ঘরোয়া দার্শনিক
আমার
এক বন্ধু একবার শ্রীশ্রীরভিশংকরের আর্ট অফ লিভিং ক্যাম্পে গিয়েছিল। অফিসের টিমের
সঙ্গে। কর্পোরেটে কাজ করার নাকি ভয়ানক স্ট্রেস, সেই স্ট্রেস রিলিভ করার জন্য টিম
লিডার সবাইকে নিয়ে আর্ট অফ লিভিং শিখতে গিয়েছিলেন। বন্ধু তাতে অখুশি হয়নি। অফিস
থেকে বাধ্যতামূলক বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপার একটা থাকেই। তাতে নাকি টিমবিল্ডিং হয়। টিম
হুইচ ট্র্যাভেলস টুগেদার, স্টেস টুগেদার। আগের বছর ট্রেকিং-এ যাওয়া হয়েছিল, সেখানে
দড়ি ঝুলে ঝুলে আর্টিফিশিয়াল খাঁড়ি পেরোতে গিয়ে বন্ধুর কাঁধে মোক্ষম হ্যাঁচকা,
নেক্সট তিনমাস একদিকের কাঁধ অন্যদিকের কাঁধের থেকে হাফ ইঞ্চি উঁচু হয়ে ছিল। পরের বছর
ট্রেকিং-এর বদলে গুরুজির ক্যাম্পে যাওয়ার কথা শুনে বন্ধু তাই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল।
গুরুজি তখন গ্রুপ প্যাকেজ অফার করছিলেন কাজেই টাকাকড়ির দিক থেকেও কিছু সাশ্রয় হয়েছিল।
স্ট্রেসও কমল, সস্তাও পড়ল। উইন-উইন সিচুয়েশন।
অবশ্য
আর কোনও দিক থেকে ডিসকাউন্ট ছিল না। কৃচ্ছ্রসাধনে নো কমপ্রোমাইজ। সাতদিন গুরুর
পায়ের কাছে হত্যে দিয়ে থাক, নিরামিষ খাও, ভোর পাঁচটা থেকে উঠে উপদেশ শোন। কী করে
ভালো থাকা যায়। সাতদিন বাদে যখন ক্যাম্প থেকে বেরোবে তখন তুমি নতুন মানুষ। তবে
গুরুজির দায়িত্ব তখনও শেষ নয়। ক্যাম্প থেকে উপদেশ আর মন্ত্র পোরা সিডি সঙ্গে দিয়ে
দেওয়া হয়েছিল (অফ কোর্স, বিনাপয়সায় নয়। গুরুজি অভিজ্ঞ লোক, জানেন গুরুদক্ষিণা ছাড়া
কোনও উপদেশই কাজে লাগে না।) স্ট্রেস চড়ছে বুঝতে পারলেই চট করে হেডফোনে মন্ত্র
চালিয়ে চোখ বুজে বসে ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়, দেখতে দেখতে স্ট্রেসের পারা নেমে
যেমনটি চাও তেমন।
বলেছিলাম,
‘কয়েকটা মন্ত্র আমাকেও দে না রে।’
বন্ধু
খুব সিরিয়াস গলায় বলেছিল, ‘অহিংসা পালন করবি, বন্ধুকে ভালোবাসবি, শত্রুকে ঘৃণা
করবি না।’
ফোন রেখে দিয়ে খুব হেসেছিলাম মনে আছে। রিষড়ার বাজারে কেষ্টদার দোকানে যে বারোখানা অবশ্যপালনীয় নীতির লিস্ট বাঁধিয়ে ঝোলানো ছিল, তাতে ওপরের তিনটে কথাই লেখা ছিল। একসময় মায়ের সঙ্গে দু’বেলা দোকানে গিয়ে গিয়ে আমার সে লিস্ট কণ্ঠস্থ হয়ে গিয়েছিল। বন্ধুর পাড়াতেও কেষ্টদা ছিলেন না, কেষ্টদার দোকানে নীতির লিস্ট ছিল না, মায়ের পিছুপিছু বন্ধু সে দোকানে গিয়ে সে লিস্ট মুখস্থ করত না, এ আমি বিশ্বাস করি না।
তবু
বুড়ো বয়সে একগচ্চা টাকা খরচ করে, সাতদিন নিরামিষ খেয়ে, কানের ভেতর মন্তর চালিয়ে তাকে
কিনা অহিংসার বাণী শুনতে হল।
এ
রকম আরও অনেক উদাহরণ আছে। মায়ের চাকরিজীবনের প্রথম বড়বাবু ছিলেন গৌরাঙ্গদা।
গৌরাঙ্গদার কথা আগেও বলেছি বোধহয় অবান্তরে। তাঁকে আমি খুব ছোটবেলায় দেখেছি,
মাবাবার সঙ্গে তাঁর বাড়িও গেছি একবার। গৌরাঙ্গদাকে মনে নেই, বাড়িটা কোথায় সেটাও
সম্পূর্ণ ভুলে গেছি। মাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে হবে।
গৌরাঙ্গদা
ছিলেন, মায়ের মতে, তাঁর দেখা সবথেকে বুদ্ধিমান লোক। কাজে দক্ষ, কথায় সতর্ক,
ভালোমানুষিতে সীমাহীন। তখন মায়ের বয়স কত হবে, এই পঁচিশটচিশ। গৌরাঙ্গদা মাকে খুব
পছন্দ করতেন আর তাই কাজ ছাড়াও টুকটাক গল্প করতেন। বলতেন, ‘বুঝলা অর্সোনা, মনে
রাখবা। রাগসো কি হারসো।’ অর্থাৎ কি না, রাগ আর হার, একই কথা। প্রতিপক্ষ বরই হোক কি
বস্, সেটা ইমমেটেরিয়াল। নেগোসিয়েশন চলাকালীন যে পক্ষ প্রথমে রাগবে, তার পরাজয়
অবশ্যম্ভাবী।
কী
সাংঘাতিক দামি কথা ভাবুন। ধুতিপাঞ্জাবি পরা আটপৌরে এক নিরীহ ভদ্রলোক বিনাপয়সায় এমন
দামি কথাটা বলে চলে গেলেন বলে পাত্তা দিলাম না, এদিকে রেনফরেস্ট উড়িয়ে,
প্রিন্টারের কাগজ কালি খরচ করে, চুয়াল্লিশ ফন্ট সাইজে ‘কিপ কাম অ্যান্ড ক্যারি অন’
প্রিন্ট করে সেটা বোর্ড পিন দিয়ে নাকের সামনে সেঁটে রাখলাম। (আমি সাঁটিনি, অফিসে
অনেকেই সেঁটেছে। তাতে অবশ্য আমার ইমেজ কিছু রক্ষা পায় না। নিজের টেবিলে না থাকলেও,
মনোজগতে বিচলন সৃষ্টি হচ্ছে টের পেলেই আমি গপ্পাবার ছুতো করে লোকের টেবিলে গিয়ে
একবার পোস্টারে চোখ বুলিয়ে আসি।)
এত
উদাহরণ-টুদাহরণ দিয়ে আমি যে কথাটা বলার চেষ্টা করছি সেটা হচ্ছে দার্শনিক যত দূরের
হন, মানুষের কাছে তাঁর দর্শনের আবেদন তত বেশি হয়। কথাটা কথা নয়, কে বলছে সেটাই
কথা। কথার দাম, বক্তার দামের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। বাবা রামদেব মাচায় বসে কপালভাতির
ট্রেনিং দেন, শ্রীশ্রীরভিশংকরও একই জিনিস করেন, তবে তাঁর কিনা হেডঅফিস জেনেভায়, তাই
ট্রেনিং-এর মর্যাদা বেশি। পাওলো কোয়েলহোকে যত সহজে ‘ফুঃ’ বলে উড়িয়ে দেওয়া যায়,
আয়ান র্যান্ডকে তত সহজে ওড়ানো যায় না।
অথচ
গৌরাঙ্গদার মতো সাধারণ মানুষ কত দামি কথা বলে চলে যান, দিন-আনা-দিন-খাওয়া জীবনের
বেনাবনে সে সব মুক্তো কোথায় যে হারিয়ে যায় কে জানে। অনেকদিন পর, কপাল ভালো হলে, হয়ত
সেগুলোকে মুক্তো বলে চিনতে পারি, না পারলে তারা অবহেলায় ধুলোতেই গড়াগড়ি খায়।
এইরকম
আরেকটি দামি কথা অনেকদিন আগে শুনেছিলাম, যথারীতি সেটাকে দামি বলে চিনতে পারিনি।
আশেপাশে সবাই যখন দুশ্চিন্তায় সারা হত, কী হবে কী হবে, এত নম্বর পেলে কী হবে, এত
নম্বর না পেলে কী হবে না, তখন তিনি শুধু হেসে বলতেন ‘কিছু একটা হবে। যা হবে সেটা
ভালোই হবে।’ শুনে সবাই গালে হাত দিয়ে বলত, ‘ও মা, হবে আবার কি, হওয়াতে হবে। না
হওয়ালে জগতে কিচ্ছুটি হওয়ার জো নেই। ঘাম ঝরাতে হবে, চুল পাকাতে হবে, ভেবে ভেবে
রাতের ঘুম ওড়াতে হবে, তবে যদি গিয়ে কিছু হয়। কর্মযোগ বলে একটা ব্যাপার নেই?’
তারপর
দেখা গেল নম্বর দিয়ে সত্যিই কিছু হয় না। আরও অনেক কিছু লাগে। আরও অনেক অনেক বেশি
নম্বর। কিলার ইনস্টিংক্ট। উচ্চাশা। বুদ্ধি। পরিশ্রম। নিষ্ঠা। মোটিভেশন।
নেটওয়ার্কিং। অ্যাটিচ্যুড।
এত কিছু তো নেই। কী হবে?
তিনি
হেসে বললেন, ‘কিছু একটা হবে। হবেই। এত কিছু থাকলেও, না থাকলেও। কেউ আটকাতে পারবে
না। আর যেটা হবে, সেটা ভালোই হবে।’
বিশ্বাস
করিনি। এতদিন ধরে মাথায় গজাল মেরে গোঁজানো হয়েছে কর্মযোগ, পুরুষকার ইত্যাদি ভালো
ভালো শব্দ, এত সহজে কি তাদের মায়া কাটানো যায়? নিজেকে সর্বশক্তিমান ভাবতে না পারা
কি এতই সোজা? যা যা ‘হল’ তার সবটুকু কৃতিত্ব নিজে সাপটেসুপটে নেওয়ার লোভ ঝেড়ে ফেলা
কি এতই সহজ?
সে না ফেললে অসুবিধে নেই, কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে বেশিরভাগ মানুষের জীবনেই এমন না একটা সময় আসে যখন ‘হল’র পালা শেষ হয়ে শুরু হয় ‘হল না’র মিছিল। মনের মতো চাকরি হল না, মনের মতো বাড়ি হল না। মনের মতো ব্যাংক ব্যালেন্স, বস্, বন্ধু, মনের মতো নামডাক। কিচ্ছুটি তেমন হল না যেমনটি চেয়েছিলাম। এবং একদিন মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ঘেমেনেয়ে উঠে বসে হঠাৎ নিজের কাছেই সত্যিটা পরিষ্কার হয়ে যায়। আর হবেও না কোনওদিন। আমি যত চেষ্টাই করি না কেন।
কারণ
আমি হওয়ার মতো ভালো নই।
আর
তারপর শুরু হয় যন্ত্রণা। না-পারার যন্ত্রণা। বাকিরা পারল, আমি কেন পারলাম না? কেন
আমি তত ভালো নই? কেন মোক্ষম সময়ে আমার পুরুষকারে টান পড়ল? কেন, কেন, কেন?
সান্ত্বনা
একটাই, যন্ত্রণাও সময়ে বোরিং হয়ে আসে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে থাকাও
একদিন একঘেয়ে হয়ে যায়। হঠাৎ একদিন নিজের চারপাশটার দিকে নজর পড়ে। কী নেই তাকে
ছাপিয়ে অবশেষে চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে
কী আছে।
আর
তখনই বাবার কথাটা মনে পড়ে যায়। এত কষ্ট হয়তো হত না, যদি নিজের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস
আরেকটু কম থাকত। যদি ভেবে নিতে পারতাম যা হয়েছে তাতে আমার কোনও হাত নেই, কপালে আছে
বলেই হয়েছে, তাহলে যা হল না তার দায়ও নিজের ঘাড়ে নিতে হত না। ‘কপালে নেই বস্, কী
করে হবে?’ বলে হেসে বাকিদের পিঠ চাপড়ে দিয়ে মাঠ ছাড়তে পারতাম।
বাবাকে
কোনওদিন নিজের জীবনের কৃতিত্ব নিজে নিতে দেখিনি। সব সাফল্যের দায় বাবা নিঃশর্তে,
হাসতে হাসতে তুলে দিয়েছেন অদৃষ্টের হাতে। আর দিয়েছেন বলেই হয়তো ব্যর্থতার বোঝাও বইতে তিনি রাজি হননি একটি মুহূর্তের জন্যও। আমার বাবা দাবি করেন মাথাব্যথা কেমন হয় তা
তিনি জানেন না। গত বাষট্টি বছরে একটি মুহূর্তের জন্য নাকি তাঁর মাথা ধরেনি। অন্য কেউ এ
দাবি করলে আমি বিশ্বাস করতাম না, বাবা বলেই করেছি।
আমার
সদাতৃপ্ত, সদাসুখী বাবার কপালে মাথাব্যথা নেই।
হ্যাপি
ফাদার্স ডে, বাবা। আশীর্বাদ কর যেন বাকি জীবনটুকু তোমার মতো নিরবচ্ছিন্ন হ্যাপিনেসে কাটাতে পারি।
Ufff!!! Juriye gelo...
ReplyDeleteBtw ami sarajibon uopdesh blte ekti kothai mone rekeh diyechi. Mohanayok Mouchak bole ekti cinema te bolechilan,
"mod khele liver kharap hoi, choritro noi" :P
থ্যাংক ইউ, অর্ণব।। তোমার মনে রাখা উপদেশটা খুবই ঠিক। চরিত্রের মতো একটা ভেগ ব্যাপার কীসে ভালো হয় কীসে খারাপ, সে কথা ফস করে বলা কি অত সোজা নাকি?
Deletebah ,khub bhalo laglo pore ..... :) hathat mone holo orakam nitir list anekdin kothao dekhini - tinni
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ তিন্নি। আরেকটা কমপ্রিহেনসিভ লিস্ট আছে দক্ষিণেশ্বরে, সারদামণির ঘরের বাইরে ঝোলানো। আমার মায়ের সেটা মুখস্থ। আমারও ছিল, অনেকদিন রিভাইস দেওয়া হয়নি বলে ভুলে ভুলে গেছি।
DeleteBravo, Osadharon :)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।
Deleteki sundor likhechho... khub bhalo laglo. baba ra eirakomi hoi.. :-)
ReplyDeleteমায়েদের টেনশন অফসেট করার জন্য বাবাদের এইরকমই হওয়া দরকার, ইচ্ছাডানা। না হলে মহা মুশকিল।
Deleteগেঁয়ো যোগী যেমন 'ভিখ্' পায় না, তেমনি ঘরোয়া দার্শনিকেরাও পাত্তা পান না। প্যাকেজিংটাই আসল, তাই তো মনে হয়।
ReplyDeleteখুব ভাল লাগলো লেখাটা। :)
আরে যুগটাই প্যাকেজিং-এর, কী আর করা যাবে অরিজিত। লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুশি। থ্যাংক ইউ।
Deleteখুব রিলেট করতে পারলাম। বাবা বলতেন ডিভাইন ডিজাইন ।বলতেন তোমার থেকেও একজন বড় প্ল্যানার আছে।
ReplyDeleteদিল্লি বাসী হতে চলেছি।ট্রান্সফার।
মিঠু
স্বাগতম! স্বাগতম! মিঠু, দারুণ খবর। তুমি আসার আগে দিল্লি আরেকটু ঠাণ্ডা হয়ে যাক সেই প্রার্থনা করে রাখলাম।
DeleteAmader office ekjoner desk-e print out lagano acche : " Inhale-exhale repeat". Ki sanghatik bhaboto, nisshas nite bhule jachhey naki! Mesomashai-ke congrats! Uni jeno sobsomoye tension free thakte paren! Amar nijer baba jiboner stress-e aaj bichanay!
ReplyDeleteহাহাহাহা, তবেই বোঝ রুণা, স্ট্রেস লেভেল কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে যে এইরকম একটা অনৈচ্ছিক ক্রিয়ার কথাও চোখের সামনে লিখে রাখতে হচ্ছে। কী দিনকালই না পড়েছে।
Deleteতোমার বাবার কথা শুনে খারাপ লাগল। আশা করি উনি দ্রুত দুশ্চিন্তামুক্ত হোন ও সুস্থ হয়ে উঠুন।
Thanks Kuntala!
Deleteদারুণ লাগলো লেখাটা।খুব ভালো লাগলো
ReplyDeleteধন্যবাদ, ইনিয়া।
Deleteতোমার এই সুখপাঠ্য লেখাগুলোর জন্য সর্বদাই তোমার উপর ভালো লাগার, ভালোবাসার পুষ্পবৃষ্টি হয়। তাই তোমায় আর কত ভেজাবো। আরেকটা ব্যাপার নজরে এলো। সেটাই বলি। তোমার লেখা সংগোপনে বাংলা অভিধানকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। আজকের সংযোজন 'গপ্পাবার'। গপ্পের সঙ্গে কি ণিচ্ হয়? জানিনা। তবে চুলোয় যাক ণিচ্, শব্দটা আমার কাছে একটা হাসির উৎস হয়ে ধরা দিল।
ReplyDeleteসেরেছে মালবিকা, ণিচ্ মিচ তো জানি না। গল্প থেকে গপ্প, গপ্প থেকে গপ্পবাজ, গপ্পানো ইত্যাদি। আমাদের মুখের কথায় কত সুন্দর সুন্দর শব্দ থাকে, সেগুলো তো চর্চার অভাবে হারিয়েই যায়। অলরেডি কত গেছে। আমার বাংলার থেকে আমার ঠাকুমার বাংলা অন্তত একশোগুণ বেশি বর্ণময়। কী সব শব্দ, কী সব ছড়া, আহা। সেগুলো তো হারিয়েই গেল।
Deleteসহজ কথাটা যে কত সুন্দর করে বলতে পারেন আপনি! অসাধারণ লাগল।
ReplyDeleteআপনার বাবাকে আমি চিনতে পারছি। আমার নিজের পিতৃদেবও কিছুটা ওই পর্যায়ের মানুষ ছিলেন, তাই।
গেঁয়ো যোগী ভিখ পায়না, এ তো জানাই কথা। তাই তো আমরা টাকার শ্রাদ্ধ করে বিলিতি যোগী খুঁজে এনে তার বাণী শুনি। এটা আজ নয়, চিরন্তন। প্রবাদবাক্যটাতো তাই বলে।
থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ তথাগত। গেঁয়ো যোগীর ব্যাপারটা ঠিকই বলেছেন। তবে আমার মনে হয় টাকাটাও একটা ইস্যু। টাকা খরচ করতে যে লোকে কী পরিমাণ ভালোবাসে, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। বিনাপয়সায় সে সব আর্ট অফ লিভিং শেখার আছে, সেগুলোতে কারও কোনও উৎসাহ নেই।
Deleteএকদম ঠিক বলেছেন কুন্তলা। এটা অনেকটা সেই ডাক্তারবাবু-রোগী কেস, ভাল ডাক্তার তিনিই, যিনি প্রচুর দামীদামী ওষুধ দেবেন, আর দুই পাতা জুড়ে প্রেষ্ক্রিপশান লিখবেন। :D
Deleteসিরিয়াসলি। আমাদের পাড়ার ডাক্তারবাবু ফিস বাড়ালেন, এখন দেখাতে গেলে বসার জায়গা পাওয়া যায় না।
Deleteart of living er *beep* akta bhondo dhandabaj.
ReplyDeleteহাহাহা কুহেলি, সপাট কথা বলার তোমার অভ্যেস আছে মনে হচ্ছে।
Deleteeijonyoi to aj obdi akta boyfriend o 6 masher besi tiklo na. :P
Deletedestiny te bishash korte amio khub bhalobasi. proti raatey sound sleep guaranteed.
হ্যাঁ, প্রেম করলে আবার একটু বাড়িয়েচাড়িয়ে, ঢেকেঢুকে কথাবার্তা বলতে হয়। দু'পক্ষকেই। বিশেষ করে শুরুর দিকটা। তারপর স্ট্যাটাস 'কমিটেড' হয়ে গেলে অবশ্য স্বমূর্তি ধরতে বাঁধা নেই।
Deleteএই রে, বাঁধা নয়, বাধা।
Deleteখুব সুন্দর। আমার বাবাও বলে যার যেটুকু ক্ষমতা সেটুকুই হবে,সেটা টেনে কত তুমি বাড়াতে পারবে?আগে বুঝতাম না,এখন বয়স বাড়ছে এখন মাঝে মাঝে মনে হয় কেন যে বাবার মত ভাবতে পারিনা।
ReplyDeleteএই টানাটানি করে প্রতিভা বাড়ানোর অভ্যেস আমাদের এত বাজে সুমনা, কিন্তু এমন মজ্জায় মজ্জায় ঢুকে গেছে যে ছাড়ান পাওয়া মুশকিল।
Deleteছোটবেলায় আমার ও একটা দুর্দান্ত উপলদ্ধি হয়ে গেছিল .. যা এখনো আমার জীবনের মূল চালিকা শক্তি |
ReplyDeleteক্লাস ওয়ান থেকে থ্রি পর্যন্ত্ ক্লাসএ প্রথম হবার পর যখন ক্লাস ফোর ফাইভ এ ক্রমশ দ্বিতীয় তৃতীয় হয়ে চলেছি ..হতাশ মা এর রাগ ভরা প্রশ্নর মুখে দাড়িয়ে বলেছিলাম , সবাই যদি প্রথম হয় .. দ্বিতীয় কে হবে ?
প্রথম হবার দৌড় এর বাইরে এসে সব থেকে বড় লাভ কি জানেন? আপনার বাবার মত মাথা ব্যাথা কি না জানা :)
আরে এই তো আরেকজনকে পাওয়া গেছে, মাথাব্যথাহীন। সিরিয়াসলি হিংসে করছি, আত্মদীপ। অবশ্য হিংসেটাও মাথাব্যথার একটা কারণ। কিন্তু সে যাকগে। আমার ধারণা (ভুল হতে পারে) যারা সত্যি সত্যি প্রথম হওয়ার যোগ্য, তারা রেসে না নেমেই প্রথম হয়, কমা-লোকেরাই পাগলের মতো দৌড়ে মরে।
Deleteআমার বাবাকে রাগতে দেখা যায় প্রায়ই। অটোঅলা হোক বা রেলের টিটি, অন্যায় করলে বাবা কাউকে ছেড়ে কথা বলেনা। আমিও ছোটবেলা থেকে বেশ রাগী। তা একবার বাবা আমায় বলছে রাগ উচিত না, রাগলে বুদ্ধি গুলিয়ে যায় ইত্যাদি। আমিও উল্টে বললাম বাঃ, তুমি যে রাস্তায় ঘাটে রেগে গিয়ে ঝগড়া কর? তাতে বাবা বলল "আমি রাগিনা, রাগ দেখাই। মাথা ঠান্ডা রেখে লোকের কাছে রাগ দেখানোর দরকার হয় মাঝে মধ্যে, সেটা একটা শেখার জিনিস।" আমার কথাটা খুব পছন্দ হয়েছিল। কতটা মেনে চলতে পারি জানিনা, কিন্তু চেষ্টা করি।
ReplyDeleteএই ফোঁস করার প্রয়োজনীয়তাটা আমিও বুঝি। যদিও আমার ফোঁস করার কোনও যুক্তি নেই, যেখানে করা দরকার সেখানে ল্যাজ গুটোই, যেখানে দরকার নেই সেখানে গলাবাজি করি। কাজেই কোনওখানেই কাজে দেয় না।
Deleteদর্শন কিচ্ছু বুঝিনা তাই প্রথম দিকে কিছুই বুঝতে পারছিলামনা। শেযে একটু মাথায় ঢুকলো। জেঠুর কথাটা খুব মনে থাকবে। "কৃতিত্ব নিজে না নেওয়া"।
ReplyDeleteদর্শনে আমিও লবডংকা অনুজিৎ। বাবার ফিলজফিটা (বাকি সব ফিলজফির মতোই) শুনতে ভালো, মানতে দারুণ কঠিন।
Deleteমনে হচ্ছে এইটা মানতে পারব দিদি। চরম শান্তি।
ReplyDelete