বিজ্ঞানঃ সক্ষম না অক্ষম?



কেমন আছেন? আমি ভালো আছি। না থেকে উপায়ও ছিলনা। সপ্তাহান্তে বিস্তর ভালো ভালো ব্যাপার ঘটল। পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে সাতসাতটি বছর পর দেখা, বাইরে অঝোর বৃষ্টি, ভেতরে তুমুল আড্ডা, সুগন্ধী পোলাও, কচি পাঁঠার ঝাল-ঝাল ঝোল, পেপটোবিসমল খেয়ে অকাতরে ঘুম।

হিংসে করবেন না। প্লাসে মাইনাসে মাইনাস করার জন্য এসপ্তাহে আমার গোটাতিনেক ডেডলাইন আছে, তার মধ্যে দুটো লাইনের আমি এখনও স্টার্টিং পয়েন্ট ছেড়েই বেরোতে পারিনি। সামনের ক’দিন কপালে উত্তেজনা লেখা আছে।

এখন পোস্ট লেখার জন্য যা-ই ভাবতে বসছি না কেন ঘুরেফিরে গত দু’দিনের টুকরোটুকরো ছবি ভেসে উঠছে মাথার ভেতর। আর আপনা থেকেই মুখটা হাসিহাসি হয়ে যাচ্ছে। এত কথা বুকের মধ্যে জমে ছিল কে জানত? জমা কথা জমা স্মৃতি হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে এল, চোখের সামনে কবেকার ভুলে যাওয়া লোকেদের মিছিল। “হ্যাঁরে, অমুক কোথায় আছে জানিস?” লোকেরও অভাব নেই, লোক নিয়ে চর্চারও না। পরচর্চা করতেই করতেই পেট ভরে গেল, পোলাওটা ভালো করে খেতেই পারলাম না।

ভালোজাতের আড্ডার মুশকিলটা হচ্ছে সেটার পুনরাবৃত্তি করা অসম্ভব। গুচ্ছ গুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা হল যেগুলো অবান্তরে লিখতে গিয়ে এখন মনে হচ্ছে ধুর এসব কী বোকা বোকা কথা। অথচ তখন এই বিষয়গুলোকে কী ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছিল, এই কথাগুলো নিয়েই হেসে কত গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম,  সোফা চাপড়ে গলা ফাটাচ্ছিলাম, কাপের পর কাপ চা ওড়াচ্ছিলাম।

যাই হোক, অনেক কথার মধ্যে একটা কথা হয়ত আপনাদের বলা যেতে পারে। আমাদের আমলের সব কীরকম ভালো ছিল সেই কথা উঠতে স্কুলের কথা উঠল, আর স্কুল থেকে বাংলা ক্লাসের কথা। তারপর মাধ্যমিকে কে কোন রচনাটা মুখস্থ করে গিয়েছিল সেই নিয়ে সবাই নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ল। বন্ধু বলল ও নাকি চিরকালই ‘ভদ্রলোকের এক কথা’ নীতিতে বিশ্বাসী। ক্লাস সেভেন থেকে মাধ্যমিক, হাফ ইয়ারলি থেকে অ্যানুয়াল, একটাই রচনা মুখস্থ করে চালিয়ে গেছে ও, বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ?

সবাই স্বীকার করলাম, নম্বরের মুখ চেয়ে, দাঁড়িপাল্লায় মেপে এদিক ওদিক সমান করে যুক্তি সাজাতাম বটে, কিন্তু বিজ্ঞান অ্যাকচুয়ালি আশীর্বাদ। সে পরমাণু বোমা থাকলেও, না থাকলেও। কিন্তু এটাও সত্যি যে বিজ্ঞান আরেকটু নড়েচড়ে বসলেও আমাদের আপত্তি নেই। বিশেষ করে কিছু কিছু সমস্যা বড় বেশিদিন হল ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, এবার ঝটপট তার সমাধা না করতে পারলে বিজ্ঞানের আর মুখ দেখানো উচিত নয়।

সমীক্ষা চালিয়ে নিচের কয়েকটা সমস্যার বিষয়ে একমত হওয়া গেল।

এক, মশা। ক্ষুধা তৃষ্ণা যুদ্ধ দারিদ্র্য নিবৃত্তির জন্য যত ফান্ডিং ব্যয় হয়েছে তার সহস্রাংশও যদি মাদুর্গার এই প্রাণীটিকে বধের উদ্দেশে ব্যয়িত হত পৃথিবীর চেহারা আজ অন্যরকম হত। পৃথিবীর চেহারা না হলেও আমাকে অন্তত মায়ের হাতে যখনতখন চড়চাপড় খেতে হত না। “যাব্বাবা! মারলে কেন?!”, “ওমা তোকে মেরেছি নাকি, মশাটাকে মারলাম তো।”    

দুই, বিল্ট-ইন শীতাতপনিয়ন্ত্রণ। শরীরের ভেতর যদি একটা এসি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারতাম আর ইচ্ছে মতো নব ঘুরিয়ে তার তাপমাত্রা বাড়াতে কমাতে পারতাম, হাওয়ার স্পিড কন্ট্রোল করতে পারতাম, কী ভালোই না হত। মহাত্মা গান্ধী রোডে শিকড় গেড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ২১৯-এর ভেতর সেদ্ধ হওয়ার সেই বিকেলগুলো সইতে হত না। কিংবা বরফঢাকা খাঁখাঁ বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ভুরু কুঁচকে ভাবতে হতনা যে ভিজে সপসপে জুতোর ভেতর পায়ের আঙুলগুলো আদৌ আছে তো?

তিন নম্বরটা বান্টির ফরমায়েশ। এমন একটা মেশিন চাই ওর যেটা মাথায় পরলে সেটা থেকে ছোট ছোট দাঁড়ার মতো জিনিস বেরিয়ে এসে আপনাআপনি চুলে বিলি কেটে দেবে। অথবা লাইব্রেরিতে ঘুমিয়ে পড়লে কান মুলে তুলে দেবে। আমরা বললাম, “তার থেকে বলনা কেন এমন একটা মেশিন চাই তোর যেটা দরকার মতো বেহালা থেকে কাকিমাকে হুশ করে উড়িয়ে তোর কাছে নিয়ে আসবে আবার দরকার ফুরোলে হুশ করে রেখেও আসবে। যাতে তুই শান্তি করে ইউটিউব দেখতে পারিস।” বান্টি দাঁত বার করে বলল, “এক্স্যাক্টলি।”

ভেবে দেখলাম এরকম একটা মেশিন আমাদের সবারই চাই। আপনারও কি চাই না? 

আপনারা কী চান সায়েন্সের কাছ থেকে? প্রাণপণ চান অথচ পান না? আমি যেমন এখন আর কিচ্ছু চাইনা, শুধু একটা ডেডলাইন পেছোনোর মেশিন হলেই বর্তে যাই। গেলেও অবশ্য দিচ্ছে না কেউ। সিরিয়াসলি সায়েন্স, তোমার ওপর আমার এর থেকে বেশি আশা ছিল। 

Comments

  1. আপনি যেটা চান সেটাকে বলে টাইম টার্নার, আর সেটা যে কটা ছিল নষ্ট হয়ে গেছে| আমার ওই জিনিসটা ভয়ানক দরকার কিন্তু আশা দেখছিনা, তাই বাধ্য হয়েই কয়েকটা সাধারণ জিনিস চাইছি| এগুলো হয় কিনা জানিনা - হয়ত বড়লোকেদের আছে, কিন্তু এবার বাকি ৯৯% এর পাওয়ার সময় এসেছে|
    ১. বাথরুম এর শাওয়ারের ঠান্ডা-গরম কল ঘুরিয়ে একবার ছ্যাঁকা খেয়ে আর একবার জমে গিয়েও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা যখন চান করবার সময়ে, তখন মনে হয় এই কি বিজ্ঞানের অগ্রগতি? একটা নির্ধারিত তাপমাত্রার জলে চান করা কি এতই শক্ত?
    ২. রিমোট কন্ট্রোল আলো| এটা পড়ে নিশ্চই কেউ বলবে - এ মা, এ তো পাওয়াই যায়, তুমি দেখনি? আমি সত্যি দেখিনি| রাতে গল্পের বই পড়তে পড়তে ঘুমে চোখ ঢুলে এলে যদি বিছানা থেকে নেমে গিয়ে আলো নেভাতে হয় তার চেয়ে বিরক্তিকর আর কিছু হয়না| বেড সুইচ বা খাটের পাশে রাখা আলো দিয়ে এ সমস্যাটা খানিকটা সমাধান করা যায় বটে, কিন্তু রিমোটের মতন জিনিস নেই|
    ৩. এটাও খু-উ-উ-ব সামান্য জিনিস| হতেই পারে কিন্তু কেউ বানায়না| একরকমের ক্লিপ-অন এল-ই-ডি রিডিং লাইট হয় যেটা বই তে লাগিয়ে অন্ধকারে দিব্যি পড়া যায়| সেই লাইট, রিচার্জেবল| গত ৪ বছর ধরে খুঁজছি|
    ৪. একটা ইন্ভিসিবিলিটি ক্লোক| আর এক জোড়া চোখ আঁকা জুতো যেটা পরে হাতে হাতে তালি দিলেই... নাহ থাক, এবার ক্যারিড এওয়ে হয়ে যাচ্ছি|

    ReplyDelete
    Replies
    1. একমত। টাইম টার্নার।

      Delete
    2. সুগত, আপনার একনম্বর চাওয়াটা শুনে এই লিঙ্কটা না দিয়ে পারলাম না। http://pinterest.com/pin/75364993733860887/

      দুনম্বর চাওয়াটা পূরণ হলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন প্লিজ। আমারও ওটা চাই। আর ক্লোক না হলেও চলবে, তবে জুতোটা পেলে বড্ড ভালো হয়।

      Delete
    3. Choshmay lagano LED to paoya jaye boi porar jonye. Seta diyei kaj chaliye nao ekhon... :)

      Delete
    4. Se to pawai jaay, kintu rechargeable noy. :(

      Delete
  2. Time machine. Time machine. Time machine.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হুমম। খুবসে চাও বোঝা যাচ্ছে বিম্ববতী।

      Delete
  3. হুম্‌ , টাইম টার্নার খুব ভালো, ইনভিন্সিবিলিটি ক্লোক আরও ভালো... কিন্তু সবার চাইতে ভালো Limitless সিনেমার ওই ম্যাজিক ট্যাব্লেট অথবা- জেট-প্যাক :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. দুটোর কোনোটাই খায় না মাথায় দেয় জানিনা সুনন্দ। দাঁড়াও গুগল করে দেখি।

      Delete
  4. মাসখানেক হয়ে গেলো রান্নার দিদি আসছেনা... :( এখন আমি একটা ট্যাবলেট চাই যা খেলে মাসখানেক খিদে পাবে না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আহারে সংহিতা। খিদে পেটে মুখ শুকিয়ে ঘুরছ বুঝি? একটা নতুন দিদি খোঁজো বরং।

      Delete
    2. ঢুন্ডনে সে তো ভগবান ভি মিল যাতে হ্যায় লেকিন রান্নার দিদি ন-আআআ কুন্তলা(দি) না....আ

      Delete
  5. mel gibsoner akta film dekhechilam, jate nayak meyeder mind read korte pare...anek critical situatione mone hayeche orakam akta kichu pele valo hoto...bala bahuhulyo,amartay chele meyer kono difference thakbe na...tabe seshta khubi tragic hote pare setao jani..:(((

    ReplyDelete
    Replies
    1. একী সর্বনেশে চাওয়া তোর তিন্নি! খেপেছিস? যে যা ভাবছে তাকে তা ভাবতে দে। আর ভাবতো, তোর মনের কথাও যদি কেউ জেনে ফেলে? আমি মরে গেলেও এটা চাইছি না বাবা।

      Delete
  6. Hmm... mosha marar byapare ekta golpo mone pore gelo. Ma'r bola golpo - sotyi mithye bichar korte jeyo na. Ekjon ra kagoj e ad diyechilo mosha marar mohoushodh tara ber koreche. Tader bole deya poddhoti te mosha na morle taka ferot. Taka pathale por ekta packet elo tader theke, setar modhye theke 2to kather tukro berolo. Ar songe instruction - ekta tukroy mosha ta ke boshiye onyo tukro diye chipe marte. Eteo mosha na morle taka ferot! Kichu ar bolar nei :D

    Amar Prof. Shonku'r banano onek jontropati chai. Tar modhye Newton er daak ke translate korto jeta seta to oboshyoi :D "Dudh chai, machh chai, indur chai" etc gulo amar jana boddo dorkar!

    ReplyDelete
    Replies
    1. Reea, ei jinista try kore dekhte paro:
      http://en.wikipedia.org/wiki/BowLingual

      Professor Shonkur aboshkar kora beshirbhag jinisi darun. Air conditioning pill ar Botica Indicar demand to bakira opore koreichhe!

      Delete
    2. মশার গল্পটা দুর্দান্ত রিয়া। সুগত আপনার লিঙ্কটাও।

      Delete

Post a Comment