সিরিয়াল মোনোগ্যামিস্ট #৭- ভার্চুয়াল ভার্সেস রিয়্যাল



গোটাচারেক ফলস স্টার্ট হওয়ার পর ই-দাদার অবশেষে একটা প্রেম নামল। আমরা সবাই সোফার হাতল চাপড়ে, কোক জিরোর বোতলটাকে শ্যাম্পেনের বোতল মনে করে করে ঝাঁকিয়ে, ই-দাদার পিঠ থাবড়ে, গাল টিপে অভিনন্দন জানালাম। ঢালাও পিৎজা আর চিকেন উইংস আনানো হল। খেয়ে দেয়ে পেটে হাত বুলোতে সবাই এদিক ওদিক কাত হয়ে পড়ল, দুয়েকজন বারান্দায় সিগারেট খেতে বেরোল, তখন আমি গুটি গুটি ই-দাদার পাশে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “কী হয়েছে?”

লোকের ব্যক্তিগত জীবনে নাক না গলালে আমার শরীর খারাপ লাগে। বন্ধুরা নিরস্ত করার অনেক চেষ্টা করে অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়েছে।

ই-দাদা ধোঁয়ার রিং ছেড়ে বলল, “খটকা, কুন্তলা, একটা খটকা...”

আমি বললাম, “আরে বন্ধুরা আছে কী করতে? কী খটকা বলে ফেল ঝটপট। সব খুলে বললে দেখবে মনটা হালকা লাগছে...” বেসিক্যালি লোকের পেটে হাত বুলিয়ে কথা বার করতে যে যে ডায়লগগুলো দিতে হয় সেগুলো চটপট দিয়ে দিলাম।

খটকাঃ

মহিলার সাথে ই-দাদার আলাপ হয়েছিল ফেসবুকে। সেখানে মাসকয়েক হালকা ফ্লার্ট চলার পর ব্যক্তিগত জি-মেল ঠিকানা বিনিময় এবং লোকচক্ষুর আড়ালে চ্যাটবাক্সে ধুন্ধুমার প্রেম। আমি বললাম, “তো? অসুবিধে কোথায়?” ই-দাদা ঢোঁক গিলে বললেন, “ভিডিও চ্যাট-ও হয়েছে, গতমাসে ওর জন্মদিন আমরা স্কাইপে ওয়াইন অ্যান্ড চিজ পার্টি করে সেলিব্রেট করেছি।”

ওয়াইন আর চিজ দুটো জিনিসই আমার খেতে জঘন্য লাগে, কিন্তু সেটা ছাড়া আমি সত্যি তখনও বুঝতে পারছিলাম না সমস্যাটা কোথায়। আমি ভুরুতে কোশ্চেন মার্ক ফুটিয়ে তাকিয়ে আছি দেখে দাদা বললেন, “মানে আমাদের এখনও সশরীরে দেখা হয়নি আরকি।”

ধোঁয়াশাটা একটু একটু কাটছে মনে হচ্ছে।

তারপর হুড়মুড়িয়ে একসাথে সব বেরিয়ে এল। এবার বাড়ি গিয়ে মাবাবাকে প্রেমের ব্যাপারটা জানানোর প্ল্যান আছে। মাবাবা খুবই খুশি হবেন কিন্তু “যদি শোনে চ্যাটে প্রেম হয়েছে, তাহলে একটু ঘাবড়ে যেতে পারে। মানে আফটার অল আগের জেনারেশন তো, ভাবে অনলাইনে সবাই ভুয়ো NGO খুলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস চেয়ে বেড়ায়।”

আমি মুখ হাঁ করলাম।

কুন্তলার মতেঃ

কাম অ-অ-অ-ন। মানে আমি তোমার দুশ্চিন্তাটাকে হেলাফেলা করতে চাইছি না। আমি বুঝতে পারছি “ফেসবুক-প্রেম” ব্যাপারটা স্বীকার করতে তোমার অস্বস্তি হচ্ছে, পাছে প্রেমটাকে কেউ যোগ্য মর্যাদা না দেয়। কিন্তু একটা কথা ভেবে দেখো, যারা ঘটক দিয়ে ছেলেমেয়ের বিয়ে ঠিক করতেন, তাঁদের কাছে আনন্দবাজারে অ্যাড দিয়ে প্রেমটাও গোলমেলে মনে হত, যারা আনন্দবাজারে অ্যাড দিয়ে বিয়ে ঠিক করার পক্ষপাতী, তাঁদের কাছে ভারত ম্যাট্রিমনি ইকুয়্যালি সন্দেহজনক। তাই বলে কি ভারত ম্যাট্রিমনি সন্দেহজনক? বিলকুল না।

আমার মনে হচ্ছে, শুধু মাবাবা নয়, তোমার নিজেরও একটু একটু অস্বস্তি হচ্ছে অনলাইন প্রেম ব্যাপারটায়। তাহলে আমি বলি কি বাড়ি যাওয়ার আগে একবার মহিলার কাছে ঘুরে এস, বা মহিলাকে আসতে বল। কিংবা কোনো নিউট্রাল পয়েন্টে গিয়ে দেখা কর দুজনে। লাসভেগাস নয়তো ডিসনিওয়ার্ল্ড। একসাথে ঘোরোফেরো, কফি খাও, হাত ধরে হাঁটো, তাহলেই দেখবে প্রেমটা ভার্চুয়াল থেকে দিব্যি রিয়্যাল হয়ে উঠেছে। আর খটকা থাকছে না।

আপনাদের মতামত কী?
      

Comments

  1. আমি খটকাটা কোথায় তাইই বুঝলাম না। সত্যিই তুই বুঝেছিস্‌? কীভাবে হল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ কী, আদৌ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. কী জানি। আমার কাছে তো নয়, কারো কারো হয়ত এখনও ম্যাটার করে।

      Delete
  2. অনেক বন্ধুকেই FB-Orkut এ প্রেম করে বিয়ে করতে দেখেছি... কেউ কেউ দিব্বো আছে , কেউ কেউ থাকার ভান করে ভালো আছে-- মা-বাবার মনে কি খটকা হলো সেটার থেকেও বড় কথা হলো যারা বিয়ে করবে তাদের কি মনে হচ্ছে। আসলে ম্যাট্রিমনি দেখে বিয়ে করলে সেটা তো কেউ 'love marriage' বলে না। তাই অনেকেই ভাবে বাজারে চলতি FB-তে একটু প্রেম প্রেম খেলে বিয়ে করি। no problem করতেই পারে...কিন্তু কোন confusion থাকলে অবশ্যই নিজেদের একসাথে অনেকটা সময় কাটানো দরকার।

    তবে একটা সত্যি কথা কি জানতো একবাড়িতে একসাথে না থাকলে ১০ বছরের প্রেম-ও বিয়ের পর টিকবে কিনা কেউ বলতে পারেনা... আর কেউ যখন বিয়ে করে তখন আমার করে divorce হবে তা ভেবে করেনা ... কাজেই কি হতে চলেছে no boby knows --- অতএব বন্ধুকে বলো ভাই মুহূর্তে বাঁচো- একটু দেখা সাক্ষাৎ করে সব ঠিক মনে হলে ready-steady -go, তারপর জো হোগা দেখা যায়ে গা...

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক বলেছ সংহিতা। ফেসবুকে দেখলেও যা, ১০ বছর ধরে পার্কে পার্কে ঘুরে প্রেম করলেও তা। বড়জোর উনিশ বিশ। কাজেই ফালতু মাথা ঘামানোর কোনো মানেই হয়না।

      Delete
  3. আমিও বুঝলামনা খটকাটা কোথায়| দুজন মানুষের কোনওদিন কোনওভাবে তো দেখা হবেই, সেটা আনন্দবাজারের পাতাতেই হোক, বা ভারত ম্যাট্রিমনি কিম্বা ফেসবুক, সব ই তো সমান| বিয়ের পরে দুজন কেমন থাকবে সেটা নির্ভর করছে পরস্পর কতটা মিল তার ওপর, সেটা যেভাবেই দেখা হোক না কেন| কাজেই আপনার পরামর্শ সঠিক হয়েছে|

    ReplyDelete
  4. Ete amar ektai katha mone hoche - khyak khyak khyak! Ei e-dada tar i ektu sahosh dorkar, or baba-ma bechara ra to scenei nei. Amader-i to Orkut theke alap hoye tarpor biye hoyeche. To tate ki hoyeche? Jokhonkar jeta. Ar arranged marriage hoyar theke to eta better. Tobu to kichu jana jaye manush tar sommondhe. Ar after all oi Sanhita ja bollo - "nobody knows". Tai enar life e asholey kono problem i nei. Tai e-dada ke ami abar bolchi - khyak khyak khyak!

    ReplyDelete

Post a Comment