আরামের খোঁজে
কিছু কিছু জানা জীবনের মাইলস্টোন হয়ে থাকে। যেগুলো
দিয়ে আপনার গোটা অতীতটাকে আপনি সুস্পষ্ট বিফোর অ্যান্ড আফটারে ভাগ করতে পারেন। এই
যেমন ধরুন ক্লাস থ্রি-র আগে আমি ‘প্রেম’ শব্দটা জানতাম না, ক্লাস থ্রি-র পর থেকে
জানলাম। একদিন মাঠে দৌড়তে দৌড়তে সাহানা কানে কানে বলে দিল। অবশ্য শব্দটাই তখন
জেনেছিলাম শুধু। শব্দের প্রাণঘাতিতা মালুম পেতে পেতে তেইশ বছর বয়স হয়ে গিয়েছিল।
তবু আরকি।
যাই হোক উদাহরণ নিয়ে বেশি মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই।
মোদ্দা কথাটা বুঝতে পারলেই হল। সেটা হচ্ছে যে কিছু কিছু জানা মানুষের জীবন বদলে
দিতে পারে। আমার জীবনের সেরকম একটা জানা-র কথা আজ আপনাদের বলব।
এটা কবে জেনেছিলাম সেটা অবশ্য ঠিক করে মনে নেই,
তবে কাঁচা বয়সেই হবে। কে একজন বলল, এই যে এত কিছু হচ্ছে, সায়েন্স, আর্টস, প্রগতি, হঠযোগ---সবেরই
নাকি মোটিভেশন একটাই। কী বলুন দেখি?
ছবি গুগল ইমেজেস থেকে
আরাম। কী করে আরেকটু বেশি আরাম করা যায়, কী করে সকালবেলা
আর পাঁচ মিনিট বেশি শুয়ে থাকা যায়, কী করে আর একটু কম পরিশ্রম করা যায়, সে উপায়
খুঁজতে খুঁজতেই নাকি আমরা বনমানুষ থেকে মানুষ হয়ে গেছি।
মুখের হাঁ বুঝিয়ে, “হ্যাঃ, তা আবার হয় নাকি?”
বলতে আমার তিরিশ সেকেন্ড লেগে গিয়েছিল। বন্ধু বললেন, “বিশ্বাস না হয় মিলিয়ে দ্যাখ।”
আমি একেবারে চাকা, আগুন, কৃষিকাজ থেকে মেলাতে শুরু
করলাম। হুমম। সবেতেই যে মানুষের আরাম হয়েছে সেটা অস্বীকার করার জো নেই। ঘাড়ে করে
জিনিস বওয়ার বদলে গড়গড়িয়ে নিয়ে যাওয়া গেছে, শীতের রাতে আগুনের ওম পোহানো গেছে, বনেবাদাড়ে
হিংস্র জন্তুর পেছন পেছন দিনরাত ছুটে না বেড়িয়ে, ক্ষেতের মাঝখানে একখানা কাকতাড়ুয়া
খাড়া করেই নাকে তেল দিয়ে ঘুমোনো গেছে।
ইতিহাস বইয়ের আরো কয়েকটা চ্যাপ্টার এগিয়ে আসতেই
আমার মুখ চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
“এই যে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মহাকাশচর্চা
হচ্ছে সেটা? মানুষ চাঁদে যাচ্ছে? সেগুলোতে কার কী আরাম হচ্ছে শুনি?”
“হচ্ছেই তো। তুই কী ভাবছিস? মানুষ চাঁদে গেছে
কেন? ওই বিদঘুটে পোশাক পরে বাঁদরের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটতে আর পতাকার পাশে বোকার
মতো দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে? তাও যদি ছবিতে মুখ দেখা যেত।”
“তুই এত জানিস যখন তুইই বল না।”
“ওরে হাবলু, গেছে থাকার জায়গা খুঁজতে। পৃথিবীতে
যা ভিড় বাব্বা। বড়লোকেদের হাত পা ছড়িয়ে থাকার জায়গা কম পড়েছে তাই অ্যামেরিকা লোক
পাঠিয়েছে সার্ভে করে দেখতে যে চাঁদে বাড়ি বানিয়ে থাকার উপযুক্ত পরিবেশ আছে কিনা।”
যুক্তি আছে কিন্তু। বলুন? নেই?
সে আপনাদের সংশয় থাকলে থাকুক। আমি কনভিন্সড। আর
যদি সমগ্র মানবজাতির মোটিভেশনের কথা বলার অধিকার আমার নাও থাকে তবু নিজের কথাটাতো
বলতেই পারি। এই আমি বলছি, আমার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সমস্ত ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার
একটিই উদ্দেশ্য, সমস্ত টু-ডু-লিস্টের একটিই লক্ষ্য---কী করে আর একটু বেশি ঘুমোনো
যায়।
বান্টি বলল, “ঘুম ভালোই। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে
ঘুমোলে তো আর বোঝা যায় না যে আরাম হচ্ছে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে বোঝা যায় যে এইবার
আরাম হবে আর ভাঙার পর মনে হয় যাঃ ফুরিয়ে গেল। যখন আরামটা অ্যাকচুয়ালি হচ্ছে তখন তো
কিছুই টের পাওয়া যায় না।”
চিরু বলল, “অনেকটা শৈশবের মতো ব্যাপার আরকি।”
বোঝা গেল। আমার আরামের আইটেমটা কারো পছন্দ হয়নি।
জেগে থাকা আরাম চাই সকলের। আমি ভাবতে বসলাম জেগে থাকা অবস্থায় আমার সবথেকে আরাম
কীসে হয়। ভেবে ভেবে এই তিনখানা জিনিস বেরোল।
এক, ইউটিউব। তার সঙ্গে যদি আমার আরো দুটি নেশা,
ব্রিটিশ মার্ডার মিস্ট্রি আর আগাথা ক্রিস্টি মেশানো যায় তাহলে ষোলকলা পূর্ণ হয়।
অর্থাৎ কিনা শুয়ে শুয়ে ইউটিউবে মিস মার্পল/হারকিউল পোয়্যারোর ভিডিও দেখতে আমার
বাড়াবাড়ি রকম আরাম হয়।
দুই, বাংলা যে কোনো কিছু। গান, কবিতা, গল্প,
শিলাজিতের গান, দেভের নাচ। মাতৃভাষা সত্যিই আমার কাছে মাতৃদুগ্ধসম। নিমেষে হজম হয়ে
যায় এবং কোনো সাইডএফেক্ট থাকেনা। বোঝার কষ্ট করতে হয় না, মাথার ভেতর ট্রান্সলেশনের
যন্ত্রটা চালাতে হয়না, শুধু চোখ কিংবা কান খোলা রাখার পরিশ্রমটুকু করলেই ব্যস। যথেষ্ট।
তিন, অবান্তর। এটা লেখার আগে আমি অনেক ভাবলাম
জানেন। ভাবলাম কী করে হয়? অবান্তর করতে করতে ইউটিউব দেখা যায়না, বিছানার ওপর কাত
হয়ে পড়া যায় না, একটু গান পর্যন্ত চালানো যায়না। চালালেই মাথার ভেতরের খেলো
চিন্তাগুলো ঘণ্ট পাকিয়ে যেতে থাকে। খালি শিরদাঁড়া সোজা করে বসে স্ক্রিনের দিকে
তাকিয়ে খটাখট টাইপ করে যেতে হয়। তবু সেটা করার জন্যই আমি সারাদিন হাঁ করে বসে
থাকি। শত অকাজ আর সহস্র আরামের মাঝেও অবান্তর আমাকে নিরন্তর কামড় মারতে থাকে।
একমুহূর্ত শান্তিতে থাকতে দেয় না।
অদ্ভুত।
*****
আপনাদের কী করতে সবথেকে আরাম লাগে?
Sorry ager tay typo chhilo ar edit korte parchilam na...
ReplyDeleteKatha ta thik i bolecho. Aramer jonei to sob kichu "efficient" bananor cheshta. Kintu amar ghumote boroi bhalo lage. Ar 5 min beshi ghumonor jonye ami breakfast tyag dite ek paye khara. (Breakfast na khaoar side effects jeneo).
Amar sob theke bhalo (relaxing) lage weekend e sokal e khate boshe coffee khete khete Arnab er sange bhatate. Ja ta byapar niye boktobyo rakhte :)
আরে উইকএন্ডের সকালের চা-টা সত্যি বড্ড আরামের রিয়া। এটা মিলে গেছে একেবারে।
Deleteek) ta miley gechey. dui) ta amar khetre hindi/bangla (dutoi matribhasa) tai otao mil.
ReplyDeleteaar tin er scene ta anekta erokom....majh raat (shayari style e raat ta pichla peher :)....notun abantor post porchi, anyadike brishti hochhe, background e vilayat khan e raag deshkar :)) aha!!!
অবান্তর তোমার আরামের অংশ হয়ে উঠেছে জেনে কী যে ভালো লাগছে শম্পা। থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ।
ReplyDeleteratre ghumonor thik age akta bangla boi tene nie porte porte aste aste ghumie pora..er theke aram ar kichute nei!
ReplyDeleteএই তো, বাংলা পার্টটা মিলেছে।
DeleteKathata ki aaram na ananda ? Naki bolben je dutor madhye temon parthakya nei? Araam holei ananda, aar anandadayak kaj korlei aaram? Tobe hya, ei bibhed na korle aami aapnar bandhur sange ekmat.
ReplyDeleteআমি তো আরামই বলতে চেয়েছিলাম।
Deleteamar ABANTOR porte boroi aram lage.....ar arekta jinish tomar shathe mile gelo...British Murder Mystery ar Agatha christie...Abantor tumi shotti onoboddyo
ReplyDeleteআরে থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ আননোন।
Delete