মন্টু মিস্তিরির জানালা



উনিশশো সাতাশি সাল নাগাদ আমাদের বাড়ির চেহারায় অনেকগুলো পরিবর্তন আসে। যোগ হয় বারান্দাসহ একটি নতুন ঘর আর বিয়োগ হয়ে যায় বাগানের প্রায় অর্ধেক। যে ক’টা গাছ কাটা পড়ে তার মধ্যে বলার মতো ছিল একখানা কাঁটাভরা কুল আর একখানা পেয়ারা। কুলগাছ নিয়ে আমার আফসোস নেই, বেঁচে থাকলেও ও গাছ আমার কোনও কাজে লাগত না, কিন্তু পেয়ারাগাছ নিয়ে বিলক্ষণ আছে। আমাদের বাড়িতে আরও একখানা পেয়ারা গাছ আছে, বছর বছর তাতে দিব্যি ফলও ধরে, কিন্তু ঠাকুমা বলেন যেখানা গেছে সেখানার জাতই নাকি আলাদা ছিল।

উনিশশো সাতাশি সাল নাগাদ আমার জীবনেও একটি পরিবর্তন আসে। আমি একখানি ডায়রি প্রাপ্ত হই। ডায়রি আমাদের বাড়িতে এমন কিছু অমিল ছিল না, জানুয়ারি মাস পড়লেই গাদাগাদা ডায়রিতে ছেয়ে যেত বইয়ের টেবিল, কিন্তু তারা সবই মান্ধাতার আমলের লাল কিংবা মেরুন নকল চামড়াবাঁধাই গামবাট ডায়রি। আমার সৃষ্টিশীলতার গোড়ায় ধোঁয়া দেওয়ার মতো সূক্ষ্মতা সেগুলোর একটারও ছিল না। ও ডায়রিতে মাসমাইনের খুঁটিনাটি আর কিষাণ বিকাশ পত্রের হিসাব রাখাই চলত শুধু

এই যখন পরিস্থিতি, তখন একদিন সন্ধ্যেবেলা অফিস থেকে ফিরে মা ব্যাগ থেকে একখানা ডায়রি বার করে আমার হাতে দিলেন। প্রথমটা আমি সেটাকে ডায়রি বলে চিনতেই পারিনি। রোগা, লম্বাটে, ধবধবে সাদা গায়ে বাদামি পোলকা ডট। আমার ছ’বছরের হাতের পাঞ্জার ভেতর সেটা দিব্যি এঁটে গেল। আর খুলে গেল আমার লেখকসত্তার মুখে টাইট করে এঁটে বসানো ছিপি।

কালক্ষয় না করে আমি ডায়রি লিখতে শুরু করলাম। পিসির ক্ষেপানি, ঠাকুমার বকুনি, বুচিদিদির আমাকে ফেলে খেলতে চলে যাওয়া---আরও যা যা অন্যায়অবিচারের মুখোমুখি হতে হত আমাকে রাত্রিদিন, তাদের রক্তাক্ত বর্ণনা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লিখে রাখতে শুরু করলাম আমি আমার পোলকা ডট ডায়রিতে। অচিরেই যা ঘটবার তাই ঘটল। একদিন সকালে উঠে আমি আবিষ্কার করলাম অবিচারের ভাঁড়ার ঢনঢন, এদিকে ডায়রি তখনও চারের পাঁচ ভাগ খালি।

শুনেছি ‘সংকট’ শব্দটা লিখবার সময় চাইনিজরা তুলির দিয়ে পাতার ওপর দুটো আঁচড় কাটেএকটা আঁচড়ের মানে বিপদ, অন্যটার মানে সুযোগ। এই তথ্যটা জানা ছিল না বলেই বোধহয়, ওই চরম সংকটের মধ্যে দাঁড়িয়ে শুধু বিপদটাই আমার চোখে পড়েছিল, সুযোগের বিন্দুবিসর্গ আঁচ পাইনি। অথচ আজ যখন এতদূর থেকে দেখছি, তখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি বিপদের মধ্যে হাঙরের মতো হাঁ করে রয়েছে একখানা সুবর্ণসুযোগ যে মুহূর্তে আমি বুঝলাম নিজেকে নিয়ে লেখার আর কিছু নেই, তৎক্ষণাৎ আমার উচিত ছিল অন্যদের নিয়ে পড়া। কল্পনার চরিত্র খাড়া করে, তাদের জীবনে নানাবিধ সংকটের আমদানি করে তার সমাধানের জন্য প্রাণপাত করা। কল্পনার ভয়, কল্পনার ভালোবাসা, কল্পনার রাগ, কল্পনার দুঃখ। সত্যিকারের দুঃখের থেকে কাল্পনিক দুঃখের বিলাস যেমন অনেক বেশি, তেমনি বাস্তবের অনুভূতির থেকে কাল্পনিক অনুভূতি অনেক অনেক বেশি মহান ও অর্থপূর্ণ।

আমার মোটা মাথায় সেটা ঢুকল নাওই সংকটমুহূর্তে দাঁড়িয়েও আমি বাহাদুরি দেখিয়ে কল্পনার আশ্রয় নিলাম না, ঘোর বাস্তবের মায়ায় আটকে পড়ে রইলাম। আর সেই মুহূর্তেই লেখক হওয়ার স্বপ্নের কপালে কালি পড়ে গেল। তার বদলে হয়ে গেলাম ব্লগার।

হাতের কাছে লেখার জিনিস না পেয়ে আমি টুকতে শুরু করলামনাকে সদ্য চাপা চশমার কাঁচের ভেতর দিয়ে যা যা দেখা যায়, শোনা যায়, ছোঁয়া যায়মায়ের অফিসে প্রোমোশনের পরীক্ষার রেজাল্ট, ঠাকুমার ব্লাডপ্রেশার, বড়মাসির বাড়িতে যাওয়ার বাসের নম্বর ও স্টপেজের নাম। পয়লা বৈশাখের পাড়ার ফিস্টের মেনু। সামনের ঘরের দেওয়ালের গজালে বিঁধে রাখা সরস্বতী পুজোর চাঁদার লিস্টের গোছা দেখে দেখে কোন ক্লাবের ভাগ্যে কত জুটেছে তার তালিকা

আর এই ক্ষুধার্ত টোকাটুকির মধ্যে শিকে ছেঁড়া রসগোল্লার ভাঁড়ের মতো এসে পড়ল আমাদের হাউস এক্সটেনশন প্রোজেক্ট। প্রোজেক্টের প্রযোজক আমার মাবাবা, হর্তাকর্তাবিধাতা মন্টু মিস্তিরি।

মন্টু মিস্তিরির নামটা লেখার আগে খানিকক্ষণ বসে ভাবতে হল দৈনন্দিন জীবনে পেশাদার যে সব মানুষজনের সঙ্গে দেখা হয় তাদের সকলকেই একটি না একটি সম্পর্কের নাম ধরে উল্লেখ করতে শেখানো হয়েছিল ছোটবেলায়তিনবেলা ঘর ঝাড় দিতে আসেন যিনি তিনি মাসি, মা ও আমাকে সকালে স্টেশন পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে নিয়ে যান যিনি তিনি কাকু, ভীষণ আস্তে সাইকেল চালিয়ে নারকেল গাছে ওষুধ দিতে আসেন যিনি তিনি দাদু, এমনকি তিন বছর পরপর বাড়ি রং করতে আসত যে নাড়ু তাকেও আমার দাদা বলে ডাকতে হত, কিন্তু মন্টু মিস্তিরির সঙ্গে নাড়ুদার থেকে ঢের বেশি ঘন ঘন দেখা হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে কোনওদিন কিছু বলে ডাকিনি কেন ভগবানই জানেন।

আমি নয়, বাড়ির কেউই ডাকত না। পাড়ারও কেউ ডাকত না। এই তথ্যটা জানা এমন কিছু শক্ত ছিল না। আশেপাশের কারও না কারও বাড়িতে কিছু না কিছু কাজ লেগেই থাকতসকালবেলা প্রায়শই চিৎকার শোনা যেত, ‘ওরেএএ মন্টু মিস্তিরি এসে গেছে রে, এতক্ষণ ধরে বলছি চানে যা, চানে যা, একটা কথা যদি কানে ঢোকে।’ দেখেশুনে আমাদের বাড়ির কড়া নড়লে আমিও জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে বলতাম, ‘বাবা বাবা, মন্টু মিস্তিরি এসে গেছে।’ বাবা খবরের কাগজ ভাঁজ করে উঠে পড়ার সময় রান্নাঘরে উঁকি মেরে মা’কে বলে যেতেন, ‘শোনো, মন্টু মিস্তিরি এসে গেছে, সামনে দুটো চা পাঠিয়ে দিতে বোলো তো।’  

কিন্তু মনটা খচখচ করত। খচখচানিটা কীসে কাটল সেটা বলি। মাঘপঞ্চমীর আগে আগে তিনশো সতেরো নম্বর দল যখন কড়া নেড়ে চাঁদা নিতে এল তখন আমার ঠাকুমা চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোরা কারা রে?’ আমি খুব ভালো করেই জানতাম এরা কারা, এদের সঙ্গে রোজই আমার পার্কে দেখা হয়, ঢেঁকির মালিকানার লড়াইয়ে এদের কারও কারও কাছে আমি রোজই হারি, কিন্তু ঠাকুমা কিনা ঢেঁকি চড়ায় ইন্টারেস্টেড নন, তাই তিনি কাউকে চিনতে পারেননি। ঠাকুমার জেরার উত্তরে একটুও না ঘাবড়ে দলের মধ্যে হাইটে সবথেকে খাটো কিন্তু সাহসে সবথেকে লম্বা, ঝাঁকড়াচুলো, কালোকোলো উদয় সিং বুক ফুলিয়ে বলল, ‘আমি মন্টু মিস্তিরির ছেলে।’

এর পর মন্টুবাবুকে মন্টু মিস্তিরি বলে ডাকতে আমার আর কোনও সংশয় হয়নি।

যাই হোক, মন্টু মিস্তিরি দলবল নিয়ে এসে পড়ার পর আমার ডায়রি দেখতে দেখতে ভরে উঠল। ক’বস্তা সিমেন্ট, ক’বস্তা বালি, ক’লরি ইঁট মন্টু মিস্তিরি বাবার সঙ্গে গম্ভীরমুখে আলোচনা করত আর আমি শুনে শুনে পোলকা ডট ডায়রিতে টুকে রাখতাম। এই টোকাটুকির উদ্দেশ্য যে শুধু ডায়রির পাতা ভরানো ছিল তা নয় কিন্তুবাবা যদি দরকারি কিছু ভুলে যান তাহলে আমি আমার ডায়রি দেখে তাঁকে সে কথা মনে করিয়ে দিতে পারব এইরকম উচ্চাশা ছিল মনে। দুঃখের বিষয় বাবা কখনওই কিছু ভোলেননি, আর আমারও ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ হয়নি

সেই ডায়রিটা এখনও আছে আমাদের বাড়িতেমা রেখে দিয়েছেন। প্রায় আঠাশ বছর হতে চলল, পুঁচকে ডায়রি এখনও টসকায়নি। বাঁধাইটাধাই সব যেমনকে তেমন আছে, গায়ের রংটা শুধু সাদার বদলে ঘিয়ে মতন হয়ে গেছে। প্লাস্টিক মলাটে এখনও গোঁজা রয়েছে ম্যাগির সঙ্গে ফাউ পাওয়া চিতাবাঘের চৌকো স্টিকার।

আগের বার বাড়ি গিয়েছিলাম যখন মা ডায়রিটা বার করেছিলেন। পাতায় পাতায় ছত্রে ছত্রে বোকামি ঠাসাঠাসি, মা একটা একটা করে পাতা উল্টোচ্ছেন আর হেসে খুন হচ্ছেন, কিন্তু নিজের বোকামি কিনা, আমি অত জোরে হাসতে পারছিলাম না। তাছাড়াও বোকামি যখন পঁচিশ বছরের বেশি পুরোনো হয়ে যায় তখন তাকে দেখলে লজ্জার থেকে মজার ভাবটাই বেশি জাগেপাতা উল্টোতে উল্টোতে সিমেন্টবালির হিসেব বেরিয়ে পড়ল। হিসেবের তলায় দেখি ‘লিন্‌টন্‌’ ঢালাইয়ের (আমি জানি না, এ’রকম কোনও ঢালাই আদৌ হয় কি না, শব্দটা লিন্‌টন্‌ কি না তাও জোর দিয়ে বলতে পারছি না) মাপজোক দিনক্ষণ লেখা আছে আর তার তলায় ইনভার্টেড কমা-টমা দিয়ে, যাতে ব্যাপারটার গুরুত্ব নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ না থাকে, লেখা আছে ‘প্যারালাল জানালা’।

লেখাটা দেখা মাত্র একটা ছবি আমার চোখে ভেসে উঠল। এই যে এখন পাঁচ হাত দূরে আর্জেন্টিনা ইরানের খেলা দেখছি, তার থেকে ঢের স্পষ্ট করে। কোমর পর্যন্ত উঁচু ইঁটের দেওয়ালের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মন্টু মিস্তিরি  বাবাকে বলছেন, ‘মেজদা, প্যারালাল জানালা না রাখলে জানালা রাখার কোনও মানেই হয় না। হাওয়া শুধু ঢুকলেই তো হবে না, তাকে বেরোনোরও তো জায়গা দিতে হবে। এই জানালা দিয়ে ঢুকবে, ওই জানালা দিয়ে বেরোবে, তবে না আপনার গায়ে লাগবে?’

শেষ বাক্যটা বলার সময় মন্টু মিস্তিরি হাত দিয়ে শূন্যে একটা হাইওয়ে এঁকে দিল। যে হাইওয়ে ধরে হইহই করে হাওয়া ছুটে বেড়াবে আমাদের ঘরের ভেতর।  

মন্টু মিস্তিরিকে মিস্তিরি বলে ডাকলে কী হবে, তার কথা অমান্য করার সাহস কারও ছিল না। আমাদের নতুন ঘরেও প্যারালাল জানালা কাটা হল। কাটতে কাটতে ঘরের চার দেওয়ালে মোট পাঁচটি জানালা আর দুটি দরজা ফুটে বেরোল। মাবাবা মাথা চুলকে ভাবলেন একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল নাকি, কিন্তু মন্টু মিস্তিরি  অভয় দিয়ে বলল, কিচ্ছু ভাববেন না, সারা বাড়ির মধ্যে এই ঘরটাই সেরা হবে।’

হয়েওছিল তাই। ঘোর গরমের দুপুরে ব্যানার্জিজেঠি ঠাকুমার সঙ্গে চাইনিজ চেকার খেলতে এসে বলতেন, ‘মাসিমা, চলুন না নতুন ঘরে বসে খেলি, বেশ হাওয়া লাগবে গায়ে।’ রাত্রিবাস করতে আসা অতিথিরা ভীষণ কনসিডারেট হয়ে বলতেন, ‘আরে আমাদের নিয়ে একটুও ভেবো না অর্চনা, আমরা ওই কোণার ঘরটায় শুয়ে পড়ব’খন। কিচ্ছু অসুবিধে হবে না।’

অসুবিধে যা হয়েছিল সে শুধু আমার। রাতে শুয়ে দেখতাম দু’পাশের জানালা দিয়ে ছায়াছায়া হাত বাড়িয়ে আসছে যেন কারা, (সেগুলো নিম কিংবা জবাগাছের ডালও হতে পারে, আবার অন্য কিছুও হতে পারে- কিচ্ছু বলা যায় না।) ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক তীব্র হচ্ছে, মাথার কাছের জানালাটার বাইরে কী হচ্ছে ভগবানই জানেন। চোখ টিপে শুয়ে থাকতাম, ঝিঁঝিঁর ডাক ছাপিয়ে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠত হৃৎপিণ্ডের ধুপধাপ। কানে তালা ধরানো সে ধুপধাপ শুনতে শুনতে মন্টু মিস্তিরিকে অভিশাপ দিতাম। জানালায় জানালায় ঘর ছয়লাপ করে দেওয়ার জন্য। আমার রাতের ঘুম দুঃস্বপ্নে দুঃস্বপ্নে ছেয়ে দেওয়ার জন্য।  

অথচ সকালে উঠে যখন দেখতাম সেই একই জানালা দিয়ে ঝাঁপিয়ে এসেছে রোদ্দুর, আমাদের সেকেলে বাড়ির বাকি অংশের সঙ্গে মানানসই করার জন্য জানালায় বসানো শিকের সমান্তরাল ছায়া ফুটে উঠেছে বিছানার এলোমেলো চাদরের ওপর, তখন ভয়টয় কোথায় হাওয়া হয়ে যেত। ভূতের বদলে জানালা দিয়ে এগিয়ে এসে হাত মেলাতে চাইত জবাগাছের কচি নরম ডাল, ডালের ডগায় সদ্য ফোটা লালরঙের নরম কুঁড়ি।

এখন আমরা যেসব বাড়িতে থাকি সেসব বাড়ি হয়তো অনেক দামি মিস্তিরিরা বানিয়েছে, কিন্তু তারা মন্টু মিস্তিরির মতো প্যারালাল জানালার গুরুত্ব বোঝেনি। এই যেমন এখন বাইরে হু হু করে হাওয়া বইছে, বাড়িওয়ালার সজনেগাছের দুলন্ত মাথায় তার স্পষ্ট প্রমাণ দেখছি, কিন্তু হাট করে খোলা জানালার গা ঘেঁষটে বসেও সে হাওয়ার ছিটেফোঁটা পাচ্ছি না আমি। জানালার বাইরে এসে উঁকি মেরে হাওয়া ফিরে যাচ্ছে। বেরোনোর পথ নেই দেখে ঢুকছে না। বয়ে গেছে তার আমার মতো বদ্ধ ঘরে বসে পচে মরতে। সে মনের সুখে খেলে বেড়াচ্ছে খোলা আকাশের নিচে, দেদার দোল খাচ্ছে জানালার পাল্লা ধরে। আর আমি তার এত কাছে থেকেও তাকে ছুঁতে পারছি না, গুমোট হয়ে বসে বসে মন্টু মিস্তিরির কথা ভাবছি।       


Comments

  1. Amar simito civil engineering er bidde bole je lintel dhalai bole ekti jinis hoi... ar sotti parallel janala sotti khub kajer jinis....

    ReplyDelete
    Replies
    1. তাহলে ওই লিনটেল ঢালাই-ই হবে, অর্ণব। ছ'বছরের কানে কী শুনতে কী শুনেছি।

      Delete
  2. Besh Valo laglo...................

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, ধন্যবাদ সৌগত।

      Delete
  3. darun laglo ...khub bhalo lekha .. parallel janala sotti baro bhalo jinish ... amader bombay er bariro aschrjyo design...charidike haway urie nie geleo barir modhye ak fonta hawa dhokar upay nei...tor chotobelar diary dekhar khub icche holo :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. সিরিয়াসলি, কত মাথা খাটিয়ে যে এরা বাড়ি বানিয়েছে ভগবানই জানেন। তবে তুই হাওয়া নিয়ে নালিশ করিস না, বিশেষ করে এখন তোদের যে রকম ওয়েদার চলছে তাতে হাওয়া খানিক কম পড়লেও কিছু আসবে যাবে না। আমাদের কষ্ট যদি দেখতিস।

      Delete
  4. aare lintel to load bearing er dhalai. minu babu tow dekhchi boss mistiri.

    ReplyDelete
    Replies
    1. তবে? মফস্বলের মিস্তিরি বলে কি মানুষ না, শম্পা?

      Delete
  5. ম্যাগির সঙ্গে ফাউ পাওয়া চিতাবাঘের চৌকো স্টিকার এখন আর দেয়না গো দিদি..
    প্যারালাল জানালা.. আর ওই কি একটা ঢালাই বললে..
    উফ্ফ্ কি দারুন লাগল কুন্তলা দি..

    আমাদের বাড়িতেও ওই প্যারালাল জানালা করা রয়েছে। পূর্ব পশ্চিমে। কোন মিস্ত্রি করেছে কে জানে..
    হাওয়ায় ঢোকেনা।
    তাই আমি রাগ করে একটা বন্ধ করে রেখেছি।
    হাঃ হাঃ :D

    আর আমার দক্ষিণ জানালা দিয়ে এমন হাওয়া দেয় যে বছরের বেশির সময়েই "নাক হইতে জল পড়ে"..
    এমন কি আজও..

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনুজিৎ, আসলে এখন ম্যাগির বিজনেস এমনিই দারুণ চলছে বোধহয়, তাই আর স্টিকার-মিকার দিয়ে খদ্দের টানতে হচ্ছে না। তোমার রাগ করে জানালা বন্ধ করে রাখার ব্যাপারটা পড়ে অটোয় বসে হাসছিলাম। কিন্তু দক্ষিণের জানালা পর্যন্ত পৌঁছেই সে হাসি উড়ে গেল, পড়ে রইল শুধু একগাদা হিংসে।

      Delete
  6. পড়েই মনটা ভালো হয়ে গেল। আপনি যে কল্পনার আশ্রয় না নিয়ে বাস্তব ঘটনা নিয়ে লিখে গেছেন, তার জন্য অজস্র ধন্যবাদ। ব্লগার না হয়ে লেখক হলে আপনি হয়ত দেশে লিখতেন, আর আমি পড়তাম না... দেশ এবং পুজাবার্ষিকী পড়া আমি বহুদিন ছেড়ে দিয়েছি, পুরনো কাগজওলারাও ওসব নিতে চায় না।
    প্যারালাল জানালা জিনিসটা খুব ভালো। দিল্লির গরমে একটু ভেন্টিলেশন হলে কাজ দিত, কিন্তু এরা কার্পেট এরিয়া বাড়ানোর ফিকিরে সিঁড়িটা অবধি ছোট করে ফেলে। তদুপরি গায়ে গায়ে লাগানো বাড়ি, প্যারালাল জানালা ফোটাবেন কোথায়?
    সকালে অফিস যাবার সময় যদি আটা বেলে আমাদের বসার ঘরটায় রেখে যান, বিকেলে এসে দেখবেন রুটি হয়ে গেছে। আর কেলেঙ্কারি দেখুন, আমাকে ওই ঘরে বসেই ফুটবল খেলা দেখতে হয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, দেবাশিস। আপনার কথা শুনে যারপরনাই শান্তি পেলাম।

      এই গায়ে গায়ে বাড়ি ব্যাপারটা আমার এত অস্বস্তিকর লাগে যে কী বলব। সি আর পার্কে এখন চারদিকে বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট উঠছে। কী সুন্দর সুন্দর সব বাড়ি ছিল, একতলা কি ম্যাক্সিমাম দোতলা, সামনে বাগান, সিমেন্ট বাঁধানো ছোট রাস্তা---সব হাওয়া, তার জায়গায় ধাঁইধাঁই করে চারতলা কেল্লা উঠছে।

      ওইরকম রুটি হয়ে যাওয়া বাড়ি আমার আগের বাড়িটা ছিল। বাপ রে বাপ রে বাপ, গরমের দুপুরে শনিরবিবারও আমি অফিসে এসে বসে থাকতাম। এখনকার বাড়িটা গরমের দিক থেকে একটু ভদ্রস্থ।

      Delete
  7. এরকম একটা বিষয় নিয়ে এমন সুন্দর একটা লেখা লিখতে আপনিই পারেন। দুর্দান্ত হয়েছে। :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, অরিজিত। দারুণ ভালো লাগল শুনে।

      Delete
  8. oirakom dhalai bodhoi sottii hoi, amader bariteo shunechhi oi dhalai er kotha. ar oi janlar byapare ekta kotha boltei hochhe.. amar khub priyo oi ghor bhroti janla..

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঘর ভর্তি জানালা দারুণ ব্যাপার ইচ্ছাডানা। ব্যাপারটা বেশ ফিলজফিক্যালও কিন্তু তাই না? ঘরের ভেতর আছি, কিন্তু জানালা খুলে রেখেছি ইত্যাদি প্রভৃতি নানারকম সিম্বলটিম্বলের আমদানি করা যায়।

      Delete
  9. bochhor 3 agey... bangalore-e bhaRa bari khujchhilam. agent-er sathey ghurey ghurey abosheshey ekta flat-er location khub pochhondo holo. corner plot-er do-tola. kholamela, akash dekha jabey. dorja khule flat-e dhuktei mukhe dhakka dilo phurphurey hawa. marble flooring. ektar jaigai du-duto boshar ghor - dutoi rasta-facing. kitchen-tao boroshoro. mone mone decision niyei felechhi praye...
    emon shomoy ...
    agent: "sir, bedrrom dekh lijiye"
    bedoroom dekhalo. besh boro ghor. tiptip, furnished. chokchokey. kintu..... EKTAO JANLA NEI!!!! just duto dorja - ekta dhokbar-berobar, aar ekta attached bathroom.
    ami to hna.
    "window kyun nehi hai?"
    "sir, this is as per vaastu"
    amar shimaheen murkhamir jonyo ami etotuku-o dayi na. dayi amar bharotiyo gene.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহাহা, বাস্তুতে লোককে বেঁধে মারার নিদান আছে জানতাম না তো। সি আর পার্কে ঢোকার আগে আমি মালব্যনগরে বাড়ি দেখতে গিয়ে ওইরকম জানালাহীন বাড়ি দেখেছিলাম। এক্স্যাক্টলি জেলখানার মতো। সে বাড়ির নাকি দারুণ ডিম্যান্ড, আমাকে এজেন্ট হুমকি দিয়েছিল একঘণ্টার মধ্যে হ্যাঁ না বললে নাকি 'হাতছাড়া' হয়ে যাবে।

      ভারতীয় জিনের মূর্খামির ব্যাপারটা ঠিকই বলেছ, কিন্তু এই জিনটা একটা ভালো অবদানও স্বীকার করতে হবে। সহনশীলতা। সকাল থেকে রাত অব্দি যা যা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, মাথার সবকটা চুল পটাং পটাং করে ছিঁড়ে না ফেলে, সেটা এই জিন ছাড়া আর কোনও জিনের পক্ষে সম্ভব হত বলে মনে হয় না আমার।

      তোমার সেই বাস্তুশাস্ত্রের বাড়িটার বাকি বর্ণনাটুকু মনে রেখে দিলাম। স্বপ্নের বাড়ির বিবরণ দিতে গেলে কিছু কিছু অংশ ব্যবহার করা যাবে।

      Delete
  10. এমাঃ হিংসা কেন দিদি ?
    আমার তো শুধুই ঠান্ডা লেগে যায়।
    গায়ে রোদ লাগলেও আর কানে হাওয়া লাগলেও।
    আজ সকাল থেকে আবার লেগেছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমার মতো আমি একজনকে চিনি অনুজিৎ, ঠাণ্ডা লাগার প্রতিভা নিয়ে সেও জন্মেছে। তাকে সবাই উপদেশ দেয় চ্যবনপ্রাশ খেতে, তোমাকেও কি দেয়?

      Delete
  11. না কেও তো বলে নি দিদি।
    আর চ্যবনপ্রাশ এখন খায় না,আমার কাজে দেয়না এতটুকু।
    তবে মনে পড়ে, আমি ছোটো থাকতে বাবা চ্যবনপ্রাশ আনতেন, আর আমি রুটি দিয়ে খেতাম।
    হাহাহা

    আজ তো বাঁ কানে কিছুই শুনতে পাচ্ছিনা দিদি।

    ReplyDelete
  12. khoob bhalo laglo lekhata ... boyes ta tirisher doshoke ghorafera korche bolei hoyto chotobela songkranto kono kichu porlei sei purono dinguloke onubhob kori , dukhkho meshano akta bhalolaga toiri hoy , je somay anek kichu ba bola jaay sob kichui somay bisheshe faltu mone hoto ja aaj khoob I dami mone hoy .... somosamoyik jinshke tuchchotachchillyo korar bod obbhyas theke obosshyo aajo berote parini .

    ReplyDelete
    Replies
    1. নস্টালজিয়ার ধর্মই ওই অনিন্দিতা। হয়তো জিনিসগুলো সত্যিই ফালতু বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার মতোই, শুধু খানিকটা সময়ের পালিশ পড়ে গিয়ে দারুণ দেখতে হয়ে যায়। লেখাটা তোমার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  13. The Book Thief dekhte bolechilam apnake...sekhane erom ekti drishho ache..Hitlar er jiboni lekha boi er pata sada rong kore notun khata upohar dichhe Max tar bondhu chotto Liesel k r bolche
    "Words are life, Liesel. All those pages, they're for you to fill."
    Amar dekha sera movie gulir ekti...
    Apnakeo Blogger er gondite simito thakle hobena...beria asun...ro choto golpo likhun...

    ReplyDelete
    Replies
    1. সিনেমাটার কথা আপনি বলেছিলেন বটে সৌমেশ, কিন্তু আমার দেখে ওঠা হয়নি। কিছুই হচ্ছে না, খালি ঘড়ি ঘুরে যাচ্ছে। মহা বিপদ।

      Delete

  14. খুব ভাল লাগ ল । মন্টু মিস্তিরির প্ল্যান মত ফ্ল্যাট বানিয়েছি । কিন্তু তা ছেড়ে ওই দিল্লি তে এখন মরতে যাচ্ছি ।
    মিঠু

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে মরবে না, মরবে না, মিঠু। দিল্লিতে বৃষ্টি নেমেছে। টুকটাক ঝুপঝাপ ঢালছে মাঝে মাঝেই। দিল্লি অতটাও খারাপ নয়, দেখো। খুব বিরক্ত হলে মার্কেট ওয়ানে এসে ফুচকা খেও, তাহলেই মন ভালো হয়ে যাবে।

      তোমার ফ্ল্যাটের কথা শুনে হিংসে হচ্ছে। মেরা নম্বর কব আয়েগা?

      Delete
  15. bhari bhalo laglo ... onek kichhu chhuye gachho(tomay aapni bolte parbo na please)
    ami shobe Mumbai shift korechi, aalo batash shimito, ichhe kore kono beach e boshe shomudro dekhi r haway r o beshi kore mukto feel kori
    bhari mushkil, tomar motoi ghori ghure jachhe baar baar
    bhalo theko, joldi jaanla khuje pao

    ReplyDelete
    Replies
    1. জানালা খুঁজতেই তো ল্যাজেগোবরে অনুরাধা। লেখাটা আপনার ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগল। সমুদ্র ব্যাপারটার জন্য আমি বম্বের লোকদের হিংসে করি। আশা করি আপনার মুম্বইবাস সুখের হবে।

      Delete
  16. প্যারালাল জানালা থাকার জন্য তো দুদিক খোলা বাড়িও থাকতে হবে। আজকের পায়রার খোপে (ওরফে ফ্ল্যাট বাড়িতে) সেটাই বা কোথায়? প্যারালাল জানালা আমাদের কলকাতার বাড়িতে কয়েকজোড়া আছে বটে, আর এক বন্ধু ফাল্গুন মাসে সে হাওয়ার নাম দিয়েছিল লাখ টাকার হাওয়া।

    লেখাটা খুব সুন্দর। মনকে স্পর্শ করল। বাঙালির সর্বজনীন রোগ নস্টালজিয়াতেও বেশ কিছুটা সুড়সুড়ি লাগল। অভিনন্দন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ তথাগত। লাখ টাকার হাওয়া নামটা যথাযথ।

      Delete
  17. এ লেখাটা মিস করে গেছিলাম, কলম্বাস যাওয়ার জন্য বোধহয়। খুব ভালো লাগলো লেখাটা। ওরকম ছোট ডায়েরির প্রতি আমারও ভীষণ লোভ ছিল ছোটবেলায়। আমি একটা ওরকম ডায়েরিতে দেশ-বিদেশের রেডিও স্টেশনের ফ্রিকোয়েন্সি লিখে রাখতাম সেটা মনে আছে। তখন আমার শর্টওয়েভ রেডিও শোনার শখ ছিল।

    লিনটন ঢালাইটা যে লিন্টেল সে কথা তো আগেই বলেছে লোকজন। আমিও কথাটা প্রথম শুনি যখন আমাদের নতুন বাড়ি তৈরী হচ্ছিল, ওই নব্বই সাল নাগাদ হবে। আমাদের নতুন বাড়িতে বাবা জোড়ায় জোড়ায় প্যারালাল জানালা করেছিল উত্তর-দক্ষিনে। আমাদের দক্ষিনটা পুরোটা পুকুর, আর উত্তরটা বাড়ির সামনের দিক তাই দুটোই খোলা। প্রথম প্রথম খুব মজা লাগত, হাওয়ায় সারাক্ষণ উড়িয়ে নিয়ে যায়, গরম কালেও পাখা লাগেনা, যদিও ক্যালেন্ডার ইত্যাদি টাঙ্গানোর জন্য দেওয়াল একটু কম মনে হত। তারপর যখন প্যারালাল জানালা দিয়ে বেড়াল ঢুকে প্যারালাল বাচ্চা রেখে যেতে লাগলো তখন ভাললাগাটা অনেকখানি কমে গেল। দিনের বেলায় আলো আসত খুব ঠিকই, কিন্তু তারপর ঝড়বৃষ্টি এলে যখন ছাপ্পান্নটা জানালা বন্ধ করার প্রয়োজন হতো তখন আধঘন্টা ট্রেডমিলে ছোটার মতন পরিশ্রম করতে হত পাঁচ মিনিটের মধ্যে। তাছাড়া হুগলির মশা কেমন সেটা আপনার নিশ্চয়ই ধারণা আছে, সন্ধ্যের মধ্যে জানালা না বন্ধ করলে তারা বাড়িতে ঢুকে রক্তদান শিবির বসিয়ে ফেলত। তাই সাত পাঁচ ভেবে এবারে গরম পড়ার আগে দুটো বেডরুমে জানালায় কাঁচের পাল্লা লাগিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলো আসে, বেড়াল আর মশা আটকায়। হাওয়া চাইলে কাঁচ খুলে দেওয়া যায়, কিন্তু সারাক্ষণ খুলে রাখার দরকার হয়না। আমাদের বাড়িতে দেওয়ালের অভাবের সমস্যাটা অবিশ্যি থেকেই গেছে, সেটার আর কিছু হওয়ার নয়।

    আপনার লেখা পড়ে মনে পড়ল, একটা ওরকম অপরিচিত ছেলে আমাদের বাড়িতে কি কাজে এসে একবার বলেছিল "আমি চক্রবর্তী-দার ছেলে।" সে চলে যাওয়ার পরে আমরা খুব হেসেছিলাম।

    ReplyDelete

Post a Comment