ভূতের সঙ্গে রেস



কাল অফিস থেকে ফিরে বইয়ের বাক্সদুটো নিয়ে বসেছিলাম। একজন বাক্স থেকে বই তুলে ন্যাকড়া দিয়ে ঝেড়ে আরেকজনের হাতে দিচ্ছিল, আরেকজন সেটা বুককেসে গুছিয়ে রাখছিল। সোজা কাজ, কিন্তু অসম্ভব সময় লাগে। ঝাড়তে গেলেই পড়তে হয়, পড়তে গেলেই পড়ে শোনাতে হয়। একটা বই হাতে নিয়ে সবে ন্যাকড়া শূন্যে তুলেছি, সপাটে সেটা বইয়ের ওপর নামিয়ে আনব বলে, এমন সময় বসার ঘরের দরজাটা খুব ধীরে খুলে গেল।

ক্যাঁচ না কোঁচ না, জাস্ট খুলে গেল। পুরো ভেজানো অবস্থা থেকে একেবারে হাট। আমরা দুজনে দুটো মোড়ায় কাঠ হয়ে বসে রইলাম। কয়েক সেকেন্ড পরে ঢোঁক গিলে একজন জিজ্ঞাসা করল,  

-দরজা বন্ধ করনি?

-প্রথম কথা, ঘরে ঢোকার সময় তুমি আমার পেছনে ছিলে, কাজেই দরজা তোমার বন্ধ করার কথা। আমার নয়। আর দ্বিতীয় এবং সবথেকে ইম্পরট্যান্ট কথাটা হল, দরজা বন্ধ করে কি ওঁদের আটকানো যায়?

এই না বলে হাতে ধরা বইটার দিকে তাকিয়ে দেখি সেটা লীলা মজুমদারের ভূতের গল্পসমগ্র। মলাট উল্টে দেখি ভূমিকায় লীলা দুঃখ করেছেন, আজকাল লোকে ভগবানকেই মানে না, ভূত বেচারার কথা তো ছেড়েই দাও

মানতে পারলাম না। ভগবানে আমার বিশেষ ভরসা নেই, কিন্তু তাই বলে ভূত? ভূতের থেকে সত্যি ব্যাপার পৃথিবীতে আর হয় নাকি? যখন সত্যভারতী শিশুতীর্থে টিনের সুটকেস হাতে নিয়ে পড়তে যেতাম সেই সময় থেকেই আমি জানি যে ভূত বলে আসলে সত্যিই কিছু আছে। আমার সমস্ত ক্লাসমেটই জানত। আমাদের স্কুলে সেই আমলেও মিড-ডে মিলের চল ছিল। ভাত রুটি তরকারি নয়, তার থেকে ঢের ভালো জিনিস। মুড়ি চানাচুর, চিঁড়ের পোলাও, কোনওদিন দুধ মিল্কবিকিসসেই সব খেয়েদেয়ে বারান্দার কড়িকাঠ থেকে ঝোলানো কাঠের দোলনায় বসে পা দোলাতে দোলাতে আমরা পৃথিবীর যত জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম। বাস বেশি জোরে যায় না ট্যাক্সি। মা বেশি ভালো না অঞ্জলি দিদিমণি। কিন্তু ভূতের থাকা না-থাকা নিয়ে কারোরই কোনও সন্দেহ ছিল না।

-ছুটির দিন দুপুরবেলা একটা হাওয়া দেয় দেখিস নি? চারদিক চুপচাপ হয়ে যায়, গাছের পাতাগুলো কীরকম খস্‌খস্‌ করে ওড়ে, পাজি শালিখগুলো কোথায় হাওয়া হয়ে যায় আর টিকিটি দেখা যায় না। আমাদের টফি পর্যন্ত বারান্দার এককোণে ভয় পেয়ে ল্যাজ গুটিয়ে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে।

আরও প্রমাণ চাই?

যে যাই দাবি করুক না কেন, একেবারে ভূতের ভয় নেই এমন লোক আমি দেখিনি। বান্টি পর্যন্ত ‘লেট দ্য রাইট ওয়ান ইন’ দেখতে বসে একটা সিনে আমার জামার হাতা খিমচে ধরেছিল। ওই যে ওই সিনটা, যেখানে বাচ্চা মেয়েটা আর কোনওভাবে বিল্ডিং-এ ঢোকার রাস্তা না পেয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে হঠাৎ বাড়ির গায়ে লাগানো পাইপ বেয়ে উঠতে শুরু করে দিল? গভীর রাত, সাপের মতো এলিয়ে থাকা পিচরাস্তায় শুধু একখানা ল্যাম্পপোস্টের আলো পড়ে আছে। আর সেই আধো আলো আধো ছায়ায় একটা শরীর পাইপ বেয়ে উঠছে। ধীরে, কিন্তু অনায়াসে। মনে পড়লে ভরদুপুরেও ঘাড়ের রোঁয়া খাড়া হয়ে যায়।

বান্টি শুনলে লাফাবে, কিন্তু আমি সত্যি বিশ্বাস করি ভূতের সিনেমা দেখে ভয় পাওয়ায় লজ্জার কিছু নেই। ভূতকে ভয় পাই না, বিষাক্ত সাপের সঙ্গে একবাক্সে বাস করতে পারি, পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল লংকা বাতাসার মতো চিবিয়ে খেতে পারি, গায়ে দাউদাউ আগুন লাগিয়ে এদিকসেদিক এলোপাথাড়ি ছুটোছুটি করতে পারি---এসব পারায় গর্ব করার মতো কী আছে কে জানে। সুস্থ মানুষ হলে অন্তত নেই। এম টিভি রোডিস্‌ হলে অবশ্য আলাদা কথা।

আমার মত হচ্ছে, ভূতে ভয় কমবেশি সবাই পায়। কেউ সেটা বুদ্ধিমানের মতো লুকিয়ে রাখতে পারে, যেমন আমি। আর কেউ সেটা বোকার মতো প্রকাশ করে ফেলে, যেমন বান্টি। ব্যস্‌, এইটুকুই যা তফাৎ।

এই কথাটা বললাম যখন, দিদিমণি আমাকে হাইফাইভ দিলেন। দিদিমণি হচ্ছেন বিবাহসূত্রে প্রাপ্ত আমার এক তুতো দিদা। খোলসা করে বললে, আমার শাশুড়িমায়ের পিসি। 

দিদিমণির অসাধারণ সাহস। ভরদুপুরে সল্টলেকের খাঁখাঁ রাস্তায় তিনি এক ব্যাটা হারচোরের কলার এমনি চেপে ধরেছিলেন যে সে পালাতে পথ পায়নি। সেই দিদিমণিও যখন জোরগলায় স্বীকার করলেন যে তিনি ভূতকে ভয় পান তখন আমরা সবাই হেসে বললাম,

-হ্যাঃ।

-আরে সত্যি। ওই মাথায় গোবরপোরা ছিনতাইবাজকে কাবু করাটা কোনও ব্যাপারই না, পাঁচবছরের শিশুও পারবে। সত্যি বলছি, আমি চোরদের বস্‌ হলে ও অপোগণ্ডের চাকরি থাকত না। ফাঁকা রাস্তায় একটা বেতো বুড়ির হার ছিনতাই করতে পারে না, আবার গেছে গুণ্ডা হতে। ছোঃ।

এত বছর বাদেও চোরের অপদার্থতার কথা মনে পড়ে দিদিমণি উত্তেজিত হয়ে পড়লেন।

-কিন্তু ভূতের সঙ্গে কোনও চালাকি চলবে না। ওদের অসম্ভব বুদ্ধি। বাস থেকে নেমে আলোঝলমল রাস্তাটা ধরে দিব্যি বুক ফুলিয়ে আসবে যখন তখন কেউ তোমাকে কিচ্ছুটি বলবে না, যেই না গলির ভেতর ঢুকবে, অমনি এদিকওদিক অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে তোমার ঘাড়ে ফুঁ দেবে।

-ঠিক বলেছেন দিদিমণি। আবার রসবোধও প্রখর। ফুঁ দেবে আর বলবে, এই আমি ঠিক তোর পেছনেই আছি, তাকা, তাকা না। আঃ তাকাই না একবার। আপনি বাধ্য মেয়ের মতো যেই না পেছনে তাকাবেন, অমনি দেখবেন কোত্থাও কিচ্ছু নেই, শুধু তালতাল অন্ধকার জমাট বেঁধে পড়ে আছে।

-এক্স্যাক্টলি। তখন আর তোমার কিছু করার আছে বল? গলা ফাটিয়ে রামনাম করতে করতে বাড়ি পর্যন্ত বাকি রাস্তাটা বেদম ছুটে পার হওয়া ছাড়া?

সত্যিই নেই। ঘরশুদ্ধু সকলে একমত হল। দিদিমণির গল্পের মুড এসে গেছে। তিনি বললেন,

-আরেকটা ডেঞ্জারাস জায়গা হচ্ছে খাটের তলা।

আমি একেবারে ছাদের সমান লাফ দিয়ে পড়লাম।

-ডেঞ্জারাস বলে ডেঞ্জারাস? আমি তো ছোটবেলায় হেমেন্দ্র রায়ের ভৌতিক গল্প নিয়ে খাটের ওপর উঠতাম, কিন্তু বই শেষ হলে আর নামতে পারতাম না। নামতে যাব, অমনি খাটের তলা থেকে একখানা লিকলিকে কালো হাত বেরিয়ে এসে পা টেনে ধরবে। ধরবেই। গ্যারান্টি। আমি খাটে বসেই “মা মা” বলে চিৎকার করতাম। মা গ্যাসে বসানো দুধ ফেলে এসে আমাকে কোলে করে নামিয়ে নিয়ে যেতেন।

দিদিমণি গম্ভীর হয়ে থাকেন।

-সে বাছা তোমাদের মাবাবার তোমরা একটি করে সন্তান, যখনতখন তোমাদের খাট থেকে কোলে করে নামানোর সময় ছিল তাঁদেরআমরা দশ-বারোখানা করে ছিলাম, নিজেদের প্রোটেকশনের ব্যবস্থা নিজেদেরকেই করে নিতে হত আমাদের।

প্রোটেকশনটা কী রকম? থিওরিটা সোজা, কিন্তু বাস্তবে পরিণত করতে গেলে রীতিমতো ফিট্‌নেস দরকার। দিদিমণি সন্তর্পণে খাটের থেকে হাতখানেক দূরে এসে পা জোড়া করে দাঁড়াতেন। তারপর ঝুঁকে পড়ে দুই হাত বিছানার ওপর রেখে, তাদের ওপর শরীরের সমস্ত ভার ন্যস্ত করে “হুপ্‌” বলে দুই পা একসঙ্গে মাটি থেকে তুলে এনে ধপ্‌ করে খাটের ওপর চড়ে বসতেন। নে হতচ্ছাড়া ভূত, ঠ্যাং ধরে কত টানবি টান।

দিদিমণির যে সব ছোটছোট অবোধ ভাইবোন ছিল তারা তো আসল কারণটা জানত না। দিদিকে দেখে তাঁরা ভাবল এটা বোধহয় কোনও মজার খেলাটেলা হবে। ব্যস্‌ আর যায় কোথায়। সবাই পালেপালে এসে হুপ্‌হাপ্‌ ধুপ্‌ধাপ্‌ শুরু করে দিল। শেষে গোলযোগটা এত বেশি হল যে দিদিমণির মা রান্নাঘর থেকে হাতাখুন্তি ফেলে দৌড়ে এলেন। খেলার শুরু কে করেছে এই প্রশ্নের উত্তরে সকলে দিদিমণির দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে বলল, “দিদি।”

দিদিমণির মা দিদিমণির দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললেন,

-আজ বাদে কাল শ্বশুরবাড়ি যাবে, এখনও বাঁদরামো গেল না তোমার? শান্ত হয়ে পা টিপেটিপে চলা অভ্যেস কর, না হলে লোকে বলবে কী?

দিদিমণি গোঁজ হয়ে ভাইবোনের সামনে মায়ের বকুনি এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বার করে দিলেন। বললেই হল? তিনি পা টিপে টিপে চলুন আর ভূতে এসে তাঁর ঘাড় মটকাক আরকি। তখন যে কোনও শ্বশুরবাড়ির লোক তাঁকে বাঁচাতে আসবে না, বুদ্ধিমান দিদিমণি সেটা হাড়েহাড়ে জানতেন।

দিদিমণি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

-তাই বলে ভেব না, এতদিন যে ভূতের হাত বাঁচিয়ে বেঁচেবর্তে আছি তাতে আমার কোনও কৃতিত্ব আছে। আমার হাতে কোনওদিনও কিছু ছিল না। সবই ওদের দয়া। আমার ঘাড়টা মনে ধরেনি, মটকায়নি। ব্যস্‌। মনে ধরলে, হাজার লাফালাফিতেও কাজে দিত না।

আমরা দিদিমণিকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম।

-না না, এমন কেন বলছেন। আপনি কত বুদ্ধি খাটিয়েছেন, কত দৌড়োদৌড়ি ঝাঁপাঝাপি পরিশ্রম করেছেন, সেগুলো কি একটুও কাজে লাগেনি? এটা কি হতে পারে?

দিদিমণি বললেন ওঁরও সেইটাই আশা ছিল। কঠোর পরিশ্রম করে ভূতকে হারাবেন। কিন্তু একদিন ওঁর এক দাদু সে ভুল ভেঙে দিলেন।

রাতে খাওয়ার পর হ্যারিকেন নিয়ে কলতলায় সবাই মিলে হাত ধুতে যাওয়া হয়েছিল। সবাই মানে ভাইবোনেরা সবাই। সকলেই ঠ্যালাঠেলি করে কোনওমতে হাত ধুয়ে না ধুয়ে লাফ মেরে ঘরে ঢুকে গেল। পেছনে পড়ে রইল কেবল হ্যারিকেন আর আমাদের দিদিমণি। মেঘের ফাঁক দিয়ে ছেঁড়াছেঁড়া চাঁদের আলো এসে কলতলার বাঁধানো চাতালে পড়েছিল। কলতলার ঠিক গায়েই ছিল এক মস্ত ঝাঁকড়া আশশ্যাওড়া গাছ। জ্যোৎস্না যেই না সেই শ্যাওড়া গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে ফিল্টার হয়ে এসে চাতালে পড়ল অমনি দিদিমণি খালি চোখে স্পষ্ট দেখলেন চাতালের ওপর একটা জলজ্যান্ত ভূতের মুখ।

হ্যারিকেনের মায়া ভুলে দিদিমণি ছুটলেন। কী ছোটাটাই না ছুটলেন। প্রাণের ভয় জীবনে দু-একবারই পায় মানুষ, দিদিমণির ছিল সেটাই প্রথমবার। মুখে ফেনা উঠে গেল, হৃৎপিণ্ড প্রায় বুক ফেটে বেরিয়ে এল এল। শেষে যখন চাতাল পেরিয়ে রান্নাঘরের দরজায় উপস্থিত হলে দিদিমণি, দাদুর সঙ্গে লাগল এক রামধাক্কা।

দাদু গম্ভীর গলায় বললেন,

-এত ছোটার কী হল?

দিদিমণি মুখ নিচু করে রইলেন। জানতেন আসল কারণটা বলে লাভ নেই। বড়রা ভূত ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নেয়নি কখনও, নেবেও না।

দাদু একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,

-ভূতে তাড়া করেছিল বুঝি?

দিদিমণি চমকে মুখ তুললেন। দাদু বুঝতে পেরে গেছে! তাড়াতাড়ি ওপর নিচে ঘাড় নেড়ে বললেন,

-করেছিল তো।

-কিন্তু তুমি ছুটলে কেন? কীসে তোমার মনে হল যে ভূত তোমার থেকে আস্তে দৌড়য়?

দিদিমণির কাছে নিমেষে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। তাই তো! ভূতকে তিনি দৌড়ে হারাননি, কেউই ভূতকে দৌড়ে হারাতে পারে না। সেটা সম্ভবই নয়। “যাহ্‌ এবারের মতো ছেড়ে দিলাম” বলে ভূতই আসলে তাঁকে জিতিয়ে দিয়েছে।

সেই থেকে দিদিমণি ভূতকে শ্রদ্ধাভক্তি করে আসছেন, যাতে ভূতের নেকনজর চিরদিন তাঁর ওপর বর্তমান থাকে, আর চিরদিন তিনি দৌড়ে ভূতকে হারিয়ে দিতে পারেন।

Comments

  1. Khub bhalo laglo pore. Amio puropuri bhute bishwasi. Khaater tola ta ke to ami chhotobela thekei avoid kore esechhi. E deshe ese prothom je baritay thaktam sekhane dekhlam kather sinri diye kara sob adrishyo paaye cholafera kore, tader payer awaj spashto moch moch kore shona jaay. Kichhu loke bolechhilo aboshyo ota kaather koma-barar shabdo, kintu amar thik bishwas hoyni. apni ki bolen?

    ReplyDelete
    Replies
    1. কাঠের কী প্রাণ আছে যে সে কমবে বাড়বে? এই সায়েন্সের যুগে বসে লোকে এত বোকা বোকা কথা বলে না, শুনলে মেজাজ খাট্টা হয়ে যায়। পরিষ্কার দেখছি ভূত, বলে কি না কাঠ। জঘন্য।

      Delete
    2. আর তাছাড়া বিপ্লবদা তো ফিজিক্সের ফান্ডা দিয়ে ভূতের ব্যাপারটা জাস্টিফাই করেই ফেলেছে ...

      Delete
    3. আরে পড়াশোনা করবে না, এদিকে ভাব দেখাবে সব জেনে বসে আছে।

      Delete
  2. Mon bhalo hoye gelo lekha ta pore. ami oboshyo bhuter thekeo manush ke beshi bhoy pai. na na rhetorically bolchi na, sotyi e. ei katha ta toh sotyi j onara mone korechen j amar ghar motkabar dorkar nei, tai motkanni. tate proman holo kina j bhut manusher cheye beshi rational? tobe onader niye beshi alochona kora uchit na. onara khushi hoye amar kushol-songbad nite eleo ami heartfail korbo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা কিন্তু আমার মাথাতেই আসেনি টিনা। ওঁদের নিয়ে এত কথাবার্তা বলছি, খুশি হয়ে হাইহ্যালো বলতে এলেই তো গেছি।

      Delete
  3. 'যখন সত্যভারতী শিশুতীর্থে টিনের সুটকেস হাতে নিয়ে পড়তে যেতাম' -- ai line ta pore 2 minute chup kore bhebechi janen..just muche gechilo amar smriti gulo..chorang kore current marar moto mone koria dilo..amar o sai tiner baksho sombolito chottobelar 'iskuler' smriti..aijonno apnar lekha porte eto bhalo lage..high five!!

    r roilo pore bhuter bhoy...o ami boraborer bhitur dim..khub sontorpone sokol prokar bhuter cinema/boi/serial/documentary/rasta/bari eria choli..talash dekhe bari firte obostha tight hoye gechilo!!abar bole kina লেট দ্য রাইট ওয়ান ইন.. hey hey :)

    sobar bhuter obhiggota janar jonno bose roilam..

    ReplyDelete
    Replies
    1. ও মা, আপনারও সুটকেস ছিল একটা? আমার সুটকেসটার গল্প হচ্ছে যে আমার মায়ের ছোটবেলা স্কুলের বই নেওয়ার ব্যাগ ছিল না। উদ্বাস্তু পরিবারের অষ্টম সন্তান, থাকার আশা করাই অন্যায়। সেই জমানায় টিনের সুটকেস ছিল একটা মহার্ঘ ব্যাপার। বড়লোকের মেয়েরা তাতে করে বইখাতা নিয়ে আসত। মা'র খুব ইচ্ছে করত যে মা'ও ও রকম একটা সুটকেস নিয়ে স্কুলে যায়, কিন্তু এই কথাটা যে দাদুদিদিমাকে বলতে নেই সেটাও জানত।

      আমি নার্সারি তে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ইউনিফর্ম বানানোরও আগে মা আমার জন্য একটা টিনের সুটকেস কিনে এনেছিলেন।

      Delete
  4. ekbar ratre amra ekta ajana raasta diye drive kore ashchilam, trisimanay keu nei...ota ekta astronomy observatory area...sekhane 6 tar por keu thake na/kono traffic o dekha jay na. aami raastay sposto deklam ekta buri kalo jama pore dnariye achey, abak hoye abar jakhon phire takalam deklam je takey aar dekha jachhe na. porer din janlam je oi raasta tar pashe anek gulo kobor achey from 18-19 century :)
    tobe east india company'r ek saheb er lekha ekta boi porechilam sipahi bidroher samay lekha...uni ekta choto fort e thakten....jakhon engrej harchey aar meerut/jhansi te maar khachhe shei samay roj ratre tini mughal badshah der bhut dekhte peten :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. বস্‌স্‌, তোমার অভিজ্ঞতাটা কী ভয়ংকর শম্পা। আমার সিরিয়াসলি শিরদাঁড়াটা কেমন করে উঠল। আমি হলে গাড়ির মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যেতাম। বাবা রে।

      আমিরওমরাহ বাদশাবেগমদের ভূত দেখতে পাওয়াটা, অন দ্য আদার হ্যান্ড, বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে।

      Delete
    2. Tollygunge Golf Club elaka-e ekta cemetery chilo..tar kichu ongsho r parsoborti jomi nia besh koyek bochor age besh kichu apartment toiri hoyechilo..kono ojana karon-e aaj o sai flat bariguli sari sari faka daria ache..kao sekhane bosobash kore na..

      Delete
    3. This comment has been removed by the author.

      Delete
    4. ore baba!!eta ki bollen!! ami bahubar ratribela oi cemeteryr pash die auto kore bari firechi ar mone mone bhebechi ei paser barigulote kara thake??rate tara balcony theke bhut dekhte pay kina!

      Delete
    5. ha ha..ai proshnota sobbar mon-e jage..:)

      Delete
  5. ভুতকে ভয় পান কেন? আজকের বাজারে কি ভুত ভয় দেখাতে পারে? দেশে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু আছে নাকি? এ কি ইংরেজ আমল পেয়েছেন? থাকিত ব্রিটিশ রাজ, তাঁহারা আমাদিগকে ফাঁসি চড়াইতেন আজ। আজকের বাজারে বেচারা ভুতেরা তাই ইলিশ মাছ কিনে, গিটারে বেসুরো গান বাজিয়ে, পুরনো অভিনেত্রীদের সাথে ফ্লার্ট করেই দিন কাটাচ্ছে।

    ReplyDelete
  6. Rituparnor mrityur por por-ee bhuter akta blog namiye felle? Bhuter opor biswas-ta abar changa holo, - asha kori pate debar ajogyo sab cinemar shooting-e kono matha-mundu nayok jakhan jhopang jhupang haat paa chhure joghonnyo kono "tore deikkha mon amar kore uthal pathal uthal pathal re..." te lip miliye mrigi rogir mato neche utthbe, ba kono antel mathakharap scriptwriter jakhan mathamunduheen kono art film baniye bhabbe, "aha, ki masterpiece.." rituparno ese tader achchha kore du gatta koshiye debe.

    Bangla cinemar durdin asha kori kat-te cholechhe.

    ReplyDelete
  7. "যখনকার কথা দিদিমণি তখন দশ-বারো বছরের বালিকা, ওজন মেরেকেটে পাঁচ থেকে ছ’কেজি।"

    ??????????????????????

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভুল লিখেছিলাম বুঝি? চেক করার ধৈর্য নেই, তাই লাইনটাই উড়িয়ে দিলাম। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  8. eitate sanghatik mil Kuntala :-) , bhut ke ami ekhono khub biswas kori, heso na jeno. ar Post ta darun daruun hoechhe . Didimoni r galpo - osadharon.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহা, গুড গুড। একটুআধটু অমিল না থাকলে আবার বোরিং, বলুন? লেখা ভালো লেগেছে যেন খুব খুশি হলাম।

      Delete
  9. Bhooter theke manush dher beshi bhoyer Kuntala di. Ekbar majhraatey Silence of the Lambs dekhe othar por amader chhotto flater ondhokar bosar ghor periye ma-babar ghorey jete parini, jano? Ogotya nijer ghore alo jaliye, janla bondho kore, chador muri diye, jorey gaan chaliye shute hoyechhe. Alo ar gaan dekhe serial killer ra bhoy pay ki? Ke jane.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহাহা, আমি দৃশ্যটা কল্পনা করছি খালি। একলা ঘরে চাদর মুড়ি দিয়ে বিম্ববতী ঠকঠক করে কাঁপছে। আমারও এই রোগ, এদিকে সাহসের ঢেঁকি ওদিকে যত রাজ্যের ভয়ের সিনেমা দেখাও চাই।

      Delete
  10. দর্জা টার কি হোলো তার্ পর? কি কোরে খুলেছিলো জানা গেলো?

    ReplyDelete
    Replies
    1. hya eta amaro prashno ?darjata ke khulechilo???

      lekhata durdanto hoyeche kuntala,akdom leelar lekha porchi mone hocche

      Delete
    2. আরে আমাদের বাড়িওয়ালা আর আমাদের দরজা মুখোমুখি। শক্ত করে ভেজানো না থাকলে, ওরা দরজা খুললে বা বন্ধ করলে হাওয়ার ধাক্কায় আমাদেরটাও খুলে যায়।

      তিন্নি, কী যে বলিস। তবে ভালো লেগেছে জেনে খুশি।

      Delete
  11. তোমার লেখা তো সবসময় পুরোণ দিনকে মনে পড়ায়। একটা গল্প বলি? তখন আমার দাদু সদ্য মারা গেছেন। শ্রাদ্ধ হয়নি। আমরা বাবার কর্মস্থলে মেদিনীপুরে ফিরে এসেছি, সামনে আমার বিএ ফাইনাল পরীক্ষা। আমাদের বাড়িটা এত বি-শাল জায়গার উপর ছিল যে পুরোটা কখনও দেখে উঠতে পারিনি। আর্ধেকটাই বন বাদাড়, মুর্গিদের আনন্দময় বিচরণক্ষেত্র এবং দুটো কুকুরেরও। উঁচু ছাতওয়ালা বড় বড় ঘরগুলিতে ঢুকলে মনে হয়,বাপ্‌রে।
    এহেন বাড়ির গেস্টরুমে আমি থাকি। ঘরটা অপেক্ষাকৃত ছোটো, একদিকে দরজার মত গরাদ দেওয়া জানালা,সেখানে আমার পড়ার টেবিল,কুকুরদুটো ইচ্ছেমত সেখান দিয়ে রাতের বেলা আসে-যায়। এর পরেই একটা বাগান। একদা সেখানে সযত্নে লাগানো ছিল গোলাপ বেলি রজনীগন্ধা ইত্যাদি নানা ফুল। সেগুলো তখনও ছিল,কিন্তু মালির অভাবে ছাড়াগরু। খুশিমত বাড়া আর অজস্র ফুলে ভরিয়ে দেওয়া- দুটোই ইচ্ছেমত।
    সেদিন অনেক রাতে পড়া সেরে আমি ঘুমিয়েছি। হঠাৎ খাটটা এতটাই নড়ে উঠল যে ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রথমে মনে হল,এ নিশ্চয়ই প্রিন্সের কাজ। আমার খাটের তলায় শুতো আর যখন খুশি ধাক্কা মেরে বেরোত। একটু পরে খেয়াল হোলো ওর তো কোন শব্দ নেই ধারেপাশে,তবে!জানালার দিকে চোখ যেতে দেখি আপাদমস্তক সাদা বস্ত্রাবৃত দাদু কাঁপা কাঁপা হাত বাড়িয়ে আমায় ধরতে চাইছেন। ব্যাপার কি? জ্যান্তে আমার সাথে দাদুর সদ্ভাব ছিলনা বলে কব্জা করতে পারেনি। তাই কি মরে গিয়ে আমায় ধরবে নাকি? ভূতে পাত্তা না দেওয়ার শেষ প্রান্তে প্রায় পৌঁছে গেছি, এমন সময়----।
    এমন সময় একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেল। বাইরের গাছগুলি হিল্লোলিত হয়ে উঠল। আমি দেখলাম, নিশুত রাতে সব ভাসিয়ে দেওয়া পূর্ণিমার আলোয় সমস্ত ঢেকে গেছে। আলাদা করে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। সেই আলোর সাদায় গা ঢেকে অযত্নবর্ধিত গোলাপগাছ আমায় তার শাখা দিয়ে দাদুর কাঁপা হাত দেখাচ্ছিল। এবার আমার হাসি পেল। আমি আবার পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কী কাণ্ড। গোলাপগাছে দাদুভ্রম।

      Delete
  12. "পেছনে পড়ে রইল কেবল হ্যারিকেন আর আমাদের দিদিমণি।" - অসাধারণ কুন্তলা । ভেবেছিলাম বিয়ের পরে লেখালেখি কমে যাবে - তুমি দেখি ডবল উত্সাহে লিখে চলেছ! এবং খাসা হচ্ছে লেখা গুলো ।
    প্রার্থনা করি বাংলায় তোমার মত লেখিকা/লেখক আরও আরও আসুক ।

    আর দেখো ভালো লেখিকা লোকে তোমাকে চিনবেই - আজ আর কাল । তখন আমি পয়সা দিয়ে তোমার বই কিনে পড়ব । গুগল এ "কুন্তলা + pdf" দিয়ে সার্চ করব না । অন গড ফাদার মাদার ।


    --সব্যসাচী

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে ধন্যবাদ ধন্যবাদ। অন গড ফাদার মাদার বলেছ যখন তখন আর প্রমিস কেটে পালানোর উপায় নেই। মনে থাকে যেন সব্যসাচী।

      Delete
  13. ki bhalo bhalo..amio khub bhuter bhoy pai..bhuter golpo porle ami abar toilet eo jete bhoy pai..r tin er suitcase r kotha mone poriye dile.babar chakri sutre ami grame theke kichudin pathshalate porechi..sekhaene amar naam lekhe ekta suitcase niye jetam.ekhono barite loft e seta tola ache..mone koriye dile dekhi ebar bari gele ekbar dekhe nebo..

    ReplyDelete
    Replies
    1. দেখো দেখো সুমনা। ছোটবেলার সুটকেস বলে কথা।

      ভূতে ভয় পাওয়াই উচিত। যারা পায় না তারাই পাগল।

      Delete
  14. তোমার বর্ণনা শুনে কিঞ্চিত হতাশ এবং ঈর্ষান্বিত হলাম, কুন্তলা, কারণ দুঃখের বিষয় এই যে আমি আর ভূতে বিশ্বাস করিনা। হাজার বিশ্বাস করেও ও পাজি ব্যাটারা কিছুতেই দেখা দেয়না, কথা বলাতো দূরস্থান। এই দেখোনা, এই তো সেদিন - রাত বারোটায় টিভি দেখা শেষ করে শুতে যাব, হঠাৎ মাথার মধ্যে কেন জানিনা মালকোষ রাগটা পাকিয়ে উঠল, তাই সেই রাগের একটা গান মনে করে একটু গলা মেলালাম। অচিরেই দেখি মনের আনন্দে হাউ হাউ করে গলা ফাটাচ্ছি, কারণ মধ্যরাত্রে কে আর শুনতে যাচ্ছে। আচমকা বাইরের ঘরে জানলা দিয়ে কড়া তামাকের গন্ধ ভেসে এল। আমার তো প্রাণে বেজায় রোমাঞ্চ হল। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর আছে - হেঁহেঁম বাবা, যে সে লোক নয়, এক্কেবারে ভূতান্বেষী বরদাবাবুর মুখ থেকে শোনা - যে মাঝরাত্রে মল্লকৌষিক রাগ ঠিকমত গাইতে বা বাজাতে পারলে সাক্ষাৎ আরব দেশের জীন্‌-এর আবির্ভাব ঘটে; তাঁদের উপস্থিতির প্রথম পরিচায়ক হল উগ্র তামাকের গন্ধ ভেসে আসে। আমার দৃঢ়প্রত্যয় ঘটল যে অজান্তেই নিশ্চয় দুর্দান্ত মালকোষ গেয়েছি, তাই জীন বাবাজী এসে উদয় হয়েছেন।

    শিহরিত মনে ভাবলাম ঘরে একটু বাতাস চলাচল করুক, তাই ঘরে জানলাটা খুলে দিতে গেলাম। আর তখনই খেয়াল হল... কোথায় জীন্‌, কোথায় কি? আমার প্রতিবেশী তার গৃহিণীর বাক্যাঘাতে জর্জরিত হয়ে বাড়িতে ধূমপান করতে পারেনা, তাই ঠিক আমারই জানলার নিচে দাঁড়িয়ে একতলায় দরজার সামনে সিগারেট খায় আর চিমনীর মত ধোঁয়া ছাড়ে। সেই তাম্বাকু বদবু-মিশ্রিত ধোঁয়া আমার জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকে নাসিকাগোচর হয়েছে।

    ধুত্তেরি বলে সেই যে ভূতের ওপর বিতৃষ্ণা জন্মালো, সে আর যায়নি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে ভূতের ব্যাপারটাও ভগবানের মতো কৌশিক। বিশ্বাসী ছাড়া ওঁরা কাউকে দেখা দেন না। একেবারে মনপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করতে হবে। চোখকানবুজে, যুক্তিতক্কো যমের দোরে পাঠিয়ে বিশ্বাস করতে হবে, তবে না দেখা মিলবে?

      কিন্তু তোমার গল্পটা খুবই ভালো। থ্যাংক ইউ।

      Delete

Post a Comment