দু'নম্বর আড্ডা
আমি জীবনে দু’রকমের আড্ডা
মেরেছি। এক নম্বর আড্ডার মূল উপজীব্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স। যেমন ধরুন এই কিছুদিন
ভোট নিয়ে চলল, তারপর ক্রিকেট, মাঝখানে একটু মুখ বদলানোর মতো করে দলিতের দুর্দশা
কিংবা পাহাড় চড়তে গিয়ে নিখোঁজ মানুষ, তারপরেই আবার হইহই করে ইডেনে লাঠিপেটা।
মারতে পারলে এ’ধরণের আড্ডা
চমৎকার। উত্তেজনার খামতি নেই, জ্ঞান আদানপ্রদানের সুযোগ বাড়াবাড়ি রকমের বেশি।
সদস্যের অভাবে আড্ডা ধুঁকছে, সে ঝুঁকি
প্রায় নেইই। তবুও এমন সুন্দর আড্ডা থেকে আমার ক্রমশ মন উঠে যাচ্ছে। তার প্রধান কারণ আমার প্রাণশক্তির অভাব। এই রকম আড্ডা মারার খাটুনি অনেক। নিয়মিত খবর রাখতে হবে,
লাইক মাইন্ডেড লোকেদের সঙ্গে নিয়মিত সে খবর বিলাবিলা করতে হবে (আনলাইক মাইন্ডেডদের
সঙ্গে কিছু নিয়েই বিলাবিলা করে মজা নেই, ব্যাটারা কিস্যু বোঝে না, খালি ভুলভাল
জায়গায় ভুলভাল যুক্তি দিয়ে আড্ডার রসভঙ্গ করে। সবাই সহমত হবে, তবে না খেলা জমবে।) সেই যৌবনের শুরুতে
যখন মনে মত্তহস্তীর বল ছিল, তখন ওসব গলাবাজি পোষাত, এখন আর পোষায় না।
এ’রকমটা যে হবে অবশ্য জানাই
ছিল। চ্যাটার্জিমাসি বলেই দিয়েছিলেন। একদিন প্ল্যাটফর্মে হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছি,
চুয়াত্তরের টিকির দেখা নেই, এদিকে প্রার্থনা শুরু হওয়ার পর স্কুলে পৌঁছলে কান ধরে
দাঁড়াতে হয়। প্রার্থনা শেষে সবাই চোখ খুলে দেখবে কুন্তলা কান ধরে
দাঁড়িয়ে আছে সে আতঙ্কে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছে, এমন সময় চ্যাটার্জিমাসি ফস্
করে আমার হাতটা টেনে নিয়ে বললেন, ‘দেখি অর্চনা, তোর মেয়ের কপালে কী আছে’। মা হাঁ হাঁ
করে ওঠার আগেই মাসি গড়গড়িয়ে বলে যেতে লাগলেন, ‘স্বাস্থ্য পাতে দেওয়ার মতো নয়,
জীবনীশক্তি না থাকার মতোই, জীবনে নানা ওঠাপড়া, একের পর এক রোম্যান্টিক গাড্ডায়
পড়তে পড়তে অবশেষে একখান বিয়ে, তাও সাড়ে বত্রিশের একটি দিনও আগে নয়।’ এই পর্যন্ত
বলে চ্যাটার্জিমাসি নিজেই শিউরে উঠে আমার হাত ছেড়ে দিলেন আর ওদিকে ভোঁ বাজিয়ে
চুয়াত্তর ঢুকে গেল।
এর পরেও কিছু লোক থাকবে
যারা হাত দেখাকে ‘বুজরুকি’, ‘আনসায়েন্টিফিক’ ইত্যাদি খারাপ খারাপ গালি দিয়ে উড়িয়ে দেবে। যাই
হোক হাত দেখা কিংবা চ্যাটার্জিমাসির ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা আজকের পোস্টের বিষয় নয়,
গল্পটা বললাম আমার জীবনীশক্তির অভাবের দাবি প্রমাণ করার জন্য। সেই ক্লাস সিক্সেই
আমার জীবনীশক্তি থেকে না-থাকার মতো ছিল, এখন নির্ঘাত নেগেটিভে চলছে। কাজেই কারেন্ট
অ্যাফেয়ার্সের রমরমা আড্ডায় আমার আর ঠাঁই নেই। আমি খেলা থেকে আউট হয়ে গেছি।
এই আউট হওয়া ব্যাপারটাকে লোকে
যতটা আতঙ্কের মনে করে ব্যাপারটা কিন্তু ততটাও নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে খেলা থেকে
আউট হওয়া শুধু হার্মলেস নয়, রীতিমত জরুরি। জীবনের বেশির ভাগ সত্যিই বিপজ্জনক রকমের
লেটে বুঝলেও এটা আমি শুরুতেই বুঝে গিয়েছিলাম। ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে নেমেই আউট হয়ে গেলে
বাকি সময়টা বেশ ছায়ায় বসে অন্যদের খেলতে দেখে টাইমপাস করা যায়। সবাই কী সুন্দর ঝাঁ
ঝাঁ রোদ্দুরে জিভ বার করে ছুটছে। ছোটার থেকে ছুটতে দেখা অন্তত একশো গুণ বেশি
আরামের, না হলে লোকে অত দাম দিয়ে টিকিট কেটে অলিম্পিকের রেস দেখতে যেত না।
কাজেই আড্ডা থেকে আউট হয়ে
আমার যে খুব দুঃখ হয়েছে তেমনটা নয়। হতে পারত, যদি না আমি দ্বিতীয় রকমের আড্ডাটার
সন্ধান পেতাম। কী করে পেলাম সে এখন আর আমার মনে নেই। আড্ডাহীনতায় মনমরা হয়ে চলতে
চলতে হঠাৎ একদিন দেখেছিলাম এককোণে বসে কিছু লোক জটলা করছে। চিৎকারের বদলে জটলা
থেকে ভেসে আসছে সরুমোটা গলায় খিকখিকখুকখুক হাসির আওয়াজ। এগিয়ে গেলাম। দেখি জটলার
সাইজ, বয়স, লিঙ্গ, রাজনৈতিক অবস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা---কিছুতেই কারও সঙ্গে কারও
মিল নেই। লেফট লিব্যারাল বেমালুম রাইট-অফ-সেন্টারের কাঁধে হাত রেখে হাসছে, কারওরই
গায়ে ফোসকা পড়ছে না। আমি ‘আমাকে নেবে ভাই?’ ভাব করে পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম, ভয় হচ্ছিল
এই বুঝি আমার ‘স্ট্যান্ড’ জানতে চেয়ে বসে, দেখলাম সে ব্যাপারে কেউ কোনও প্রশ্নই
করল না। স্রেফ সরে গিয়ে হাত দিয়ে মাটি চাপড়ে বলল, ‘এস এস বস বস। আড্ডা দারুণ
জমেছে।’
আমি বললাম, ‘আড্ডার টপিক
কী? মুদ্রাস্ফীতি কিংবা বেটিং হলে সে ব্যাপারে আমার কিছুই বলার নেই।’
তারা বলল, ‘টপিক তো কিছু
নেই। এ কি বিতর্কসভা নাকি যে টপিক থাকবে?’
আমি নিজের কানকে বিশ্বাস
করতে না পেরে জানতে চাইলাম, ‘টপিক নেই, তবে কি ওভারআর্চিং থিম আছে?’
তারা সকলে এবার আমার দিকে
সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাতে লাগল। বলল ‘কী সব থিমটিম বলছ তুমি আমরা কিচ্ছু বুঝতে
পারছি না, আমাদের ওসব কিছু নেই, শুধু দু’রকম গল্প আছে। ভালো গল্প আর খুব ভালো
গল্প।’
আমি কৌতূহলী হয়ে জানতে
চাইলাম, ‘খুব ভালো গল্প কী রকম?’
একজন বলল, ‘সব গল্পই ভালো,
কিন্তু চোর আর ভূত আর মাতাল আর পাগলের গল্প হচ্ছে খুব ভালো গল্প। তোমার জানা আছে
নাকি এঁদের নিয়ে গল্প?’
আমি লাফিয়ে উঠে বললাম, ‘আরে
গল্প মানে? ডাহা সত্যি ঘটনা বলতে পারি। আমাদের রেললাইনের ওপারে একজন পাগলি থাকেন,
খুবই মোলায়েম মেজাজের মানুষ, সামনে দিয়ে কেউ রিকশা করে গেলেই গড় হয়ে প্রণাম করেন।
হেঁটে গেলে পাত্তা দেন না। বারো মাস তিনশো পঁয়ষট্টি দিন লাল বেনারসির ওপর সবুজ
রঙের সোয়েটার না পরে থাকলে কেউ বুঝতেই পারত না যে উনি পাগল।’
তিলকমামা বলে উঠলেন, ‘আমিও একজন
পাগলকে দেখেছিলাম, দিব্যি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, স্যুট বুট পরা, দেখে কে বলবে
পাগল, কিন্তু বিয়ের কনের মতো মাথায় ফুলের টোপর, বাহুতে আর হাতের কবজিতে ফুলের
বালা, গলায় ফুলের মালা পরেছে।’
সবাই বলল, ‘হুম, বিয়ের সাজটা
পাগলদের একটা কমন ভালোলাগার বিষয় বোঝা যাচ্ছে। আচ্ছা মাতালদেরও কি তাই?
আমি আগ বাড়িয়ে বললাম, ‘সে
জানি না, কিন্তু মাতাল নিয়ে আমি অন্য একটা গল্প জানি, সেটা কি এখানে বলা যাবে?’
সবাই হই হই করে উঠল। হয়ে যাক হয়ে যাক। আমি
বললাম, ‘এটা অবশ্য আমার গল্প না, আমার এক বন্ধু তার এক বন্ধুর মুখে শুনে আমাদের
বলেছিল।’
সবাই বলল, ‘আরে কেয়া বাত,
কেয়া বাত। যত দূরের বন্ধু তত ভালো গল্প। যত মুখ থেকে মুখে ঘুরবে, তত রং চড়বে, মজা
ততই বাড়বে। বল শুনি।’
আমি উৎসাহ পেয়ে বলতে শুরু
করলাম। ‘আমার বন্ধুর বন্ধু একদিন বেশ রাত করে কলেজ থেকে ফিরে দেখছে স্টেশনের গায়ে রিক্সাস্ট্যান্ডে
একটি মাত্র রিকশা টিমটিম করছে। জুন মাসের মাঝামাঝি, সারাদিন গরমে তেতে পুড়ে তার
একেবারে নেতিয়ে পড়ার দশা। সে হাতে চাঁদ পেয়েছে মনে করে দৌড়ে গিয়ে রিকশাওয়ালাকে
বলেছে, ‘অমুক পাড়ায় যাবেন?’ অমনি রিকশাওয়ালা ঝিমুনি ভেঙে উঠে সিট থেকে লাফিয়ে নেমে,
‘আরে যাব বলেই তো বসে আছি দিদিভাই, আসুন আসুন, বসুন বসুন’ বলে মহা আপ্যায়ন করে
গামছা দিয়ে সিটটিট ঝেড়ে প্যাডেলে পা দিয়ে রেডি।
এদিকে রিকশাওয়ালার ফুর্তি
আর কথার টান দেখেই তো বন্ধুর বন্ধু বুঝতে পেরে গেছে ঘটনাটা কী। ভদ্রলোকের মৌতাত
একেবারে তুঙ্গে। সে একবার ভাবল গোটা রাস্তাটা হেঁটেই যাবে কি না, কিন্তু সে
সম্ভাবনার কথা মাথায় আসতেই তার এমন ক্লান্ত লাগল যে সে ‘যা থাকে কপালে’ ভেবে
রিকশায় উঠে পড়ল।
প্যাডেলে চাপ দিয়ে
রিকশাওয়ালা বললেন, ‘দিদিভাই, রাস্তাটা একটু বলে দেবেন।’ বন্ধুর বন্ধু ‘আরে এই তো
নাকবরাবর গিয়েই ‘আমরা বাঙালি’ ক্লাবের ডানদিক দিয়ে...’ শুরু করতেই তিনি বললেন, ‘আরে
না না আপনার বাড়ির রাস্তা আমার মুখস্থ, সেই কবে থেকে আপনাকে যাতায়াত করতে দেখছি,
আমি সে রাস্তার কথা বলছি না, বলছি যে এই কোথায় খানাখন্দটন্দ আছে সেটা যদি একটু বলে
দেন। বুঝতেই তো পারছেন...’
তারপর সারা রাস্তা মেয়েটিকে
চিৎকার করে, ‘দেখে দেখে! সামনে ল্যাম্পপোস্ট, সামলে সামলে! ডানদিকে নর্দমা, আরে
আরে অত বাঁ দিকে চাপবেন না, দেখছেন না কুকুরছানা শুয়ে আছে’---এই করতে করতে যেতে
হয়েছিল। সে এক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা নাকি।
এ রকম আরও বিভিন্ন গল্প হতে
লাগল। সবার স্টকের মাতাল আর পাগল শেষ হলে দিদিমণি মুখ খুললেন।
আমাদের সময় মোদক বলে
একরকমের জিনিস পাওয়া যেত। ছোট ছোট গুলির মতো দেখতে। খাবার জিনিস। কিন্তু আমাদের
খাওয়া বারণ ছিল। অবশ্য মিথ্যে কথা বলব না, শুধু আমরা কেন, সকলেরই খাওয়া বারণ ছিল।
দাদা আর দাদার বন্ধুরা লুকিয়েচুরিয়ে মাঝে মাঝে খেত। আমরা খেতে চাইলে বলত, দারুণ
নাকি বাজে খেতে, খেলেই মাথা ঘুরবে, বমি পাবে, হাতপা কাঁপবে। তবে তোমরা খাও কেন
জিজ্ঞাসা করেছিলাম, জবাবে গাঁট্টা ছাড়া আর কিছু মেলেনি।
একবার দাদাদের এক বন্ধুর
বিয়ে হল। কনের বাড়ি অনেক দূর। সাতআট ঘণ্টার নৌকোযাত্রা। দাদারা রওনা দিলেন। সঙ্গে
বড়রা কেউ নেই, শান্তি করে খাওয়া যাবে বলে মোদক নিয়ে নেওয়া হল বেশি করে। তবে ঠিক
হল, অনুষ্ঠানবাড়ি যাওয়া হচ্ছে, যাওয়ার পথে বেশি খাওয়া উচিত হবে না। এমন খেতে হবে
যাতে আনন্দও হয়, আবার লোকেও না বোঝে।
প্ল্যান করা মানেই প্ল্যান
ভণ্ডুল করার একজন না একজন লোক থাকবে। এখনও থাকে, তখনও থাকত। দাদাদের দলেও একজন
ছিল। নৌকো যখন বউয়ের বাড়ির ঘাটে গিয়ে ভিড়েছে, তখন সে আর নিজেতে নেই। দাদারা ‘এতখানি
জার্নি করে এসেছে, একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে আরকি’ বলেটলে কোনওরকমে ম্যানেজ দিল।
বিয়েবাড়ির লোককে বলল, ‘ওকে যদি একটু শুইয়ে দেওয়া যায় তাহলে ভালো হয়।’ বরপক্ষের
লোকের আরামের জন্য সে আমলের লোকেরা প্রাণ পর্যন্ত দিতে পারত, খাটবিছানার জোগাড় করা
তো নস্যি। বিয়ের মণ্ডপের একধারে একটা তক্তপোশ পেতে তাতে ‘অসুস্থ’ বন্ধুর শোওয়ার
ব্যবস্থা করা হল।
বিয়ে শুরু হল। পণ্ডিতমশাই
মন্ত্র পড়তে শুরু করলেন। একটু পর আশপাশ থেকে শেয়াল ডাকতে শুরু করল। কেউই কিছু মনে
করল না, সন্ধ্যেরাত্তিরে পাড়াগাঁয়ে শেয়াল না ডাকাটাই অদ্ভুত। বিয়ে বিয়ের মনে চলতে লাগল। এমন
সময় শেয়ালদের চেঁচামেচিতে তক্তপোশে শুয়ে থাকা বন্ধুর ঘুম গেল ভেঙে।
সে ধড়মড়িয়ে উঠে বসে বলল, ‘গান!
গান হচ্ছে কোথায়!’
এরকম কিছু একটা ঘটতে পারে আশঙ্কায়
একজন বন্ধুকে পাহারায় রাখা হয়েছিল, সে বলল, ‘আরে আরে করিস কী? গানটান হচ্ছে না
কোথাও, শেয়াল ডাকছে। তুই শিগগিরি ঘুমো।’
আর ঘুম। তার ঘুম ততক্ষণে
চটে গেছে। সে তক্তপোশের ওপর সোজা হয়ে বসে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে, ‘আরে, এই গানটা
তো আমি জানি’, এই না বলে শেয়ালদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চিৎকার করে হুক্কা হুয়া
হুক্কা হুয়া ডাক ছাড়তে লাগল।
আমাদের হাসিটাসি থামলে, তাকিয়ে
দেখি দিদিমণি হাসছেন না। গম্ভীর মুখে যেমন পিঠ টানটান করে বসে ছিলেন, তেমনই বসে
আছেন। যেন অপেক্ষা করছেন কখন হাহাহিহি থামবে। আমরা চুপ করলে তিনি বললেন, ‘বিয়ে ভালোয়
ভালোয় কেটে গেল, দাদারা ফেরতনৌকোয় উঠে বসলেন। বরবউ আলাদা ফিরছিল, কাজেই নৌকো আবার
দাদাদের দখলে। এবার আর চিন্তা নেই, এবার সারা রাত তোফা মোদক খাওয়া যাবে ভেবে তাদের
প্রাণে ফুর্তি আর ধরে না।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। মোদক
খাওয়া হচ্ছে, নৌকো চলছে। নৌকো চলছে, মোদক খাওয়া চলছে। মোদক যখন ফুরোলো, তখন একজন
খুব বিরক্ত গলায় বলে উঠল, ‘আঃ, নৌকোটা এত আস্তে চলছে কেন? অ্যাই কে আছিস, পাল খাটা।’
সবাই বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, পাল খাটানো হোক, পাল খাটানো হোক।’ কিন্তু পাল কোথাও পাওয়া
গেল না, তখন একজন দাদার একজন দানবীর বন্ধু নিজের ধুতিটি খুলে দিয়ে বললেন, ‘এই নাও
পাল।’
ব্যস। আর যায় কোথায়। তাঁর
দেখাদিখি বাকিরাও যে যার ধুতি খুলে পাল খাটিয়ে ফেলল, এতগুলো পালের হাওয়ায় নৌকো
পক্ষীরাজের মতো ছুটছে মনে করে খুশি হয়ে সকলে ঘুমিয়ে পড়লেন।
রাত আর মোদকের ঘোর দুই-ই
যখন কাটল তখন সবাই ঘুম ভেঙে উঠে নিজেদের দশা দেখে আঁতকে উঠলেন। কাড়াকাড়িতে কে যে কার
ধুতি পরে ফেলছেন, সে কথা ভেবে দেখার সময়ই কারও রইল না।
*****
আমি ঠিক করেছি বাকি জীবনটা
এই দ্বিতীয় রকম আড্ডা মেরেই কাটাব। ভোট শেষ হয়ে যাবে, ইডেনে লাঠিপেটাও থেমে যাবে,
কিন্তু আকাশে যতদিন সূর্যচন্দ্র আছে, পাগলামি করার জন্য পাগল আর মাতলামি করার জন্য
মাতালের অভাব তো আর হবে না।
Ditio rakom adda darun ... Matal Rickshawala kintu khub sanghatik jinis. emono hoechhe praner maya tyag na korte pere, khub klanto thaka sotteo majh rasta gie puro bhara die neme gechhi ar baki rasta hnete bari phirechhi..
ReplyDeleteAr kolkatai ebachhor ja garom porechhe tate charidike pagolder joi joikar hoe jachhe...
মাতাল রিকশাওয়ালা আমিও প্রাণ থাকতে এড়িয়ে চলি। আমার বন্ধুর বন্ধুর সাহসের সত্যিই বলিহারি, আমি হলে পারতাম না। গরমে আমাদেরও পাগল হওয়ার জোগাড় হয়েছে ইচ্ছাডানা, আমি আপনি সবাই একই সঙ্গে পাগল হব মনে হচ্ছে।
Deleteআর একবার শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে একটা বলশালী পাগল আমাকে জোর করে তার আধখাওয়া এটো জামরুল খাইয়ে দিয়েছিল, সে এক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা |
ReplyDeleteহাহা তিলকমামা, এই গল্পটা লিখতে গিয়েও লিখিনি। তোমার গল্পগুলো চুরি করে আমি বলে দিচ্ছি, তাই লজ্জা করে দুটোর বদলে একটা গল্প চুরি করেছিলাম আরকি। আশা করি তুমি রাগ করবে না।
Deleteরাগ করব কেন ? এটাকে চুরি বলে না, বলে সমাদর | আমার এক আধটা গল্প তোমার হাত দিয়ে যদি লোকজনের কাছে পৌছয়, তাতে মন্দ কি ? আমার তো নিজের অভিজ্ঞতা ছাপার অক্ষরে ( থুড়ি ব্লগের অক্ষরে ) দেখতে বেশ গর্বিত লাগছে !
Deleteযাক, বাঁচালে তিলকমামা।
Deleteki sanghatik :) - tinni
Deleteসবই তো বুঝলাম, তা ওই তারকাচিহ্নের আগের প্যারাগ্রাফের 'উঠলেঙ' টি কি ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ? মানে ধুতি খুলে পাল খাটানোর গপ্পো লিখতে বসলে লেঙ দিয়ে শুরু হওয়া অনেক গোলমেলে শব্দই মাথায় ঘুরতে পারে কি না!
ReplyDeleteহাহা, আরে নানা, এটা একেবারেই টাইপো, অদিতি। ধরে দেওয়ার জন্য থ্যাংক ইউ। ঠিক করে দিয়েছি।
DeleteArre, pagol der golpo amar daroon lagey. Sei Tarapada Rayr ekta golpo chhilo na, je ek pagol rasta diye jete jete sobbaike thamiye thamiye jigesh korto "dada Japan jachchhen kobe?" Oita amar favourite. :D
ReplyDeleteArektao chhilo. Sei je ekta lok saradin baranday ek gamla joley ekta chhip dubiye boshe thakto. Sobai obviously bhabto o pagol. Tarpor ekjon khub condescendingly jigesh korechhe "ki dada, apni chhip diye machh dhorchhen naki?" Tokhon lokta rege giye bolechhe "amay ki pagol bhaben naki dada, je gamlay machh dhorte jabo?"
Ar Bhubaneswar ey amar jethur barir kachhe ek pagoler khub traffic pulish howar shokh chhilo. Tai sey mathay helmet er bodoley daab porto, ar majhe majhei rastar majhe dariye traffic control korto. Khub-i omayik, helpful pagol.
হাহাহাহা, হেলমেট হিসেবে ডাবটা কিন্তু দুর্দান্ত আইডিয়া, বিম্ববতী। আমাদের রিষড়া স্টেশনের পাগল + মাতাল রেসিডেন্ট ছিলেন একজন, তিনি আবার জাপানের বদলে নিজের হারানো গামছার খোঁজ করতেন সর্বক্ষণ। 'দিদি, আমার গামছাটা দেখেছেন?' 'মেসোমশাই, আমার গামছাটা দিন না', ইত্যাদি প্রভৃতি।
Deleteআহা, বড্ড ভাল লাগলো। :)
ReplyDeleteপাগল আর মাতালদের খারাপ লাগতেই পারে না, অরিজিত।
Deleteপাগল নিয়ে বনফুলের গল্পটা পড়েছেন? সেই যে প্রতিবছর শিবরাত্রির দিনে একজন পাগল হয়ে যায়? পাগল নিয়ে ওর চাইতে ভালো গল্প আমি খুব কম পড়েছি।
ReplyDeleteওটা শুধু পাগলসংক্রান্ত কেন, গোটা বাংলাসাহিত্যেরই অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প। গল্পটার কথা মনে করলেই আমার গায়ে কাঁটা দেয়, সেই কবে পড়েছি, এখনও।
Deletemodok jinis ta ki kono madok naki didi?gopo sune serokom mone holo..
ReplyDeletejaihok...kokhono jibonishoktir obhab hole,khub hotash lagle ba kokhono dunia sudhho sobar upor(nijer upor sob cheye besi) rag ba obhiman hole ami ekta french cinema dekhi...apnakeo link ta die rakhlam..pore dekhe neben somoy kore..
http://www.imdb.com/title/tt0211915/
mon ta odbhut rkoom er bhalo hoe jabe...miliye neben.
এটা আমার সর্বকালের অন্যতম প্রিয়তম সিনেমা ঋতম। অনেকদিন দেখা হয়নি, সত্যি। আপনি মনে করিয়ে দিলেন ভাগ্যিস। থ্যাংক ইউ।
Deleteমোদকটা মাদকই বটে। ঠিকই ধরেছেন।
উচ্চ পঞ্চ ...:)
ReplyDeleteপাগল তো হলো .. চোর , ভূত .. এগুলো কি আগামী পর্বে ?
হাহা, উচ্চ পঞ্চ, আত্মদীপ। হবে হবে, চোর আর ভূত ছাড়া কথোপকথন চলবেই বা কী করে। তবে পরের পর্বেই হবে তেমন কথা দিচ্ছি না। পাছে রাখতে না পারি।
DeletePagol sune mone porlo... tobe ektu adhtu vhul hote pare, nijogune khoma kore deben...
ReplyDelete" sonre jogai, vishon lorai holo..
sat german khotom kore jogai byata molo"..
আহা, জগাই আমার ফেভারিট। সাত জর্মান জগাই একা, তবুও জগাই লড়ে। বাঙালিদের মধ্যে এমন বীরপুরুষ কিন্তু দেখা যায় না, বল অর্ণব?
Deletemarattok sab galpo :) :) 2 no adda jug jug jio- tinni
ReplyDeleteসেদিন দারুণ মজা হয়েছিল, তিন্নি।
DeleteKuntala Di,
ReplyDeleteTomar modok r matal rikshwawala r galpo sune takhan theke hesei jacchi. :)
Soubhagya krame amader serakam akta ditio Adda r group ache. R satyi bolte ki sei dol e amon akjan ache, jar sab gappo i ei bole suru hoy he "amar school/paray am bandhu chilo....":)..
এই লাইন দিয়ে যে সব গল্পগুলো শুরু হয়, সেগুলো ভালো হতে বাধ্য। তোমার এই রকম গল্প বলার/ শোনার দল আছে শুনে খুশি হলাম।
Deleteএখানেও আপনার সঙ্গে আমার একটা মিল দেখা যাচ্ছে, এককালে যখন বয়স কম ছিল তখন ওই প্রথম ধরণের আড্ডায় অংশগ্রহণ করেছি অনেক। তারপর ইদানিং বুড়ো হয়ে থেকে দেখছি আর পেরে উঠিনা। একে তো আমার ডান-বাঁ জ্ঞান নেই বললেই চলে, তার ওপর কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স থেকে কারেন্ট চলে গেলে তবেই আজকাল আমার নজরে পড়ে। সবথেকে ভয়ের কথা হলো আমি শেয়ার বাজারের খোঁজ রাখিনা। তাই দু নম্বর আড্ডা ছাড়া গতি নেই। তাছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গল্পের ঝুলিও ভরতে থাকে বলে সুবিধা।
ReplyDeleteএক মাতাল রিকশাওয়ালার গল্প বলে ফেলি আমিও। আমার বাবার মাসিমা আমাদের বাড়ি থেকে বাড়ি ফিরছেন, আমার ওপর দায়িত্ব ছিল ওনাকে রিকশায় তুলে দেওয়ার। আর কোনও রিকশা না পাওয়ায় আপনার বন্ধুর মতনই আমার ঠামুকেও মাতাল রিকশাওয়ালার জিম্মায় দিয়ে এসেছিলাম। উনি অবশ্য বেশ স্বাবলম্বী ছিলেন, আমায় বললেন চিন্তা না করতে, উনি ঠিক রিকশাওয়ালাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। পরে শুনলাম মাঝ রাস্তায় রিকশাওয়ালা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে, তাকে তুলে পরিচর্যা করতে হয়েছে। ভাগ্যে বাড়ির কাছে পৌঁছে গেছিলেন তাই ঠামু বাকি রাস্তাটা হেঁটেই গেছেন।
হাহাহাহা, ঠাকুমারা যে আমাদের থেকে অন্তত এক কোটি গুণ স্মার্ট ছিলেন তার আরও একটা প্রমাণ পাওয়া গেল। রিকশাওয়ালার কপাল ভালো আমার মতো লোকের বদলে ঠাকুমাকে সওয়ারি পেয়েছে। আমি হলে তো তার অজ্ঞান হওয়ার সাথে সাথেই আমিও 'ও মা গো, এবার আমি কী করব গো, এ ঝামেলা আমি কী করে সামলাব গো' বলে নিজেও জ্ঞান হারাতাম।
Deleteবাই দ্য ওয়ে, 'অ্যাফেয়ার্স' নজর করার যে ব্যাপারটা বললেন, সেটা আমারও দিনদিন মাত্রাতিরিক্ত রকমের বাড়ছে। প্রেম তো ছাই, আশেপাশে পূর্বরাগের ধোঁয়া ওঠা মাত্রই নাক চুলকোতে শুরু করে। এমন কি বললে বিশ্বাস করবেন না, চোখে না দেখেই অর্চিষ্মানের অফিসের একটি বাডিং প্রেমকে আমি ধরে দিয়েছি। নিজের ক্ষমতায় নিজেই চমৎকৃত।
Deleteআমি অবশ্য ঠিক তা বলিনি। আমি "কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স" এর কথা বলছিলাম, মানে যাকে বাংলায় বলে জি.কে.। আর আমি বলছিলাম যে আমি ওটার খোঁজ রাখিনা। তবে অন্যরকম অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কে আপনার ক্ষমতার কথা জেনে খুশি হলাম।
Deletebah,kuntala ...darun toh ! barir modhyei erakam akjon feludake peye ami pulokito :)
Deleteদেখেছিস, নজরটাই কেমন দূষিত হয়ে গেছে, অ্যাফেয়ার্স শুনেই 'অ্যাফেয়ার'-এর কথা ভেবেছি।
Deleteআমার কলেজ ছিল কলেজ স্ট্রীট পাড়ায়. পূরবীর সামনে একজন পাগলী থাকত. সে প্রথমদিন থেকেই আমার সাথে হাসি বিনিময় করেছিল. সেটা আমি বাড়ি এসে বলাতে আমার দাদার মন্তব্য ছিল 'রতনে রতন চেনে'. কিছুদিন পর আমার বন্ধুবান্ধবদের ও নজর গেল ফলে আড্ডার আমি এক মুর্গি. তারপর তো হাইট...কলেজ শেষ হওয়ার কিছুদিন আগে সে আমাকে জিজ্ঞাসাই করে ফেলল কি দিদি খবর ভালো তো...আমি তখন একপাল বন্ধুদের সাথে...বোঝ অবস্থা.
ReplyDeleteহাহাহা দেবশ্রী, তোমার পাগলের সঙ্গে আত্মার আত্মীয়তা আছে দেখতে পাচ্ছি তো। ভালো ভালো।
Deleteআমিও আজ থেকে প্রতিজ্ঞে করলেম, দু'নম্বর আড্ডা ছাড়া আর কোন আড্ডা দেবনা ............ পরিবশনার গুণে রচনাটি নির্মল আনন্দ দিল।
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, শর্মিলা। লেখাটা আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম।
DeleteEi rakam Panchmiseli Adda Darun Laage.
ReplyDeleteআমার তো আজকাল এই রকম পাঁচমেশালি আড্ডা ছাড়া আর কোনও রকম আড্ডাই বিতিকিচ্ছিরি লাগে, সুভাষ। মনঃসংযোগের ক্ষমতা কমে গেছে কি না, এক বিষয়ে বেশি কথা বললে বা শুনলে মাথা ধরে যায়।
DeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteএই যাঃ, ডবল কমেন্টের একটা আমি ডিলিট করেছিলাম, বাকিটা তুমি করলে নাকি, অনুজিৎ?
Deleteদিদি, আগে ভাবতাম দু নম্বর আড্ডা টা দিলে সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভবান হওয়া যায় না।
ReplyDeleteকিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে দু নম্বর আড্ডা টাই সেরা কারণ দু নম্বর আড্ডা টা দিলে আর কিছু না হোক দু দন্ড হাসা তো যায়। :)
পড়ে খুব ভাল লাগলো দিদি আর খুব হাসলামও ওগুলো কল্পনা করে। পেটে খিল ধরার মত ব্যাপার।
হা হা হা..
**[আগের টাই একটা বানান ভুল লিখে ফেলেছিলাম, এডিট্ অপসেন্ পেলাম না তাই মুছে নতুন করে লিখে দিলাম]
ওহ। বুঝলাম। সে দিক থেকে দেখতে গেলে যে কোনও রকম আড্ডাই সময় নষ্ট, অনুজিৎ, কিন্তু নষ্ট যদি করতেই হয় তাহলে সিপিএম-তৃণমূল নিয়ে চুলোচুলি না করে এই সব বাজে গল্প নিয়ে হাহাহিহি করা ঢের ভালো। অন্তত আমার তো তাই মত।
Deleteএকটাতে ভুল ছিল আর পরের টা ঠিক।
ReplyDeleteআমি আগের টা মুছলাম আর তুমি পরের টা।
একটা মুছলাম আর দুটোই উড়ে গেল। ভাবলাম এখানে বুঝি তাই নিয়ম। তাই আবার কষ্ট করে লিখলাম দিদি।
আমিও তোমার সাথে একমত এখন থেকে। সময় নষ্ট করে হাহা করা ভাল ওই পলিটিকস্ এর চাইতে।
ReplyDelete