শনিরবি
মা থাকার অনেক সুবিধেও আছে, অসুবিধেও। ল্যাপটপ বুকে নিয়ে ঘুমোনো যায় না, গোল্ডেন
চপস্টিকসের ব্যবসায় টান পড়ে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সলিটেয়ার খেলা যায় না। মা আজন্ম জেনে
এসেছেন, “তাস দাবা পাশা, তিন সর্বনাশা।”
সে ক্লাবঘরের ভাঙা মেঝেতে শতরঞ্জি পেতে ইয়ারদোস্তের সঙ্গেই খেলা হোক, কি বেডরুমের
শান্ত নির্জনতায় একা একা। তাস খেলছ মানে তোমার ভবিষ্যতের ওইখানেই ইতি।
তবে ইদানীং যে অসুবিধেটা সবথেকে বেশি করে টের পাচ্ছি সেটা ক্যামেরা সংক্রান্ত।
মা ব্লগিং ব্যাপারটাকেই সন্দেহের চোখে দেখেন। ব্লগারদের যে চব্বিশঘণ্টা ক্যামেরা
নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে হয়, চোখকানখোলা রাখতে হয়, পাছে দিনরাতের কোনও অবিস্মরণীয়
মুহূর্ত লেন্স ফসকে পালায়, সেটা শুনে তিনি আকাশ থেকে পড়লেন। সকালে দিব্যি সুস্বাদু
ব্রেকফাস্ট হয়েছিল। চাউমিন আর বাড়ি থেকে আনা নারকেল নাড়ু। প্রমাণ রাখব বলে যেই না
ক্যামেরা বাগিয়ে ধরেছি, মা মুখ এমন হাঁ করলেন যেন চশমা ছাড়াই ইউ এফ ও দেখতে
পেয়েছেন।
-ও আবার কী হচ্ছে সোনা?
আমি এ ধরণের প্রতিক্রিয়ার জন্য তৈরি ছিলাম। মিনমিন করে বললাম,
-এই, ভালোমন্দ খাবারের ছবি তুলে রাখছি আরকি। তুমি চলে গেলে বসে বসে দেখব।
-অ্যাঁ! আমি চলে গেলে তুমি বসে বসে নারকেল নাড়ুর ছবি দেখবে? পুরো পাগল হয়ে গেছ
নাকি?
ইন্টারনেটের অচেনা লোকদের দেখাব শুনলে মা কী করতেন কে জানে। অজ্ঞান হয়ে যেতেন
নির্ঘাত।
এরপর তো আর নেহাৎ নির্লজ্জ না হলে ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে ছবি শিকার করা যায় না।
কাজেই এ সপ্তাহে আপনাদের ছবি দেখাতে পারলাম না। রাগ করতে হলে মা’র ওপর করবেন, আমার
দোষ নেই।
তাছাড়া এ সপ্তাহে দেখানোর মতো সে রকম কিছু ঘটেওনি, সেটাও ঠিক। মা’র সঙ্গে বসে
বিয়ের পাওয়া শাড়িগুলো আবার নেড়েচেড়ে দেখলাম, বি ফোর ইউতে শাম্মি কাপুরের নাচ দেখে
হাসাহাসি করলাম, রাতে ঘুমোনোর আগে পাশাপাশি শুয়ে বই পড়লাম। মা গজেন্দ্রকুমার মিত্র,
আমি মুরাকামি।
বাড়িটা এখন বেশ ধাতে সয়ে গেছে। আলোপাখার সুইচগুলো মুখস্থ হয়ে গেছে, রান্নাঘরের
জলের কলের প্যাঁচ ঠিক কতখানি ঘুরিয়ে থেমে গেলে একটা বেয়াড়া জলের ধারা ঠিক আমার নাক
লক্ষ্য করে ধেয়ে আসবে না সেটার আন্দাজ করে ফেলেছি। আগের বাড়ির পার্ক-ফেসিং
বারান্দার শোকে আমি এতদিন এ বাড়ির গলিরাস্তা-ফেসিং বারান্দায় যাইনি। আজ বিকেলে
হঠাৎ কি মনে করে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। গিয়ে দেখি এটাও তো বেশ। আগেরটার মত সুন্দর না,
কিন্তু অন্যরকম সুন্দর। ডানদিকে বাড়িওয়ালার চিলতে বাগানের কাঁঠালচাঁপা গাছের একটা
ডাল গলা বাড়িয়ে প্রায় আমার বারান্দায় এসে পড়েছে। বাঁদিকে তাকিয়েই চমক। রাস্তাটা
যেখানে গিয়ে মিশেছে, সেখানে একফালি সবুজ। আরেকটা পার্ক! দু’চারটে কচিকণ্ঠের অবোধ্য
চিৎকার ভেসে আসছে। তাদের কারও কারও ছুটন্ত পা-ও নজরে পড়ল। মনের টু-ডু লিস্টের এক
নম্বরে লিখে নিলাম, সুযোগ পাওয়া মাত্র পার্ক দেখতে যাওয়া। মাস্ট।
তবে সে সুযোগ আসতে একটু দেরি হবে মনে হচ্ছে। অবান্তরের কাছে এত ঘনঘন ছুটি নিতে
আমার লজ্জা করে, কষ্ট হয়। কিন্তু নিতেই হবে। রুজিরুটি। সামনের দু’দিন ইন্টারনেট
পাব কি না কে জানে। কপাল খারাপ হলে সেটা তিনদিনও হতে পারে, কিন্তু তারপর আমি
আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবই, অন গড ফাদার মাদার।
আপনারা সবাই খুব ভালো হয়ে থাকবেন। ফুর্তিতে থাকবেন। অবান্তরকে মিস্ করবেন।
আবার দেখা হবে। কেউ আটকাতে পারবে না। টা টা।
এইডা এক্কেবারে হক কথা কইসেন দিদি। ল্যাপটপ বুকে নিয়ে ঘুমনোর অভাবটা আমিও ভয়ানক রকম টের পাচ্ছি। তাছাড়া কাল রাতে কত রাত অবধি আমার ঘরে আলো জ্বলছিল এই নিয়েও কথা শুনতে হচ্ছে প্রায়ই।
ReplyDeleteযা বলেছেন, পরীক্ষার পড়া তৈরি করা ছাড়া যে ভদ্রলোকে রাত এগারোটার পর জাগে, এইটা বোঝাতে প্রাণান্ত।
DeleteHaa ishwar!! Amra, Abantor-er pathokra kina apnar kache 'ইন্টারনেটের অচেনা লোক'!!!!!! eta porar age amar laptop shut down keno hoye gelo na!! :P :D
ReplyDeletechotor upor besh mojar hoyeche lekhata..
আহা কিছু মনে করবেন না সৌমেশ, মা'দের কাছে চেনা অচেনার সংজ্ঞাটাই আলাদা কি না, আমাদের আধুনিক ব্যাপারস্যাপার কি মায়ের মাথায় ঢোকে বলুন?
Deleteish narkol narur chabi miss hoye gelo!
ReplyDeleteআমার দোষ নেই।
Deletearre arre abantor pathak tow aar achena lok noy. aamra tow rishra'r bari, thakurma, baba-ma, mashi-mesho, kaka-mama sabai ke eto bhalo kore chini....seta aboshho tomar kolom er jore....je nijeder ke tomar barir lok i mone kori :)
ReplyDeleteShampa darun bolechhe :-)
Deleteআরে তা তো বটেই। আমার কাছে তোমরা/আপনারা তো অনেক রক্তমাংসের চেনা লোকের থেকেও বেশি আপন।
DeleteAchha berosik tumi Kuntala di! Kakima ke sref bolte hoto je "ishh tomar jamai to aar naRu khete parlo na, bechara ke dyakhabr jonno photo tulchi". Dekhte, kakima sotasot aro 5 ta naRu sajiye dito plate. Tumi na, ja ta!- Sumana
ReplyDeleteইস, এইটা মাথায় আসেনি তো সুমনা। সত্যি সত্যি আমিই যেন একটা কী। পরের বার আর ভুল হবে না, দেখো।
ReplyDelete