যান্টশার্ট হারাম হ্যায়, দরগা পে আগলিবার আও তো বুরখা পেহেনকে আনা।
    বলাই বাহুল্য, মহিলা নিজে বুরখা পরেই ছিলেন।

    যাদেরকে উপদেশ দেওয়া, তারা খুব হাসাহাসি করল, আর আমার মাথায় একটা প্রশ্নের উদয় হল... ভদ্রমহিলা কি খুব কষ্টে আছেন? তিনি কি নিজেকে শোষিত বলে মনে করেন?

    স্থানকালপাত্র বিশেষে মানবচরিত্র বদলে যায়। ঠাকুর রামকৃষ্ণ, যিনি "যত মত তত পথ" বলতেন, তিনি অবধি লাটু খাট ধরে দাঁড়ালে খেতেন না। এটা হিপোক্রিসি নয়, এটা হল লোকাচার, ছেলেবেলা থেকে ব্রেন ওয়াশিং-এর ফল। সময়ের সাথে মানুষ পালটাবে, রীতিনীতিও পালটে যাবে, আর তখনই আমরা বলব যুগ পাল্টেছে, জমানা বদল গিয়া। লিটল ডু উই নো, যে জমানা বদলায় না, বদলায় মানুষ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. নিজামুদ্দিনের কাওয়ালি আমিও শুনতে গিয়েছিলাম দেবাশিস। জিন্‌স্‌ পরে যাইনি, সালোয়ার কামিজ পরেই গিয়েছিলাম এবং আশপাশ থেকে হুমকি শুনতে হয়েছিল যে এটা বেড়াতে আসার জায়গা নয়, মাথা ঢাকা নেই কেন। এবং এই হুমকি অন্তত পাঁচজন পুরুষ দিয়েছিলেন। মহিলারা ইন ফ্যাক্ট কিছুই বলেননি। আমার মনে হয় এখানে কষ্টে থাকা বা নিজেকে শোষিত মনে করার থেকেও সমাজের হর্তাকর্তানিয়ন্তা মনে করার ব্যাপারটা বেশি কাজ করা। চান্স পেলেই গার্জেনগিরি করার প্রবণতা আসলে আমাদের এত ভেতরের।

      Delete
  5. didithakumar galpota ki dukhyer

    ReplyDelete
    Replies
    1. lekhata satyii akdom chabir moto hoyeche

      Delete
    2. থ্যাংক ইউ তিন্নি।

      Delete
  6. Didithakumar golpota definietly dukkher kintu uni je jinishta oto din khan ni, seta kahoar jonyo ki onar mon anchaan korchilo adou ?

    Amra Bangali ra non-veg khaoa niye bhishon tulkalam kori, kintu vegetarian ra to maach-mangsho miss kore bole mone hoy na. Didithakumar situation e, uni swa-icchey jodi chere thaken tahole to ar problem nei, hyaan jor kore hoyto charte hoechilo onar shomoy kal e. Seta definitely kosther, kintu in that case, porer dike ki onake are keu jor kore ni khete ? Did she herself refuse then ? Kucho chingri diye gor gore jhaal bhalo kintu jhaal jhaal dhokar dalna, borar jhal ei shob i ba kharap kiser ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. বং মম, আমি যদিও প্রমাণ দেখাতে পারব না, কিন্তু আমার খুব জোর ধারণা যে দিদিঠাকুমার কেসটা অরুচি থেকে মাছমাংস ছেড়ে দেওয়ার নয়। এটা শখ করে ভেজিটেরিয়ান হয়ে যাওয়া বা শুক্রবার শুক্রবার সন্তোষী মা করি বলে টক খাই না গোছের নয়। এটা সিমপ্লি থান পরিয়ে, মাথার চুল কদমছাঁট করে দেওয়ার।

      আর লজ্জার ব্যাপারটা হল, আমাদের সেকেলে বাড়িতে ১৯৭৭ সালে সত্যিই কেউ দিদিঠাকুমাকে মাছমাংস আবার শুরু করার জন্য জোরজার করেনি।

      আপনি যে সব বাঙালির কথা বলছেন, যাঁরা ভেজিটেরিয়ানরা আবার মানুষ নাকি, বলে ভাবেন অসম্ভব ভাল সেন্স অফ হিউমারের পরিচয় দেওয়া গেল, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁদের দূরদূরান্তের কোনও সম্পর্ক নেই। আর ঝালঝাল ধোঁকার ডালনা খারাপ হতে যাবে কেন বালাই ষাট, কিন্তু সেটা চিংড়ির ঝালের থেকে ভালো না খারাপ সেটা ঠিক করার অধিকার আমার থাকা উচিত। আমার দিদিঠাকুমার সে অধিকার ছিল না।

      Delete
    2. tachara shei juge eto mogoj dholai kora hoto (ei shob achar niye, anya form e mogoj dholai ekhono cholce :)
      je anekei shei chintadhara ta paar kore kichu korte parten na.

      aamar ek jethidida chilen....khub bidushi mohila..tini bolten...orre shob i to buzi, ei shob achar bizar shob ze kono kamer na, seta ki aar buzi na...kintu mogojer modhyya emon kore dhukaya dise ze zchaileo baar koirte pari na!!!

      Delete
    3. সে তো বটেই শম্পা। যদিও ব্যাপারটা আদতে জোর করে করানো কিন্তু বেশিরভাগ লোকেই তো শয়তানির কথাটা ভুলে গিয়ে নিয়মটাকে শুধু নিয়ম বলেই দেখে। যেমন আমার ঠাকুমা।

      Delete
  7. Replies
    1. সিরিয়াসলি ইচ্ছাডানা।

      Delete
  8. হুম্‌ ...

    তিনটে মন ভাল করা পোস্টের পর এটা পড়ে আর সঙ্গে নিজামুদ্দিনের কাওয়ালির গল্প শুনে খুব @#&* জ্বলল- সরি, এর থেকে ভদ্র করে না লিখতে পারার জন্য। লেখা নিয়ে কিছু বলার নেই, যা রেঞ্জ এ লিখছেন- আপনার এক্ষুনি বই বেরনো দরকার- আমি নিজে সে বই লোককে ডেকে পড়াবো... কিন্তু বিষয়টা(অবশ্যই আপনার ইচ্ছাকৃত) এমন- এইরকম লেখা কমবয়সে পড়লে মনটা খারাপ হয়ে যেত, করুণা-অপরাধবোধ-অপারগতা মিশে একটা ঝিমুনি ধরতো; এখন রাগ হয়। সত্যিই ঠাকুমা দিদিমাদের বদলানো যায় না- ওঁরা নিজেরাও বোঝেন যে যা হচ্ছে, সেখানে বিস্তর গোলমাল আছে- তাই নিজের সন্তানের ক্ষেত্রে অন্যরকম হলেই খুশি হন- কিন্তু তবু বদলানো যায় না...
    অথচ,
    ভামকৃষ্ণ লাটুর খাট ধরে দাঁড়ালে না খেলে বা নিজামে হিজাব না পরে গেলে লোকের বিরক্তি হলে(হিজাব আর পিসাব - কিসের যেন একটা মিল আছে, ছন্দের বোধহয়, না?) সেটা লোকাচার হতেই পারে, কিন্তু গায়ে পড়ে 'এইটে হারাম' বলা বা পাশ থেকে হুমকি দেওয়া ঠিক কি রকমের 'আচার' (আমের নয়, আমি নিশ্চিত- ওটা খেতে ভাল) আমার জানা নেই।
    জমানা বদলায় না- কিছু লোক এগিয়ে ভাবতে থাকে, বোঝে যে যেটা হচ্ছে সেটা ফালতু, গাধামো; কিছু অপোগণ্ড নিজেরাও পিছিয়ে থাকে, সঙ্গে বাকিদের পিছনে টানার চেষ্টা করে; আর মাঝের গড্ডল এগিয়ে থাকাদের অল্প অনুকরণ করে আর পিছিয়ে থাকাদের বেদম ভয় পেয়ে ভাব দেখায়- বিরাট প্রগতিশীলতা দেখালুম! - এই হল গিয়ে 'জমানা'
    বদলায় তারাই, যারা ওই মাঝখানে থাকে। ভাগ্যিস বিবেচনা ব্যাপারটা গণতান্ত্রিক নয়, তাহলেই হয়েছিল আর কি!

    ReplyDelete
    Replies
    1. রাগ হওয়ারই কথা সুনন্দ।

      Delete
  9. tomar maa er didima'r ghotona ta je bolle eta shudhu bangadesh ei noy uttar bharat eo hoy shunechi. setake eriye cholar janne UP/bihar e lokjon meye'r barite bhaat khay na...ruti/puri etyadi khay. aami ekbar amar ek bandhabi'r barite tar didima ke pani phal er atta's luchi khete dekhechilam.....pore janlam je uni bhaat ruti dutoi khaan na, tai luchi ba "paniphal atta" puri khan!

    ReplyDelete
    Replies
    1. তাই নাকি? তবে সেটা আন্দাজ করা যায়, নিয়মকানুন বাধানিষেধের ব্যাপারটা তো সময় সমাজ দেশ কালের বেড়া ডিঙিয়ে থেকে যায়। একটা আরেকটার থেকে কতই বা আলাদা হবে।

      Delete
  10. আমি ক'দিন আগে এক পরিচিত বাড়িতে গেছি। শনিবারের দুপুর। আড্ডা সেরে ওঠার আগে জেঠিমাকে বোললাম "আজ কি শনিবারের খাদ্য না কি তোমাদের বাড়িতে কোনো নিয়ম নেই?" তিনি জবাব কোরলেন "আমার তো এত বছর এক ই খাবার - শনি-রবি কিছু আলাদা নেই"। শুনে ব্যোমকে গেলেও কিছু বলার নেই।

    আসলে, এই ক্ষেত্রে চিন্তা করার সুযোগ দিতে নেই কাউকে। শুধু execute কোরে দিতে হয় প্রথম সুযোগেই। গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছো কি, নানা নিয়মের বেড়াজাল ঘিরে দেবে চারপাশ থেকে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা আমি একেবারে অক্ষরেঅক্ষরে বিশ্বাস করি কৌশিক। একেবারে শুরুর রাত্তিরে নিয়মের বিল্লি জবাই করতে হয়। মানে যদি করার ইচ্ছে থাকে। না হলেই হয়েছে আরকি।

      Delete
  11. Eita pore amar jethu, baba, pisider jonye khub gorbo holo :-) 1964 e amar thakurda cancer e mara jawar pore sobai machh mangsho chhere niramish dhorechhilo shudhu thakumake machh na chharanor jonye. Puro 6 months lorai chalanor pore thakuma chhele meyeder niramish bondho korar jonye machh mukhe tulechhilen. Sei theke chole aschhe.

    Manidipa

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঃ এটা কিন্তু সত্যিই গর্ব করার মতোই বিষয় মণিদীপা। অতদিন আগে তোমার বাড়ির লোক যে অতখানি উদারমনস্কতা দেখিয়েছিলেন, এটা সত্যিই বিরল।

      Delete
  12. tomar thakumar tomar maa-er kachhe prayoschitto korar galpota mon chhue gelo. Amader bareeteo eki jinis dekhechhi chhotobelay. amar thakuma-o ekadoshi ambubachi ityadi manten. ebong niramish amish-er alada bason alada unon/gas ityadi sab chhilo. amar ekhono majhe majhe abak lage amra ato chhoto bayesheo ki kore niramish amisher alada basoner byaparta bujhtam! thakuma mara gechhen 22 bachhor age, tarpor theke bareete alada basoner paat ta uthe gechhe. kintu ekhono ekta niramish batite machh neoar age ektu thomke jai!
    Amar jethima-o 33 bachhor dhore esab mene aschhen. Amar maa majhe majhei eta nie gandogol kore. Jethimar chhele meyeder bokaboki kore. Jethima-ro je khub amot achhe bole mone to hoina. Kintu baree shuddhu karoi jeno sahos nei first step ta neoar. Ar anek somoi amar etao mone hoyechhe jeno chhele meyera eta bhebe ananda pai je amader babar jonno amar maa esab korchhe. ei niom nisthar moddhe je ekta manusher smriti atke thakena seta keu bhabe na.
    Aro ekta byapar amar mone hoi, bangali ginnider kachhe ekta bishal satisfaction bodh hoi eta je maa/shashurir niom palone ami chirokal sahajjo kore esechhi. Ami niramish amish durakom achar asubidhe satteo mene esechhi onar katha bhebe! Amar maa keo ami anek garbo kore bolte shunechhi je thakuma ke protyek ekadoshi te maa special khabar kore diechhe, raate thakumar priyo rasogolla durer dokan theke ene diechhe. Amra chhotobelay sab somoi jantam thakuma-r khabar tai priority. tate jodi jhaler jonno amra chhotora na khete pari to kichhu jai ase na. Thakumar proti asombhab bhalobasa ar sroddha amar maa, jethima, kakimader chhilo. kintu bhalobasa ta niom palone help koratei atke chhilo, maa bole maar amish prosongo utthapon korari sahos chhilo na.
    Ekta chhoto galpo die sesh kori. Amar mami alpo bayeshe duti chhele nie bidhoba hoyechhilen. Sraddher porer din onar bareete gie atmioswajon ra dekhechhilo je uni chheleder nie table-e bose dimer jhol die bhat khachhen. Seta nie chhichhikkar pore gechhilo. oi prothom rate beral marar sahoser katha hochhilo na, ei mamir sei sahos ta chhilo. ebong bodh hoi sei jonnoi joint family-te theke duti chhoto chhoto chhele nie niramish ranna gharer janta kale peshai na hoye, sathik bhabe chheleder baro korte perechhen ebong matha unchu kore achhen.

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমার কমেন্টটা আমার অভিজ্ঞতা ছবির মতো তুলে এনেছে রুচিরা। এই এত দিন বাড়ির বাইরে আছি, আমিষনিরামিষের ধার ধারি না, তবু বাড়িতে গেলে থালাবাটি হাতে নিলেই মাথার ভেতর একটা সুইচ অন হয়ে যায়। এটায় আমিষ নেওয়া যাবে তো?

      তোমার মামিমার কথা শুনে খুব ভালো লাগল। সবাই যদি এরকম হতে পারতাম।

      Delete
  13. ei blog er post aar comments theke koto ghotona koto golpo jana jay. satyi eto bhalo laglo ei pot ta ebong commentator der goppo gulo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. কমেন্টের সত্যি তুলনা নেই শম্পা। এই জন্যই অবান্তরকে আমি এত ভালোবাসি।

      Delete
  14. "কী বলছ বৌমা? বামুনের বিধবা আমি, আমিষ খাব? তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে?" - আমার ঠাকুমা।

    ReplyDelete
  15. Asadhaaron mon chhnuye jaoa lekha... ager sei Parlour er lekhar pore ei lekha ta tomar lekhar puro range ta dekhachhe! Darun!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ তপোব্রত।

      Delete
  16. Kintu ki janen Abhishek nati natni-ra (at least jara college porua tara, bachchader baad dichchi) jodi aar kore dhore porto je thamma na khele amrao keu khabo na ebong seta sotyi sotyi korto tahole "brahmon er bidhoba" je mone mone khub akhushi hoten ta hoyto na, mukhe jai bolun na keno. Asole onader to mogoj dholai kore sommanhani-r bhoyta dhuke gechhe, tai hoyto anyo keu amake jor korchhe ei abolombon ta pele bhalo hoy. Anyway eta ekantoi amar motamot, please bhul bujhben na.

    manidipa

    ReplyDelete
  17. kuntala tomar lekha pore amar nabanita debsen er lekhar kotha mone asche..koto kothin kothao tumi ki sundor kore bolte paro.Amar thakuma r ranna ghor o alada..main ranna ghore onar ranna hoy ar amar maa garage e ranna koren.niyom -achar esob to achei echara amar thakuma dadu (thakurda )beche thaktei sorrier jonnyo mach chere diyechilen.tokhon onar 40yrs.ekhon 84 bochor..ebhabei cholche..

    ReplyDelete

Post a Comment