শপথ #৪-যেটুকু না হলেই নয়
কী থেকে যে কী হয় বলা শক্ত। এই যেমন আজ যে চার নম্বর শপথের
কথাটা বলতে যাচ্ছি, সেটা কালকের আগে পর্যন্ত আমার মাথাতেই ছিল না। একেবারেই ছিল না
বলাটা ভুল হবে, দোকান থেকে অকারণ শপিংটপিং করে ফেরার পর, কিংবা পার্সেলে পোরা নতুন
বই ডেলিভারি এলে বিষয়টা ভাবাত, কিন্তু ওই পর্যন্তই। সেটা যে নিজেই একখানা গোটা
রেসলিউশন হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে সেটা আমি সত্যি বলছি বুঝতেই পারিনি।
ক্যামেরা কিনে আনার পর বুঝে গেলাম। হাড়ে হাড়ে। গর্বিত মুখে
এ কাঁধে ক্যামেরার ব্যাগ ও কাঁধে ট্রাইপড ঝুলিয়ে বিশ্বজয়ীর মতো গটগটিয়ে ঘরে ঢুকে
দেখি...
আমার বাড়িতে ক্যামেরাটা রাখার জায়গা নেই।
সিরিয়াসলি। অন গড ফাদার মাদার।
আহা নেই মানে কি একেবারে নেইইইইই? বান্টির মতো করে রাখলে অফ
কোর্স আছে। দরজায় দাঁড়িয়ে হাতের ম্যাগাজিন, মাথার টুপি, পিঠের ব্যাগ, পায়ের
জুতো---হরির লুটের মতো চারদিকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলাটাকে যদি আপনি রাখা বলেন তাহলে
আমার বাড়িতে এখনও গড়ের মাঠের সমান জায়গা আছে। কিন্তু আমার মা যেটাকে রাখা বলেন---পেনটা
পেনদানিতে, বইটা বুককেসে, জামাটা হ্যাঙারে, হ্যাঙারটা কাবার্ডে, জুতোটা
বাক্সে---তাহলে আমার বাড়িতে কুটোটি রাখারও জায়গা নেই।
২০১৩র রেসলিউশনের লিস্টে আমার চার নম্বর আইটেম হচ্ছে,
বাড়িতে কাজের জিনিসের জন্য জায়গা বার করা। আর এই রেসলিউশনের করোলারি হচ্ছে, বাড়ি
থেকে অকাজের জিনিস টান মেরে বিদায় করা।
অন্যান্য রেসলিউশনের থেকে এই রেসলিউশনটা অপেক্ষাকৃত সোজা
কারণ আমার বাড়িতে অকাজের জিনিস বেশি নেই। টুংটাং উইন্ডচাইম, কারুকার্যময় কাগজের
লণ্ঠন, DYI বিডসের পর্দা, ছোট বড় গণেশমামার কালেকশন, বিষণ্ণ
বুদ্ধমূর্তি, মূর্তির সামনে অ্যাঁকাবেঁকা হ্যান্ডমেড মৃৎপ্রদীপ, প্রদীপের পাশে
টেরাকোটার ফুলদানিতে ফ্রেশ ফ্লাওয়ারস---কিস্যু না। যাঁদের বাড়িতে এসব থাকে তাঁদের
আমি ভয়ানক শ্রদ্ধা করি। আমার তো খাটবিছানা টেবিলচেয়ার থেকে ধুলো ঝেড়ে রাখতেই দিন
কাবার হয়ে যায়, এর ওপর ভিন্টেজ হ্যারিকেনের ধুলো ঝাড়তে হলেই হয়েছিল আরকি।
এসব নেই বটে, কিন্তু তা বলে আমার বাড়িতে অকাজের জিনিস
একেবারে নেইও বলা যাবে না। বরং বলা যেতে পারে অকাজের জিনিসের চরিত্রটা একটু ভিন্ন।
ইন ফ্যাক্ট একদিক থেকে দেখলে জিনিসগুলো ভয়ানক কাজের। যেমন ধরুন ডেবিট/ক্রেডিট
কার্ডের রিসিট। আপনি কী করেন? গোল্লা পাকিয়ে ডাস্টবিনে টিপ করে ছুঁড়ে ফেলে
দেন? আমি প্রাণে ধরে ফেলতে পারিনা। ফেলতে গেলেই মনে পড়ে বাজারের ফর্দ লেখার জন্য রিসিটগুলো
একেবারে পারফেক্ট সাইজের। তখন আমি ওগুলো যত্ন করে ভাঁজ করে ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখি। আর এই যে
ছবিতে একগাদা পেন দেখছেন, একবার সময় করে রিফিল ভরে উঠতে পারলে ওরাও ভয়ঙ্কর কাজের
জিনিস। পেনগুলোর ঠিক ডানপাশ ঘেঁষে একটা হলদে রঙের টর্চ আছে যেটা আপনারা দেখতে
পাচ্ছেন না, ওটারও একই গল্প। বছরখানেক ধরে ব্যাটারি ভরব ভরব করেও ভরা হচ্ছে না।
কিন্তু তাই বলে কি জিনিসটা ফ্যালনা, বলুন?
কিছুই যে ফ্যালনা নয়, নিজের মনকে এই ঠুলি পরাতে পরাতে আমার
বাড়িটা ক্রমশ একটা গুদামখানায় পরিণত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ জিনিস আমি যক্ষের মতো বুকে
আগলে ধরে বসে আছি, পাছে কখনও কাজে লাগে এই আশায়। এই আশায় আশায় আমার বাড়িতে পিৎজা ডেলিভারির
সঙ্গে আসা ন্যাপকিনের পাহাড় জমেছে, ব্যাগের ভেতর রিফিল ছাড়া পেন আর বাতিল হওয়া
ফ্ল্যাশ ড্রাইভের গন্ধমাদন উঁচু হয়ে উঠেছে।
এরকমটা যে হবে সেটা আন্দাজ করা অ্যাকচুয়ালি কঠিন ছিল না। ডি
এন এ-র প্যাঁচে প্যাঁচে
এ রোগের অমোঘ পূর্বাভাষ স্পষ্ট লেখা ছিল। কিন্তু বাবা হোর্ডার বলেই যে আমাকে হোর্ডার হতে হবে তার তো কোনও মানে নেই। কই বাবার মতো ভালো টেবিল টেনিস তো খেলতে পারিনি কিংবা আনকোরা শহরে পা দেওয়ার একবেলার মধ্যে হোটেলের এক মাইলের ব্যাসার্ধের ভেতরের অলিগলির ব্লু প্রিন্ট মাথার ভেতর অবিকল তুলে আনার কেরামতিও দেখাতে পারিনি।
এ রোগের অমোঘ পূর্বাভাষ স্পষ্ট লেখা ছিল। কিন্তু বাবা হোর্ডার বলেই যে আমাকে হোর্ডার হতে হবে তার তো কোনও মানে নেই। কই বাবার মতো ভালো টেবিল টেনিস তো খেলতে পারিনি কিংবা আনকোরা শহরে পা দেওয়ার একবেলার মধ্যে হোটেলের এক মাইলের ব্যাসার্ধের ভেতরের অলিগলির ব্লু প্রিন্ট মাথার ভেতর অবিকল তুলে আনার কেরামতিও দেখাতে পারিনি।
গুণের ভাগ যদি নাই পাই তাহলে দোষের ভাগটা বাবামায়ের ঘাড়ে
অম্লানবদনে চাপাই কী করে বলুন তো?
কাজেই নতুন বছরে জঞ্জাল সাফাই আমার ব্রত। যে সব অকারণ
অর্থহীন বোঝা জমেছে টেবিলের ওপর, ব্যাগের ভাঁজে আর আলমারির খাঁজে, সে সব সরিয়ে হালকা
আমাকে হতেই হবে। কে বলতে পারে, হয়ত বাইরের হাতে ধরা, চোখে দেখা জঞ্জাল সরাতে
সরাতেই মাথার ভেতরের অদৃশ্য আবর্জনাগুলোও একে একে সাফ হয়ে যাবে? তখন কী ভালোটাই না
হবে বলুন দেখি।
Hahahaha!!! Eta darun laglo pore. Ami to furniture kenbar somoy "sleek model" khujechilam sudhu dhulo jharar byapar ta bhebe. Amader bari te sob theke boro problem holo lom, mane beraler lom. Fridge er gaye, oven er bhetor, kothay nei sei lom? Ar kalo jacket er gaye to layer e layer e :D Er opor oi tomar vintage lonthon thakle ki hoto bhabteo chai na ami!!! Lomer lonthon hoto seta :)
ReplyDeleteTobe ekta katha boli, eta ami Arnab keo bohubar bolechi, jinish guchiye rakhle dekhbe jayga onek beshi free hobe. Shunte ektu paradoxical byapar ta kintu 100% sotyi. Ami jedin pantry theke baje purono miyono chips er packet fellam ar daal gulo sob same size er container e bhore guchiye rakhlam individual packet theke ber kore, sedin dekhlam maggi rakhbar jonye oporer taak ta puro freeeeee! Bhaba jaye?? Ekhon biscuit o sob bhore rakhi kouto-y ar moshla pati sob label kora kacher chhoto jar e.
Amader ekta Buddha murti ache, tobe tar pashe ekta Halloween er bhoot er murti o rakha ache ekhon, shey bolche "BOO", tai tar naam "BOO-ddha"! Buddha ar BOO-dhha besh adda mare boshe boshe :D
বুউউ--দ্ধার ব্যাপারটা ভালো তো রিয়া? সেটা তো বটেই। গুছিয়ে রাখলে তো ভালোই। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে গুছোনোর জন্য চাই সদিচ্ছা আর পরিশ্রম। সে দুটো যদি না থাকলে তাহলে জিনিস কম রাখাই ভালো। তাই না?
DeleteOh BTW, tumi "Rajkahini" porcho ekhon? Amra porshudin chobi dekhte dekhte "Kheerer putul" porlam ar ekhon "Nalak" porchi :) Aban Thakur ke amar boro bhalolagey. Ki sweet dadu na?
ReplyDeleteঅবন ঠাকুর অবশ্য লেখক হিসেবে আমার খুব একটা ফেভারিট নন্, তবে রিয়েল লাইফ দাদু হিসেবে যে উনি দুর্দান্ত হবেন সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ক্ষীরের পুতুল জাস্ট দুর্দান্ত।
Deleteei ta amar o resolution jano... jodio ami khub ekta esober dhar dharina.. amar almarir ekta thorough scan howa dorkar.. oneek jamakapor amar gaye ar dhokena, seguloke obilombe kauke daan kora proyojon... besh kichhu salwar pc o bochhor bochhor pre achhe, segulo na banale ar kauke diye dewa jete pare. etc. etc.
ReplyDeletear borer drawer porishkar to ekta episode.. pray half bela kete jay jinish sort out korte... esob kaj ei resolution niyei korte namte hobe..inspired holam tomar lekha pore..tomakeo all the Best.
জামাকাপড়ের কথা আর বোলোনা সোহিনী। এত জামা কিনি আর সেগুলো আলমারির মধ্যে ঢুকেই হাওয়া হয়ে যায়। অফিস যাওয়ার সময় সেই সাকুল্যে তিনটে নিয়ে টানাটানি।
Deleteআপনার ঘর তো পরিষ্কার মশাই। আমার ডট পেনের আর ক্যাম্পাসে কুড়োনো পেনসিলের সংগ্রহ প্রায় এক স্যুটকেসে গিয়ে ঠেকেছে, আর দুটো ক্লোসেটের একটা ভর্তি শুধু জিনিসপত্রের খালি পিচবোর্ডের বাক্স, আরেকটা ভর্তি দুনিয়ার বিজ্ঞাপনী চিঠিপত্র, ক্যাম্পাস নিউসপেপার আর ক্রেডিট কার্ড/ ইউটিলিটি/ বাড়িভাড়া/ ট্রেনের মান্থলির বিল যেগুলো দরকার পড়বেনা আর কোনদিনই, আর যদিবা পড়ে তাহলে তার মধ্যে থেকে দরকারিটা খুঁজে পাওয়া যাবেনা শিওর। কাজেই আপনার রেজল্যুশন আমারও রেজল্যুশন। বাই দা ওয়ে, ছবিটা ভালো হয়েছে।
ReplyDeleteফেলে দিন ফেলে দিন। এত মায়া বাড়ালে চলে যাবার সময় ভয়ানক কষ্ট পাবেন যে। ছবিটা খুব বিচ্ছিরি হয়েছে আমি জানি এবং সে নিয়ে মরমে মরেও রয়েছি। আপনি যে তবু উৎসাহ দিলেন সে জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ সুগত।
Deletehmmm jaigamoton jinsh guchhie rakha khubi bhalo. sei bhalo bujhte bujhte amar prai 4 doshok hote chollo ekhon amar meyeke bojhanor chesta korchhi, kintu samne example er obhab dekhe se bechari thik bujhe uthte parchhena.ar amar kortar bhari maya tar somosto purano jinsher upor, se tar jeans i bolo ki chhnera sweater. :-( tai okajer jinish diei sob bakso pnatra bhora kajer jinishera baire goragori. ei dakho guchhie nijer kotha bolte lege gechhi. resolution tar jonye onek subhechha roilo.
ReplyDeleteআরে নিজের কথাই তো বলবেন ইচ্ছাডানা। একা আমি আমার কথা বললে ভয়ানক বোরিং ব্যাপার হবে। আপনাদের কথা শুনব বলে আমি এদিকে গালে হাত দিয়ে বসে আছি তো।
Deleteআচ্ছা ছেলেরা কি বেশি হোর্ডিংপ্রবণ হন, মেয়েদের তুলনায়? লেখাটা পড়ে আমার অনেক বন্ধুই বলল তাদের বাবারাও নাকি সব জমিয়ে জমিয়ে রাখেন আর মায়েরা সেগুলো টান মেরে ফেলে দিলে চিল্লিয়ে পাড়া মাথায় করেন।
Chhele ra jinish jomay karon oder kono idea nei konta dorkari ar konta na. Tachhara Arnab mone korto or college life er t-shirt ekhono or gaye hobe. Ekdin dekhlam jhogra kore labh nei, tai oke bollam ogulo pore dekhte. Jei dekhlo ar gaye hochhe na, tokhon ar ki korbe? Daan kore dilo sob Salvation Army te ar amaro jhogra kore time/energy loss ar gola byatha holo na.
DeleteMeyera generally onek guchhune hoy tar arekta boro reason holo meyera ghor-bari porishkar sajano dekhte bhalobashe. Tai extra jinish taan mere fele daye.
হ্যাঁ এটা ভালো বলেছ রিয়া। আমাকে কে যেন বলেছিল ছেলেরা নাকি বয়স যতই বাড়ুক, মনে মনে কেউই আট বছরের বেশি বড় হয় না। কী সাঙ্ঘাতিক ভাবো দেখি!
Deleteeita ekebare thik kotha. oi Chheleder boyes barar songe songe moner boeys barena. oi 35 er porei ota abar komtir diker hisab tao melena oder khetre. ota je kondin theke thik komtir dike seta bojha mushkil. tobe tumi ja bolle tate kore ektu asostto holam, ami to bhabtam chhelerai bujhi jinsih phele dite mayabodh korena amar ghorei galpota onyarakom, ta ekhon sunchhi 'ghar ghar ki kahani'.:-)
Deleteআঃ, একেবারে আমাদের বাড়ির কথা। যদিও আমাদের বাড়িতে ন্যাপকিন আর বিলের চেয়ে পুতুল আর ক্রিস্ট্যালই বেশি। আর মোটে বত্রিশটা জিনিস বাকি আমাদের। আরো বত্রিশটা একজিবিট জমলেই আমাদের বাড়িটাকে মিউজিয়ম ডিক্লেয়ার করে দেবে ওরা।
ReplyDeleteহাহাহাহা দেবাশিস, আপনার বাড়িয়ে বলার ক্ষমতা দেখে আমি মুগ্ধ। হাতব্যাগ থেকে বেড়াল বেরোবে আর বাড়িকে মিউজিয়াম ঘোষণা করা হবে? সাধু সাধু।
Delete