মিথ্যুক



মিথ্যেবাদীদের প্রতি আমার মনোভাব কী সেটা আমাকে যারা চেনেন তাঁরা জানেন। আমি নিজে মিথ্যে কথা বলতে ভালোবাসি, ডাইনে বাঁয়ে বলে থাকি এবং কেন সবাই মিথ্যে বলার প্রতি এরকম খড়গহস্ত হয়ে থাকে সেটা ভেবে থই পাই না।

কিন্তু আমি জন্ম-মিডিওকার, মিথ্যে বলাতেও সরেস হতে পারিনি। আমার মিথ্যে কথাগুলো সব ওই দরজায় চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে মোবাইল ফোন তুলে “আরে ভীষণ জ্যাম, পৌঁছতে লেট হবে” কিংবা আগাপাশতলা সুর-তাল-লয়হীন গান শুনে সিরিয়াস মুখে “ফাটিয়ে দিয়েছেন” গোছের। ব্যস। মিথ্যে বলাটাকে আর্টের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি আমি। আর্টিস্ট নই বলেই বোধহয়। 

সেটা যারা পেরেছেন আমি তাঁদের শ্রদ্ধা করি। ইন ফ্যাক্ট ফেসবুকে যারা নিজেদের প্রিয় কোটেশনের জায়গায় “অনেস্টি ইস দ্য বেস্ট পলিসি” বা “সত্যের জন্য সবকিছুকে ত্যাগ করা যায়” লিখে রাখেন তাঁরাও করেন। কারণ তাঁদেরই প্রিয় বইয়ের লিস্টে দেখবেন থরে থরে ঘনাদা, টেনিদা, জোজো সাজিয়ে রাখা আছে। রাখাই উচিত। সন্তুর থেকে জোজো হাজারগুণ ভালো আর লক্ষগুণ ইন্টারেস্টিং। সত্যি কথা বলতে কি জোজো না থাকলে কাকাবাবুর ক’টা গল্প আমি পুরোটা বসে পড়তে পারতাম আমার সন্দেহ আছে।

কিন্তু আজকের পোস্টটা এইসব সেলিব্রিটি মিথ্যুকদের নিয়ে নয়। আজকের পোস্ট সেই সব মিথ্যেবাদীদের নিয়ে যারা আমার আপনার চারপাশের ভিড়ে মিশে থাকেন। তাঁদের কারোকারো প্রতিভা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়, কারো পায়না। এরকম একজন সম্ভাবনাময় মিথ্যুককে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। আমাদের ক্লাসের ম। ক্লাস টু থেকে থ্রি-তে ওঠার মাঝখানের ছুটির পর স্কুল খোলার প্রথম দিন যখন ম এসে বলল, “আমার দিদিমা দুবাই থেকে আমার জন্য রূপোর চকলেট আর সোনার চুলওয়ালা বার্বিডল পাঠিয়েছেন”, তখনি বুঝেছিলাম এ মেয়ের হবে। শুধু বলেছিল না, এমন বিশ্বাসযোগ্য করে বলেছিল যে ক্লাসের তিনচতুর্থাংশ মেয়ে সে কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাসও করেছিল। সেই শুরু। তারপর একের পর এক আশ্চর্য উপহার পাঠাতে লাগলেন দুবাইয়ের দিদিমা। সেসবের বেশিরভাগই হয় সোনার নয় হীরের। প্রত্যেকদিন প্রার্থনার আগে আমরা ম-কে ঘিরে বসে হাঁ করে সোনার পেনসিলবক্স আর হীরের ওয়াটারবটলের গল্প শুনতাম আর দীর্ঘশ্বাস চেপে ভাবতাম আহারে ভগবান যদি আমাদের এরকম একখানা দিদিমা দিতেন।

তারপরই দুর্ঘটনাটা ঘটল। যখনকার কথা বলছি তখনও নব্বইয়ের দশক শুরু হয়নি, মফস্বলের ঘরে ঘরে টেলিফোন পৌঁছতে তখনও দেরি আছে। এমন সময় একদিন ম এসে খুব হাসিহাসি মুখে ঘোষণা করল, দুবাইয়ের দিদিমা একটা ঝকঝকে লাল রঙের ফোন পাঠিয়েছেন ওর জন্য। “তোরা সবাই নম্বরটা লিখে নে না, তোদের বাড়িতে যখন ফোন আসবে তখন যাতে আমাকে ফোন করতে পারিস।” আমরা সবাই যে যার খাতার লাইনটানা পাতা আর টু বি নটরাজ পেনসিল বাগিয়ে বসলাম। সবার কানে যাওয়ার মতো স্পষ্ট আর জোর গলায় ম থেমে থেমে বলল, “মাইনাস পয়েন্ট ওয়ান টু থ্রি ফোর ফাইভ সিক্স।”

এইবার যেটা ঘটল সেটা স্বীকার করতে আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। নম্বরটুকিয়েদের মধ্যে আমিও ছিলাম এবং ম-এর কপালদোষে আমার বাবা মা দুজনেই টেলিফোন অফিসে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে তার সপ্তাহখানেক আগেই আমাদের বাড়িতে একটি দশমণি ফোনের আগমন ঘটেছিল। সেটারও রঙ টুকটুকে লাল আর সেটারও নম্বর ছয়সংখ্যার। কিন্তু সে নম্বরের ত্রিসীমানায় মাইনাস কিংবা দশমিকের চিহ্নমাত্র নেই।

আমি বাঘের মতো লাফিয়ে পড়ে বললাম “ইয়ার্কি হচ্ছে? জানিস আমার বাবা মা টেলিফোনে চাকরি করে?” ম প্রতিরোধের প্রবল চেষ্টা করল কিন্তু এতদিন যারা দুবাইয়ের দিদিমার গল্প শুনে হিংসেয় জ্বলেপুড়ে মরছিল তারা সবাই হইহই করে আমার পক্ষ নিয়ে আমার থেকেও জোরে চেঁচিয়ে বলল, “জানিস কুন্তলার বাবা মা টেলিফোনে চাকরি করে?” এইরকম চেঁচামেচি ততক্ষণ চলল যতক্ষণ না একলা পড়ে যাওয়া ম-এর মুখটা কাঁদোকাঁদো হয়ে গেল, প্রার্থনায় যাওয়ার ঘণ্টি বেজে বেজে থেমে গেল আমরা কেউ শুনতেই পেলাম না, আর দিদিভাই এসে আমাদের সবাইকে ঝাড়া ১৫ মিনিট বেঞ্চের ওপর কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন।

তারপর সারাজীবনে সরেস নিরেস অনেক মিথ্যুক দেখেছি। নিরেসেরা বলেছে তারা একবর্ণ না পড়েই কেমন গুচ্ছ গুচ্ছ নম্বর পেয়েছে, আর সরেসেরা বলেছে কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়াকালীন প্রেমিকাকে সল্টলেক স্টেডিয়ামে নিয়ে গিয়ে সে কেমন করে প্রোপোজ করেছিল তার গল্প। আবছায়া অন্ধকার স্টেডিয়ামের মাঝখানে মুখোমুখি দুজন। তারপর হঠাৎ এক এক করে স্টেডিয়ামের সবকটা ফ্লাডলাইট জ্বলে উঠতে শুরু করেছিল, আর সে নতজানু হয়ে বসে প্রেমিকার মুখের দিকে অনিমেখ তাকিয়ে জানতে চেয়েছিল, “আমার সঙ্গে প্রেম করবি?”

তবু এখনও, যখন যেখানেই ভালোজাতের মিথ্যের দেখা পাই আমার ম-এর কথা মনে পড়ে যায়। সেই ঘটনার পর আর কোনোদিন ম আমাদের দুবাইয়ের দিদিমার গল্প বলেনি। পায়ে ধরে সাধলেও বলেনি। এখন সে মেয়ে কোথায় কে জানে। নির্ঘাত সুখে সংসার করছে আর ছানাকে সকালবিকেল পাখিপড়া পড়াচ্ছে “মিথ্যেকথা বলা মহাপাপ।”

শুধু আমার দোষে।

Comments

  1. ওহ দারুন দারুন। জম্পেশ টপিক। মিথ্যে আমার খুব প্রিয় জিনিস। 'গুল' বললে শুনতে আরো ভাল লাগে অবিশ্যি। আমার দুই কাকা হেভি ভালো মিথ্যে বলতে পারে। একবার হয়েছিল কি, আমি আমার এক তুতো দিদির বিয়েতে কনেযাত্রী গেছি। বিয়েটা আবার বৈশাখে। যাওয়ার সময় একটা ৩-২ সিটার বাসের সবচেয়ে বাজে সিট মানে ঐ ৩-সিটার টার মাঝের সিটটাতে বসতে হয়েছে। আর জানলার পাশে মহামূল্য হাওয়া খেতে খেতে গ্যাছেন কনের কাকীমা। আসার সময় আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জানলায় বসতেই হবে। তার জন্য খাওয়া কিছুটা স্যাক্রিফাইস করেই আগে আগে এসে বসেছি জানলার ধারে। কিছু পরে সেই কাকীমা এসে আমায় উঠতে বললেন। আমি নানারকম ভুজুং ভাজুং দিতে গেলাম। কিন্তু মিথ্যে বলার অপটুতার জন্য ডিফেন্স প্রায় ভাঙো ভাঙো। এমন সময় দেখি আমার মেজকাকা বাসে উঠল। সেকেন্ড দশেক কি একটা ভাবল। পরে বুঝেছিলাম কাকা ওটা পরিস্থিতির 'মোয়না' করছিল। হঠাৎ দেখি কাকা আমায় বলে উঠল, "এই নে জোয়ানটা রাখ, বমি বমি পেলে একটু মুখে দিয়ে দিস, তাহলে আর কিছু হবে না।" আমি ভাবছি, যাঃ বাবা বাসে বমি করার দুর্নাম তো আমার নেই। পরিস্থিতির আবশ্যিকতা বুঝলাম যখন দেখলাম সেই কাকীমাটি সোনা মুখ করে আমায় জানলা ছেড়ে দিলেন। কে বাবা বমি গায়ে পরার রিস্ক নেয়। কাজেই এইসব সতঃস্ফুর্ত মিথ্যের আমি খুব কদর করি। আর কাকাবাবুর গল্প নিয়ে যা বলেছেন একদম খাঁটি কথা বাপু।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মেজকাকার জবাব নেই আবির। গুছিয়ে বলতে পারলে মিথ্যের থেকে ভালো জিনিস আর হয়না।

      Delete
    2. @abir, arey bah, ei golpo ta to besh valo!

      Delete
  2. mone hoi protita school er primary section e ei rokom ekjon soresh mithuyk thake... amader o chilo.. Aw.. se amader bolechilo tader seurir didar barite kotha bola putul thake.. ebong se barir uthone onek kota dolna r ekta nagordola ache. ami bahudin obdi sesob biswas o kortam jotodin na tader barite giye dekhlam didar barir kotha bola putul gulor nam r Aw er barir bharate der nam ek e..

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেটাই তো গোবেচারা, প্রাইমারিতে প্রতিভা থাকে, সেকেন্ডারিতে উঠতে উঠতে হাওয়া। বাড়ির বারান্দায় নাগরদোলার আইডিয়াটা কিন্তু দারুণ বল? সত্যি হলে কী মজাই না হত।

      Delete
  3. Ishkooley eirom hordom pawa jay, na? Sei 9/11 er porey Kolkatay kichhu American fighter jets tel bhorte nemechhilo. Amar classmate N claim korechhilo je sei ekjon fighter pilot naki tar boyfriend. Oder chithi likhe likhe prem. Chheletir naam Peter. Sey planeguli Bharotborshe namiyechhe tel bhorte noy, N er sathe dyakha korte.

    Tarpor ekdin N eshe dukhi mukh kore bollo Afghanistaner juddhe sei Peter namok chheleti mara gachhe. Hasha uchit kina bujhte na pere awkwardly dariye roilam. :/

    Aro aro onek chhilo. Amar arek batchmate S claim korto je robibarer sandhyobhromone berolei naki or baba or maa ke heerer choker kiney dan. Mashey robibaar ashey chaar baar. Sutorang ek mashey charte heerer choker bnadha. Bhaba jay? :/

    Tobe amar favourite 'gul'baaj bodh hoy C. Karon class four ey jokhon portam, tokhon sey dabi korechhilo je tar kachhe naki paka khobor achhe je annual excursion ey amader alipore chiriyakhana othoba indian museum ey na niye giye Mesopotamia niye jawa hobe. Tokhon amra itihaasey Mesopotamian Civilization er kotha porchhilam bolai bahulyo. Lojjar bishoy, oke amra sobbai bishwas korechhilam, ebong pray hopta duek classer sobbar uttejona ar badha manchhilo na. Tarpor ekdin jokhon announce kora holo je eibar annual excursion ey chiriyakhana niye jawa hochche, tokhon bheeshon monkharap hoyechhilo, mone achhe. :-(

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহাহাহাহা বিম্ববতী, তোমাদের ক্লাসে তো কল্পনার চাষ হত মনে হচ্ছে। প্রত্যেকটা গল্প দুর্দান্ত, কিন্তু মেসোপটেমিয়াটা, ঠিকই বলেছ, সবাইকে ফেল ফেলেছে। কিন্তু একটা কথা ভেবে দেখ C-এর ওই একটা গুলের জেরে তোমরা অন্তত একটা সপ্তাহ কত খুশি ছিলে? আমি তো বলি যাদের ছোটবেলায় গুলবাজ বন্ধু না ছিল, তারা কী মিস করেছে জানেনা।

      Delete
  4. চকচকে টপিক, ঝকঝকে লেখা। ভালো করে বলা বা সত্যির মিশেল দিয়ে বলা জমাটি মিথ্যে - সে তো সাহিত্য ম'শয়! আর একটু ভেবে, 'সংসার'ও বলা যেতে পারে... :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরিব্বাস, এইটা দারুণ বলেছ সুনন্দ। ঠিক ঠিক, সংসারই বটে।

      Delete
  5. -123456 ki innovative idea! Mitthe bolte hole emoni bola uchit! eta Jojo-r mathateo asto na!
    Amader school-e ekti meye chhilo, se class V-e bolto tader bareete tinte washing machine achhe. Takhon ami washing machine ki tai thik mato jantam na. se bolechhilo, je jama dhukie dile, keche, shukie, istri hoye beroy! or jamay kali lege gele or maa baree ashar agei o jama keche phele! Tinte washing machine ta abossoi oishyarjer proteek. erakom oder bareete naki anek gulo kore tv, fridge ityadi chhilo. or dekha dekhi, aneker bareetei erakom anek kichhu chhilo bole ashphalon hoto! amar bareete takhon sakulye ektai tv (bhaggis rongeen) kintu fridge, washing machine kichhu nei. kajei amake era dudh bhat-er dale phele dito! ekbar se bolchhe je tara AC train-e chore berate gechhilo! ami bolechhi je amra sob somoi AC-tei travel kori (sotti-i kortam karon baba maa dujonei rail-e chakri korar doulote free pass thakto). Tate meyeta amake khub henta kore bolechhilo tui AC mane ki ta janis? Ami air condition bole deoay ebong AC kamrar bhetor ta kemon hoi tar perfect description dite paray se khub abak hoyechhilo! Thankfully class VI thekei kichhu normal bondhu peyechhilam, jader galpo korar bishoi-e anek boichitro chhilo (Ravi shastree theke ramayan, amer achar theke janisto-omuker-na shotma)! ke kato barolok tar ashphalon ta ar bisesh face korte hoini!
    Tobe jai bolo tai bolo, RNC dekhchhilam khanikta ar tate mitther emon celebration dekhe mone hochhilo Romney et al er kachhe baki sabbai dudh bhat!

    ReplyDelete
    Replies
    1. উফ রুচিরা, এই পোস্টের কমেন্টগুলো আমি সারাজীবন ফিরে ফিরে এসে পড়ব। কী সব এক সে বঢ়কর এক গুলবাজ। ক্লাস ফাইভের মেয়ে নিজেই নিজের জামা কেচে ফেলছেটা অবশ্য বেস্ট গুল। মায়েরা শুনলে দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন আর ভাববেন এমন কেন সত্যি হয় না আহা।

      Delete
  6. hehe bepok likhecho, sob school ei orom 2 4te piece thake..amadero chhilo :D tobe oi saltlake stadium e propose korar golpo ta ghyama. je boleche tar khure dondobot hoi, tar prane onek sudha bojhai jacche. :D

    ReplyDelete
    Replies
    1. এবং যেটা খেয়াল করার কুহেলি, এই ছেলেটি প্রাইমারি স্কুল অনেকদিন পেরিয়ে এসেছে। কলেজে এসেও তার গুলের প্রতিভা ফুরোয়নি।

      Delete
  7. Dekho "mithye katha" bola mohapaap abar imagination thaka bhishon bhalo jinish. Ei byapar ta kirokom contradictory na? Tomra jader golpo bolle, amar hishebe tara keu i "mithybadi" na, tader khub bhalo jaater imagination ache. Chhotora jegulo chaye, segulo baniye baniye bondhu der kache bole - jemon katha bola putul, nagordola, sonar chul-ola Barbie, etc.
    Kichu mithye abar boltei hoy - oi bhoyanok kharap gaan shune "bah bah" bolar moto. Ar shoytan lok der theke bachbar jonyeo kichu dorkar - Abir er kaka'r golper moto. Tobe ami ektu tactless bole erokom boli na in most cases. Mukher opor "ki je bolen, jachhetai ekta painting to eta" bole na uthleo, "bhalo" boli na, chup kore thaki, ba banglai'r bikhyato "he he" ta kori.
    Tobe jara baje mithye katha bole, ar tao without any reason tader ami OTYONTO apachhondo kori, ar bhishon bhabe eriye choli.
    (Ekta irrelevant point - Jojo'r katha ta pore khub hashi pelo. Amar team lead er naam Jojo, take ami bolechilam Bangla sahitye ek bikhyato "Jojo" ache. Shune shey bolechilo - please don't tell me that is a monkey!)

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহা রিয়া, তুমি তোমাদের জোজোবাবুকে বলে দিও সে জোজো মাঙ্কি তো নয়ই, বরং বর্ণময় একটা জলজ্যান্ত মানুষ। আমার কেন যেন ধারণা, জোজোকে (সন্তুর বন্ধু, তোমার অফিসের জোজো নয়) খুব ভালো দেখতেও। ফর্সা লম্বা রোগামতো।

      Delete
  8. ওমা - আপনিই তো হাত পা নেড়ে আমাদের "Binker" শুনিয়েছিলেন| তা কেউ যদি তাদের বিঙ্কার-ঠাকুমার গল্প করে বন্ধুদের তাহলেই দোষের?
    এরকম গুলবাজ বন্ধু আমাদের সবারই থাকে এক-আধটা| আমার যার কথা সবার আগে মনে পড়ছে সে অবশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বন্ধু| একদিন আমায় বলল তার নাকি একটা খুব কঠিন জন্মগত অসুখ আছে| এমনিতে কোনো চিকিত্সা নেই, কিন্তু কিছু পরীক্ষামূলক চিকিত্সায় ও রাজি হয়েছে বলে আমেরিকার একটি কোম্পানি তাকে পুরো খরচ দিয়ে বছরে একবার নিউ ইয়র্ক নিয়ে যায় বোন-ম্যারো সংক্রান্ত কিসব চিকিত্সার জন্য| প্রথমবার আমি বিশ্বাস করেছিলাম, বলাই বাহুল্য, আর ও আমায় সঙ্গে করে নিউ ইয়র্ক নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি পর্যন্ত দিয়ে ফেলেছিল| তারপর আস্তে আস্তে চিনলাম তাকে! সে অবশ্য ভাঙবে তবু মচকাবেনা টাইপের পাবলিক, এখন জিগ্গেস করলে নির্ঘাত বলবে তার অসুখ সেরে গিয়েছে বলে তাকে আর আসতে হয়না নিউ ইয়র্ক|
    আরেক ধরণের গুলবাজ হলো আমাদের আত্রেয়ী, যে এই ব্লগেও কমেন্ট করে| পরীক্ষা দিয়ে বেরোলো কাঁদো-কাঁদো মুখে| জিগ্গেস করলাম, কি হলো রে? "খুব খারাপ হয়েছে সুগতদা, ৬০ নম্বরও উঠবেনা!" তারপর আধঘন্টা কোন প্রশ্নটা কিভাবে ভুল হয়েছে তার বর্ণনা চলল| খাতা ফেরত পাওয়ার পর দেখা গেল ক্লাসে একজনই ১০০/১০০ পেয়েছে, সেটা হলো ও|

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহাহা, আহারে আত্রেয়ীর মতো গুল যদি আমিও দিতে পারতাম সুগত।

      আরে দোষ দিলাম কোথায়, আমার তো এদের ভীষণ ভালোলাগে। তবে লোককে নিউ ইয়র্কের গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়াটা জাস্ট শয়তানি।

      Delete
  9. Replies
    1. গল্পগুলো কী ভালো বল!

      Delete
    2. আচ্ছা, ওই লোহারপুরের জমিদার রামলাল রায়ের গল্পটার নাম কি ছিল জানি? নায়কের নামও ভুলে মেরে দিয়েছি। শুধু মনে পড়ছে জগ্যিদাসের মামা আর চালিয়াত, কিন্তু সেগুলো তো অন্য গল্প ছিল।

      Delete
    3. সেকি দেবাশিস, আমার তো ওগুলো একই গল্প মনে হচ্ছে। মানে চালিয়াত নয়, কিন্তু জগ্যিদাসের মামা গল্পটাতেই তো রামলাল রায় ছিলেন না? একদম ভুলে গেছি। বইটা হাতের কাছে নেই, আর অনলাইন চেক করতে ইচ্ছে করছে না। দাঁড়ান লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে দেখছি।

      Delete
  10. মনে পড়েছে, সবজান্তা। নায়কের নাম দুলিরাম ঘোষ। রণদাবাবু ডেপুটি ওনার মামা হন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. রণদাবাবু ডেপুটি। শুনলেই মুখটা হাসিহাসি হাসি হয়ে যায় না?

      Delete
  11. চমৎকার লেখার হাত। সত্যি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে ধন্যবাদ ধন্যবাদ অরিন্দম। আপনি মিথ্যে করে বললেও আমি আপনার কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করলাম।

      Delete
    2. বাঃ। মিথ্যে যে নয় সেটা নিজেই আরো একবার প্রমাণ করলেন।

      Delete
  12. mithye asole kaake bole taa niye amar kono songsoy nei..tobe mithye kokhon bola uchit ta niye aami sob songshoyer badha katiye felte perechilam 2007 e eshe........biye korechilam. barite sotyi bolini 2010 obdi. mithye bola mohapaap kina janina..tobe mithye bola moha chaap!

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহাহা, চাপই বটে। তোর ওই তিনবছরের চাপটা আমি সিরিয়াসলি কল্পনা করতে পারছি না। তোর মনের জোর চিরদিনই বাকিদের থেকে অনেক বেশি ছিল। সেটাই আবার প্রমাণ করেছিস।

      Delete

Post a Comment