The Honest Truth About Dishonesty
JNU আমার অনেককিছুর ‘প্রথম’। প্রথম কো-এডুকেশন, প্রথম আগাপাশতলা ইংরিজিতে লেকচার (বেথুনেও টেকনিক্যালি
ইংরিজিতে লেকচার ছিল কিন্তু ওই আরকি, ইকনমিক্স ছাড়া বাকি সব কথা বাংলাতে), প্রথম
বাড়ির বাইরে থাকা, প্রথম রাত জাগা, প্রথম প্রেম, প্রথম টিন্ডার তরকারি। ছোটবেলায়
মানুষ অনেক স্মার্ট থাকে, প্রথম শেষ নিয়ে অত মাথা ঘামায় না। প্রথম কবে হেঁটেছিলাম,
কবে প্রথম কানমলা খেয়েছিলাম, কবে প্রথম মা আম বলে ভুলিয়েভালিয়ে পাকা পেঁপে খাইয়ে
দিয়েছিলেন, এসব আজেবাজে তথ্য কেউ মাথার মধ্যে জাপটে ধরে বসে থাকে না। কাজের তথ্যের
জন্য ব্রেন ফাঁকা থাকে, যেমন কে ক্লাস ওয়ানে পেনসিল ধার দেয়নি। পঁচিশ বছর পর
ফেসবুকে তার ফ্রেন্ডস রিকোয়েস্ট আসা মাত্র, বাতিল।
JNUতে যখন পড়তে গিয়েছিলাম তখন আমি আর ছোটটি ছিলাম না
বলেই বোধহয় তখনকার সব ‘প্রথম’ আমার মাথার মধ্যে চিরজীবনের মতো খোদাই হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে একটার কথা
আপনাদের আজ বলব।
সেকেন্ড সেমেস্টারেই
হবে বোধহয়, একজন নামকরা অর্থনীতিবিদ আমাদের একটা কোর্স পড়াতে এসেছিলেন। ভদ্রলোকের মধ্যে
একটু রকস্টার হাবভাব ছিল, লম্বা চুল, কানে দুল; কাজেই তিনি শুরু থেকেই আমার
গুডবুকে ছিলেন না। কফিনে শেষ পেরেকটা পড়ল যেদিন তিনি ক্লাসে ঢুকে টেবিলের ওপর
লাফিয়ে উঠে বসে পা দুলিয়ে বললেন, “এভরিবডি হ্যাস গট আ প্রাইস”।
ইয়েস, এভরিবডি। ইউ, ইউ, ইউ, ইউ, ইউ।
আদর্শবাদী বলতে যা
বোঝায় আমি সেটা একেবারেই নই কিন্তু। আমি প্রচুর মিথ্যে কথা বলি, নির্বিবাদে ছোটখাট
অন্যায় করি। সততার স্কেলে আমি দশের মধ্যে নিজেকে টেনেটুনে দেড় দেব হয়ত, কিন্তু যেটা
নিয়ে আমার কোনো সন্দেহই নেই সেটা হল দশে দশ পাওয়ার লোক পৃথিবীতে অনেক আছে। যারা ন্যায়ের পথে চলেন, সত্যে অবিচল থাকেন, দুর্বলকে
রক্ষা করেন, সবলকে ভয় পাননা।
নাটকীয় করে বললে,
তাঁরা যে আছেন এই বিশ্বাসটাই আমাকে রাতে ঘুমোতে সাহায্য করে। আমি অধম বটে, কিন্তু
তাই বলিয়া উত্তমের অভাব নাই। আমি তাঁদের কাজটা কঠিন করে দিচ্ছি নির্ঘাত, কিন্তু
তাঁদের শক্তি আমার থেকে অনেক বেশি। তাঁরাই
মানবসভ্যতাকে দেখেশুনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। ভেবে আমার বিবেকটা অনেক হালকা লাগে।
সে জায়গায় একজন
মান্যগণ্য লোক এসে একটা বাক্যে পৃথিবীশুদ্ধু সবাইকে বিক্রয়যোগ্য কমোডিটি বলে ঘোষণা
করে দিলেন, আমি হাঁ হয়ে গিয়েছিলাম। মানুষের প্রতি এই চরম অবিশ্বাস আর অশ্রদ্ধা
দেখে গা জ্বলে গিয়েছিল।
মনে আছে সেদিন
ক্লাসের শেষে লাইব্রেরি ক্যান্টিনে বসে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। দুনিয়াদার সহপাঠীরা
টেবিল চাপড়ে বলেছিল, সেন্ট পারসেন্ট খাঁটি কথা বলেছেন স্যার। দামের কমবেশি থাকতে
পারে কিন্তু আছে ঠিকই।
“কুন্তলা, তোকে একশো
টাকা ঘুষ দিলে নিবিনা, এক হাজার টাকা দিলে নিবিনা, ধরে নিলাম দশ হাজার টাকা দিলেও
নিবিনা। কিন্তু যদি কেউ দশ মিলিয়ন দেয়? একশো, দুশো, তিনশো বিলিয়ন? তোর ঘাড় নেবে।”
আমার আবার তর্ক করতে
বসলে রাগ হয়ে যাওয়ার বদঅভ্যেস আছে। আর রাগ হলে গেলেই আমি বলি, আচ্ছা আচ্ছা আমি ভুল
তুমি ঠিক।
“নেব নিশ্চয়।” ডালের
বড়া প্লেটে নামিয়ে রেখে হাত ঝেড়ে উঠে পড়েছিলাম আমি।
কিন্তু মনে মনে আমি
জানতাম নেবনা। সেটা সৎ বলে নয়। কেউ আমাকে দশ মিলিয়ন টাকা দিতে এলে আমার এমন ভয়
লাগবে যে আমি উল্টোদিকে যত জোরে পারা যায় দৌড়ব। দশ মিলিয়নের থেকে একশো টাকায়
বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনাই আমার বরং অনেক বেশি।
তারপর তো আমারও অনেক
দুনিয়া দেখা হল। দুনিয়ার থেকেও বেশি নিজেকে দেখা হল। নিজের প্রতি বিশ্বাস তলানিতে
ঠেকল। মানুষের প্রতি বিশ্বাস তলানিতে না ঠেকলেও আগের থেকে কমল অনেক। আর দেখেশুনে
আমার সেদিনের ক্যান্টিনের উপলব্ধিটাই আরও বদ্ধমূল হল।
যারা বিক্রি হয়,
তাদের বিক্রি হওয়ার দাম অ্যাকচুয়ালি হাস্যকর রকমের কম।
*****
এই ভিডিওটা দেখে এত
কথা মনে পড়ে গেল। আমার মতো চুনোপুঁটি পাপীতাপীদের সততা আর অসততার মধ্যে নিরন্তর
টানাপোড়েনের সত্যিটা সোজা ভাষায় স্পষ্ট কথায় তুলে ধরেছেন ড্যান অ্যারিলি। ড্যান ডিউক
ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি আর বিহেভিওরাল অর্থনীতির অধ্যাপক। আমরা কেন অসৎ আর কেনই বা আমাদের
অসততার দৌড় এত কম, এসব নিয়ে সরস সজীব একটা এগারো মিনিটের বক্তৃতা। সঙ্গে ফাউ
অসাধারণ হাতে আঁকা ছবি। শুনে দেখুন, ভালো লাগবে।
লেখা, ভিডিও... দুর্ধর্ষ!
ReplyDeleteপ্রথম প্যারা থেকেই জমে গেছে। দারুণ!
সকালে সময় ছিলো না, তাই ইচ্ছে থাকলেও একটা কথা লিখতে পারিনি।
Deleteভিডিওর সম্পর্কে। নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারলে লোকে একটু কম ছ্যাঁচড়াবৃত্তি করে(এরকম লৌকিক শব্দ তোমার পছন্দ নয় জানি, কিন্তু আর কিছু apt মনে হলো না)- না হয় অল্প অল্প বোঝা গেলো, কিন্তু 'নাস্তিকরাও বাইবেলে হাত রাখার পরে তুলনায় সাধু হয়ে ওঠে'- এই কথাটা মোটেই পছন্দ হয়নি
ভেবে-চিন্তে নিজের জীবনে নাস্তিকতা পালন বোধহয় খুব কম লোকেই এখনো করে। Neo-atheism এর একটা মূল কথাই হলো, বড়দা ওপর থেকে দেখছে না- ভাল থাকতে চাইলে নিজের থেকেই থাকো। Morality একান্তই তোমার নিজস্ব। কোন ঐশ্বরিক গ্রন্থ বলে গেছে বলে নয়।
অর্থাৎ, আমি বলতে চাইছি, ওই নাস্তিকেরা যে cheat করেনি, সেটার কারণ বাইবেলে হাত রাখা নয়, ওটা স্ব-নিয়ন্ত্রিত। হতেই পারে, ওঁর sample-space এ স্বঘোষিত নাস্তিক যারা ছিলো, তারা এই গোত্রে পড়ে না(এখনো), কিন্তু তার থেকে,(আর সঙ্গের অ্যানিমেশন থেকেও) যে ওই চাপিয়ে দেওয়া নৈতিকতার প্রতি একটা খুব সূক্ষ্ম সমর্থন লক্ষ্য করা গেলো(বৃহত্তর সমাজের কথা ভেবেই না হয়), সেটা খুব একটা মন খুলে সমর্থন করতে পারছি না।(http://www.youtube.com/watch?v=IC-9uJrotC4)
হ্যাঁ সেটা আমিও খেয়াল করেছি সুনন্দ। কোথাও একটা হালকা হিন্ট আছে যে ধর্ম লোককে সৎ পথে থাকতে সাহায্য করে। সেটা যে সত্যি নয় তা তো চারদিকে দেখাই যাচ্ছে। তবে উনি বাকি যে উপায়টা বলেছেন, বার বার রিমাইন্ডার দেওয়া, সেটা কাজ করে বলেই আমার বিশ্বাস। এখন সেটা ধর্মের মাধ্যমেও করা যেতে পারে বা অন্য কিছুর মাধ্যমে। শুধু ভালোর জন্যই ভালো হতে উৎসাহ দিয়ে।
Deleteভিডিও টা, দুঃখের বিষয়, এই মুহুর্তে দেখা সম্ভব নয়| পরে দেখব| কিন্তু ওই ভদ্রলোকের লেখা "Predictably Irrational" বইটা সবে পড়ে শেষ করলাম| দারুন ইন্টারেস্টিং, পড়ে দেখতে পারেন| "Everybody has a price" বাক্যটা ওই বইতেই সবে করে চোখে পড়ল| আর আপনার লেখা তো - বরাবরের মতই, অনবদ্য!
ReplyDeleteওহ আচ্ছা পড়ে দেখব তো।
Deletetumi Bethune college e porte????? tao economics??????
ReplyDeleteহ্যাঁ তো।
Deleteamio to portam!! bethune e economics!!! haat melao!!
Deleteহাত মেলাও হাত মেলাও।
DeleteTumi Bethune College ey porte! Tahole khaja college bolo kano?
ReplyDeleteখাজা নয় বলছ বিম্ববতী? যাক।
Deletesubhashis ganguly bolechhilo kathata/?? kintu evrybody got a price ta ki unethicality r context e bolechhilo naki amader shobaar shrom er akta mullo achhe shei byapare? Ariely r pore lie-giri niye porashona kora akhn besh fashonable hoye porechhe :)
ReplyDeleteহ্যাঁ বলেছিলেন তো। আর এথিকসের প্রসঙ্গেই বলেছিলেন। ওহ এই ফ্যাশনটা একটু ঘেঁটে দেখতে হচ্ছে তাহলে।
DeleteThis comment has been removed by the author.
Deleteamio neme porechhi goddolika probaahe ;)
Deleteসেটা কেন বলছিস, এটা খুব জরুরি একটা রিসার্চের জায়গা।
Deleteবাহ, বেশ লাগলো ...
ReplyDeleteগুড সংহিতা।
Deletesherechey! amaro tow lomba chul aar kaney dul...ei rokkhe je economics porai na :))
ReplyDeleteহাহা শম্পা। ভাগ্যিস।
DeleteKhub sundor likhecho Kuntala."Everybody has a price" er context ta ektu kiliar korte hobe. Oi jemon Ritwik boche -- "Shobai Mullyoban" tahole to khoti nei. "Sobai Bikiye jabe" ta te amio agree korte parlam na ar aaj obdi ek dollar diyeo amake keu kinte chai ni...baba ki durobostha amar
ReplyDeleteবং মম ক্লাসে বিকোনোর কথাই হচ্ছিল। আমারও একই দশা। কিনলেই বেচি, কেনার লোকেরই অভাব।
DeleteTumi nijeke keno papi-tapi bolo? Ki paap korecho tumi? :D
ReplyDeleteManusher price ache byaparta shunte amar keno jani na ekkebare bhalo lage na. Shey je reason ei hok. Kono accident e manush mara gele jokhon tar barir lok ke taka deya hoy, amar erokomi kharap lagey. Same for Life Insurance (aro jara untimely mara jaye tader case e). Manusher daam takay noy, bolte paro life er ekta value ache. Tai life ta bujhe shune use/spend kora uchit.
ঠিক ঠিক।
Delete... video ta besh bhalo laglo, kotha theke khunje khunje ber koro baba!
ReplyDeleteভালো লেগেছে? গুড গুড।
Delete"Everybody has a price !!!".....Shubhashish Gangulyr jobab nei Kuntaladi....fan hoye gelam !!
ReplyDeleteশুভাশিস গাঙ্গুলি বলেছিলেন বটে কিন্তু কথাটা তো কিছু এমন নতুনও নয় শ্রমণ, আমি ওনার মুখে প্রথম শুনেছিলাম, (বা উনি প্রথম বিখ্যাত লোক যার মুখে আমি কথাটা শুনেছিলাম) তাই হয়ত আমার ওনার বলাটাই মনে আছে।
Delete