সাপ্তাহিকী + শনিরবি
বৃহস্পতিবার সারাদিন
বক্তৃতা শুনে আর ক্ষতিপূরণ হিসেবে লাঞ্চে চিকেন ক্যাচিয়াত্তোরে, গোস্ত-দো-পেয়াজা,
রসমালাই, হট জিঞ্জার পুডিং আর ভ্যানিলা আইসক্রিম উইথ চকোলেট সস সাঁটিয়ে সন্ধ্যেবেলা
যখন অফিস থেকে বেরোলাম তখন সংগত কারণেই শরীরে রীতিমত অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু
রাস্তায় বেরিয়েই অস্বস্তিটা কেটে গেল। আকাশ ভরা মেঘ। সঙ্গে ঠাণ্ডা হাওয়া ফাউ।
ব্যাপারটা সকলেই নজর করেছিল নিশ্চয় কারণ সন্ধ্যে সাতটার তুলনায় দিল্লির রাস্তার
মেজাজ ছিল রীতিমত মোলায়েম। মুলচন্দের ব্রিজের কাছটায় আমাদের অটোটা একটা ব্ল্যাক
পাজেরোকে পেছন থেকে ঠুক করে ঠুকে দিতেই গাড়ির ভেতর থেকে হেঁড়ে গলায় ‘আব্বেএএএ’
ভেসে এল। আমরা সিঁটিয়ে গিয়ে ভাবলাম, এই লাগে বুঝি। কিন্তু কিছুই হল না। দেখি এক
মুশকো জোয়ান হাতজোড় করে ‘মারিস না ভাই’ ভঙ্গি করে পাজেরোর জানালা দিয়ে গলা বাড়ালেন।
মুখে হাসি। আমরা সাহস পেয়ে দাঁত বার করলাম, অটোভাইসাবের মুখও হাসি হাসি হয়ে গেল।
বুঝলাম সকলেই আশায় বুক বেঁধে আছে।
আশায় জল পড়ল মাঝরাতে। হু হু
হাওয়ায় পর্দাটর্দা উড়ে একাকার, কানে মধু ঢালল ঝমঝম শব্দ। ঘুমের ঘোরে ভাবলাম স্বপ্ন
দেখছি নাকি, কিন্তু সকালে উঠে দেখি স্বপ্নে নয়, বৃষ্টি নেমেছে বাস্তবেই। রাস্তায়
টুকটাক জল জমে আছে, গাছের পাতা স্নানটান সেরে ঝকঝকে, পাশের বাড়ির বেগুনি
বোগেনভিলিয়ার দেমাক রাতারাতি আকাশ ছুঁয়েছে।
শুক্রবার সকাল, দুপুর, বিকেল,
সন্ধ্যে, রাত্তির পার করে শনিবার সকালে উঠে যখন দেখলাম আকাশে তখনও মেঘ,
বোগেনভিলিয়া তখনও চমকাচ্ছে, তখন আর বাড়িতে বসে থাকা গেল না। বেরিয়ে পড়লাম। আর পাঁচটা
হরেদরে শনিবারের কপালে জোটে রসরাজের কচুরি আলুর তরকারি, এই অনন্য শনিবারের
সকালটিকে ফরাসি ব্রাঞ্চের কমা কিছু দিয়ে অভ্যর্থনা করতে মন সরল না।
লা’অপেরায় পৌঁছলাম যখন তখনও
দোকানে ঝাড়াপোঁছা চলছে, আমরা জানালার ধার দেখে বসলাম। উৎসাহীদের জন্য বলি, এই দোকানেই আমি আর বান্টি হ্যাদ্দেহোয়া অভিযানে গিয়েছিলাম। তবে দোকানের শাখা অন্য ছিল। ওটা অফিসের কাছে, এটা বাড়ির কাছে।
আমি নিলাম এক কাপ অ্যামেরিকানো আর হ্যাম অ্যান্ড চিজ
ব্যাগেট, অর্চিষ্মান নিল ক্যাপুচিনো আর হ্যাম অ্যান্ড মিল্ক ব্রেড।
শেষপাতে দু’জনে ভাগাভাগি করে চকোলেট কেক; যার কায়দার
নাম ত্রুফোঁ।
খেয়েদেয়ে খুশি।
আপাতত বাড়িতে বসে আছি,
বাইরে যে কোনও মুহূর্তে বৃষ্টি নামতে পারে। সিরিয়াসলি, দিল্লির হল কী?
*****
আচ্ছা এবার সাপ্তাহিকীর
ব্যাপারটা সেরে ফেলা যাক।
আমার ঘুমের রুটিনের সঙ্গে
ইম্যানুয়েল কান্টের রুটিন মিলছে দেখছি। প্রতিভার জায়গাটাও যদি মিলত।
শুনতে শুনতে আপনার হৃৎস্পন্দন
গানের তালে তালে মিলে যাবে আর আপনি এমন আরাম পাবেন যা আর কোনও গান শুনে পাবেন না।
আমার কিছু পরিচিত লোককে এই লিংকটা পাঠাবো ভাবছি। অফ কোর্স, অ্যানোনিমাসলি।
‘সেক্সিনেস’-এর পরীক্ষায়
আমি যে টায়েটুয়ে পাশ করব সে নিয়ে আমার সন্দেহ কোনওকালেই ছিল না। আমি পেয়েছি মোটে
তিরিশ। চাইলে আপনিও আপনার সেক্স অ্যাপিল পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। পরীক্ষার নম্বর
আমাকে বললে আমি দারুণ খুশি হব, না বললেও মাইন্ড করব না। হাজার হোক, প্রাইভেট ব্যাপার। ও আরেকটা কথা। যে
সময়ের পরীক্ষা সে সময় ছেলেরাও যে সেক্সি হতে পারে এমন আজগুবি কনসেপ্ট কারও মাথায়
ঢুকত না, তাই প্রশ্নপত্র মহিলাদের উদ্দেশ্যেই বানানো হয়েছে। কিন্তু আমরা
সমানাধিকারে বিশ্বাস করি, কোনও খেলা থেকে ছেলেদের বাদ দিতে চাই না। অবান্তরের
পুরুষ পাঠকরাও চাইলে নিজেদের স্কোর জানতে পারেন।
সবশেষে রইল একটি বিরহের গান। যতবার শুনি ততবার খারাপ হওয়ার বদলে মন ভালো হয়ে যায়।
oi khabar ta Inglorious Basterds e chilo...
ReplyDeleteওই দিককারই খাবার তো্ অর্ণব, থাকাই স্বাভাবিক।
Deletevow K...tomake daroon lagchey....ei kurta ta amar second fave hoye gelo (you know the first one!!)
ReplyDeleteহাহাহা শম্পা, আমি জানতাম জামাটা তোমার পছন্দ হবে। এটাও শাশুড়ি মায়ের কল্যাণে প্রাপ্ত হয়েছি। মায়ের সঙ্গে তোমার টেস্ট দারুণ মেলে দেখা যাচ্ছে।
Deleteahaha kisab sukhadyo :) porikkhay 34 peyechi tenetune ...
ReplyDeleteহ্যাঁ, কাল সকালটা খুব ভালো কেটেছিল তিন্নি। তুই এলে তোকে দোকানটায় নিয়ে যাব।
DeleteRososrajer kochuri-tarkario toh besh bhalo! Amra toh sohoje pai na, tai amader kacche otai treat! Tobe tomar ei megh na chaitei joler Forashi celebration ta aro darun.
ReplyDeleteহ্যাঁ ঠিকই বলেছ রুণা, আসলে রসরাজের অবস্থা অনেকটা গেঁয়ো যোগীর মতো হয়েছে। কাল বিকেলে টাইমিং-এর ভুলে বিকেলে বাজারে গিয়ে আলুর চপ পায়নি, সিঙাড়াও নাকি শেষ, কাজেই ভেজিটেবিল চপ নিয়ে এসেছিল। আমার এমনিতে ভেজিটেবিল চপ জঘন্য লাগে, তেলেভাজা যদি মিষ্টি হয় আর সেটা যদি বিট গাজর ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর জিনিসপত্র দিয়ে বানানো হয়, তাহলে সে তেলেভাজাকে আমি সম্মান দিতে পারি না। যাই হোক, মারি বিস্কুটের থেকে মিষ্টি চপ ভালো এই ভেবে খেলাম। কামড় দিয়েই চমকে গেছি। ভেজিটেবিল চপ এত ভালো আগে সত্যিই খাইনি। জিজ্ঞাসা করলাম কোথা থেকে আনলে? বলে নাকি রসরাজ। সেই থেকে রসরাজের প্রতি আমার ভক্তি বেড়ে গেছে।
Deleteonekdin por soni-robi r chhobi peye darun bhalo lagchhe. kahbar dabar darun ar tomakeo besh lagchhe. :-) linkgulo ekta ekta kore dekhchhi .
ReplyDeleteআরে ক্যামেরায় ঝুল জমতে শুরু করেছিল প্রায়, ইচ্ছাডানা। খেলনা থেকে মন উঠে গেলে যা হয়। বেড়াতে না গেলে আর ছবি তোলার কোনও ছুতোই পাচ্ছিলাম না, তাই সেদিন একরকম জোর করেই নিয়ে বেরোলাম।
Deletearreyyy kuntala di. atodine tomake dekhte pelam. obosso age chobi diyecho kina jani na. ami ei prothom dekhlam. :D
ReplyDeleteamar sexiness quotient 38 btw. explanation ta aschorjo vabe mileo gache.
ReplyDeleteকুহেলি, আমি তো চান্স পেলেই অবান্তরে নিজের ছবি ছাপি, তুমি মিস করলে কী করে? তোমার স্কোর জেনে খুশি হলাম। এই সব খেলাধুলোয় চরিত্রের এক্সপ্ল্যানেশন যারা লেখে তারা খুবই প্রতিভাবান, এটা আমিও দেখেছি, বেশিরভাগই মেলে।
Deletetomar hasita amar darun pochhondo hoyeche. jara camerar samne emon onabil haste pare (matal ar model chhara) tader ami khubi bhalobasi.
Deleteআহা, দিল খুশ করে দিলে কুহেলি। থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।
Deleteহায়েদ্রাবাদে একটা ফরাসী ক্যাফে ছিল, একবার আমার বন্ধু সদ্য শেখা ফরাসী পরীক্ষা করবে বলে সেইখানে গিয়ে সঠিক উচ্চারণে croissant বলে দাম জানতে চেয়েছিল। তাও ফরাসিতে না, ইংরেজি বা হিন্দিতেই। কাউন্টার এর ছেলেটি বুঝতেই পারলনা কি চাওয়া হচ্ছে, যতক্ষণ না তাকে আঙ্গুল দিয়ে জিনিসটা দেখানো হলো। আহা আপনাদের ওই ফরাসী ডেসার্টটা দেখেই ভালো লাগল, খেতে নিশ্চই আরও ভালো। আমি কিন্তু চুমু বনাম চকলেট এর লিঙ্কটায় একটুও অবাক হইনি। আর আমার রুটিন অনেকটাই মেলে সিগমান্ড ফ্রয়েড-এর সঙ্গে।
ReplyDeleteখাতাটা বেশ মজার। আমাদের ছোটবেলায় দোকান থেকে কেনা লাইন টানা খাতায় কোনও কোনও পাতা ছাপার ভুলে ব্যাঁকা লাইন, বা অর্ধেকটা সাদা ইত্যাদি হত। সেটা দেখলেই ভাবা শুরু করতাম এই পাতাটায় কি করা যায়। এটা দেখে সেটা মনে পড়ে গেল, আর নিজেরই হাসি পেয়ে গেল। এখন সেরকম পাতা পেলে খুঁতের তোয়াক্কা না করে সোজা লাইনেই লিখব তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
উচ্চারণের ব্যাপারটা একেবারে মোক্ষম বলেছেন। জর্জ বার্নার্ড শ'র একটা লেখা ছিল আমাদের পাঠ্যবইয়ে, স্পোকেন ইংলিশ ভার্সেস ব্রোকেন ইংলিশ। আপনাদেরও ছিল কি? সেখানে শ-বাবু বলেছেন, কেউ যদি ইংরিজিভাষী না হয় আর তাকে যদি পথনির্দেশ ইত্যাদি জানতে হয়, তাহলে সে যত বিশুদ্ধ ইংরিজিই বলতে পারুক না কেন, সাহায্য পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে চিৎকার করে ভুল ইংরিজি বলা। উদাহরণও একটা দিয়েছিলেন উনি। রেলস্টেশন কোথায় জানতে হলে বেস্ট হয়ে মুখের কাছে হাতের তেলো নিয়ে 'কু-উ-উ' 'কু-উ-উ' করে ট্রেনের হর্নের নকল করা আর চেঁচিয়ে 'ট্রেন' 'স্টেশন' হোয়্যার' ইত্যাদি শব্দগুল বন্দুকের বুলেটের মতো ছিটকে ছিটকে বলা। তাহলে নাকি হেল্প করার লোকের ভিড় জমে যাবে। আর আপনি যদি সত্যজিৎ রায়ের মতো ইংরিজিতে 'মে', 'প্লিজ' ইত্যাদি যথাযথ শব্দসহযোগে জানতে চাইবেন, সকলে ভাববে ব্যাটার নিশ্চয় বদমতলব আছে। এই ভেবে হনহন করে সবাই নিজের নিজের রাস্তায় চলে যাবে, আপনি হাঁদার মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবেন যে থাকবেনই।
Delete"আপনি যদি সত্যজিৎ রায়ের মতো ইংরিজিতে 'মে', 'প্লিজ' ইত্যাদি যথাযথ শব্দসহযোগে জানতে চাইবেন" এই লাইনটা অনেকটা আজকালকার শহুরে বাঙালি বাচ্চাদের মুখের ভাষার মতো হয়েছে। চাইবেন-এর জায়গায় চান হবে। আপনি যদি জানতে চান।
Delete