কী মিস কী মিস!
বাড়িতে না থাকলে যে কত কিছু মিস হয়ে যায়। বাকিগুলোর কথা জানিনা, যুধিষ্ঠির ওই একটা প্রশ্নের জবাব অন্তত ঠিক দিয়েছিলেন---প্রবাসীর থেকে বেশি দুঃখী এ জগতে কাউকে খুঁজে বার করা টাফ।
এক নম্বর তো বিয়েবাড়ি।
প্রাণের বন্ধুদের দিদিদাদাদের সবকটা বিয়ে মিস হয়ে যাওয়ার পর থেকে এক এক করে
প্রাণের বন্ধুদের বিয়ে মিস হওয়া শুরু হল। খাওয়া আর শাড়ি পরার সুযোগ হারানোর দুঃখের
ওপর শাকের আঁটি বন্ধুদের রাগ। “এলি না তো? দেখে নিলাম।” যেন আমি ইচ্ছে করে যাইনি। কোনো মানে আছে? আমিও উল্টে মুখভারি করাতে মা বললেন,
“সোনা ওদের ওপর কি এখন রাগতে আছে? মনে রাখবে বিয়ের ছ’মাস আগে থেকে ছ’মাস পর পর্যন্ত
মানুষ নিজের মধ্যে নিজে থাকেনা।”
কাজেই রাগ করা গেলনা।
অবশ্য এতদিন বাদে সে রাগ আমার আর নেইও। বিয়ে তো দূর অস্ত, বন্ধুদের ছেলেমেয়ের
মুখেভাত পর্যন্ত মিস হয়ে গেছে আমার। এখন আমি ওদের ছেলের পৈতে আর মেয়ের বিয়ে
টার্গেট করে বসে আছি। তখন গিয়ে একেবারে হাতে পায়ে ধরে মান ভাঙাব।
দু'নম্বর মিস হচ্ছে
পুজোপার্বণ। দুর্গাপুজো নিয়ে আমার বিশেষ আফসোস নেই কারণ তখন বাড়ি গেলেই অভ্যেসের বশে
অষ্টমীতে পাড়ায় অঞ্জলি দিতে যেতে হয় আর অঞ্জলি দিতে গেলেই লোক জিজ্ঞেস করে এত কালো
হয়ে গেছিস কেন, এত চুল উঠে গেল কী করে, আর বিয়ে কবে করবি। কেউ কেউ আবার সাবধান করে,
“যে রেটে কালো হচ্ছিস আর টাক পড়ছে, এই বেলা মানে মানে বিয়েটা না সারলে কিন্তু...”
বাড়ি এসে “কী অভদ্র
অসভ্য আনকালচারড লোক সব” বলে হাত পা ছুঁড়লে মা বলেন, “আহা ওরা ভালো চায় বলেই বলে
তো, আরও দেরি করলে এই কথা কটা বলারও লোক থাকবে না মনে রেখো। থেকো তখন ধোপানাপিত
বন্ধ হয়ে।”
মোদ্দা কথা, পুজোয়
বাড়ি যাওয়া মানেই একগাদা ড্রামা। জঘন্য টাইপের।
কিন্তু দুর্গা ছাড়াও
তো অন্য দেবদেবী আছেন। এই যেমন লক্ষ্মী সরস্বতী। শীতের সকালে হলুদবাটা মেখে কাঁপতে
কাঁপতে স্নান, বাসন্তীরঙের শাড়ি আর সারাদিন পড়া ফাঁকি দেওয়াটেওয়া মিলিয়ে সরস্বতী
পুজো তো আমার ফেভারিট, লক্ষ্মীও মন্দ না। সারাবাড়ি জুড়ে পায়ের পাতা আর ধানের ছড়া
এঁকে, ঠাকুরঘরে চোখে-জল-আনা ধুনোর ধোঁয়ার মধ্যে বসে প্রাণপণে গাল ফুলিয়ে শাঁখে ফুঁ
দাও। ফুঁ দেওয়া সারা হলে মুঠো ভরে মুড়কি আর নাড়ু খাও পা দুলিয়ে। লক্ষ্মীপুজোর
একমাত্র মাইনাস পয়েন্ট হচ্ছে কদমা। কদমা না খেতে হলে লক্ষ্মী সরস্বতী দুটো পুজোই
আমার কাছে সমান ভালো।
কিন্তু এখন শুনছি আরও
কত সব ভালো ভালো ঠাকুরদেবতার পুজো হচ্ছে চারদিকে। কাল রাতে মাকে ফোন করে ঘ্যানঘ্যান
করে মাথাব্যথা পেটব্যথার ব্যাখ্যান করছি, দেখি মা ওদিক থেকে হুহাঁ করে সারছেন। আমি
ভয়ানক আহত হয়ে বললাম, “একটা তো মাত্তর মেয়ে, তার দিকেও কি একটু মনোযোগ দিতে নেই?”
তাতে মা খুব লজ্জিত গলায় বললেন, “না আসলে টিভিতে খুঁটিপুজো-পরিক্রমা দেখাচ্ছে
কিনা, তাই বারবার ওদিকে চোখ চলে যাচ্ছে।”
আমি আকাশ থেকে পড়ে
বললাম, “কী পুজো?”
“খুঁটি খুঁটি।”
“কীসের খুঁটি!”
“আরে দুগগাপুজোর
প্যান্ডেলের খুঁটি পুঁতেছে না, সেই খুঁটির পুজো হচ্ছে চারদিকে। জুন মালিয়ারা সব
উদ্বোধন করতে গেছে।” মা নিজের অন্যমনস্কতা জাস্টিফাই করতে তারকাদের নেমড্রপ করতে
শুরু করেন।
আমি বাক্যহারা হয়ে ফোন নামিয়ে রেখে ব্যাপারটা তলিয়ে দেখতে বসি। না, মা ইয়ার্কি মারেননি। এই দেখুন প্রমাণ।
আমি বাক্যহারা হয়ে ফোন নামিয়ে রেখে ব্যাপারটা তলিয়ে দেখতে বসি। না, মা ইয়ার্কি মারেননি। এই দেখুন প্রমাণ।
শিকদারবাগান প্যান্ডেলের খুঁটি পুজোর উদ্বোধন করছেন জুন মালিয়া, লকেট চ্যাটার্জি। আরও কয়েকজনকে চিনতে পারছি অবশ্য আমি। লোপামুদ্রা, রূপঙ্কর।
সর্বনাশ, রূপঙ্করের বাঁ-পাশের ঝাঁকড়াচুলো লোকটার পাশে ওটা কে, অনিন্দ্য নাকি?!
দাঁড়ান একটু সামলে
নি।
.........
হ্যাঁ যা বলছিলাম।
খুঁটিপুজো একটা সিরিয়াস ব্যাপার এখন কলকাতায়। তেরোশো পার্বণের অন্যতম পার্বণ। এই
দেখুন লকেট চ্যাটার্জি শিকদারবাগানের খুঁটিপুজো সেরে আবার কুমারটুলি পার্কের
খুঁটিপুজো উদ্বোধন করতে গেছেন। অবশ্য কুমারটুলি পার্ক সেরে শিকদারবাগান গেছেন
সেটাও হতে পারে।
যাই হোক, আমি মনস্থির করে ফেলেছি। পরের বার খুঁটিপুজো মিস হতে দিচ্ছি না কিছুতেই। আগেভাগে টিকিট কেটে রাখব। মাকে বলব শাড়ি কিনে ম্যাচিং ব্লাউজ বানিয়ে রাখতে। আর জাঙ্ক জুয়েলারি। আপনারাও চলুন না। দলবেঁধে খুঁটিপুজো হপিং-এ বেরোনো যাবে বেশ। ভীষণ মজা হবে। আর যদি কায়দা করে তারকাদের ভিড়ের ফাঁকফোঁকর দিয়ে হাত বাড়িয়ে খুঁটি ছুঁয়ে দিতে পারেন, আপনাদেরও ছবি বেরোবে এরকম সাইটে সাইটে, খবরের কাগজের পাতায় পাতায়।
কী যাবেন নাকি? চলুন চলুন প্লিইইইজ।
আমার কলুষিত মনে ওই খুঁটি ধরা লকেটের ছবি দেখে প্রথমেই যে জিনিসটার কথা মনে পড়ল সেটা এক ধরণের নাচ| তার বেশি আর আপনার "ইউ" রেটেড ব্লগ এ লিখছিনা|
ReplyDeleteসত্যি, দেশে যে আজকাল কত কিছু হচ্ছে, আর ১১১ খানা টিভি চ্যানেলের দৌলতে জানতেও পারছি, যে মনে হয় আমরা ছোটবেলায় বেঁচে ছিলাম কিকরে? এখন এসব দেখে মনে হয়, দেয়ার আর মোর থিংস ইত্যাদি...
ধুস আপনাদের ছোটবেলা, কিছু মনে করবেন না সুগত, বো-ও-ও-ও-রিং। দেখুন দেখি কী সুন্দর খুঁটি ঘিরে সেলিব্রিটিরা ভিড় করে হেসে হেসে ছবি তুলেছে। আপনাদের সময় ছিল এসব?
Deleteআমার আত্মহত্যা করা উচিত। কলকাতায় থেকেও কিচ্ছু জানিনা। :(
ReplyDeleteভালোই করেছ জানোনি। আমার তো জেনে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করেছিল।
Deletekhuntipujo? jabbabba!
ReplyDeleteযাব্বাবা বলে যাব্বাবা রুচিরা?
DeleteAshchorjo! Oteebo ashchorjo!!! Ar kichu bolar nei!!! Emon din o dekhte holo??
ReplyDeleteহল তো রিয়া।
DeleteSorbonaash Korechhey!! Ta ei khuti pujota hochchey kokhon? Maney, Grishmo naki Sorot? Agey bhagey jodi ticket ta kat-tei hoy?? Habey bhabey ja bujchchi, e to jokhon tokhon hotey parey. Amader ekhaney to ar khutir obhab nei!!
ReplyDeleteদিনক্ষণ তো জানিনা দেবোপম। পঞ্জিকাতে কি খুঁটি পোঁতার নির্ঘণ্ট দেওয়া থাকে, জানিনা। সেটাও করতে পারেন। হাঙ্গামা করে টিকিট কেটে বাড়ি না গিয়ে নিজের বারান্দায় একটা খুঁটি বসিয়ে পুজো করে নেওয়াটা সত্যি বেটার আইডিয়া মনে হচ্ছে।
DeleteEmnitei aj Magnoliate kheye bhishon matha gorom. Karon jai order korlam, chhilona. Otoeb ja chhilo tai khelam. Jegulo bhalo noy. Tarmodhye phone theke tomar bangla font! She ek iye byapar... Kotha nei barta nei, dirgho u. Ar space er obhab. Eshob keno ke jane?
ReplyDeleteTomar ei post pore amar ki mone porlo jano? Madhyamik er age amar bangla sir er kotha. Amra boro group e portam. Ar jedin anek notes dewar thakto, shedintake bola hoto 'nototshob'. Ekjon dujon chhele photocopy dokane jeto at 20 copy notes er photocopy koriye anto. Ar tara pora miss korbe tato hoyna. Tai amra shobai telebhaja khetam. Nototshob khub anonder din hoto. Khub irrelavant, kintu keno janina likhte ichhe korlo.
Oh, ar, khub bhalo likhchho.
P.S. Rupankar er bna pashe, jhnakra chul, Pallab Kirtaniya. Most probably.
দেবিকা, তোমার "নোটোৎসব" ওই খুঁটিপুজোর থেকে ঢের ভালো মনে হচ্ছে। তেলেভাজা ইনভলভড আছে যখন।
Deleteওহ আমি একবার ভাবলাম শিলাজিৎ, তারপর ভাবলাম নচিকেতা, কিন্তু তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে পল্লববাবুই ঠিক। উনি আমাকে একবার অষ্টমীর দিন কুমারটুলির প্যান্ডেলে পাকড়ে ধরে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমার ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস কী। অবশ্য দোষটা ওঁর নয়। টিভি কোম্পানি থেকে মাইক হাতে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে লেলিয়ে দিয়েছে। সে এক অভিজ্ঞতা।
যাই হোক, তোমার লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। নেক্সটবার বাইরে খাওয়ার জন্য অল দ্য বেস্ট রইল।
sanghatik!!!pratham chabitato puro morme bindhe gelo!!!!
ReplyDeleteদেখবি এবার রাতে ঘুমের মধ্যে মনে পড়বে আর ধড়মড়িয়ে উঠে বসে জল খেতে হবে।
Deleteআচ্ছা, এঁরা কি সম্মানদক্ষিণা নেন, এরকম হাসি হাসি মুখে খুঁটি ছুয়ে pose দেওয়ার জন্য?
ReplyDeleteআমার তো মনে হয় নেন আবির। বিনাদক্ষিণায় এত হাসি পায় নাকি?
Deleteশুধু তাই না, আমার তো মনে হয় এরা একদিন সকালে উঠে সব পূজোর সংগঠকদের ফোন করে করে বলেন, "ভাই/দাদা/বোন/দিদি, আমায় প্লিজ ডাকুন, খুঁটি ছুয়ে দেব!!"
Deleteনাহ, সে কর্মকর্তারাও ঝুলোঝুলি করতে পারেন, কিছুই বলা যায় না।
Deletekhunti'r gaye genda keno
ReplyDeleteআরে শম্পা খুঁটি কাকে বলছ! দ্যাবতা তো। তাই গাঁদাফুলের মালা পেঁচিয়েছেন।
Deleteamar ek dadu'r katha mone porlo....bolten "tyaha thaikle beyay'r baaper shraddha koron zay, na thaikle nizer baaper o hoy na"
Deleteস্পট অন। অবশ্য দাদুরা (বিশেষ করে যারা বাঙাল বলতে পারেন) তাঁরা স্পট অনই হন।
Deleteesob dekhe amar maa ekta bole... seta holo.. pitti jole gelo.. :D :D
ReplyDeleteসুস্থ স্বাভাবিক পিত্তি হলে জ্বলারই কথা গোবেচারা।
Deleteei pujo ki ek i dine hoy? karon june r locket er saree to alada in alada khuti... :D
ReplyDeleteআমিও সেটা খেয়াল করলাম সোহিনী, কিন্তু হয়ত মাঝপথে শাড়ি পালটেছেন। বা এক এক পাড়ায় এক এক দিন খুঁটিপুজো হচ্ছে সেটাও হতে পারে।
Delete:O :O :O
ReplyDeleteKintu khnuti pujo hopping ey ki khnuti ke nomo korte hoy?
মন দিয়ে নম করতে হয় বিম্ববতী। নাহলে খুঁটি পাপ দেন।
DeleteKhNuti pujo? Otyashchorjo parbon!
ReplyDeleteএখন আর অত্যাশ্চর্য নয়, ঘোর বাস্তব।
DeleteErpor ekta "pole dance" dhukiye dilei "Ma" ba "Baba" Khunti porom prito hoben
ReplyDeleteসিরিয়াসলি বং মম।
Deleteবিলাইয়ের বিয়ের বাস্তব গপ্পো জানা থাকলে খুঁটিপূজো আর কি এমন ব্যাপার?
ReplyDeleteনাহ, সে তো নয়ই। কিন্তু তবু আরকি।
Deletemairi anindyo o eisob korche...you too brutas
ReplyDelete