Discipline
বার্ট্রান্ড রাসেল
বলেছিলেন, পাঁচ বছর বয়সের আগে মানুষ যা যা শেখে সেই সব শিক্ষা তার জীবনে সবথেকে বড়
ছাপ রেখে যায়। আমি রাসেল সাহেবের মতো অত কড়া নই। পাঁচ-টা একটু বাড়াবাড়ি। তবে একটা
লোক স্কুলজীবনে যা যা শেখে সেগুলো তার জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গী হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক,
নয় কি?
স্বাভাবিকের সঙ্গে
বাস্তবের যে মিল নেই সেটা আমি প্রথম টের পেয়েছিলাম আমার ক’জন বন্ধুকে দেখে। তারা
সবাই পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে বিখ্যাত বোর্ডিং স্কুলের কোনো না কোনো শাখায় পড়াশোনা
করেছে। ছোটবেলা থেকে কঠোর কৃচ্ছসাধনা অভ্যেস করেছে, কড়া অনুশাসনের মধ্যে দিনরাত যাপন
করেছে, ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠে---যখন আমরা সবাই যে যার মায়ের কোল ঘেঁষটে মুখ হাঁ করে
ঘুমোচ্ছি---ধুতি পেঁচিয়ে ধ্যানে বসেছে। একদিন নয়, দুদিন নয়, দীর্ঘ ছয়-সাত-আট-নয়-দশ
বছর।
অথচ স্কুল ছাড়ার
পরদিন থেকে দেখুন, সারা রাত্তির জেগে আড্ডা মেরে দুপুর দুটোয় ঘুম থেকে উঠে কোনোমতে
লাঞ্চটা তুলে নিয়েই আবার ঘরে গিয়ে ভোঁসভোঁস করে ঘুমোচ্ছে, যতক্ষণ না আবার রাত
নামে। তখন উঠে ধাবায় গিয়ে হয় আড্ডা মারবে নয়তো ঘরে এসে টেবিলল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়তে
বসবে।
এতদিনের শিক্ষা,
বুটক্যাম্পোচিত ট্রেনিং, সব জলে। কী করে হয়? কিছুই কি ভেতরে যায় না? সবই কি হাঁসের
ডানায় জলের মতো, জল থেকে উঠে দুবার গাঝাড়া দিলেই মুক্তি?
আমি কৌতূহলের চোটে
একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। সে বলেছিল, “আরে হাত পা বেঁধে ওষুধের মতো গেলালে কি ভেতরে
ঢোকে? তখন মারের ভয়ে করেছি, এখন মারার লোক নেই তাই করিনা। সিম্পল।”
আমি যে স্কুলটায়
পড়তাম সেটা তল্লাটে বিখ্যাত ছিল ‘ডিসিপ্লিন’-এর জন্য। বাবামায়েরা ভর্তির ফর্ম
তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতেন, “আর কিছু না শিখুক, ডিসিপ্লিন-টা
শিখবে, আর কী চাই?” আমাদের স্কুল তাঁদের হতাশ করেনি। সকাল সন্ধ্যে ডিসিপ্লিনের পাঠ
পড়িয়েছেন দিদিভাইরা। ভালোবেসে, আদর করে, মাথায় হাত বুলিয়ে। প্রার্থনা শেষে ক্লাসে
ফেরার পথে লাইন ভেঙে এলোপাথাড়ি দৌড়লে বকেছেন, আবার বৃষ্টি নামার আগের সঘন গহন
মুহূর্তে ক্লাসরুমের টিউবলাইট জ্বেলে সালোকসংশ্লেষের চ্যাপ্টার চালিয়ে যাওয়ার বদলে
ক্লাসশুদ্ধু মেয়েকে খোলা মাঠে ছেড়ে দিয়েছেন। সিলেবাস শেষ না হওয়ার হুমকিতে একটুও
ঘাবড়াননি।
আমার জীবনটা
ধুয়েমুছে আবার নতুন করে আমার হাতে তুলে দিলে আমি অনেক কিছু অন্যরকম করে করব, শুধু
স্কুলের অংশটুকু বাদ দিয়ে। যতবার জন্মাই যেন ওই স্কুলটায় পড়তে পাই। ওই মাঠটায়
বাঁধনছাড়া ছুটতে পাই।
যাই হোক। যেটা বলতে
চাইছি সেটা হল দিদিভাইরা আমাদের শৃঙ্খলার পাঠ দিয়েছিলেন। শুকনো
পুঁথিসর্বস্ব পাঠ নয়, তার মর্ম বোঝাতে চেয়েছিলেন, আমাদের সবার জীবনের ভেতর তাকে
স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন, অথচ আমার জীবনে এই মুহূর্তে শৃঙ্খলার চিহ্নমাত্র নেই।
নাওয়াখাওয়া অফিস
অবান্তর ঘুম মিলিয়ে আমার প্রত্যেকটা দিন এখন চব্বিশ ঘণ্টার একটা পিণ্ডে পরিণত
হয়েছে। সে পিণ্ডে যেদিন যে কাজটা সবার আগে কামড় বসাতে পারবে জিত তার। একদিন অফিস
জিতবে তো আরেকদিন অবান্তর। কোনোদিন খাওয়া হারবে তো কোনোদিন ঘুম। শেষমেষ অবশ্য
গোহারা হারব আমি আর আমার মানসিক সুস্থতা। অলরেডি হারছি।
ছবি গুগল ইমেজেস থেকে
সমস্যাটা হয়ত ডিসিপ্লিনের
অভাব নয়। কেউ কেউ হয়ত বাঁধা রুটিনের বাইরেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে। বিখ্যাত কবি, শিল্পী এমনকি বিভোর বিজ্ঞানীদেরও শুনেছি সময়ের তাল থাকে না। নিউটনের সেই ডিমের
বদলে ঘড়ি সেদ্ধ করার গল্পটা মনে নেই?
কিন্তু এঁরা
বড়মানুষ। আর বড়মানুষদের উদাহরণ দিয়ে কিছু প্রমাণ হয় না। প্রমাণ করতে হলে চোখে দেখা
উদাহরণ লাগে। সেরকমও আছে। যেমন ইউনিভার্সিটির স। সারা সেমেস্টার মহানন্দে
ক্যাম্পাস চষে বেড়াত। বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। তারপর পরীক্ষার সাত দিন বাকি থাকতে
বন্ধুদের ধরে সিলেবাস দাগিয়ে নিয়ে ঘরে ঢুকে দোর দিত। বেরত একেবারে পরীক্ষার দিন
সকালে। হায়েস্ট পেতনা, তবে সেকেন্ড হায়েস্ট থেকে স কে নড়ানোর সাধ্য ছিল না কারো।
আমি স নই। পরীক্ষার
সাতদিন আগে আমাকে হাতে সিলেবাস ধরালে আমি ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই হার্টফেল করে
যাব, হল পর্যন্ত পৌঁছনর সুযোগ পাবনা। আমাকে রোজ সকালে উঠে পড়তে বসতে হবে, দুলে
দুলে পড়া মুখস্থ করতে হবে, খাতা পেনসিল নিয়ে বসে ঘড়ি ধরে উত্তর লেখা প্র্যাকটিস
করতে হবে, তবে গিয়ে নম্বরের দেবী প্রসন্ন মুখ তুলবেন।
তাতে ক্ষতি কিছু
নেই। অনায়াস দক্ষতার শিকে সবার ভাগ্যে ছেঁড়েনা। কিন্তু তাহলে যেটা করতে হয় সেটা হল,
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এতদিন ধরে যা করে আসছে, সেই ছক অনুসরণ করা। সীমিত সম্পদ,
যথাসম্ভব দক্ষভাবে বাঁটোয়ারা করা। যাতে সবথেকে বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। সেটা পেতে
গেলে লাগে পরিকল্পনা, আর পরিকল্পনা সফল করতে গেলে লাগে ডিসিপ্লিন।
সেই ছোটবেলায় শেখা শৃঙ্খলা। যেটা অবিলম্বে জীবনে ফিরিয়ে না আনতে পারলে আমার কপালে অশেষ দুঃখ
আছে।
আপনি কীরকম? রুটিন
মেনে চলতে ভালোবাসেন? নাকি রুটিনের বাইরে কাজ ভালো করেন? নাকি আমার মতোই জ্ঞানপাপী?
Ammo gyanpapee, atoeb lekhata phataphati laglo!
ReplyDeleteজ্ঞানপাপীরা জিন্দাবাদ।
DeleteGyaan paapi. Gyaan paapi. Gyaan paapi. Jodio amar ishkooley thik "discipline" bolte jeta bojha jay, seta bheeshonbhaabe chhilo na. Regularly bell bajar por chhutey chhutey shesh muhurtey schooler gate ey pouchhe, gate monitor ke kichhu ekta bhujung bhajung diye assembly liney dhuke jetam. Ar kono classer teacher na thakle chechiye, table bajiye bari mathay kortam. Tatey BHEESHON kharap punishment konodin peyechhi bole mone toh pore na. Tobe amar ishkool ta rabindrik chhilo toh, tai chechamechir theke hindi gaan gailey bokaboki beshi shunte hoto. :P
ReplyDeleteTobe Dilli eshe ektu disciplined hoye gechhi Kuntala di. Eka eka thakle bodh hoy na hoye para jay na. Tumi kikore paro? Thik somoye khabar na khele shoreer kharap korbe je. Tarpor toh nijekei samlate hobe!
ওহ বিম্ববতী, আমি তো ভাবি একা থাকি বলে যেমন খুশি থাকি, কেউ সঙ্গে থাকতে শুরু করলেই সব নিয়ম মেনে থাকব। তখন তো আমি না খেলেও অন্য লোকটার খাওয়ার কথা ভাবতে হবে, আমি না ঘুমোলেও তার কথা ভেবে লাইট নেভাতে হবে। ইন ফ্যাক্ট সেসব ভেবে আমার একটু একটু কষ্টও হয় জানো, একা থাকার বড় মজা।
Deleteami diner kichu somoy khub discipline mene choli r baki somoy ta bindass.jamon ofc e ekdom dedicated employee, kaj korini bole keu kotha suniye debe osob manchina...abar bari fire bhor sondhebela ghumiye porlam, ba dinner korlam sudhu fuchka, ba aaj kapor bhaj korte iche korchena kal korbo, eirokom...tate jeta hoy ekdin prochuur kaj kore feli r tar porer 2 din faki mari...are life to ektai,nijer moto khelam, ghurlam, ghumolam...maro guli discipline ke.....
ReplyDeleteতোমার সাথে আমি ওই ব্যাপারটায় এক্কেবারে একমত রাখী, কাজের জায়গার সঙ্গে নো ফাজলামি। কখন বুমেরাং হয়ে যাবে কেউ বলতে পারে না। আর সত্যি, "ফাঁকিবাজ" নাম শুনতে খুব খারাপ লাগে।
Deleteআমি জ্ঞানী, তবে পাপী নই ;) :P
ReplyDeleteভাল করেই জানি কিছুই মানবো না, তাই কখনো রুটিন করিনি, করার সম্ভাবনাও নেই। খিদে পেলে বাঘ প্রতিবার ধান খাবে, এই আশায় বসে থাকি। শৃঙ্খল অতি খল শব্দ- তার অপত্যের প্রতিও তাই বিশ্বাস নেই। :)
আরে সুনন্দ তুমি তো রাখীর থেকেও সাহসী দেখছি। রুটিনের ধারই ধারো না, এবং সেটা নিয়ে আফসোসও নেই। আমি যদি তোমার মতো হতাম...
Deleteএককথায় জ্ঞানপাপী (বা হয়ত জ্ঞানপাপী ছিলাম)...চব্বিশ কে বিভিন্ন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করার চেষ্টা করে বিফল হয়েছি, ইদানিং তাই সে চেষ্টা-ও ছেড়ে দিয়েছি...
ReplyDeleteহাল ছেড়ো না সংহিতা, বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে...
Deletegyaanpapi chilam....kintu ekhon eto kichu "juggle" korte hoy je ektu adhtu disciplined na holey pere utbo na :))
ReplyDeletetobe majhe majhe ektu phanki diye "arre guli maro" bolte bhaloi lage...esp when goyenda upanyash is waiting for me"
ইয়েস, গোয়েন্দার ডাকে আমি সব ছাড়তে পারি। অবশ্য আমি এমনিতেই সব ছেড়েই থাকি, কাজেই...
Deleteজ্ঞানপাপী! রুটিন তো মানি-ই না বেশিরভাগ সময়ে, তার ওপর আবার রুটিন বানাতে ভীষণ ভাল লাগে, কাজেই ডবল পাপ| একে সময়ে কাজ করছিনা, তায় সুন্দর খাতায় স্কেল দিয়ে লাইন টেনে গোটা গোটা অক্ষরে আলাদা আলাদা রঙের কালি দিয়ে রুটিন বানিয়ে (আজকাল এক্সেল ব্যবহার করি অবশ্য) সময় নষ্ট করছি| আর ওই ডিনারে মুড়ি বা ফুচকা খাওয়া আমার বেশ পছন্দ| একা থাকলে ডিসিপ্লিনের ফালুদা হয়ে যায় এটা ঠিক - সঙ্গে কেউ থাকলে (বাধ্য হয়ে) অনেকটাই সামলানো যায়|
ReplyDeleteআপনি ঠিক করে কুম্ভমেলার ব্যাপারটা খোঁজ নিয়েছিলেন সুগত? সত্যি বলুন তো?
DeleteAha "gyan paapi" katha ta kotodin baade shunlam. Bhut abar bole "gyanpaapi choraipakhi". Keno, amay jigyesh koro na! Anyway, amar ek mama chhotobelay otyonto unruly paji hoye jachilo bole oke boarding e rakha hoyechilo. Sekhane o shayesta hoye gechilo seta thik, kintu or around 40-45 yrs boyeshe amay bolechilo o jiboneo konodin cricket khelbe na ar porridge khabe na, karon oi hostel e ei dutoy prochur porimane oder korano hoto. Oi haasher daana'r jol er case, ekkebare!
ReplyDeleteAmi chhotobelay missionary school e portam. Sekhane basic kichu jinish shikhechi jegulo ekhono follow kori. Library'r boi time e ferot deya, assignment/project time e kora, school e jemon nail polish lagiye jaoya baron chilo, serokom ekhono office e ami nokhe rong niye ashi na. Unprofessional lagey kalo ronger nokh niye ashte! Chhotobelar discipline tai pore professionalism e porinoto hoy in most cases.
Personal life e ami bolbo "organized" hoya tai ekta type of discipline. Student life e ekrokom raat 3te obdi jege thaka ar sokal 11 ta obdi ghumono ta bhalo. Otai tokhonkar ekta mojar byapar, independence...seta tokhon korechi. Kintu ekhon ota kora boka-boka hobe. Khaoya-daoyar byapare, bari guchiye rakhar byapare ami khubi careful. Amar ma-baba o khub organized manush. Amar chena ek bhadromohila (mashima-kakima level er) achen jaar raate ranna korte "ichhe na korle" tar meyeder rastar dokan er chicken roll khaiye shuiye dito. Arekjon mohila bichhanar chador paltate giye dekhechilo 100 takar note guje rekheche toshok er pashe. Ami erokom "uron chonde" ma hotey chai na kokhono!
Ar sob kaj guchhiye korle nijer jonye free time o beshi paoya jaye, moneo shanti thake je jaak sob kaj to hoyei geche, ebar ektu relax kori :)
যা বলেছ রিয়া। "জ্ঞানপাপী চড়াইপাখি" কথাটা বেশ মজার তো।
Deleteরুটিন?
ReplyDeleteহাহাহা, ভালো কমেন্ট।
DeleteKuntala, kono ekdin tomar ekta 2 bochhorer chhele/meye thakbe. shey tomay routine shikhiye debe. 7:30-e uthte hoy, 8-tar moddhey toiri hotey hoy, tarpor meye-ke ghum theke tulte hoy, dnaat majate hoy, potty koratey hoy, bhuliye bhaliye khawate hoy, 1 ghonta khelte hoy, 1:30 nagad ghum paratey hoy, 12-tar moddhey beriye jete hoy bangalore-er traffic-er sathey juddho korte, tarpor raat 10 theke 12, eirom kono ekta shomoy obdhi "no fajlami", tarpor meye ghumonor agey bari firley ghum parao, noyto chotpot kheye, abantor-e chokh buliye ghumiye poro, kintu taar agey "haati" (maane amar meyer Hobbes), jol-er botol, naak mochhar kapor, spare diaper, nasoclear, cell phone on mute mathar kachhey niye. er poreo jodi life-e routine na ashey, to kichhu korar nei.
ReplyDelete1:30-ta 11:30 hobey
Deleteবুঝেছি, মেয়ে একেবারে কুপোকাৎ করে ফেলেছে। ইন ফ্যাক্ট, আমিও সেই আশায় আছি সোমনাথ। আমার ধারণা ওরকম একটা জ্যান্ত পুতুলের পাল্লায় পড়ে রুটিন শিখতে আমার খারাপ লাগবে না।
Deleteতোমার কমেন্টটা খুব খুব ভালো লাগল।
Eta amar chena phase, Somnath. Meyer 3 bochhor boyesh obdhi ei phase cholbe. Tarpore nijei ghabre jabi, changegulo dekhe.
ReplyDelete