বই বারণ


নিষিদ্ধ বই বললেই কী কী বইয়ের নাম মনে পড়ে আপনার? আমার মনে পড়ে সলমন রুশদির স্যাটানিক ভার্সেস আর তসলিমা নাসরিনের দ্বিখণ্ডিত। আমি দুটো বইয়ের একটাও পড়িনি কাজেই এদের ওপর কেন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে জানিনা। যারা দায়িত্ব নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ধরে নিচ্ছি তাঁরা পড়েছেন আর পড়ে তাঁদের মনে হয়েছে যে এই বইগুলোর মধ্যে এমন কিছু আছে যা মানবসভ্যতার পরিপন্থী। সাধারণ মানুষের হাতে এ বই পৌঁছলে দাঙ্গা বাধবে, রক্ত ঝরবে, বা এত কিছু যদি নাও হয়, যদি শুধু মুঠিভরা কিছু মানুষের মুখও গোমড়া হয়, তবুও সে সম্ভাবনা রোধ করা রাষ্ট্রব্যবস্থার পবিত্র কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যখন তখন না মেনে নিয়ে উপায় কী।

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১২ থেকে অক্টোবর ৬, ২০১২--- ধুমধাম করে নিষিদ্ধ বই সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। এমন কিছু নতুন ব্যাপার নয়, সেই ১৯৮২ সাল থেকেই হয়ে আসছে। বইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিপদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে, আমরা কে কী বই পড়ব তার সিদ্ধান্তের অধিকার বিশেষজ্ঞদের হাত থেকে ছিনিয়ে আমাদের নিজেদের হাতে ফেরত আনতে।

আমিও তাই চাই। আপনিও কি চান না?



*****

নিচে যে বইগুলোর নাম দেখছেন সেগুলো বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন সমাজের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা ব্যানড বা চ্যালেঞ্জড বলে ঘোষিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ক্ষতিকারক বইয়ের সংখ্যা এতই বেশি যে তাদের সবার নাম টাইপ করতে গেলে আমার আঙুল খুলে আসবে। তবু কয়েকটার নাম তুলে দিচ্ছি, আর কেন বিশেষজ্ঞরা মানবসমাজকে এই বইগুলোর ছোঁয়াচ থেকে রক্ষা করতে চান সেই কারণগুলোও।

Alice’s Adventures in Wonderland (1865):  ১৯৩১ সাল নাগাদ চিনের হুনান প্রদেশে বইটি ব্যান করে দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ মনে করেছিলেন খরগোশকে দিয়ে ঘড়ি দেখানো আর বেড়ালকে দিয়ে গা-জ্বালানো হাসি হাসানো মানে মানুষের অপমান। শিশুরা যদি এই বই পড়ে মানুষ বেড়াল এক দর ভেবে বসে তাহলে অনর্থ হবে।

The Adventures of Huckleberry Finn (1884): গালাগালির প্রাচুর্যের জন্য। পড়া বারণ।

Animal Farm (1945): এই বইটা পড়ে থাকলে আন্দাজ করা কঠিন নয় কেন বইটা এতবছর ধরে, এত দেশে, এত বার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ২০০২ সালে ইউনাইটেড আরব এমিরেটস-এর স্কুলে বইটা কেন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল জেনে আমি আর মুখের হাঁ বন্ধ করতে পারছি না। তাই লিস্টে ঢোকাতে হল।

কথা বলা শুয়োরের জন্য। সিরিয়াসলি।

The Da Vinci Code (2003): এটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে কারণ ওই যীশুখ্রিস্টের অবমাননা হ্যানাত্যানা। কিন্তু আমি যেটা গালে হাত দিয়ে বসে বসে ভাবছি, ড্যান ব্রাউন-কেও লোকে এত সিরিয়াসলি নেয়? এ তো  আই আই টি-র অবমাননার জন্য চেতন ভগত ব্যান করার মতো ব্যাপার হল।

The Catcher in the Rye (1951): মানসিক অবসাদ, মিথ্যে, মদ সিগারেট খাওয়া, এবং যথেচ্ছ যৌনাচারকে গ্লোরিফাই করে দেখানোর জন্য বইটি বহুদিন ধরে বিশেষজ্ঞদের চক্ষুশূল হয়ে এসেছে। হোল্ডেন নাকি হাইস্কুল পড়ুয়াদের জন্য যথেষ্ট ভালো রোল মডেল নয়। কী সাঙ্ঘাতিক যুক্তি ভাবুন। এই যুক্তি মানলে তো কোনোদিন কারো অমর চিত্র কথা ছাড়া আর কিচ্ছু পড়া উচিত নয়।

Are You There God? It’s Me Margaret (1970): ক্লাস সিক্সে পড়া একটি বুদ্ধিমান মেয়ে মার্গারেট ভগবানের সঙ্গে কথা বলছে। স্বাভাবিকভাবেই যে সব জিনিস ওকে ভোগাচ্ছে সেগুলো নিয়ে। যেমন ধরুন, বয়ঃসন্ধি, ঋতু, আর...এইবার সবাই কানচাপা দিন...ব্রেস্টস। বিশেষজ্ঞরা জুডি ব্লুমের দিকে সেই অমোঘ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, এটার কি কোনো প্রয়োজন ছিল? অনেকভাবে এই প্রশ্নটার উত্তর দেওয়া যায়। বলা যায় যে,  পৃথিবী যে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে সেটা জানারও তো কোনো প্রয়োজন ছিল না কিংবা সিনেমায় চুম্বনদৃশ্যের প্রাসঙ্গিকতা প্রসঙ্গে চন্দ্রিল ভট্টাচার্য যেটা বলেছেন সেটা টুকে দেওয়া যায়। প্রাসঙ্গিক চুমু কী ভূভারতে কেউ দেখাতে পেরেছে কোনোদিন? বা পারবে? প্রাসঙ্গিক চুমু কি হয়? আদৌ?

তেমনি প্রাসঙ্গিক পিউবার্টিও হয় না। বিশেষ রূপে অজ্ঞ না হলে এই সোজা ব্যাপারটা ওনাদের অনেক আগে মাথায় ঢুকে যেত।

Harry Potter-এর সব বইঃ কেন আমি জানিনা। জানতেও চাইনা। যারা জানেন আপনারা সোজা তাঁদের মুখ থেকেই শুনে নিন বরং।

Comments

  1. বাহ্‌ ! কুন্তলাদি আজ ক্ষেপে আছেন দেখছি! এইরকম ক্ষেপে থাকা লেখা পড়তে আমার বেজায় ভাল লাগে। "তেমনি প্রাসঙ্গিক পিউবার্টিও হয় না। বিশেষ রূপে অজ্ঞ না হলে এই সোজা ব্যাপারটা ওনাদের অনেক আগে মাথায় ঢুকে যেত।"... কেয়া বাত! জিও!
    নিষেধাজ্ঞা ব্যাপারটাই গোলমেলে নয় কি? মানে Parental Control এর মতো নির্বিষ ব্যাপার নয়- আমি আরও বড়োদের ওপর হওয়া নিষেধাজ্ঞার কথা বলছি। দামড়া লোকজন যখন কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চার মতো- 'অ্যাই, তোরা কেউ ওর সাথে কথা বলবি না, ওর সঙ্গে আমার আড়ি' বলতে শুরু করে- বেজায় ধন্দে পড়ে যাই, খ্যা খ্যা করে হাসবো, নাকি উস্তুমখুস্তুম রেগে যাবো।
    আমার মনে হয়, যে কোন গোষ্ঠীর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার অধিকারের ওপর একটা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা চালু করলে হয় না?

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই প্রস্তাবটায় আমি সর্বান্তকরণে সমর্থন জানাচ্ছি সুনন্দ। ব্যান করাটাকেই ব্যান করা হোক।

      Delete
  2. taslima'r dwikhandito keno ban holo bujhlam na. same with buddhadeb bose er raat bhor brishti!!! tarpor gandhi'r opore lekha lelyveld er great soul....ban korbar tow kono karon e pelam na. asholey sarkari daptar er kon homra chomra otake pore decision nichhe tar opore depend kore. nahole "nehru: a biography" bole ekta boi naki banned in india karon ote ekta line achey je "nehru enjoyed the company of beautiful intelligent women"! bhabo!

    ReplyDelete
    Replies
    1. রাত ভোর বৃষ্টি, ইয়েস। কর্তৃপক্ষের হয়ত মনে হয়েছে এই বই পড়লেই সব দম্পতিরা একে অপরকে ছেড়ে পরকীয়া করতে লেগে পড়বে আর না পড়লে সুখে শান্তিতে সংসার করবে।

      নেহরু কেন আমিও তো বিউটিফুল ইনটেলিজেন্ট উইমেনদের সান্নিধ্য এনজয় করি। যে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের লোকই করবে।

      জঘন্য ব্যাপার। সিরিয়াসলি।

      Delete
  3. Harry Potter যে নিষিদ্ধ সেটা সত্যি জানা ছিলনা। আচ্ছা সিনেমা টা দেখাও কি নিষিদ্ধ।
    তা হলে অবশ্যই আমার মত তুমিও সেই গর্হিত কাজটি করেছ আশাকরি। আর আমরা সবাই নিষিদ্ধ জিনিসই বেশি করে পরি তাইনা? ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই অল্প বিস্তর বড়দের কথা অমান্য করে নিজের মনের মত কাজ তা ঠিক সুযোগ বুঝে করে নেয়েছি তাই বই পরার
    ক্ষেত্রে ও সেই পথ ধরাই ভালো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. সে তো বটেই প্রিয়াঙ্কা।

      হ্যারি পটারের সিনেমা তো আমি সব দেখে ফেলেছি অলরেডি। ব্যান হলেও আর কারো কিচ্ছু করার নেই।

      Delete
  4. Prithibi te kono boi kei ban kora uchit na. Je kono reason ei hok. Karon writer er ekta freedom of speech ache. Tomar baje lagte pare kono boi pore, tumi tate writer ke gali diye review likhte paro (tomaro freedom of speech ache), boi ta na porte paro. Kintu oi eki katha - ban kora chole na.
    Fanatic rai boi ban kore, movie ban kore. Karon tara fanatic (religious, socio-political, je kono flavor er fanatic).
    Katha bola shuyor!!! Hahahaha!!! Animal Farm amar boro priyo boi...communist der exact chehara dekhiyeche. Ami to bangla adhunik kobita porle atom bomb er moto rege jayi, kintu tai bole ki Jibonananda ke ban kore diyechi? (46-47 pore oboshyo ichhe hoyechilo khub).

    ReplyDelete
    Replies
    1. একদম একমত রিয়া। প্রাপ্তবয়স্করা সবাই যে যার ইচ্ছেমতো চলবে বলবে উঠবে বসবে। তাতে যতক্ষণ না অন্য কারো ক্ষতি হচ্ছে কারো কিচ্ছু বলার নেই।

      Delete
  5. Kuntaladi, Animal Farm to banglateo onubaad hoyechhilo 'Poshukhamar' naame...sheta ei morudyanei banned hoyechhilo....e rajyei 'Herbert' Nandan theke shoriye nite badhyo kora hoyechhilo...ebong ek baam shorkaar porichalito rajyei..just bhaabo...abaar jemon onek dhoroner ban hoy, jegulo thik shorashori ban noy, kintu oi eki gotriyo...jemon ekhon syllabus theke Sukanter kobita hothaat shoriye newa holo...manchhi, shorashori ban bola jaabena eke...kintu inherently eki gotriyo noy ?...r amra bhaabi bujhi Bangalira liberal :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঙালিরাই আসলে বাঙালিদের এতকিছু ভাবে, সেটাই হয়েছে আসল মুশকিল শ্রমণ। বাকিরা আমাদের নিয়ে কী ভাবে আর কী বলে সেটা একবার কান পেতে শুনলে আর দেখতে হচ্ছে না।

      Delete
  6. bah..darun lekha...bishoytao khub bhalo

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাঙ্ক ইউ তিন্নি।

      Delete
  7. amar meyebela ar lojja o bodhoy bangladesh e nishiddho..asole mukher opor kath kath kore sotti kotha bole deya lokjon ke rashtro borabori voy kore chole kina, tai gola tipe mukh bondho korar chesta kore sotti ta chepe rakhar jonyo..se boi hok, kimba cartoon chhobii hok..

    ReplyDelete

Post a Comment