গোমাতা আর বৃষ্টির গল্প
যত ভাবি নতুন জায়গায় এসে
নতুন মানুষ হয়ে চলব, দুদিন যেতে না যেতেই যেই কে সেই। সমস্ত আড়ালআবডালশপথসদিচ্ছার
বেড়া ভেঙে সেই পুরোনো বদখত কুন্তলা স্বমূর্তি বার করে। সেই অলস, বিশৃঙ্খল, লাস্ট
মোমেন্টে হুড়োহুড়ি করা কুন্তলা। গতকাল আমাদের রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
খোলা ইত্যাদি নানারকম অফিসিয়াল কাজের দিন ছিল। সকাল ন’টায় ইনফরমেশন সেন্টারের
সামনে দেখা করার কথা। আটটা পঁচিশে আমি কোনওমতে কনভার্সের ফিতে হাফ বেঁধে অবশেষে
আমার বাড়ির দরজার দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে বেরোতে পারলাম।
বেরিয়েই দেখি আকাশের মুখ
গোমড়া, এক দু ফোঁটা ঝরছেও। কিন্তু তখন আর ফিরে এসে ছাতা নিয়ে যাওয়ার সময় নেই। যা
থাকে কপালে বলে আমি ট্রামলাইনের দিকে ছুটলাম। কপাল ভালো ছিল। দেখতে দেখতে মেঘ কেটে
রোদ্দুর উঠল। আমরা কাজ সেরে ফাদার রাইনের পাশে বসে খুব আড্ডা দিলাম আর একে অপরের
লেগপুলিং করলাম।
আগেও দেখেছি, ইন্ডিয়ান দেখলেই
সবাই গরু নিয়ে জানতে চায়। এ এক অদ্ভুত ফ্যাসিনেশন। আমরা কি রাস্তায় গরু দেখলে নমো
করে সাইড দিই? জবাই করে মাংস খাই না অথচ বাছুরবেচারার ভাগের দুধ দিব্যি জোরজুলুম
করে দুয়ে নিই, এটাই বা কেমনধারা? একজন ভদ্রলোক সদ্য বারাণসী থেকে ফিরেছেন। তিনি
রীতিমত বিচলিত হয়ে পড়েছেন এই দেখে যে গোমাতারা আস্তাকুঁড় থেকে নোংরা প্লাস্টিক,
পচা কলা, ধচা নিউজপেপার মুখে তুলে চিবোচ্ছেন আর আমরা দিব্যি নিশ্চিন্ত মনে নিজেদের
অফিসকাছারি বাজারদোকান করে বেড়াচ্ছি। একটুও লজ্জা পাচ্ছি না।
বাট শি ইজ ইয়োর গডেস! হাউ
ক্যান ইউ অ্যালাউ দ্যাট!
আমি খানিকক্ষণ ভাবলাম। এত
শক্ত প্রশ্নের মুখোমুখি উচ্চমাধ্যমিকেও হইনি। তারপর বললাম আসলে আমরা ইন্ডিয়ানরা
দুশোবছর পরাধীন ছিলাম তো, পরাধীনতার জ্বালা আমরা বুঝি। টাটকা খাবার, হেলদি
লাইফস্টাইল এসবের থেকে স্বাধীনতা আমাদের কোটিগুণ বেশি আদরের। গোমাতা আমাদের গডেস,
তাই তাঁর স্বাধীনতাও অসীম। তিনি ইচ্ছে হলে আস্তাকুঁড়ে খাবেন কিংবা আগরওয়াল সুইট্সের
বাইরে রাখা গরম জিলিপির ঝুড়ি সাবাড় করবেন, আমরা নশ্বরেরা বাধা দেওয়ার কে?
ভদ্রলোক কনভিন্স্ড্ হলেন
কি না কে জানে। আমার মাথায় এর থেকে বেটার উত্তর আসছিল না। আপনাদের এলে বলবেন
প্লিজ। পরের বার সেটাই বলব।
পাতার ফাঁক দিয়ে পিঠে এসে
পড়া রোদ যখন মিষ্টি থেকে কড়া হয়ে শেষটায় অদৃশ্য হয়ে গেল তখন আমরা যে যার জিন্স্
ঝেড়ে উঠে পড়লাম। সি ইউ টুমরো। বাআআআই।
ফেরার পথে ইজিপ্ট থেকে আসা
আমার দুই সহকর্মী আমার বাড়ি দেখতে এসেছিল। টেরাস থেকে বন শহরের ভিউ তাদের দেখাতে
গিয়ে বেশ গর্ব হচ্ছিল। অদ্ভুত। আমার শহর না, আমার বাড়ি না, আমার ভিউ না। পাঁচদিন
আগে আমার এসবের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না, ছ’মাস বাদে আবার থাকবে না, অথচ অলরেডি
এগুলোকে আমি “আমার” মনে করছি। লোকজনকে বুক ফুলিয়ে নেড়েচেড়ে এপাশওপাশ ফিরিয়ে
দেখাচ্ছি। এই আমি নাকি সব ছেড়ে হিমালয়ে গিয়ে থাকব ভাবি? এই সর্বগ্রাসী মায়া ছেড়ে?
তাহলেই হয়েছে।
স্যাড হয়ে ইউটিউবে রান্নার
ভিডিও চালালাম। যদি মন ভালো হয় এই আশায়। রান্নাবান্না দেখতে দেখতে কী রকম খিদে
পেয়ে গেল। ফ্রিজে কী আছে দেখি ভেবে চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাব এমন সময় জানালার বাইরে চোখ
পড়ল।
অঝোরে বৃষ্টি নেমেছে। পাতলা
বর্শার ফলার মত সারি সারি জলের ধারা এসে আছড়ে পড়ছে গাছের পাতায়, শান্ত পিচরাস্তায়,
প্রতিবেশীর তিনকোণা টেরাকোটা রঙের ছাদে, আমার ঘরের সামনের টেরাসের রেলিঙে, মেঝেতে।
নিঃশব্দ, একটানা।
দৃশ্যটা এতটাই অপ্রত্যাশিত
যে চমকে গিয়েছিলাম। পরমুহূর্তেই মনটা কানায়কানায় ভরে গেল। বৃষ্টির শব্দ শুনব বলে
বন্ধ কাঁচের দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। বেশি শব্দ নেই। আমাদের বৃষ্টির মধ্যে
যেমন একটা পাড়াকাঁপানো, ত্রিপলওড়ানো ব্যাপার আছে, সেটা নেই এ বৃষ্টিতে, কিন্তু তেজ
আছে। দেখেই বোঝা যায়, গোঁ ধরে নেমেছে, সহজে বাগ মানবে না।
বৃষ্টির পর্দার ওপারে ঝাপসা বন শহরটাকে আরও মায়াবী লাগছিল। ঘরে এসে চুপ করে সেদিকে তাকিয়ে বসে রইলাম। কানফাটানো কী যেন একটা গান চলছিল ল্যাপটপে, সেটাকে নিভিয়ে। কোনও কোনও সময় থাকে না যখন প্রকৃতির সঙ্গে আর কোনও সঙ্গত লাগে না? গতকালের সন্ধ্যেটাও ঠিক সেরকম ছিল। ঘণ্টাখানেক পর বৃষ্টি ধরে এল। আমিও হাতে একটা গল্পের বই নিয়ে গিয়ে কম্বলের তলায় ঢুকলাম। রাত দশটা নাগাদ যখন আকাশ থেকে দিনের শেষ আলো মুছে যাচ্ছে তখন বই মুড়ে পাশ ফিরতে গিয়ে দেখি আকাশজোড়া রামধনু উঠেছে। পোস্ট-টাওয়ারের কাঁচের দেওয়াল সেই রঙে আগাপাশতলা লাল।
Lekhata eto bhalo hoechhe, je sudhu janie die gelam pore phelechhi ek niswase, ar kichhu comment korar moton bujhe uthte parchhina.
ReplyDeleteBristi, notun sahorer galpo, chhobi.... sob milie seshta .... :-).
বাঃ বাঃ ভালো লেগেছে। থ্যাংক ইউ ইচ্ছাডানা।
Deletekhub mon valo kora lekha. du char fota brishti dhar nao na plz.
ReplyDeleteআহারে দুচারফোঁটা কেন স্বাগতা। বেশি করেই নাও, আমরা তো ঠাণ্ডা হয়েই গেছি।
DeleteAjj kolkata te o ek dhara e jirijiri brishti hochhe...khub bhalo laglo brishti bheja sohor peria office e aste...
ReplyDeleteasar poth e besh mojar drishho dekhlam...kichu nobodompoti(not sure,saj dekhe mone holo) jamaisoshti korte sosur bari choleche..
ও হরি, আজ জামাইষষ্ঠী বুঝি? আজ তারকেশ্বর লোকালে ভয়ানক ভিড় হয় জানেন তো সৌমেশ। অল্পবয়সী মা'দের কোলে চেপে বিচ্ছু বাচ্চাগুলো মামাবাড়ি যায় আর আশেপাশের লোকের চুল ধরে টানে। চক্ষুলজ্জার খাতিরে কিছু বলাও যায় না, কিন্তু মনে হয় দিই কষে কান মুলে।
Deleteবৃষ্টির শহর খুব সুন্দর, তাই না? আশা করি আপনার সারাদিন ভালো কাটুক।
ইশশ, বউ নেই, আমাদের জামাইয়ের ভাগ্যে প্রথম জামাইষষ্ঠীর ইলিশটুকুও জুটল না।
ReplyDeleteআর আপনি ছ'মাসের জন্য গেছেন? ডিসেম্বরে ফিরবেন? গরম কাপড় নিয়ে গেছেন তো? আমি নিজে জার্মানি যাইনি, কিন্তু গিন্নি বলেছেন যে ওখানের ঠান্ডা নাকি লন্ডন নিউ ইয়র্কের মনোরম তুষারপাতের মত নয়... ওই ঠান্ডার চেয়ে বাঁশপেটা লোকে বেশি প্রেফার করে শুনেছি।
বাঃ অমনি বউয়ের দোষ হল? জামাই যে বউয়ের আগেই পালিয়েছে, সে বেলা?
Deleteঅভদ্র রকমের শীত পড়ে বলছেন দেবাশিস? সোয়েটার কোট কিছু এনেছি। তবে সেটা যথেষ্ট কি না সে নিয়ে সন্দেহ আছে। দেখা যাক, সে রকম হলে এখান থেকেই জোগাড় করতে হবে।
Dilliteo gotokaal sokal theke megh chhilo. Brishti bishesh poreni jodio, kintu meghla Dilli-i ba kom kiser? :)
ReplyDeleteBenareser gomata ra ja ichche khan. Jake ichche gnuto maren. Je rastar mowrey ichche boshe poren. Keu hostokkhep korte gele ashe pasher lokera hoi hoi kore eshe taakey gonodholai er humki day. Tomar porichito bhodrolok jano khobordar gomata ke jonjal chhere taja ghaas khawate na jaan, noile onar kopale dukkhu achhe.
Also, sei ki e-mail korbe bolechhile. Korle na toh?
Deleteনা বিম্ববতী, উনি ওসব কিছু করতে যাবেন না, জাস্ট পর্যবেক্ষণ করেছেন আর কি।
Deleteআমি ভাবছিলাম তোমাকে মেল করে বলি যে মেল করার দরকারটা এখন আর নেই। সেটা বলতে গড়িমসি করছিলাম আর কি। কিন্তু তোমার মেল আইডিটা রইল, ভালোই হল। ইচ্ছে করলে গল্পও করা যাবে, নাকি?
dekh brishti r janyo kirakam hahutash korchili..ki sundar barsha suru hoyeche ,bhalo lagche germany r post gulo porte
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।
Delete"meghla bikele shaon ese dNaray baranday...bole kemon acho bandhu tomar songsari bichanay..bhule gecho sei megheder din,meghla meyer naam...bholatai niyom tomar bhulbei jantam."khub sundor mon bhorano lekha..ar majhe majhei ami bhul kore onnyo profile theke mane amar roommate er profile theke comment kore feli..asole onar mailid ta khola thake compute ota offline korar kotha mone thakena amr..:)
ReplyDeleteohh..ki darun line!!kar lekha?ami ki dhar korte pari?amar abar bhalo line songroho korar batik ache..
Deleteসত্যি কবিতাটা সুন্দর সুমনা, কার লেখা? তোমার নাকি?
Deletenago amar na..Pallab Kirtaniya..naam sunecho?
Deleteশুনিনি আবার সুমনা, রীতিমত চোখে দেখেছি, কথা বলেছি। কলেজের বন্ধুরা মিলে অষ্টমীতে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলাম। কুমারটুলির প্যান্ডেলে পৌঁছে দেখি ইটিভি না কোথা থেকে ক্যামেরা ঘাড়ে দল এসেছে। পল্লব কীর্তনিয়া হাতে মাইক আর মাথায় উসকোখুসকো চুল নিয়ে এদিকওদিক ঘুরে লোক শিকার করছেন। একঝাঁক কলেজের মেয়ে দেখেই ঝপাং করে ধরেছিল টিভির দল। আমাকে কী যেন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, পুজো দেখা ছেড়ে বন্যাত্রাণ করতে যেতে চাই না কি এইসব। উত্তর কী দিয়েছিলাম মনে নেই, কাজেই জিজ্ঞাসা কোর না প্লিজ।
Deletear amio to onnyer line dhar kori Soumesh...:)sutorang chap nei..
Deletekhub bhalo laglo lekhata. bhalo thakun r o brishti njoy korun r amader bhalo bhalo lekha din ei iccha roilo
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ দেবশ্রী। আমারও সেটাই ইচ্ছে।
Deleteআমাদের কোলকাতাতে বেশ বৃষ্টি হচ্ছে। বল্টিমোর থেকে খবর পেলাম সেখানে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে কড়্ কড়্ কড়াৎ। তোমার ওখানেও বৃষ্টির খবর। তোমার বারান্দার রেলিংএর জলের ফোঁটায় আমি তো ভিজে যাচ্ছি। তুমি ভিজলে কি? বিশ্ব জুড়ে এক সময় বৃষ্টি নামল কেন? মনটাকে ঘন সবুজের মধ্য দিয়ে উধাও করে দেবার জন্যই কি? বৃষ্টি কি রাতের বেলায়?
ReplyDeleteবৃষ্টি তো সন্ধ্যেয় মালবিকা, তবে রাতের বৃষ্টি আমার বড় প্রিয়। চারদিকে বৃষ্টি হচ্ছে ভালো তো, চেনাজানা মানুষেরা সবাই একসঙ্গে বর্ষার আনন্দ নিতে পারবে।
DeleteEije,din gulo eto bhalo katche kyano bujuhle to? sei train bibhrat! bolechilam na!
ReplyDeleteতাই তো দেখছি সুমনা। যত ঝামেলার শুরু, বাকিটা ততই ভালো। তুমি মনে মনে বল যেন শেষটাও ভালো হয়, তাহলেই সর্বাঙ্গসুন্দর হবে।
DeleteKuntala, Apni je darun lekhen seto sobai bole. Apnio nischoi janen!
ReplyDeleteTobe, apnar je jinista amar sobcheye pochhondo ta holo, je kono topic niye likhte para ar roj niyom kore lekha... amar moto blogger ra jara anek bhebe, mathar chul chhnire maas e 1ta lekha namai tader apnar kachh theke shekha uchit!!
Germany te somoy bhalo katuk!!
আরে থ্যাংক ইউ তপোব্রত। না না শেখার একেবারেই কিছু নেই, কারণ আমি অফিস আর অবান্তর ছাড়া আর কোনও কাজ করি না। তবে তুমি আমার সম্পর্কে এত ভালো ভালো কথা বললে দেখে ভীষণ খুশি হয়েছি। থ্যাংক ইউ।
Delete"কোনও কোনও সময় থাকে না যখন প্রকৃতির সঙ্গে আর কোনও সঙ্গত লাগে না? "
ReplyDeleteহাই হাই হাই ফাইভ!এই রকম দুর্লভ মুহূর্তের জন্য কত অপেক্ষা করে থাকি!
মিঠু
আমিও মিঠু।
Deleteআরে আপনি তো ফা-টা-ফা-টি ফটোগ্রাফার হয়ে উঠেছেন দেখছি! আপনার জার্মান বন্ধুটিকে জিজ্ঞাসা করলে পারতেন যে তাঁদের দেশে দেবদেবীরা কি করবেন না করবেন সেটা তাঁরাই নিয়মিত ঠিক করে দিয়ে থাকেন কিনা। আমাদের দেশে তো আমরা উল্টোটাই স্বাভাবিক মনে করি।
ReplyDeleteইস, আপনার থেকে এমন কমপ্লিমেন্ট পেয়ে মন ভরে গেলে। জার্মান বন্ধু জিজ্ঞাসা করেননি, কোন দেশের লোক করেছেন সেটা আর খুলে বলছি না।
Delete