শনিরবি
কাল রাতে বান্টি ফোন করে বলল, ‘চারটি
লিংক এধারওধার থেকে চুরিচামারি করে পোস্ট করবে, সেটাও ঠিক করে করে উঠতে পারছ না?
সাপ্তাহিকী কোথায় গেল এ সপ্তাহে?’ এদিকে হতভাগা ভান করে যেন অবান্তর পড়েই না। আমি
মনে মনে খুব খুশি হয়ে বললাম, ‘আরে প্রাণ বাঁচলে তবে তো সাপ্তাহিকী। ব্যাংক,
গ্যাসের দোকানে হাজিরা, জমে থাকা জন্মদিনের ট্রিট আদায়---এইসব করতে করতে সপ্তাহটা
ফুস্ করে কোথা দিয়ে পালাল টেরই পেলাম না।’ যেটা বললাম না সেটা হচ্ছে শুক্রবার
রাতে আলসেমোর অ্যাটাক। সাপ্তাহিকী ছাপছি ছাপব করে করে শেষটা সারারাত অনলাইনে মিশর
রহস্য হাঁটকে কাবার। তাও যদি পাওয়া যেত। জঘন্য।
প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য আমি
শনিবার সকাল থেকে উঠে চোখে চশমা পরার মতো গলায় ক্যামেরাও ঝুলিয়ে নিয়েছিলাম। যা যা
করেছি, যেখানে যেখানে গেছি, সবের প্রমাণ জোগাড় করে এনেছি। যাতে আপনাদের বিশ্বাস
করানো যায় যে আমার সত্যি সারাদিন নিশ্বাস ফেলার সময়ও ছিল না, সাপ্তাহিকী পোস্ট করা
তো দূরের কথা।
সকালটা শুরু হয়েছিল অন্য সব
সকালের মতোই। চা আর মারি বিস্কুট। রোজ আপনাদের চায়ের ছবি দেখাই, আজ স্বাদবদলের
জন্য রইল বিস্কুট।
ব্রেকফাস্ট হিসেবে স্যালাড
কিন্তু মন্দ না। অঙ্কুরিত ছোলা, গাজর, শশা, পেঁয়াজ, কাঁচালংকা কুচি, নুন। শেষে ওপর থেকে একটুকরো পাতিলেবু চিপে চামচ দিয়ে
খাও। ফোন করে মাদের বুক ফুলিয়ে বল। ভাব দেখাও তাঁদের সন্দেহ ভুল। সারাসপ্তাহ এই
রকম সব হেলদি খাবার খেয়েই আসলে জীবন কাটে।
ব্রেকফাস্টের পর আমাদের টু
ডু লিস্টে ছিল গ্যাসের দোকান আর ব্যাংক। গ্যাসের দোকানের কাজ হল না, ব্যাংকে হল।
আমি দুটো দোকানের ছবিই আপনাদের দেখাব ভেবেছিলাম, দুটো কারণে দেখানো গেল না।
গ্যাসের দোকান দেখানো গেল না কারণ দোকানটি অস্বাভাবিক রকমের কম ফোটোজেনিক। আমার
থেকেও একশোগুণ কম। তাছাড়া শুক্রবার রাতে হঠাৎ আবহাওয়া অফিসের মাথাখারাপ হয়ে
গিয়েছিল, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামিয়ে দিয়েছে। রাস্তা জুড়ে এখন ছোট ছোট পুকুর, ডোবা,
খরস্রোতা প্রস্রবণ। তার মধ্যে দিয়ে কানফাটানো ‘ঢিকচিক ঢিকচিক’ মিউজিক বাজিয়ে
ব্ল্যাক পাজেরো ছুটে চলছে। কাদা ছিটকে উঠছে আমার মাথার ওপর। গ্যাসের দোকানের
সামনের পরিস্থিতিটা বিশেষ রকমের খারাপ ছিল। কাচা জিনস-টপ, শ্যাম্পু করা মাথা
বাঁচাতেই সব মনোযোগ খরচ হয়ে যাচ্ছিল, ছবি তোলা সম্ভব হচ্ছিল না।
ব্যাংকের সামনে অবশ্য এসব
গোলযোগ ছিল না। কিন্তু অর্চিষ্মান বলল, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে
ছবি তুললে আতংকওয়াদি সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। ‘ভাববে তুমি বোমা
ফেলার ব্লুপ্রিন্ট বানাচ্ছ। তাছাড়া অবান্তরের পাঠকরা সবাই জানেন এস বি আই কেমন
দেখতে হয়, আমি শিওর।’
‘বলছ?’
‘প্রমিস।’
কাজেই ব্যাংকের ছবি বাতিল।
মাঝপথে একবার রাজুদার চায়ের দোকানে টি ব্রেক নেওয়া
হয়েছিল। আমি শুনতে পাইনি, পরে জানলাম এই ভদ্রলোক রাজুদাকে বলছিলেন, ‘ওয়ে রাজু,
তেরা তো ফিলিম বন রহা হ্যায়।’
রাজুদার দোকানের কালার থিম। ক্যাফে কফি ডে-ই খালি
ইন্টিরিয়র ডেকরেশনের বরাত নিয়ে রাখেনি। সত্যি বলতে আমার তো সি সি ডি-র থেকে
রাজুদার দোকানের ডেকর বেটার লাগে। চা-কফির কথা তো ছেড়েই দিলাম।
কাজ সেরে আমরা গেলাম জন্মদিনের বিলেটেড ট্রিট খেতে।
সেখানে বলার মতো কিছু ঘটেনি। এই দেখুন মালাবার মাটনের ছবি।
গলা পর্যন্ত খেয়ে উঠে এ
ধরণের গায়ে পড়া উপদেশ কার ভালো লাগে বলুন দেখি?
উঁহু, এখনও শেষ নয়। কাজ আরও বাকি আছে। হুড়মুড়িয়ে
বিয়ের একবছরের অ্যানিভার্সারি ঘাড়ের ওপর এসে পড়ছে, এদিকে বিয়েতে উপহার পাওয়া বইয়ের
দোকানের গিফট ভাউচার এখনও কাজে লাগানো হয়নি। যাচ্ছি যাব করতে করতে ব্যাপারটা
তামাদি না হয়ে যায়। গতকাল মনে করে ভাউচার নিয়ে বেরিয়ে বই কিনে এনেছি।
বইয়ের পর, লাস্ট বাট নট দ্য
লিস্ট, কমলালেবু। শীত আর ক’দিন বাদেই পিঠ্টান দেবে, তখন আর মাথা কুটে মরলেও এই
সাইজের, এত মিষ্টি কমলালেবু পাওয়া যাবে না।
আপনার ছবির মধ্যে কি দেখে সবথেকে লোভ লাগল জানেন? চা বিস্কুট নয়, স্যালাড নয়, কমলালেবু নয়, মাটন নয়, এমনকি গল্পের বইও নয়। সবথেকে লোভনীয় রেস্টুরেন্টের ওই ছোট ছোট পেঁয়াজগুলো।
ReplyDeleteহাই ফাইভ। ওগুলো আমারও ইররেসিস্টেবল লাগে। বিয়েবাড়ির রাধাবল্লভী ছোলার ডাল যেমন, ভিনিগারে ডোবানো পেঁয়াজ তেমনি। মেন কোর্সের থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। আমি তো এমনি এমনি খাই।
DeleteRajudar dari to puro 'silpokola' !
ReplyDeleteউনি রাজুদা নন, উনি রাজুদার খদ্দের। তবে দাড়িটা সত্যিই মার দিয়া কেল্লা, ঠিকই বলেছেন সৌমেশ।
DeleteBreakfaster salad ta malabar muttoner cheye dher beshi lobhoniyo laglo.
ReplyDeleteতোমাকে চুপি চুপি বলছি বিম্ববতী, ওটা আমার খেতেও বেশি ভালো লাগে।
Deletechabigulo darun ,..satti salad ta beshi lovoniyo lagche ...tabe sabtheke bhalo chayer dokaner art work
ReplyDeleteরাজুদার দোকানের চা খাওয়াব তোকে তিন্নি নেক্সট বার, ফিদা হয়ে যাবি।
DeleteCha er dokaner art work - best :-) . tobe breakfaster salad ta besh lobhonio, jodio healthy khabar dabar ami s-chorachor erie choli. tobea eta dekhe ar barnona pore (lebur ros ) mone hochhe next weekend e eta kheleo khete pari. "Noti Nabonita" ekta somoi amar ma ar ami 'Ha JA Ba Ra La" er pashei rakhtam. oi duto boi jakhon takhon pere porte bostam.
ReplyDeleteআরে এই খাবারটা একটা অষ্টম আশ্চর্য ইচ্ছাডানা। হেলদি কিন্তু সুস্বাদু। প্লিজ বানিয়ে খাবেন এবং খাওয়াবেন। (কাউকে দিয়ে বানিয়ে খেতে পারলে অবশ্য আরও ভালো।) পস্তাবেন না। প্রমিস।
Deleteamader dada o tahole ekhon Abantor er contributor partly. sune valoi laglo. darruun darruun chobi, golpe saptahiki jome khir....:)
ReplyDeleteহাহা, আরে থ্যাঙ্ক ইউ রাখী।
Delete