দ্য হ্যাপিনেস প্রোজেক্ট
ছুটি হওয়ার পর ক্লাস প্রায় ফাঁকা
হয়ে এসেছে, আমি খাতাপত্র গুছিয়ে ব্যাগে ঢোকাচ্ছি, এমন সময় খ এগিয়ে এসে বললেন,
“কুন্তলা, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, ক্যান আই আস্ক্ ইউ সামথিং?”
প্রমাদ গুনলাম। যে সব কথোপকথন
গৌরচন্দ্রিকা করে শুরু করতে হয়, আমার অভিজ্ঞতায় সেগুলো কোনওটাই ভালো দিকে গড়ায় না।
এই জন্যই আবহাওয়া কিংবা পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোট কথোপকথনের জন্য আমার প্রিয়
বিষয়। ও সব নিয়ে কথা শুরু করার আগে কেউই বলে না, “আই থিংক উই শুড টক।” তাছাড়া এ
ধরণের গৌরচন্দ্রিকার আরেকটা বিরক্তিকর দিক হচ্ছে জিনিসটার বাতুলতা। সারাজীবনে
একমাত্র সুজাতাকে দেখেছি কেউ এসে “একটা কথা বলব?” বললে “না, বলবি না।” বলে মুখের
সামনে দিয়ে গটগটিয়ে হেঁটে চলে যাওয়ার ক্ষমতা রাখতে। আমি প্রাণ থাকতে সুজাতার মতো
স্মার্ট হতে পারব না, তাই ক্ষীণ হেসে জবাব দিলাম, “ইয়েস, অফ কোর্স।”
“আর ইউ স্যাড?”
প্রশ্নটা বুঝতেই আমার পাঁচ সেকেন্ড
সময় লেগে গিয়েছিল, আর আমার সেই হতভম্ব নীরবতার সুযোগ নিয়ে খ পরপর আরও দুটো বাক্য
বলে ফেললেন। একটা প্রশ্ন, আরেকটা সাজেস্শন।
“আর ইউ হ্যাভিং এনি পার্সোন্যাল
প্রবলেমস্? ইফ সো, উই ক্যান টক।
সম্বিৎ ফিরে এল। চেঁচিয়ে উঠে হাতপা
নেড়ে বললাম, “নো নো, এভরিথিং ইস ফাইন। পারফেক্টলি ফাইন।” প্রতিবাদটা এত সজোরে
বেরিয়ে এল দেখে নিজেরই সন্দেহ হল ব্যাপারটা যথেষ্ট কনভিনসিং হল না বোধহয়। গলা
স্বাভাবিক পর্দায় নামিয়ে আরেকবার বললাম, “নো রিয়েলি, আই অ্যাম অ্যাবসলিউটলি ফাইন।”
“বাট ইউ ওয়্যার নট লাফিং হোয়েন
এভরিবডি এলস্ ওয়াজ লাফিং!”
আমার ভালোথাকাখারাপথাকা নিয়ে খ-এর
দুশ্চিন্তার কারণ এতক্ষণে পরিষ্কার হল। বড় গ্রুপে ঘোরাফেরা করার কতগুলো খুচরো
অপকারিতা কিছুদিন ধরে প্রকট হয়ে উঠছে, এটা সেগুলোর মধ্যে প্রধান একটা। ক্লাসরুম
এক, ঘোরাফেরা এক, থাকাখাওয়া এক, অতএব হাসিকান্নাই বা এক হবে না কেন?
খ-কে আশ্বস্ত করে, প্রসঙ্গ পালটে পরিস্থিতিটা
থেকে বেরিয়ে এলাম কিন্তু চিন্তাটা মাথার ভেতর সেঁটে রইল। গ্রুপ ডায়ন্যামিক্সের
স্বভাবচরিত্র নিয়ে যত না চিন্তা, তার থেকেও বেশি অন্য একটা ব্যাপার নিয়ে। দিনের
একটা বড় সময় একসঙ্গে কাটাতে হলেও বাকি সময়টা চাইলে সবাই একা একা কাটাতে পারে, এবং
কাটায়ও। কেউ কেউ পকেটে ম্যাপ গুঁজে অচেনা শহরেও ভোররাতে দৌড়তে বেরোয়, কেউ বালিশ
আঁকড়ে মুখ হাঁ করে ঘুমোয়, কেউ হন্যে হয়ে স্যুভেনির শপ শিকার করে বেড়ায়, কেউ
সাবওয়েতে দরাদরি করে ‘আই লাভ বার্লিন’ টি-শার্ট হাফ দামে কিনে ফেরে। তাতে কেউই
কিছু মনে করে না।
কিন্তু কমন রসিকতা শুনে কমন
হাসাহাসির ব্যাপার যেই আসে, অমনি সকলের অন্য মূর্তি। এক্সপেক্টেশন আকাশছোঁয়া। সকলের
মুখের ওপর চিরুনিতল্লাশি। পাছে কেউ ‘ফান্’ থেকে বাদ পড়ে যায়।
হয়ত ঠিকই করে। একে অপরের আনন্দের
দায়িত্ব নেওয়াটাই হয়ত সচেতন নাগরিকের কর্তব্য। আমি মুখ গোমড়া করে বসে আছি, কেউ এসে
জিজ্ঞাসা করছে না কী হয়েছে, সেটা হলেই কি খুব ভালো লাগত আমার?
মাথাব্যথা শুধু দুঃখে থাকা আনন্দে
থাকা, এই নিয়ে হলে সমস্যা কম ছিল। কেউ কেউ আবার ব্যাপারটায় দার্শনিক স্পিন দেওয়ার
চেষ্টা করছেন। আমি এতদিন মূর্খের গজদন্তমিনারে বসে মুখ বেঁকাচ্ছিলাম, সেলফ হেলপের
বীজাণু যে এদিকে কতদূর প্রবেশ করেছে তার আঁচ পর্যন্ত পাইনি। লাইফস্টাইল গুরুদের
এতদিন টাইম্স্ অফ ইন্ডিয়ার অ্যাড থেকে আমার দিকে হাসিমুখে চেয়ে থাকতেই দেখেছি, কবে
যে তাঁরা পাতা থেকে নেমে এসে আমার চারপাশের ভিড়ে মিশে গেছে টেরই পাইনি। ওপেনিং আপ
ইয়োরসেল্ফ্, গো উইথ দ্য ফ্লো, সেলিব্রেট দ্য মোমেন্ট, বি হ্যাপি---এই সব কথা
ডাইনেবাঁয়ে অবিরত শুনতে পাচ্ছি।
টা টা করে চলে যাওয়ার আগে খ বলে
গেলেন, “স্টে হ্যাপি। লাইফ ইস শর্ট।”
আপাতত কিছু করার নেই, মুখে সর্বদা
আলগা, মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া। যাতে হ্যাপিনেস পুলিশের নেকনজরে থাকা যায়। না
হলেই কেন হাসছিলাম না সে জেরার মুখে পড়তে হবে। সুজাতা হলে হয়ত জবাব দিত, “রসিকতাটা
একটুও হাসি পাওয়ার মতো নয় বলে” কিন্তু আমি যখন আমিই, সুজাতা নই, তখন আর কিছু করার
নেই।
মুখের ওপর স্পষ্ট করে অপ্রিয় কথা বলার দিকে সুজাতা নামের মেয়েদের একটা "ন্যাক" আছে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। এর বেশি বলে কাজ নেই। তবে এই বিশেষ পরিস্থিতিটায় এত বেশি পড়তে হয় ইদানিং যে আমি সোনার কেল্লার মুকুলের উত্তরটা দিয়ে দিই: আমার হাসি পাচ্ছেনা।
ReplyDeleteআর আপনার দেশবিদেশের বন্ধুদের কথা জানিনা, আমার ইদানিং মনে হওয়া শুরু হচ্ছে যে আমাদের দেশের লোকজনের সেন্স অফ হিউমার অত্যন্ত নেমে গেছে, এখন প্রায়ই টিভি বা সিনেমায় হাসির দৃশ্যে কান্না বেশি পায়। হাসিয়েরা হয়ত বলবেন যে আমি বুড়ো হয়েছি এটা তারই প্রমান, কিন্তু তাতে কি আর করা যাবে?
হাসি পাওয়াপাওয়ি দিয়ে বিচার করতে গেলে আমারও ঘাটে যাওয়ার সময় হয়েছে সুগত। সেন্স অফ হিউমারের কথাই তুললেন যখন, কোয়ালিটি কমেছে কি না জানি না, কিন্তু রসবোধের কোয়ানটিটি যে অত্যন্ত বেড়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সকলেই হাসাতে ওস্তাদ।
DeleteAmi kintu pray sujata r e moto...."NA" bolte ami khuub pari. Jaihok tumi ektu hese khelei thalo nahole chap ache bujhte parchi...hehe
ReplyDeleteচাপ বলে চাপ রাখী। না বলতে পারাটা খুব বিরল গুণ, তোমার আছে জেনে খুশি হলাম।
Deleteআমার একটা প্রচণ্ড কৃত্রিম কাষ্ঠহাসি আছে। অচেনা লোকে দেখে বোঝে না।
ReplyDeleteগুড।
Deleteamar o praye joy forever er moto (mukul ke nokol kore) bolte ichhe kore "amar haasi pachhena".
ReplyDeletetachara TV serial/cinema r humor dekhle amar mone hoy hai re ei bhnaramo koreo manush koti koti taka rojkar korchey....ebong seta bhebei kanna peye jay!
টাকার ব্যাপারটা আমিও ভেবে দেখেছি শম্পা, আর আমারও ডাক ছেড়ে কাঁদতেই ইচ্ছে করেছে।
DeleteKuntala protita manusher nijer mukh er ovibyakti te nijer byaktiodhikaar ache... ejuge interfere er hujug eto beshi...Sujata i thik. tui o. hasi na peleo haste hobe..even peleo hastei hobe..nakhe mukhe chokhe haste hobe...mane arekjonke bujhiye haaste hobe..naholei dol chhut..emon sahochorjyo besh chaap er..amio aajkal khamoka hasina... nijer sathe justice kore boro aram hoy...
ReplyDelete"interfere er hujug" কথাটা একেবারে ঠিক বলেছিস। ভালো চাওয়া ইন্টেরফেয়ারেন্সই হয়তো, কিন্তু তাও তো ইন্টারফেয়ারেন্স তো বটে। বেশিরভাগ সাহচর্যই এই ধরণের নাক-গলানোকে উৎসাহ দেয় দেখেছি। মহা মুশকিল।
Deleteবলে দিয়ে ভাল করলেন... এবার থেকে সতর্ক থাকতে হবে দেখছি!
ReplyDeleteসতর্কতার যুগ পড়েছে সুনন্দ। সর্বক্ষণ সতর্ক থাকবে, না হলেই বিপদ।
Deleteবাহ , বেশ ভালো লাগলো। গনহাসির ফোয়ারা তে যোগ দিতে না পেরে ফিলোসফিকাল বাণী শোনার এক্সপেরিয়েন্স আছে :)
ReplyDeleteআমি সমব্যথী, কাকলি।
Delete