Can I have one tall skinny Cappuccino please?



প্রথমেই আপনাদের সবাইকে মন থেকে একগাদা ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা জানাই, অবান্তরের জন্মদিনে এত ভালোভালো মন্তব্য রাখার জন্য। আপনারা অবান্তরকে যতটা ভালোবাসেন অবান্তরও আপনাদের ততটাই ভালোবাসে। কি তার থেকে একটু বেশিই।

জন্মদিনে কার মুখ দেখে উঠেছিলাম কে জানে কিন্তু সকালবেলা দাঁতটাত মেজে, চা-টা খেতে না খেতেই ছপ্পর ফুঁড়ে একখানা নেমন্তন্ন এসে আমার কোলের ওপর পড়ল। যদিও আমার নাক পর্যন্ত ডেডলাইনে ডোবা ছিল কিন্তু আমি নিজের ওপর দয়া দেখিয়ে বললাম, আহা ডেডলাইন তো একটা গেলে আরেকটা আসবে, জন্মদিন আসতে আসতে তো আবার সেই ৩৬৫ দিন। কাজেই কাজ শিকেয় তুলে নাচতে নাচতে নেমন্তন্ন খেতে বেরিয়ে পড়লাম। আগেরবার মা আমার জন্য লোকালট্রেন থেকে কেনা একজোড়া ঝুমকো দুল রেখে গিয়েছিলেন, অবান্তরে জন্মদিনের মুখ চেয়ে নিউজপেপারের ছোট্ট ঠোঙা খুলে আবার সেই দুলজোড়াও পরা হল।

তারপর তো খুব নেমন্তন্ন খাওয়া হল, মোমবাতি জ্বালা কেক আর কাজুবাদাম দেওয়া পায়েসের বদলে রগরগে মাটন বিরিয়ানি আর তেলতেলে চিকেন কোর্মা। এছাড়া মেনুর শুরুতে খিদে বাড়ানোর জন্য চাপলি কাবাব আর শেষে মুখশুদ্ধি হিসেবে এলাচ দেওয়া সেমাইয়ের পায়েসের ব্যবস্থা ছিল। সবকটা পদ বাড়িতে বানানো আর সবকটা পদই দোকানকে লজ্জা দেওয়ার মতো বানানো। পেট ভরে যাওয়ার পরেও টানা দশ মিনিট থালা আঁকড়ে বসে ছিলাম আমি। ঘটনাটা শেষ হয়ে যাচ্ছে ভাবতেই পারছিলাম না।

খাওয়ার পর টোয়েন্টি কোয়েশ্চেনস খেলা হল। খেলায় বলার মতো কিছু ঘটেনি। আমি মেরী কোম আর মদন মিত্র ভেবেছিলাম, মেরী কোম-টা সবাই পাঁচটা প্রশ্নের মধ্যে ধরে ফেলল কিন্তু মদন মিত্রে সবাই ডাহা ফেল।

খাওয়াদাওয়া খেলাধুলো গল্পগুজব করতে যে কী পরিমাণ এনার্জি খরচ হয় অভিজ্ঞ লোক মাত্রেই জানেন। তার ওপর যদি সেগুলো শেষ হতে হতে রবিবার সন্ধ্যে গড়িয়ে যায় তাহলে তো আর কথাই নেই। সারা বিকেল নখদাঁত বার করে পয়েন্ট কাড়াকাড়ি করার শারীরিক ক্লান্তি আর বারোঘণ্টার ভেতর সোমবারটা হইহই করে ঘাড়ের ওপর এসে পড়ল বলে---এই মানসিক অবসাদ, দুয়ে মিলে সে এক অকথ্য ব্যাপার ঘটে। কার্বোহাইড্রেটের ওভারডোজে চালের বস্তার মতো ভারি হয়ে থাকা শরীরগুলোকে নেমন্তন্নবাড়ি থেকে হিঁচড়ে টেনে বার করে আনতে আনতেই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে রবিবারটাকে এক্ষুনি শেষ হতে দেওয়া যাবেনা। অতএব বাঁয়ের বদলে ডাইনে ঘুরে সোজা কফির দোকান। শান্ত ফাঁকা দোকানের কোণের লাল সোফাটায় গা ছেড়ে দিয়ে, লেমোনেডে গলা ভিজিয়ে, সত্যি বলছি, আরামে চোখ বুজে এল।

যে কটা ব্যাপারে আমি নিজের কথা নিজে গিলেছি তার মধ্যে একটা হল ইন্টারনেটে সাতকাহন করে ব্যক্তিগত গপ্প ফাঁদা আর একটা হল এই কফিশপ। প্রথমটা আর ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই কিন্তু এককালে কফিশপের নাম শুনলেই আমি প্রবল তাচ্ছিল্যে ঠোঁট বেঁকাতাম। আমাদের হোস্টেলে একজন থাকত সে বিকেল হলেই মাথায় একখানা ‘মেসি বান’ বেঁধে আর অ্যাবস্ট্রাক্ট প্রিন্টের সুতির লংস্কার্ট পড়ে রিং রোডের মোড়টায় দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নেড়ে অটো ধরত। রোজ মানে রোজ। সাত দিন, বারো মাস। আমি ভাবতাম যান কোথায় মহিলা। তারপর একদিন প্রিয়া কমপ্লেক্স থেকে ‘খাকি’ দেখে বেরিয়ে কলকল করতে করতে বারিস্তায় ঢুকে দেখি এককোণ থেকে মহিলা মহা বিরক্ত মুখে ভুরু কুঁচকে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। একখানা জা পল সার্ত্রে পেপারব্যাকের মাঝখানে আঙুল গোঁজা, যাতে অসংস্কৃত পাবলিক দোকান থেকে তল্পি গোটালেই আবার যেখানটায় বাধা পড়েছিল সেখান থেকে শুরু করা যায়।

সেই থেকে কেউ নিয়মিত কফিশপে যায় শুনলেই আমি ধরে নিতাম ব্যাটা নির্ঘাত পোস্টমডার্ন হিপি।

তারপর যা হওয়ার তাই হল। আমি সকাল, দুপুর, বিকেল তিনবেলা করে কফির দোকানে ঢুঁ মারতে শুরু করলাম। সঙ্গী নেই, মনখারাপ? মন চল নিজ স্টারবাকসে। সীবলীর ক্লাস আগে ছুটি হয়ে গেছে? চল চল প্লিজ কফি খেয়ে আসি। কফির দোকানে বসে আমি হ্যারি পটার পাঁচ ছয় সাত শেষ করে ফেললাম, অবান্তরের কত কত পোস্ট লিখে ফেললাম, কত কত নিরালা দুপুর আর মুখরিত সন্ধ্যেয় কফিশপ আমাকে আশ্রয় দিল সে গুনতি কে রাখে।

কিন্তু আমি পোস্টমডার্ন হিপি এ কথা আমার অতি বড় শত্রুও বলবে না বিশ্বাস করুন। অন গড ফাদার মাদার।
     

Comments

  1. Hahahahaha!!! (Ei hashi ta last chhobi ta dekhe) Ar post er jonye boli - amader bari kenar puro hisheb potro, mane credit calculation, koto takar bari amra kinte pari, etc. hoyechilo coffee shop e boshe. Ar kichu chao? Coffee shop zindabad!! Ekhono amar manager er sange 1:1 thakle amra office na boshe tuk tuk kore hatte hatte Starbucks chole jayi. Ar amar kaku-type manager amay ekta kore coffee kine daye, nijeo khaye :)(Onar sotyi amar boyeshi chhele ache tai onar pocket mere khete amar kichui kharap lagey na).

    ReplyDelete
    Replies
    1. কফিশপ অমর রহে রিয়া। আরে পকেট মেরে খাওয়ায় লজ্জার কি আছে, আমি তো বলি শুধু কফি না খেয়ে ম্যানেজারবাবুকে একটা করে বিস্কোটিও কিনে দিতে বোলো।

      কাপের ছবিটা দেখেই এত পছন্দ হয়ে গেল যে ছেপে দিলাম। ভালো কিনা বল?

      Delete
    2. Haha! Coffee khaoa niye ekdin ghor jhamela badhlo. Amader tokhon 6ta theke meeting thakto. 10tay meeting sesh korei amra brunch khete jetam sobai mile. To keu ekta coffee cheyeche, takey to bina dudh-chini'r ekta black coffee diyeche. Sei dekhe ami, ekta Malayali ar ek Marathi naak shitkiyechi. "Emon kalo coffee o tora khash" meaning sei naak shitkonor. Tokhon sei bhadrolok bolte laglo, dudh ar chini'r modhye ektu coffee diye na kheye milk shake khelei to paro! Ar jaye kothay, khub gali diyechilam takey amra sedin :D

      Delete
    3. ছাড়ো তো ওদের কথা। আমার দাদু বলতেন, চা তো খাই দুধ চিনি খাওয়ার জন্য, এমনি চা মানুষে খায় নাকি? আমি যদিও দাদুর পথের পথিক নই, কিন্তু দাদুর যুক্তিটা বুঝি। আমি একদিন কফি অর্ডারের লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম আর আমার সামনে একজন গম্ভীর মা টাইপের দেখতে মহিলা কফি অর্ডার করছিলেন। ওদিকের মেয়েটা অর্ডার নেওয়ার পর মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেছে, "ডু'ইয়া ওয়ান্ট ক্রিম উইথ ইট?" তখন মহিলা খুব উদাস মুখে বললেন, "ইফ ইউ ওয়ান্ট টু রুইন ইট।" শুনে সে কি হাসি সবার। জঘন্য।

      Delete
  2. coffee mog (mug) ta kintu daroon!

    ReplyDelete
    Replies
    1. সেইজন্যই তো। দেখা মাত্র টুকে দিয়েছি।

      Delete
  3. goto shonibar Edinburgh airport e ekta coffee shop dekhlam.. interior ta library r adole… dark wooden shelf e boi sajano... r table e table e mota gobda mombati.. eke to satdin por bari ferar anondo chilo e.. tate oi rokom ekta coffee shop.. mon ta r o bhalo hoye gelo jano...

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ আমার তো কফির থেকেও কফির দোকান বেশি ভালোলাগে। সত্যি মন ভালো হয়ে যায়। ঠিকই বলেছ।

      Delete
  4. lekha ta kal ratei porechilam r tomar opor vison regeo gechilam.... coz oi rate omon ekta cup e tao coffee er moto durbol tomo bisoy niye kue lekhe tar jata amar mot coffee khor tader ki hal hobe vebe dekha uchit korti pokher.... :(

    Sotti tomar lekhata pore kichu kotha mone porche tao sob coffee house ghire r ei torol bostu tik nea.... amar onek paglami-khamkheyalir sakkhi holo ei coffee :)) he he ektu sentu hoye gelam :P

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে সেন্টু তো হওয়াই উচিত প্রিয়াঙ্কা। আমিও হই, তবে কফি নিয়ে নয়, চা নিয়ে।

      Delete
    2. Cha hmmmmmmmm ekhaneo kono golpo ache mone hocche :P sunte hoy....

      Delete
  5. ঝুমকো দুল pora chabi dekhte chai:)

    ReplyDelete
  6. Ami coffee (ar alcohol) ekebarei handle korte parina! Kintu coffeshop-er idea ta besh lage. besh anek lok achhe kajei eka thakar bhoi nei athocho doka thakar birokti nei! shudhu coffee-r badole ek gelar earl gray Ar hyan mug ta darun.

    ReplyDelete
    Replies
    1. মিল মিল রুচিরা! আমিও কফির দোকানে বসে চা খাই, তবে আর্ল গ্রে-র বদলে ইংলিশ ব্রেকফাস্ট।

      Delete
  7. Postgraduationer somoy Delhite ek Bangali bondhu amay bujhiyechhilo je laal chaa aar kaalo coffee na khele naki adorsho baamponthi howa jay na....dudh, chini mishiyechho ki gechho !! koulinyo aar thakbe na..elite class-e pore jaabe...byas, shei shune aami ek bochhor tneto coffee paan korechhilam....:)

    ReplyDelete
    Replies
    1. উফ শ্রমণ তোমার পোস্টগ্র্যাজুয়েশনের বন্ধুরা আর তাদের তত্ত্ব। ধন্য। আমার বাড়িতে এলে তোমাকে বেশি করে দুধ চিনি দিয়ে চা খাওয়াব।

      Delete
  8. last pic ta to chorom..lekhatao as usual valo seta ar bolar opekkha rakhe na..

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাঙ্ক ইউ থ্যাঙ্ক ইউ কুহেলি।

      Delete

Post a Comment