ওয়ার্ক ফ্রম হোম
বৃহস্পতিবার, ভোর পাঁচটা
অ্যালার্মটা বাজছে।
বীভৎস, খ্যানখেনে আওয়াজ। ছ’ইঞ্চি পুরু লেপের তলা থেকে রাস্তা খুঁজে বেরোনো
চাট্টিখানা কথা নয়। তার ওপর অন্ধকার। তার ওপর চোখে চশমা নেই। কোথায় তাও জানি না।
ওরে বাবা, অ্যালার্মটা ক্রমশ জোরে হচ্ছে নাকি? রায়দের মোটা কুকুরটা একবার ঘেউ করল
মনে হল না? লেপের গোলকধাঁধার মধ্যে থেকে হ্যাঁচড়া টানে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হাতড়ে
হাতড়ে গিয়ে অ্যালার্মটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। থেমেছে। উফ্। আবার হাতড়ে হাতড়ে
বিছানায় ফেরত আসার সময় পায়ে কী যেন একটা লেগে ঠং করে শব্দ হল। এঃহে, কাল রাত্তিরে জল খেয়ে গ্লাসটা মাটিতেই নামিয়ে
রেখেছিলাম। ভাঙল বোধহয়। যাকগে মরুকগে। সূর্য উঠলে দেখা যাবে।
বৃহস্পতিবার, সকাল সাতটা
আরাম করে চা খাচ্ছি।
সামনে খবরের কাগজ খোলা, ল্যাপটপে ক্যাকটাসের সিধু ভয়ানক আবেগ দিয়ে ‘নীল নির্জনে’
লুপে গাইছে। আমি ঘাড় ঝাঁকিয়ে তালে তাল মেলাচ্ছি। ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ। কাল কী
ভাগ্যিস সন্ধ্যের দিকে একটু জ্বর মাথাব্যথা হয়েছিল, শুনে মা বললেন, “কাল তাহলে
অফিস বাদ দাও সোনা।” আমি লাফিয়ে পড়ে বললাম, “বলছ? তাহলে অফিসটা কাটাই বরং, অ্যাঁ? তার
থেকে বাড়িতে বসেই কাজ করব’খন।” কথোপকথনটা মনে পড়াতে একবার আড়চোখে বজ্জাত ঘড়িটার
দিকে দেখে নিলাম। নো টেনশন, এখনও পুরো দিনটাই পড়ে আছে। এই আর ঘণ্টাখানেক বাদে কাজ শুরু
করব নাহয়।
বৃহস্পতিবার, বেলা দশটা
ইন্সপিরেশন অতি গোলমেলে ব্যাপার। কখন যে কোথা থেকে উদয় হবে কেউ জানে না।
দিব্যি কাগজটাগজ পড়ছিলাম, গানটান শুনছিলাম, কাজে বসব-বসব ভাবছিলাম, এমন সময় একখানা
পোস্টের আইডিয়া মাথায় এসে গ্যাঁট হয়ে বসল। আইডিয়া অতি দুর্লভ জিনিস, এখন পায়ে
ঠেলব, তারপর মাথা কুটলেও সে আর ফিরে তাকাবে না। তাই লিখতে বসাই মনস্থ করলাম। কাজ?
চিন্তা নেই, কাজ আমি আজ করবই। কেউ আটকাতে পারবে না।
দশটা পনেরো
আধঘণ্টা আগে কী রকম মাথার ভেতর ফসফসিয়ে গোটা গোটা প্যারাগ্রাফ লেখা হয়ে
যাচ্ছিল, হিউমারে ঠাসা সব প্যারাগ্রাফ, আর এখন দেখ, মোটে তিনটে শব্দ ওয়ার্ডের সাদা
পাতা থেকে আমার দিকে তাকিয়ে বক দেখাচ্ছে। জঘন্য। যাই বুদ্ধির গোড়ায় একটু চা ঢেলে
আসি। তাতে যদি কাজ দেয়।
দশটা সতেরো
চায়ের জল বসিয়ে ফ্রিজ থেকে দুধের সসপ্যান বার করতে এসে নজরে পড়ল। তিনদিন আগে
একটা নধর দেখে ফুলকপি কিনেছিলাম বাজার থেকে। সঙ্গে হাফ কেজি লাল টুকটুকে টমেটো আর
আড়াইশো কড়াইশুঁটি। ভরা শীতের কড়াইশুঁটি, এক একটা প্রায় এক বিঘৎ লম্বা। সুপুষ্ট দানায় ঠাসা খোলস একেবারে ফাটোফাটো। ইস ঘরে একটু আলু থাকলে...আরে এই তো!
আগের সপ্তাহে বেশি করে কিনেছিলাম, মনেই
নেই। হুম্ম্ম্............।
বৃহস্পতিবার বেলা দুটো
কী বেশি খেয়ে ফেলেছি বাপরে! হাঁসফাঁস করছে। ফুলকপির তরকারিটা প্রায় মায়ের মতোই
ভালো হয়েছিল। অবশ্য ধনেপাতা দিলে সব রান্নাই খেতে ভালো লাগে। কাজেই ক্রেডিট দিতে
হলে আমার বদলে ধনেপাতাকেই দেওয়া উচিত। রান্না খাওয়া শেষ করতে করতেই কত বেলা হয়ে
গেল ইস। কখন আমি লিখব, কখন কাজ করব? মা গো, তুমি কেন নেই গো বকেমেরে কাজে বসানোর
জন্য? বিশ্রী লাগছে। কান্না পাচ্ছে। কী করব আমি এখন?
কালকের অর্ধেক বোঁদে ফ্রিজে তোলা ছিল না?
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটে
মাথাটা ছিঁড়ে পড়ছে। অবেলায় ঘুমোলে হবে না? ঘুমেরই বা দোষ কি, অতগুলো ভাত তার
ওপর হাফবাক্স বোঁদে। অর্ধেক দিন শেষ। আমার এখনও একটি কাজের কাজও হয়নি। মেজাজটা টং
হয়ে আছে। মনে হচ্ছে নিজেই নিজেকে ঠাস্ ঠাস্ করে দুটো চড়াই। অপদার্থ কোথাকার। ধুর
ধুর, কিস্যু হবে না আমার দ্বারা। মিথ্যে স্বপ্ন দেখা। কেন আমি এ রকম ভগবান? কেন অন্যদের
মতো নই?
বিকেল পাঁচটা
চা খেয়ে মাথাটা একটু শান্ত লাগছে। এই তো, রাত দুটো পর্যন্ত যদি জাগতে পারি
তাহলে এখনও ন’ঘণ্টা সময় আছে কাজ করার। তার মধ্যে ধরা যাক দু’ঘণ্টা অবান্তরের পেছনে
গেল। বাকি রইল সাত। বেশি অ্যাম্বিশাস যদি নাও হই, যদি দুঘণ্টাও ডিনার আর
ইন্টারনেটে নষ্ট করি, তবু পাঁচ ঘণ্টা কাজের সময় থাকবে। পাঁ-আ-আ-চ! ভাবতেই মনটা
খুশি খুশি লাগছে।
সন্ধ্যে সাতটা
উফ্ পোস্টটা কিছু ভোগাচ্ছে। আরও ঝাড়া আধঘণ্টা লাগবে। এই হয়। যেটা যতক্ষণে করব
মনে করি, তার দেড়গুণ সময় লাগে। জঘন্য। যাই হোক। ডিনার আর ইন্টারনেটের সময় কাটছাঁট
করতে হবে। পাঁচ ঘণ্টা, সোনা, পাঁচ ঘণ্টা কাজ আমরা আজ করবই। মনে থাকে যেন।
সাড়ে আটটা
একঘণ্টা হয়ে গেল পোস্ট পাবলিশ করেছি, এখনও কেউ কমেন্ট করছে না কেন?
রাত সাড়ে ন’টা
ধুর ধুর, এভাবে হয় নাকি। কাজ করতে হলে আগে মনে শান্তি লাগে। এক লাইন পড়ব আর
কমেন্টস রিফ্রেশ করব, ও রকম পড়ার থেকে না পড়া ভালো। টিভিটা চালাব নাকি? কনসেনট্রেট
করতে সুবিধা হবে?
বৃহস্পতিবার রাত এগারোটা
নিকুচি করেছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। এই শিক্ষা যেন মনে থাকে ভগবান, নাককান মুলছি।
দুপুরে অত ঘুমোলাম, এখনই আকাশ-সমান হাই উঠে চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। তার ওপর এখনও
একটাও কমেন্ট পড়ল না। উফ্ফ্ মাগো, কেন এত জ্বালা মা আমার?
যথেষ্ট হয়েছে। আজকের মতো ধ্যাষ্টামোর খাতা বন্ধ করা যাক। বরং অ্যালার্মটা দিয়ে রাখি, যাতে কাল সক্কাল সক্কাল উঠে কাজে বসতে পারি।
হাহাহা ! আপনার ঘড়িটা টা না ইয়ে মানে আমারও কিনতে ইচ্ছা করছে ^_^ . মনে হয় খুব বেশি গরম পড়লে যেমন কাজের ইচ্ছা চলে যায় , তেমন প্রচণ্ড শীত ও মানুষের productivity মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয় । আপনার কোন দোষ নেই হেঁহেঁ ।
ReplyDeleteওহ ভালো কথা ! ক্রোম ব্রাউযার এ নতুন একটা এক্সটেনশান অ্যাড করেছি , এর ফলে কি হয়েছে যখনি আপনি নতুন কোন লেখা অবান্তর এ দিচ্ছেন তখনি পপ আপ নোটিফিকেশান এসে ইন্সট্যান্টলি আমাকে জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছে । গুগল রিডার দিয়ে সাবস্ক্রাইব করা সব ব্লগ এর ক্ষেত্রেই এরকম দেখাবে :) আপনি হয়তো ইউস করছেন অলরেডি না করে করে থাকলে একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন , এই রইল লিঙ্ক http://j.mp/13lVjCg
ReplyDeleteযা বলেছেন কৌস্তুভ, প্রোডাক্টিভিটি যে কী পরিমাণে কমেছে সেটা চিন্তার বাইরে। আপনার লিঙ্কটা দেখব নিশ্চয়। থ্যাংক ইউ।
DeleteSaradin kichhu korini type ghyan ghyan takeo ekta ki chamotkar Prof. Shanku style-er post banie phelechho! phataphati laglo porte! specially bonder 3 sec-er screen appearence ta! Bhalo obhineta hole ja hoi arki oi tin second-ei kanpie diechhe!
ReplyDeleteওরে বাবা এত প্রশংসা রাখব কোথায়! লেখাটা তোমার এত ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগছে রুচিরা। থ্যাংক ইউ।
Deletestory of my life !!! (ek e songe anondo o dukho shohokare dirghoshash)
ReplyDeleteআমার সন্দেহ, স্টোরি অফ অনেকেরই লাইফ পরমা। কাজেই নো চিন্তা, ডু ফুর্তি।
Deleteami ar ki balbo! anekdini ওয়ার্ক ফ্রম হোম chalche...ar upore thik ja likhechi,seta hoyei jacche
ReplyDeleteসবারই তাই রে, তিন্নি।
Deleteআহা বাছা, এই নে কমেন্ট।
ReplyDeleteবাঁচালে।
Delete:-) darun lekho tumi kuntala, ar darun rasobodh. onek best wishes tomar ar 'Abantorer' jonye :-)
ReplyDeleteআরে থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ ইচ্ছাডানা।
DeleteDarun Darun........ki Je bhalo laglo.......tumi,tomar ghori,Abantar ...jug jug jiyo......tumi ajkal delhibashi.....Hindi ta besh bhalo jombe mone holo.
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ রণিতা।
Deleteহা হা হা হা ... একটা কবিতার দুটো লাইন মনে পড়ে গেল:
ReplyDelete"চট্ ক'রে মনে পড়ে মটকার কাছে
মালপোয়া আধখানা কাল থেকে আছে"
অসাধারণ লিখেছেন। আমার দুর্ভাগ্য যে এর আগে কমেন্ট করে উঠতে পারিনি!
বাঃ কবিতাটা খাসা তো? কার লেখা?
Deleteএ মা ছি ছি! এটা কার লেখা বলে দিতে হবে?
Deleteদুঃখীমুখ।
Deletehahaha..daruun daruun..sotti bari bose kaj korar bapar ta sokale jotota interesting lage rate thik tototai ghyanghyane.....ekta purodin bari bose thakar kotha vablei kanna pay..tai amaar 8 ta 3 te chakri zindabad...
ReplyDeleteহ্যাঁ, বাড়িতে বসে থাকা অতি বিপজ্জনক, সে ব্যাপারে আমি তোমার সঙ্গে একমত রাখী।
Deletearre Work From Home ke to ajkal Work FOR Home bola hoy. mane ei ITr jonogon jedin barite kaj thake bole Work from home korchhi. kortripokhhou jane ota unoficial casual leave....
ReplyDeleteHmm... Arnab der ek senior manager ekbar khub kora bhashay email korechilo ei byapare. Je WFH mane "unofficial off day" noy! Jodi mone hoy kaj korte parbe na, then take a day off. Ami khubi support kori eta. Desh e oboshyo IT'r lokjon ja ashurik khate tate ora erokom ekdin relax kortei pare, kintu amader ekhane erokom churi kore day off neyar kono manei hoy na.
Deleteবাঃ একটা নতুন কথা শেখা হয়ে গেল তো! থ্যাংক ইউ সোহিনী।
DeleteAmader to WFH er khubi chol ache, kintu deshi ar bideshi der WFH er style er akash patal difference dekhechi. Amar ek deshi colleague ei rokom work FOR home kore thake majhe modhyei. Meeting e call in kore kintu tarpor sharashobdo payi na tar. Ar ek bideshi colleague ache, shey WFH korle bujhteo para jaye na je shey desk e nei. Thik 7 tay log in kore, 12 tay khete boshe ar 4te obdi tana kaj kore normal days er moto! Dekhe shekhar moto, seriously!
ReplyDeleteAmi khub olpoi WFH kori karon amar concentration thake na bari theke kaj korle. Khub distracted hoye jayi. Last year 1 week tana snow hoyechilo bole korechilam, ar Kolkata jaoyar din half day korechilam. Tao sei half day te defect dhore ar tai niye torkatorki kore mone shukh pelam. Je jak, kaj hoyeche kichu :)
আমি ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর ব্যাপারে কমপ্লিটলি দেশী রিয়া। সত্যি কথা বলতে কি, ওয়ার্ক ফ্রম অফিসের ব্যাপারেও।
DeleteHe he :)
Deleteaha re...kotodin WFH korini...bichana e sua official kaj korar moja e alada..
ReplyDelete